মধ্যবিত্তের সাংস্কৃতিক আন্দোলন কি শুকিয়ে মরবে?

অ+ অ-

 

অধিকাংশ সাংস্কৃতিক কর্মীকেই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের চলমান সংকটকালে কোনো প্রকার রা-শব্দ করতে দেখা গেলো না। কেন? যখন একটা দেশের অগণতান্ত্রিক স্বৈরাচারী সরকার ক্ষমতা ধরে রাখতে বীভৎস নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে বিরোধী দলগুলোর উপর। যখন সকল মতামত, আন্দোলনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তারা একতরফা, লোক দেখানো নির্বাচনী নাটকের আয়োজন করতে যাচ্ছে। তখন ছোট একটা অংশের বাইরে অধিকাংশ সাংস্কৃতিক কর্মীরা এমন নিথর পাথরের মতো মৌনব্রতে চলে গেলেন কেন? এইসব সংকটকে তাদের কাছে কি আসলে কোনো সংকট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে না? নাকি স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম সাংস্কৃতিক কর্মীর দায়িত্ব নয় বলে বিবেচিত হচ্ছে? কই, ইতিহাসতো তা বলে না। এই সাংস্কৃতিক কর্মীদের একটা বড় অংশই প্রায় একদশক ধরে এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে লাগাতার লড়াই করেছিলো।

তবে কি তারা আসলে গুম-খুন, জেল-নিপীড়নের ভয়ে আতঙ্কিত? এটা ফ্যাসিবাদের যুগ, ভয় কাজ করাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু সমস্যাটা কি শুধু ভয়ের, নাকি অন্য কোন কিছুর? আজকে যদি বিএনপির জায়গায় আওয়ামী লীগ আর আওয়ামী লীগের জায়গায় পনের বছরের স্বৈরশাসন কায়েম করা বিএনপি সরকার থাকতো, তাহলে কেমন মাত্রার সাংস্কৃতিক আন্দোলন দেখা যেতো রাজপথে? ২০০৮ সালের বাউল ভাস্কর্য ভাঙার প্রতিবাদে বাংলার সংস্কৃতি আন্দোলন কিংবা ২০১৩ সালে শাহবাগের ভুলে ভরা আন্দোলনের অভিজ্ঞতা বলে, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটসহ আরো অনেক সাংস্কৃতিক সংগঠন, লেখক-বুদ্ধিজীবী, সাংস্কৃতিক কর্মী আজকে রাজপথ দাপিয়ে বেড়াতেন। কেন বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে তারা মাঠে সক্রিয় থাকেন আর আওয়ামী লীগ সরকারে থাকলে তাদের রাজপথে খুঁজে পাওয়া যায় না? আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলেই কেন তারা সকল ভয়-আতঙ্ক উপেক্ষা করে রাজপথে থাকতে পারেন? এই আলাপগুলা আমরা বহুদিন ধরেই তুলছি, জানি আরো অনেকদিন ধরেই তুলতে হবে। 

তাহলে মনে হয়, সমস্যাটা ভয় পাওয়া না পাওয়ার নয়, আদর্শিক। রাজনৈতিক বোঝাপড়ার। বাংলাদেশের মধ্যবিত্তের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের প্রায় পুরোটারই প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষ মিত্র শক্তি হচ্ছে আওয়ামী লীগ। তার একটা বড় কারণ, স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলন মূলত যে সকল এজেন্ডা নিয়ে কাজ করেছে, তার মধ্যে ফিরে ফিরে অন্যতম প্রধান ইস্যু বানানো হয়েছে মৌলবাদ-সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াইকে। ফলে সে লড়াই করতে যেয়ে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তির পাশে থাকা তার আদর্শিক দায়িত্ব হয়ে উঠেছে। মুশকিল হচ্ছে এই মৌলবাদ-সাম্প্রদায়িকতার কিংবা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তির বয়ান মূলত তৈরি হয়েছে সেই সকল বুদ্ধিজীবীর দ্বারা, যাদের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক স্বার্থ, সুবিধা ভোগের শিকড় বহু আগে থেকেই আওয়ামী লীগের জমিনে বিস্মৃত হয়ে আছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে তারা বরাবরই আদর আপ্যায়নে থাকেন। এবং তাদের অনেকেই একসময় বড় বড় সাংস্কৃতিক ফিগার ছিলেন। ফলে সারাদেশেই তাদের প্রভাব ছিলো। এখন তাদের ব্যক্তি প্রভাব কমে গেলেও, সারাদেশের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মধ্যবিত্ত সাংস্কৃতিক সংগঠন ও তার কর্মীদের মধ্যে আওয়ামী ভাবাদর্শে মৌলবাদ-সাম্প্রদায়িকতার বয়ানের প্রভাব এখনো চলমান। অর্থাৎ আওয়ামী ভাবাদর্শ যেটাকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলবে, তার বাইরে আর কারো কোনো বয়ান গ্রহণযোগ্য নয়। আওয়ামী ভাবাদর্শ যাকে মৌলবাদ-সাম্প্রদায়িকতা বলে চিহ্নিত করবে সেটাকেই মৌলবাদ-সাম্প্রদায়িকতার প্রতীক হিসেবে মেনে নিতে হবে। এমনকি আমরা চিত্রশিল্পীরা রাজাকারের চিত্রায়ণ করেছি, টুপি-দাড়ি পরিহিত রক্তাক্ত দাঁত বের করা একটা মুখচ্ছবি। টুপি-দাড়িটা যেন মৌলবাদেরই প্রতীক! তাই না? পাশাপাশি সমাজের মর্ডানরাও মৌলবাদের এই বয়ানকে গ্রহণ করেছেন। কেননা নয়া ঔপনিবেশিক শিক্ষা কাঠামোতে আমরা যত মর্ডান হয়েছি, ততই জনসংস্কৃতি, সাধারণের ধর্মচিন্তা, তার সামাজিক সম্পর্কশাস্ত্র পাঠ করতে ব্যর্থ হয়েছি। দিনে দিনে সাধারণের ধর্ম বিশ্বাস, যাপিত জীবনের সাথে মর্ডান লাইফ স্টাইল সাংর্ঘষিক, অপর হয়ে উঠেছে। প্রগতিশীল বনাম মৌলবাদী বাইনারি রাজনীতি শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। ফলে এই মর্ডানদেরও মিত্রশক্তি হয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগ।

যদিও গত ১৫ বছরের শাসনামলে আওয়ামী লীগের উপর প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক কর্মীদের অনেক অভিমান জমা হয়ে আছে। বিশেষ করে মৌলবাদ-সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী অবস্থানের বিবেচনায় হেফাজতে ইসলামের সাথে আওয়ামী লীগের সখ্যতার সম্পর্ককে মন থেকে মেনে নিতে পারেনি। তারা আওয়ামী লীগকে ভালো আওয়ামী লীগ হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন সারাজীবন। যে আকাঙ্ক্ষা এখন প্রায়শই নিজেদের মনেই হোঁচট খাচ্ছে। কিন্তু তারা যাবেন কোথায়? বিপরীত পাশে অন্য বৃহৎ দলটির গায়ে জামায়াতে ইসলামের সাথে সখ্যতার গন্ধ লেপ্টে আছে। তার সাথে আছে জুজুর ভয়, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে বাংলাদেশ বিএনপি-জামাত অর্থাৎ মৌলবাদীদের দখলে চলে যাবে। সুতরাং এমত গভীর জটিল অবস্থায় মৌনব্রতই তাদের জন্য শ্রেয় কর্ম হিসেবে তারা ঠিক করেছেন। কিন্তু আমার প্রশ্ন হলো এতে কি লাভের লাভ কিছু হবে? নাকি জাতির এই গণতন্ত্রহীনতার সংকটকালে সাংস্কৃতিক কর্মীরা দেখাতে পারতেন দিশা, মানুষের মনে সঞ্চার করতে পারতেন সাহস!

আরো একবার আওয়ামী লীগের ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার পরিণাম আমরা টের পাচ্ছি কি? ইতিমধ্যেই গত পনের বছরের আওয়ামী শাসনামলে একের পর এক আন্দোলনের ব্যর্থতা, কিছুতেই কোন গণআন্দোলন [এমন কি স্কুল শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন] সফল হতে না দেয়ার জন্য সরকারের গুম-খুন-পুলিশী নিপীড়নের নিষ্ঠুতম প্রয়োগ কর্মীদের দিনে দিনে হতাশগ্রস্ত করে ফেলছে। এমনকি সুন্দরবনের কাছে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির প্রতিবাদে, সুন্দরবনের প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষার আন্দোলনে দেশব্যাপী যে সাড়া পড়েছিলো, আওয়ামীপন্থী সংগঠনগুলোর বাইরে অসংখ্য সাংস্কৃতিক সংগঠন, শিল্পীরা আমাদের সর্বপ্রাণ সাংস্কৃতিক শক্তি প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হয়ে  রাজপথের ধারাবাহিক আন্দোলন করে গেছেন তাতে মনে হচ্ছিলো এ আন্দোলনে বিজয় অর্জন সম্ভব। কিন্তু না, ঠেকানো যায়নি রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র। আমি মনে করি আওয়ামী লীগের জায়গায় অন্যকোনো সরকার থাকলেই সুন্দরবন আন্দোলনের ফলাফল অন্যরকম হতে পারতো। আর এইসব ব্যর্থতার মধ্য দিয়েই গত পনের বছরে পুরো একটা জেনারেশন তৈরি হয়েছে। গণআন্দোলনের এমন কি ছোটখাটোও কোনো সফলতার স্বাদও তারা পায়নি তাদের জীবনে। কোনো স্বপ্ন নাই, কোনো আশা নাই তাদের সামনে। যা কিছু আছে সামনে তা ক্ষমতার প্রতি তোষামোদি আর দালালির সংস্কৃতি। শিক্ষার মান নাই, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে হাতে গোনা দুএকজন ছাড়া কোনো প্রকৃত শিক্ষক নাই। কিভাবে, কোথা থেকে তৈরি হবে একটা জাতির স্ট্রাইকিং ফোর্স? বরং মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা যারা পারছেন দলে দলে এ দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন অন্যকোনো দেশে, ভাগ্যান্বেষণে। আওয়ামী লীগের আরো একবার ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে পারার মানে, আরো পাঁচ বছর বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের এই অন্ধকার যুগকে প্রলম্বিত করা।

কিন্তু আওয়ামী লীগের জায়গায় বিএনপি ক্ষমতায় আসলে কি এই সব জুলুম নিপীড়ন বলবৎ থাকবে না? থাকবে নিশ্চয়ই। তবে এত কথা বলছি কেন? কারণ ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা। আমি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন থেকে ফুলবাড়ি পর্যন্ত যতগুলো আন্দোলনের সফলতার মুখ দেখেছি, তা সবই সংগঠিত হয়েছিলো বিএনপি শাসনামলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে উল্যেখযোগ্য ঘটনা, শামসুননাহার হল আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা ভিসিকে পদত্যাগে বাধ্য করেছিলো। তেল-গ্যাস কমিটির আন্দোলনে একাধিক সফলতার মধ্যে অন্যতম ফুলবাড়ি আন্দোলনে সরকারকে দাবি মেনে নিতে বাধ্য করা। কেন বিএনপি শাসনামলে অনেক আন্দোলনই সফলতার মুখ দেখেছিলো? তার অনেক কারণের একটা কারণ, আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকলে বাংলাদেশের অধিকাংশ শিল্পী-বুদ্ধিজীবী বিরোধী শিবিরে চলে আসেন। বিএনপি শাসনামলে তারা সকলেই তখন পরস্পরের মিত্র শক্তিতে রূপান্তরিত হন। ফলে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের রাজপথের শক্তি বহুগুনে বেড়ে যায়। সাংস্কৃতিক আন্দোলন তখন রাজনৈতিক আন্দোলনের পরিপুরক শক্তি হিসেবে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। আওয়ামী শাসনামলে শিল্পী-বুদ্ধিজীবীদের অধিকাংশই সরকারী শিবিরে অবস্থান গ্রহণ করায় সাংস্কৃতিক কর্মীদের বিপ্লবী অংশ মিত্রশক্তির অভাবে জনশক্তির বিবেচনায় রাজপথে দূর্বল হয়ে পড়ে। আরো একটা উল্লেখযোগ্য বিষয়, সাংস্কৃতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক জমিনে কাজ করবার মতো প্রভাব বিস্তারি ব্যক্তিত্ব বিএনপিতে খুবই কম। মধ্যবিত্ত সাংস্কৃতিক লড়াইয়ের ময়দানে বিএনপি ঐতিহাসিকভাবে পিছিয়ে থাকা একটি দল।

অনেকেই মনে করেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে মৌলবাদী’ সংস্কৃতি চর্চার প্রভাব সমাজে অনেকাংশে বেড়ে যায়। এই অভিযোগ শুধুই কি বিএনপির জন্য প্রযোজ্য? তাহলে গত পনের বছরে সেই প্রভাব সমাজে বাড়লো বৈ কমলো না কেনো? আওয়ামী লীগের হেফাজতের সাথে সখ্যতা গড়ার পরেও মৌলবাদ বিরোধী সাংস্কৃতিক কর্মীরা আওয়ামী লীগের লেজুড়বৃত্তি পরিত্যাগ করে নিজেদের স্বতন্ত্র অবস্থান-পরিচয় তৈরি করতে পারলো না কেন? তার একটি অংশের কারণ সুবিধাবাদ অন্য অংশটির কারণ রাজনৈতিক পর্যালোচনায় ব্যর্থতা। ফলে বাংলাদেশের মধ্যবিত্তের এই সুবিধাবাদী অথবা রাজনৈতিক পর্যালোচনায় এদেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি অনুধাবনে অপারগ সাংস্কৃতিক আন্দোলন অদূর ভবিষ্যতে জনতার মাঝে তীব্র কোনো আবেদন তৈরি করতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না। ফলে নতুন প্রজন্মকে আকর্ষণে ব্যর্থ হবে, কর্মী সংকটে ভুগবে। বড় সম্ভাবনা আছে মধ্যবিত্তের এই ধারার সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর নানান প্রবাহ ক্রমাগত শুকিয়ে মরে যাবার। গান-বাজনা-চিত্রকলার-সিনেমার মতো বিভিন্ন মাধ্যম মূলত ইন্ডিাস্ট্রিয়াল প্রোডাক্ট হিসেবেই আরো বিকশিত হবার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ কালচারাল মার্কেট হিসেবে বাংলাদেশ একবারে ছোট নয়। কোক স্টুডিওর মতো অনেক কালচারাল ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠবে, যার প্রধান লক্ষ এন্টারটেইনমেন্ট বিজনেস, তথা মুনাফা। কাজে কাজেই প্রচুর নির্বিষ শিল্পকলার চর্চা হবে, যা কখনোই সরকার, রাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করবে না, ডিস্টার্ভ করবে না! রাজনৈতিক আশাহীন প্রজন্ম যেখানে তাদের ব্রিদিং স্পেস খুঁজে বেড়াবে।

সামাজিক-রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে না উঠলে নতুন নেতাকর্মীরও জন্ম হয় না। গত ১৫ বছর ধরে দেখছি সারা দেশেই এমনকি বামপন্থি সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোরও দিনে দিনে কর্মী সংখ্যা কমে যাচ্ছে। মনে পড়ে, তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির শুধু নিয়মিত লং মার্চ কর্মসূচির কারণেও অসংখ্য তরুণ সাংস্কৃতিক কর্মীদের মধ্যে প্রাণের জোয়ার প্রবাহিত হয়েছিলো, অসংখ্য কর্মী তৈরি হয়েছিলো। তবে এওতো সত্য, নিপীড়ন যতো বাড়ে তার থেকে বের হয়ে আসার আকুতিও ততো বাড়তে থাকে সমাজের গভীরে। একটা লম্বা সময় ধরে চলমান ফ্যাসিবাদী শাসন চলাকালে তার সংগঠিত রূপ হয়তো ক্ষতিগ্রস্ত হয় কিন্তু ব্যক্তি চৈতন্যে সেই আকুতি জন্ম নেবেই। ব্যক্তির সেই চৈতন্যের অভিব্যক্তি কোথাও না কোথাও প্রকাশ পাবেই। ব্যক্তির সেই শিল্পভাষা সামষ্টিক হয়ে উঠতে পারে সমাজের যে কোন স্ফুলিঙ্গ থেকে উত্থিত দাবানলে। বিপ্লবী সাংস্কৃতিক সংগঠন, নেতাকর্মীর কাজ সেই দাবানলকে উস্কে দেবার লাগাতার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। সুতরাং রাষ্ট্র ক্ষমতায় যারাই আসুক, আমাদের লড়াই চালিয়ে যেতেই হবে গণতান্ত্রিক, ন্যায়, মর্যাদার  সমাজব্যবস্থা কায়েম করবার জন্য। তবে অবশ্য অবশ্যই নয়া বোঝাপড়ার বিস্তর প্রস্তুতি নিয়েই নামতে হবে মাঠে। নতুন সুর, নতুন স্বর, সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ভাষা জন্ম নিশ্চয়ই নতুন বাস্তবতায়। তাকে গ্রহণ করবার, পর্যালোচনা করবার প্রস্তুতি থাকতে হবে আমাদের। প্রস্তুতি নিতে হবে মৌলবাদ বনাম সেক্যুলারিজম, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসহ আরো এমন অসংখ্য প্রভাব বিস্তারি রাষ্ট্রীয় ভাবাদর্শের বিপরীতে বি-উপনিবেশিক চৈতন্যের আলোতে জনগণের বিবিধ বয়ানকে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ফ্রন্ট লাইনে নিয়ে আসবার।