আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের গল্পে বুলেট প্রতীক!

অ+ অ-

 

আখতারুজ্জামান ইলিয়াস [১৯৪৩-১৯৯৭] কথাশিল্পী। এই পরিচয়ের বাইরে আরও একটি পরিচিয় তাঁর আছেতিনি প্রবন্ধকার এবং ২৪ ঘণ্টার লেখক। অর্থাৎ তাঁর লেখার সময় ২৪ ঘণ্টা, এ-তথ্য জানিয়েছেন খলিকুজ্জামান ইলিয়াস, ইলিয়াসের এক নম্বর রচনাসমগ্র-এর ভূমিকায়। ঘুমের ভেতরেও তার লেখকসত্তা ক্রিয়াশীল থাকতো বিধায় তিনি নিজেকে নিজেই ওই অভিধায় বর্ণনা করেছেন।

তিনি পেশায় ছিলেন সাহিত্যের অধ্যাপক। ইলিয়াস আত্মপ্রকাশ করেন গল্পকার হিসেবে। তারপর তিনি উপন্যাস ফর্মে যান। আর গল্প আর উপন্যাসের বাইরে ননফিকশন বা নিবন্ধ-প্রবন্ধ লিখেছেন। এ-ভাবেই তার পরিচয় হয়ে ওঠে গল্পকার, ঔপন্যাসিক ও সৃষ্টিশীল প্রবন্ধকার হিসেবে। এর প্রত্যেকটি ক্ষেত্রই কথামালার অন্তর্গত। মানে গদ্যের কাজ। গদ্য হলেও তাতে ভাগ আছে গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ-নিবন্ধ ইত্যাদিতে। গদ্যের আরেকটি ফর্ম আছে নাটকেও। নাটক অধিকাংশই গদ্যেই রচিত হয়। তবে তা কবিতায়ও লেখা হয়েছে, অনেক। কিন্তু নাটকের আরো একটি চর্চা হচ্ছে মিউজিক্যাল ড্রামায়। কবিতা সংলাপে, গদ্য সংলাপ ও অন্ত্যমিলযুক্ত কাব্যপঙক্তিতেও নাটক রচিত হয়ে আসছে। আরো পরে, মিউজিকের সঙ্গে মেশানোর মাধ্যমে মিউজিক্যাল ড্রামা আমরা দেখেছি। তার একটি নমুনা সেলিম আল দীন-এর ‘মুনতাসির ফ্যান্টাসিতে দেখেছি। এর ভেতরে থাকে সঙ্গীতের কারুকাজ। চিত্তে সঙ্গীত মানুষকে নতুন ভাবনার জালে আটকাতে পারে খুবই দ্রুত, যা অন্য শিল্পের পক্ষে অতো কম সময়ে সম্ভব নয়। তবে, কবিতাও অনেকটাই প্রাগ্রসর ভাবনাকে রূপায়িত করতে পারে ভাষার কারুময় সৌন্দর্যে। কারণ, কবিতার ভাষা সহজ মনে হলেও তা অধিকাংশ ক্ষেত্রে সিম্বলিক বা প্রতীকী। রূপক বা মেটাফরের দিগন্তে ঢুকে যেতে পারে অবলীলায়।

ইলিয়াসের গল্পের গদ্য আর উপন্যাসের গদ্যের ভেতরে যে সব সামাজিক ও রাজনৈতিক উপাদান আছে, তা চিনতে হলে তাঁর মনোলগ বুঝতে হবে। গল্পকারের মনের ভেতরে যে নাটকগুলো প্রতিনিয়ত চলতে থাকে, তাকে ভাষায় জোড়া দিয়ে যে কাহিনি স্তর নির্মাণ করা হয়, তার আগাপাশতলা সমতল থাকে না। মানুষের ভাবনাগুলোও সমতল নয়, অসমতল ও ছেঁড়াখোড়া যেন শরতের ভাসমান মেঘের ভেলায় চড়ে বেড়াচ্ছে। এবড়ো-খেবড়ো এবং দৈনন্দিন চলমান জীবনের মতো নানান কিছুতে কণ্টকিত, দূষিতও বটে। এই সব দূষণ, বায়ু দূষণের মতো অদৃশ্যপ্রায়। দেখা যায় না, কিন্তু ঠিকই আছে। নীতি-আদর্শের সঙ্গে এমন কায়দায় লেপ্টে থাকে যে তাকে আলাদাভাবে চেনা যায় না। গল্পকারকে অনুভব করতে হয়, জানতে ও বুঝতে হয় এবং তাকে মোল্ড করে নির্মাণ করতে হয় গল্পের ছাদ।

আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘জাল স্বপ্ন, স্বপ্নের জাল মূলত মুক্তিযুদ্ধের একটি গল্প। নাম পড়ে মনে হয় এটি একটি সাধারণ ব্ক্তব্য প্রধান গল্প। গল্পের নাম পড়ে মনে হয় এটি জাল স্বপ্ন, যাকে আমরা নকল বলে চিনি। জাল শব্দের মানে হচ্ছে নকল। আমরা প্রায়শই বলি, দেখো এটি একটি টাকার জাল নোট। আবার এই গল্পের শিরোনামের দ্বিতীয় অংশস্বপ্নে জাল মানে হচ্ছে মাকড়শার জালের মতো এক জটিল মানবিক ও মনস্তাত্ত্বিক সাধারণ সামাজিক জীবনের গল্প

আমি ভেবেছি, আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের গল্পের চারণভূমি ও তার ভাষাভূমি নিয়ে লিখবো। সেই লক্ষ্য নিয়ে তাঁর কয়েকটি গল্প পড়েছি। সেগুলোর নাম লিখি আগে।

১. তারাবিবির মরদ পোলা
২. খোঁয়ারি
৩. দুধভাতে উৎপাত
৪. দোজখের ওম
৫. জাল স্বপ্ন, স্বপ্নের জাল
৬. মিলির হাতে স্টেনগান
৭. অন্য ঘরে অন্য স্বর

এই গল্পগুলো পড়ে আমার মনে হলো তাঁর সমসাময়িক গল্পকারদের সঙ্গে কি কি মিল ও অমিল আছে, যা ইলিয়াসকে আলাদা করেছেএই প্রশ্নটি উদিত হলো। সেই উদয়নপর্বে যাওয়ার আগে, আমি আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের গল্প নিয়ে কিছু কথা লিখতে চাই। তার লেখার ধার ও ধরন এবং বৈশিষ্ট্য কেমন এবং তাঁর গল্পে ব্যবহৃত ভাষাভাষার সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিত, তার সাংস্কৃতিক অভিঘাত এবং সেই সব চরিত্রের বাস্তবতা, চিন্তার লেহন, চেখে দেখা দরকার।

আমরা বিভিন্ন কথাকারের গল্প পড়িআনন্দ পাই বা বেদনায় সিক্ত হই। এই যে নিজেকে সেই গল্পের সঙ্গে নিয়ে যাওয়া, সেই বিষয়টি কিন্তু লেখকের অবদান। সেই অবদান মনে রেখেই আমরা বলি অমুকের গল্প ভালো। তিনি জীবনকে চেখে দেখে লেখেন এবং তার চরিত্রগুলো যে সব কথা বলেছে এবং সামাজিক জীবনে অ্যাক্ট করছে, তা সত্য ও বাস্তব। বাস্তবতার প্রতিরূপ হলেই যে সেই গল্প ভালো এই ধারণাটিকে মেনে নেয়া কঠিন। আবার অবাস্তব, বা কাল্পনিক, বা সাররিআলিস্টিক বা পরাবাস্তব চেতনার গল্প না বোঝার কারণে, সেগুলো ভালো লাগে না অনেক পাঠকের। কিন্তু সৃষ্টিশীলতার প্রশ্নে বাস্তব আর পরাবাস্তরের যে দ্বিধা ও দ্বন্দ্ব, তা সাধারণের জন্য ভালো কোনো কিছু নেই। সাধারণ ও অসাধারণের মধ্যেই লেখকের সৃষ্টিশীলতার বিষয়টি অনুঘটকের কাজ করে যখন কোনো প্রকৃত বিশ্লেষণকারী সেই গুপ্ত সাম্রাজ্যের সদর দরোজা খুলে দেন।

বুলেট শিশু বয়েসেই বিছানায় হিসি করতো, গল্পের শেষেও সেই রোগটিতে সে পুনর্বাসিত হয়, যা মূলত প্রতীকী উদ্ভাসন বলে মনে হয়েছে আমার। ওই যুবকের মতো কোটি কোটি মানুষের জীবনযাপনের কোনো উত্তরণ ঘটেনি বলেই বুলেট এক প্রতীকী সত্য হয়ে ফুটে উঠেছে।

ঠিক তুলনামূলক নয়, ইন্টারেকটিভ ওয়েতে আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের গল্পের কনটেন্ট বা বয়ানের সঙ্গে মাহমুদুল হক বা শওকত আলী, আল মাহমুদ, রাহাত খান, আবু কায়সার, আবুবকর সিদ্দিক, সাইয়িদ আতীকুল্লাহ, হাসান আজিজুল হক, মাহবুব সাদিক বা হুমায়ূন আহমেদ, ইউসুফ শরীফ, সুব্রত বড়ুয়া, সেলিনা হোসেন ও বিপ্রদাস বড়ুয়া, হাসনাত আবদুল হাই, হোসেনউদ্দিন হোসেন-এর গল্পের সঙ্গে মিল-অমিল নিয়ে কিছু বয়ান করবো।

আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘জাল স্বপ্ন, স্বপ্নের জাল মূলত মুক্তিযুদ্ধের একটি গল্প। নাম পড়ে মনে হয় এটি একটি সাধারণ ব্ক্তব্য প্রধান গল্প। গল্পের নাম পড়ে মনে হয় এটি জাল স্বপ্ন, যাকে আমরা নকল বলে চিনি। জাল শব্দের মানে হচ্ছে নকল। আমরা প্রায়শই বলি, দেখো এটি একটি টাকার জাল নোট। আবার এই গল্পের শিরোনামের দ্বিতীয় অংশস্বপ্নে জাল মানে হচ্ছে মাকড়শার জালের মতো এক জটিল মানবিক ও মনস্তাত্ত্বিক সাধারণ সামাজিক জীবনের গল্প।

গল্পের সূচনায় মুক্তিযুদ্ধের কথাই মনে হয়। ন্যারেটিভসের ভেতরে যে চরিত্র, তার কর্মময় জীবনের সঙ্গে কথক লালমিয়ার [তাকে এ গল্পের কথক হিসেবেই চেনা যায় অনেকখানি, যতটা না ইমামুদ্দিনের বন্ধু হিসেবে] জীবনের লক্ষ্যও চেনা বা বোঝা যায়। কথায় আছে না, মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত, লাল মিয়ার দৌড় তার সামাজিক জীবনের ঘেরের মধ্যে বন্দী।

গল্পের সূচনাকাল বোঝা যায় ১৯৬৯ সাল, তারপর মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধকালীন পাকিস্তানি সেনা ও দোসর রাজাকারদের লুটপাট, দোকান, বাড়ি ইত্যাদি দখল, মুক্তিবাহিনীর প্রত্যাঘাত, স্বাধীনতা অর্জন, দখলমুক্ত এবং সেই রাজাকারদের ফিরে আসা, সমাজে পুনর্বাসন ইত্যাদির পর মূল চরিত্রটির একই কাঠামোর জীবনযাপন ও বেঁচে থাকার সংগ্রাম এবং বীরমুক্তিযোদ্ধার সন্তানের মধ্যে যে সংগ্রাম, তার ব্যক্তিগত ও পরিবেশগত বর্ণনার ভেতর দিয়ে গল্প এগোয় এবং শেষ হয়।

এই কাহিনিতে নতুন কোনো তথ্য নেই, কিন্তু জীবনের অনুপুঙ্খ আচার ও তার অভিঘাত আমরা দেখতে পাই। পুরানা ঢাকার চরিত্রগুলো ওই এলাকার ডায়লেক্টেই যেমন কথা বলে তেমনি সেই বৃত্তাবদ্ধ জীবনের বাইরের কিছু ভাবতে পারে না তারা। যেন তারা একটি সামাজিক রাজনৈতিক ঘোরের মধ্যে যাপন করছে তাদের সংগ্রামী জীবন।

এই গল্পের প্রধান চরিত্র লাল মিয়া। আবার ওই লাল মিয়ার বন্ধু ইমামুদ্দিন এবং তার ছেলে বুলেট। ওই ছেলের নাম বুলেট রাখার পেছনেও আছে ইমামুদ্দিনের বিপ্লবী চিন্তা ও তার স্ত্রীর স্মৃতিসত্তা। ওই ছেলেটি কেমন স্বভাবের তা বোঝা যায় গল্পের সূচনায়ই।

‘ডাইনে সালাম ফিরাইয়া বামে সালাম ফিরাইতে গর্দান ঘুরাইচি তে দেহি আমার বগলে নমাজ পড়ে বুড়া এক মুসল্লি। সত্তুর পঁচাত্তুর বছর বয়স হইবো। কিয়ের  পাঁচাত্তুর। মনে লয় আশি পচাশি হইচে। নব্বই ভি হইতে পারে।
আপনার চিনা মানুষ? আগে দেখচেন, মালুম হয়?
‘কী জানি?—না, আগে দেহি নাই।—বুইড়ার দাড়ি বহুত লাম্বা, এক্কেরে ধলা ফকফকা। মনে লয়, দুধের নহর নাইমা আইচে , গাল দুইটা থাইকা।
‘গালের রঙ কালা মালুম হইলো?’
‘হইতে পারে।—তা সালাম ফিরাইতে গিয়া—।’
‘মুখের মইদ্যে বসন্তের দাগ আছে?’
‘আরে ন্নাহ? কালাকুলা হইবো ক্যালায়? মোমের লাহান পিছলা মুখ। টোকা দিলে রক্ত বারাইবো। হোন না। কী জানি কইতেছিলাম? কী কইলাম? তুই খালি গ্যান্জাম করস। কী কইতেছিলাম?
‘সালাম ফিরাইতে বাম গর্দান ফিরাইছেন। আপনার বগলে নমাজ পড়ে—।’
‘হ। সালাম ফিরাইতে গর্দান ঘুরাইচি তে দেহি আমার বগলে নমাজ পড়ে বুইড়া এক মুসল্লি। বহুৎ বুইড়া। বয়স মুনে লয় নব্বই পুচানব্বই হইবোই। মগর জইফ হয় নাই, এক্কেরে তাগড়া রইচে। বুইড়া মিয়ার পাওয়ের দিকে নজর পড়চে, তে দেহি—বুক দেখলেন না, সিনা না দেইখ্যা পাও দ্যাহেন ক্যামনে? সিনার মইদ্যে গুলির দাগ আছে?
আরে খামোস মাইরা হোন না ছ্যামরা।’

ওই ছ্যামরা মানে বুলেট হচ্ছে অনেকটাই সত্যেন্বেষী, তার বাবার গল্প সে শুনেছে লাল মিয়ার কাছেই, তা অনুমান করা যায়, বোঝা যায়। কিংবা তার মায়ের কাছেও সে শুনে থাকতে পারে।

এই যে স্বপ্নের মধ্যে বুড়ো মুসল্লির বর্ণনা দিতে পারে না লাল মিয়া, সেটা বুলেটের প্রশ্নবাণের তোড়ে। মুসল্লি বুড়োর পায়ের পাতা পেছন দিকে। অর্থাৎ উল্টো। এভাবেই গল্পের শুরু। এই শুরুতেই এই গল্পের একজন বড় চরিত্র ইমামুদ্দিনের সন্ধান মেলে। ছেলেটা জিজ্ঞস করেগায়ের রং কালো, মুখে বসন্তের দাগ, বুকে গুলির দাগ ইত্যাদি যখন সে লাল মিয়াকে জিজ্ঞেস করে, তখনই পাঠকের মনে ঠোক্কর খায় ছ্যামরা ওই প্রশ্নগুলো করে কেন? কারণ, ওই ছ্যামরা বুলেটের বাবা ইমামুদ্দিন ছিলো বীর মুক্তিযোদ্ধা, লালমিয়ার আবাল্য বন্ধু এবং তারা দুজনে একই সঙ্গে বড় হয়েছে। পড়াশোনো যা কিছু করেছে, সবই একই সঙ্গে। একই বিছানায় বছরের পর বছর তারা ঘুমিয়েছে। ওই ইমামুদ্দিন ঘটনাচক্রে, জগন্নাথ কলেজের কয়েকজন ছাত্রের প্ররোচনায়  যুক্ত হয় দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে। সেও দেশ স্বাধীন করার মন্ত্রণায় জড়িয়ে পড়ে। পাকিস্তানি মিলিটারিরা যখন ঢাকা মহানগরে রাতদিন টহল দেয়, তৈরি করে রাজাকার, আল বদর ও আল শামস, লাল মিয়ার মালিক নাজির আলি মিলিটারিদের লেজুড় বনে যায়। সে অনেক দোকান দখল করে, অনেক বাড়িও সে দখলে নিয়েছে। এখন লাল মিয়া যে লন্ড্রিটি চালায়, সেটাও এক হিন্দুর ছিলো। নাজির আলী দখল করে নিয়ে লালমিয়ার হাতে ছেড়ে দিয়েছে এই লন্ড্রি। একদিন ইমামুদ্দিন একটি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমারে গ্রেনেড মেরে পালানোর সময় মিলিটারির গুলিতে মারা পড়ে।

এই গল্পের দ্বিতীয় অংশ অনেকটাই সমতল। ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বরের মতো দুনিয়া কাঁপানো বিজয়ও লালমিয়ার কাছে তেমন কোনো আলোড়ন তোলে না। কারণ, পাকিস্তানি মিলিটারিরা দেশটাকে ধ্বংসস্তুপ বানালেও লাল মিয়ার সামাজিক রূপ যেমন পাল্টায় না, তেমনি ১৬ ডিসেম্বরের বিজয়ও তার অবস্থানের কোনো বিবর্তন ঘটায় না। কারণ তার সামাজিক অবস্থানের কোনো পরিবর্তন নেই মানে গণমানুষের অবস্থার কোনো পরিবর্তন আনেনি এই স্বাধীনতা। যে লক্ষ্য নিয়ে বাঙালিরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলো, সেই লক্ষ্য তো অর্জিত হয়নি। গণমানুষের অর্থনৈতিক পরিবর্তন ও কথা বলার স্বাধীনতা যেমন হয়নি, তেমনি বুলেটদের জীবনেও আনেনি তেমন কোনো আশার পতাকা। কারণ হিসেবে আমরা এই গল্পে দেখতে পাই নাজির আলীদের মতো পাকিস্তানি বিশ্বাসীরাই সমাজে আবারো পুনর্বাসিত হয়েছে। নাজির আলি এখানে প্রতীকী চরিত্র। যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী ছিলো তারাই নানা কায়দা কৌশলে, ক্ষমতাসীনদের প্ররোচনায়, লোভে পড়ে তাদের আশ্রয় ও প্রশ্রয় দিয়ে সমাজে পুনর্বাসিত করেছে।

বুলেট শিশু বয়েসেই বিছানায় হিসি করতো, গল্পের শেষেও সেই রোগটিতে সে পুনর্বাসিত হয়, যা মূলত প্রতীকী উদ্ভাসন বলে মনে হয়েছে আমার। ওই যুবকের মতো কোটি কোটি মানুষের জীবনযাপনের কোনো উত্তরণ ঘটেনি বলেই বুলেট এক প্রতীকী সত্য হয়ে ফুটে উঠেছে।