কিংবদন্তি সাইদা খানমকে নিয়ে বই

অ+ অ-

 

বাংলাদেশের প্রথম পেশাদার নারী আলোকচিত্রী তিনি। ক্যামেরা হাতে থাকা এই সাহসী মানুষটির নামসাইদা খানম। কিংবদন্তি এ আলোকচিত্রীকে নিয়ে এবার বই লিখেছেন আরেক আলোকচিত্রী ও গবেষক সাহাদাত পারভেজ। একজন সাইদা খানম শিরোনামের বইটি প্রকাশ করেছে পাঠক সমাবেশ। বইতে আছে সাইদা খানমের নানা জানা-অজানা কাহিনি। সংকলিত হয়েছে ৬৪টি দুর্লভ আলোকচিত্র, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরসহ পাঁচ বরেণ্যজনের চিঠি, সাইদা খানমের আঁকা দুটি পেনসিল স্কেচ, হস্তলেখা, ছয়টি প্রচ্ছদ, ১৫টি পেপার কাটিং ও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নথি।

একজন সাইদা খানম বইটি মূলত একজন সংগ্রামী নারীর জীবনালেখ্য। তিনি এমন এক সময়ের আলোকচিত্রী, যখন অন্তঃপুরের মেয়েরা ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতেই ভয় পেতো। রক্ষণশীল সমাজ ও সময়ের সীমাবদ্ধতা পেরিয়ে তিনি ক্যামেরা হাতে ছবি তুলতে বের হয়েছেন। নানা ভ্রুকুটি উপেক্ষা করেছেন। কখনো ঢিল এসে পড়েছে গায়ে; বাড়িতে এসে বলেননি সে কথা, বাইরে বেরোনোর নিষেধাজ্ঞার ভয়ে! ছবি ছেপে রোষে পড়েছেন, বাড়ির সামনে বিক্ষোভ হয়েছে। কিন্তু ক্যামেরাটা তিনি হাতছাড়া করেননি। সারাজীবন ভিউ ফাইন্ডারেই ছিল তার চোখ। ক্যামেরার সঙ্গে জীবনযোগে ঘর-সংসারও করা হয়নি তার।

সাহাদাত পারভেজের লেখায় উঠে এসেছে সাইদা খানমের কর্মযজ্ঞ ও এক ঐতিহাসিক কালখণ্ড। ত্রিশ বছর তিনি সত্যজিৎ রায়ের ছবি তুলেছেন, সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। সত্যজিৎ তাকে স্নেহ ভরে ডাকতেন বাদল; আর তিনি ডাকতেন মানিকদা। সত্যজিতের কাছে তিনিই যেন বাংলাদেশ। তার জন্য ছবি তোলায় কখনো নিষেধ ছিল না সত্যজিতের শ্যুটিং স্পট থেকে অন্দরমহল পর্যন্ত। সুরসম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ তাকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন মাইহারে, সরোদ শেখানোর জন্য। স্বাস্থ্যগত কারণে সে সৌভাগ্য গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি তার।

তিনি ছবি তুলেছেন নজরুলের, জয়নুলের, বঙ্গবন্ধুর, চাঁদে পা রাখা তিন নভোচারীর। রানি এলিজাবেথ, মাদার তেরেসা, ইন্দিরা গান্ধী, কনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়; আরো কত কত বিখ্যাত মানুষ তার ক্যামেরার সামনে নিজেকে তুলে ধরেছেন। বেগম পত্রিকায় সংবাদচিত্রী হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন পঞ্চাশের দশকের রুদ্ধ সময়ে। গল্প লিখতে শুরু করেছিলেন তারও আগে। বাংলাদেশের প্রথম পেশাদার নারী আলোকচিত্রী তিনি। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী আনিসুজ্জামান সোহেল। দাম রাখা হয়েছে  ৬৯৫ টাকা।