ষাট দশকের কবিতায় জাতীয়তাবাদী চিন্তা

অ+ অ-

কুদরত-ই-হুদার লেখা জাতীয়তাবাদী চিন্তার বিকাশ: বাংলাদেশের ষাটের দশকের কবিতা বইটি প্রকাশ করেছে বাংলা একাডেমি। বইটিতে ষাটের দশকে রচিত কবিতায় জাতীয়তাবাদী চেতনা কীভাবে রূপায়িত হয়েছে তা তুলে ধরা হয়েছে। কবিতা কীভাবে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-সংগ্রামকে প্রভাবিত করেছে তাও বইটিতে খতিয়ে দেখা হয়েছে। এটি শুধু ষাটের দশকের কবিদের কবিতায় জাতীয়তাবাদী চেতনার অন্বেষণ নয়, বরং চল্লিশ ও পঞ্চাশের দশকের কবিরাও ষাটের দশকে এসে রাজনৈতিক ঘূর্ণাবর্তের মধ্যে পড়ে কবিতায় কীভাবে সাড়া দিয়েছেন তারও পর্যালোচনা।

ষাটের দশকে এসে হঠাৎ বাংলা অঞ্চলে জাতীয়াবাদী চেতনার প্রকাশ ঘটেনি। এখানে চল্লিশের দশকেও একবার জাতীয়তাবাদী জাগরণ ঘটেছিল; পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদ। বাংলাদেশের কবিতার আরম্ভ দশকও সেই চল্লিশ। ফলে এই বইয়েরও শুরু সেই চল্লিশের দশক থেকেই। ষাটের দশকের পরিপ্রেক্ষিত হিসেবে বইটিতে পর্যালোচিত হয়েছে চল্লিশ ও পঞ্চাশের দশক। সেই হিসেবে এই বইটি আসলে চল্লিশ থেকে সত্তরএই ত্রিশ বছরের বাংলাদেশের কবিতার ইতিহাস। সঙ্গত কারণেই কবিতার ইতিহাসের সাথে সাথে উঠে এসেছে এই সময়ের রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতিরও ইতিহাস। কারণ কবিতা তো এসবেরই সংশ্লেষ। তবে এই ইতিহাস রচিত হয়েছে অবশ্যই জাতীয়তাবাদী চেতনাকে মাথায় রেখে।

বিদ্বেষ ছড়ানো বা পক্ষপাত প্রদর্শন করা গবেষকের কাজ না। বাংলাদেশের কবিতা, রাজনীতি, সংস্কৃতি বিষয়ক আলোচনায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদী ধারা আর বাঙালি জাতীয়তাবাদী ধারাকে মুখোমুখি দাঁড় করানো হয় এবং ঘৃণা ছড়ানো হয়। এই বইয়ে গবেষক কুদরত-ই-হুদা প্রাজ্ঞতার সাথে নির্মোহ থাকতে পেরেছেন। ফলে বাঙালি জাতীয়তাবাদ কেন ও কীভাবে ফুলের মতো একটু একটু করে শতদল মেলে দিল সেই ইতিহাসটা খুব ভালোভাবে ধরা পড়েছে হুদার এই গবেষণাকর্মে। পাশাপাশি এক সময়ের উত্তুঙ্গ পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদ ও এই ধারার কবিতা কেন ও কীভাবে ক্রমে স্তিমিত হয়ে পড়ল সেই সত্যও উদ্ঘাটিত হয়েছে।

এই গবেষণাকর্মের আকর্ষণীয় দিক এর ভাষা। প্রথাগত গবেষণায় যে-অচল-অনড়-নীরস ভাষাভঙ্গি ব্যবহার করা হয় হুদা তা থেকে অনেকটাই বেরিয়ে এসেছেন। শুধু বিষয়ের কারণে নয়, পাঠকের সাথে যোগাযোগ সক্ষমতার প্রশ্নে এই গবেষণাকর্মটি পাঠকের চিন্তার খোরাক যোগাবে। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী সব্যসাচী হাজরা। মূল্য রাখা হয়েছে ৪০০ টাকা।