বাংলা কবিতার স্বতন্ত্র ধারার কবি জসীমউদ্দীন। জন্ম ১৯০৩ সালের ১ জানুয়ারি ফরিদপুর জেলার তাম্বুলখানা গ্রামে। মোহাম্মাদ জসীমউদ্দীন মোল্লা তাঁর পূর্ণ নাম হলেও তিনি জসীমউদ্দীন নামেই পরিচিত। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ এবং এমএ ডিগ্রি লাভ করেন যথাক্রমে ১৯২৯ এবং ১৯৩১ সালে। জসীমউদ্দীন গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী অনেক গান রচনা করেছেন। বাংলার বিখ্যাত গায়ক আব্বাসউদ্দীন, তাঁর সহযোগিতায় কিছু অবিস্মরণীয় লোকগীতিতে সুর দিয়েছেন, বিশেষত ভাটিয়ালি ধারার। জসীমউদ্দীন রেডিওর জন্যও আধুনিক গান লিখেছেন। পরবর্তীকালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধকালীন তিনি বহু দেশাত্মবোধক গান লিখেন। জসীমউদ্দীনের নকশী কাঁথার মাঠ কাব্যটি ‘দি ফিল্ড অব এমব্রয়ডার্ড কুইল্ট’ এবং বাঙালীর হাসির গল্প গ্রন্থটি ফোক টেল্স অব ইস্ট পাকিস্তান নামে ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে। উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ বালুচর [১৯৩০], ধানখেত [১৯৩৩], সোজন বাদিয়ার ঘাট [১৯৩৪], হাসু [১৯৩৮], রূপবতি [১৯৪৬], মাটির কান্না [১৯৫১], এক পয়সার বাঁশী [১৯৫৬], সখিনা [১৯৫৯], সুচয়নী [১৯৬১], ভয়াবহ সেই দিনগুলিতে [১৯৬২], মা যে জননী কান্দে [১৯৬৩], হলুদ বরণী [১৯৬৬], জলে লেখন [১৯৬৯], পদ্মা নদীর দেশে [১৯৬৯], কাফনের মিছিল [১৯৭৮] ও দুমুখো চাঁদ পাহাড়ি [১৯৮৭]। নাটক পদ্মাপার [১৯৫০], বেদের মেয়ে [১৯৫১], মধুমালা [১৯৫১], পল্লীবধূ [১৯৫৬], গ্রামের মেয়ে [১৯৫৯], ওগো পুস্পধনু [১৯৬৮] ও আসমান সিংহ [১৯৮৬]। আত্মকথা যাদের দেখেছি [[১৯৫১], ঠাকুর বাড়ির আঙ্গিনায় [১৯৬১], জীবন কথা [ ১৯৬৪], স্মৃতিপট [১৯৬৪], স্মরণের সরণী বাহি [১৯৭৮]। উপন্যাস বোবা কাহিনী [১৯৬৪]। ভ্রমণ কাহিনী চলে মুসাফির [১৯৫২], হলদে পরির দেশে [ ১৯৬৭], যে দেশে মানুষ বড় [১৯৬৮] ও জার্মানীর শহরে বন্দরে [১৯৭৫]। সঙ্গীত রঙিলা নায়ের মাঝি [১৯৩৫], গাঙের পাড় [১৯৬৪], জারি গান [১৯৬৮], মুর্শিদী গান [১৯৭৭]। অন্যান্য গ্রন্থ বাঙালির হাসির গল্প ১ম খণ্ড [১৯৬০], ২য় খণ্ড [১৯৬৪] ও ডালিমকুমার [১৯৮৬]। তিনি প্রেসিডেন্টস অ্যাওয়ার্ড ফর প্রাইড অব পারফরম্যান্স, পাকিস্তান [১৯৫৮] ও রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি.লিট ডিগ্রি, ভারত [১৯৬৯] লাভ করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি ১৯৭৬ সালে একুশে পদক ও ১৯৭৮ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার [মরণোত্তর] লাভ করেন। ১৯৭৬ সালের ১৪ মার্চ ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন জসীমউদ্দীন।