ছোটগল্প যখন আরও ছোট হয়...
প্রথমা প্রকাশ করেছে কবি ও কথাকার রায়হান রাইনের গল্পগ্রন্থ কয়েকটি সাদা কাঠগোলাপ। ছোট ছোট ৭৬টি গল্প আছে এই সংকলনে। গল্পের বিষয় হয়ে এসেছে কিছু নিগূঢ় স্বপ্ন, কোনো কূটাভাস, কোনো উপলব্ধি বা একটি জাদুমুহূর্ত, কোনো উপমা কিংবা রূপক, তর্ক বা সংলাপ, কিংবদন্তির কোনো কুহক বা ইতিহাসের একটি মুহূর্ত, ভিন্ন তল থেকে দেখা কোনো সংবাদ, কোনো ইমেজ, আইডিয়া বা ঘটনা, কোনো ফ্যান্টাসি বা অনুভব এবং এরকম নানাকিছু।
বাস্তবতার বহুমুখ এবং বহুতলীয় বিস্তারকে ভাবলে সেটা ‘ক্যাওস’ ছাড়া কিছু নয়। কিন্তু একজন লেখক সেই ক্যাওস থেকে কোনো একটা অংশ নিয়ে তাতে অর্থময়তা দেন। অনুকাহিনি বা ফ্লাশ ফিকশনের ক্ষেত্রে সেই ‘অংশ’ বা ‘খণ্ড’টি হয় একটি দ্বন্দ্ব বা দ্বান্দ্বিক পরিস্থিতি। কয়েকটি সাদা কাঠগোলাপে সেই দ্বান্দ্বিকতার বিচিত্র রূপের দেখা মিলবে। সেই দ্বন্দ্ব কখনো ফ্যান্টাসি/স্বপ্নের সঙ্গে বাস্তবের, নীরবতার সঙ্গে শব্দের, আমির সঙ্গে প্রতি-আমির।
আমরা আড়চোখে যে বাস্তবতাকে দেখি, কিংবা লুকিয়ে লূপহোলের ভেতর দিয়ে দেখি যে বাস্তবতাকে, তা হয়তো আটপৌরে বাস্তবতাই, কিন্তু দেখার সেই ভঙ্গী সাধারণ পরিস্থিতিকে পাল্টে দেয়। গল্পের ন্যারেটিভ সেখানে নিজেই হয়ে ওঠে বিষয়, হয়ে ওঠে অর্থময়তার অবিচ্ছেদ্য অংশ। একইভাবে, আমরা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিয়ে কিংবা ভ্রুকুটি নিয়ে যে বাস্তবতাকে দেখি, সেটাও যেন সাধারণ নয়, দেখার চোখ তাকে অনন্য করে তোলে।
ছোটগল্প যখন আরও ছোট হয়ে আসে, গল্পের ক্যানভাসে তখন তীব্র আলো পড়ে। এ রকম গল্পে বাড়তি একটি শব্দও যেন পাত্র উপচিয়ে অর্থময়তাকে ঢেলে ফেলবে ধূলার ভেতর। কয়েকটি সাদা কাঠগোলাপের গল্পগুলো এরকমই। এসব গল্পে দেখার আলাদা দৃষ্টিকোণ অর্থময়তার ফ্রেমটাকে বদলে দিয়েছে কিংবা মুছে দিয়েছে সেই সীমানা যা কোনোকিছুতে আমাদেরকে অভ্যস্ত করে তোলে। আমরা ভিন্ন আলোয় দেখি সেই জুয়াড়িকে যে ব্যাংকে ভল্টের দায়িত্ব পেয়েছে, কিংবা সেই লোকটিকে যার অতীতের কোনো ঘটনা বা ঘটনার ভয়ঙ্করতা বাঘ হয়ে এসে পড়েছে তারই দরজায়, কিংবা সেই ‘আমি’কে যে বাখতাশ আবতিনের সঙ্গে নিপীড়নে নিহতদের কবর খুঁজতে যায়...। বইটির প্রচ্ছদ শিল্পী সব্যসাচী হাজরা। দাম রাখা হয়েছে ৪০০ টাকা।
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন