প্রতিধ্বনির কথা
|| ১ ||
প্রতিধ্বনি সাহিত্য, শিল্প, সংস্কৃতি, সমাজ, রাজনীতি, ইতিহাস, দর্শন ও অনুবাদ বিষয়ক বাংলা ভাষার পূর্ণাঙ্গ অনলাইন সাহিত্য পত্রিকা। বৃহৎ পরিসরে, আমরা প্রথা থেকে নিরীক্ষামূলক সব ধরনের সৃষ্টিশীল লেখা ও শিল্পকর্ম প্রকাশ করি। তবে প্রথাগত সম্পাদনার বিপরীতে আমরা নৈর্ব্যক্তিক পদ্ধতিতে সম্পাদনা করি, যা লেখক-পাঠকের চিন্তা চর্চার পথকে উসকে দেয়, নির্মাণের পথকে প্রশস্ত করে। নিছক ব্যক্তি নয়, আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ—লেখকের সৃষ্টিশীল নতুন জিজ্ঞাসা, নতুন চিন্তা, নতুন সৌন্দর্য, ভাষার কারুকাজ ও নতুন সাহিত্য তত্ত্ব। আমরা চাই, সাহিত্যের নানাধারার তুলনামূলক বিশ্লেষণ, অতীতের সঙ্গে বর্তমান, বর্তমানের সঙ্গে ভবিষ্যতের মেলবন্ধন আর লেখার যথোপযুক্ত উপস্থাপন। প্রতিধ্বনি অনলাইনকে কেন্দ্র করে বছরে তিনটি ছাপা পত্রিকা প্রকাশ করবে।
|| ২ ||
এখন মহামন্দার যুগ। মহামারি আর যুদ্ধবিগ্রহে গোটা দুনিয়া বিপর্যস্ত। দুনিয়াজুড়ে কোথাও যুদ্ধ, আবার কোথাও যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে। দেশে দেশে নব্য ফ্যাসিবাদের উত্থানে মানবিক পৃথিবীর বিপরীতে চলছে রক্তপাত ও অপশাসনের আগ্রাসন। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক কাঠামো সেইরূপ অপশাসনের আগ্রাসন থেকে মুক্ত নয়। আমরা মানুষের সার্বিক মুক্তির প্রশ্নে—মানবিক সংস্কৃতি ও গণতান্ত্রিক সমাজ প্রত্যাশা করি। বস্তুত সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের ভেতর মানবিক সৌন্দর্য নিহিত। আর যে কোনো মুক্তিকামী লেখক ও শিল্পীর প্রত্যাশাও তাই। কেননা শিল্প-সাহিত্যের ভাষা মানুষের মন-মানসের মুক্তির দিশা দেয়। ঘুমন্ত মানুষকে জাগায়। চিন্তার স্বাধীনতা যোগায়। বর্তমানকে মোকাবেলা করে। ভবিষ্যতের পথ দেখায়। আর সংস্কৃতি তার মুক্তির প্রতিধ্বনি করে।
|| ৩ ||
ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যাবে, বাঙালির অর্জন কম নয়। তবে দুটো বড় অর্জন আমাদের ভবিষ্যতের পথকে প্রসারিত করেছে। প্রথমটি রাষ্ট্রভাষা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, অন্যটি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। প্রথমটি দিয়েছিল বাংলা ভাষার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠা, আর দ্বিতীয়টি বাঙালির আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার—স্বাধীন বাংলাদেশ। বস্তুত ভাষা আন্দোলনের অন্তর্গত রূপ মায়ের ভাষায় কথা বলবার স্বাধীনতা। গণতান্ত্রিক সমাজে যাকে বলা হয় ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা’। আর মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্রও ছিল তাই—সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠা। প্রতিধ্বনি ভাষা ও মুক্তির প্রশ্নে দুই মন্ত্রে অঙ্গীকারাবদ্ধ। শুধু বাংলা নয়, দুনিয়ার নানা ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতির বিষয়-আশয় ও লেখা উপস্থাপনে আমরা দায়বদ্ধ। বলতে দ্বিধা নেই—অতীত আমাদের অভিজ্ঞতা, বর্তমান আমাদের বাস্তবতা, আর ভবিষ্যত আমাদের সৃষ্টিশীলতার পথ। প্রিয় লেখক, শিল্পী, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী—আপনাদের সার্বিক সহযোগিতা আর ভালোবাসা প্রতিধ্বনির পাথেয়।