কাছিমগালার নতুন সংস্করণ
উড়কি প্রকাশ করেছে কবি ও কথাকার কাজল শাহনেওয়াজের গল্পগ্রন্থ ‘কাছিমগালা’। ২০২৩ সালের সংস্করণটি কাছিমগালার দ্বিতীয় সংস্করণ। ১৯৯৩ সালে বইটি প্রথম প্রকাশ করেছিল শিল্পতরু প্রকাশনী। প্রকাশের পর বইটি বেশ সাড়া ফেলেছিল সাহিত্যাঙ্গনে। প্রথাগত কাঠামোর বাইরে কাজল শাহনেওয়াজের নিরীক্ষাধর্মী গল্পের বই এটি। গল্পে তিনি বিদ্যমান ঘটনাকে নিছক কাহিনি আকারে উপস্থাপন করেননি, করেছেন প্রতীকী রূপে। গল্পগুলো বাংলাদেশের আশির দশকের নানা ঘটনার উৎসাহ-উদ্দীপনা, আশা-আকাঙ্ক্ষা, সামরিক শাসন, বামপন্থি স্বপ্ন বিসর্জনের এক দলিল। যেন উর্ধ্বলোক থেকে নেমে এলো তারাদের গল্প বলার কায়দা। ফিরে এলো কচ্ছপের বিজয়, ফিরে এলো অমরত্বের অপেক্ষা। বস্তুত ‘কচ্ছপ’ প্রতীকে তিনি সমাজ-বাস্তবতার রূপ হাজির করেছেন।
বইতে সংকলিত হয়েছে ১০ টি গল্প। বইয়ের পহেলা গল্প ‘প্রথম কবিতা’। প্রায় কাব্যিক ভাষায় লেখা। যেমন—‘বেঁচে থাকতে হলে নোঙর চাই। ধাতব শেকলে বাঁধা। যে শেকলে সমুদ্রের শ্যাওলা আঁকা, ঢেউয়ে দোল খায়। বাঘের গর্জন চাই ছায়া থেকে, যে গর্জন রোদের পিঠে থাবা বসায়। চাই গভীর বাৎসল্য, মেঘ বাছুরের প্রতি। কান্তির আসবাবে কি তা আছে?’ গল্পে লেখক আটপৌড়ে জীবনের কথা বলেননি, বলেছেন সংকট ও সম্ভাবনার গোলকধাঁধা পেরুনো জীবনের কথা। যে ঘরকন্নার জীবন মানুষ বহন করে, সে জীবন পেরুনো এক জগৎ, যেখানে মানুষ মুক্ত জীবনের এক আস্বাদ পায়। গল্পের ভাষার প্রচলিত ছক ভাঙার যে খেলা, সে খেলায় কাজল এক কাব্যিক ভাষার আশ্রয় নিয়েছেন। ফলে যে কোনো সময় গল্পগুলো পড়তে আরামদায়ক।
কাছিমগালা বইয়ে বিষয়বস্তুর দিক থেকে কাজল জোর দিয়েছেন সমাজকাঠামো থেকে ব্যক্তির বিচ্যুতি, অনিশ্চয়তাবোধ, একাকীত্ব আর বোহেমিয়ান জীবনের ইচ্ছার স্বাধীনতা। সময় সেখানে সময়হীন, তবে সময় অবর্তমানও নয়। সে ক্ষেত্রে কাজল কিছুটা নৈর্ব্যক্তিকতা দিকেও যেতে চেয়েছেন। বইয়ের দ্বিতীয় সংস্করণে তিনি ভাষাগত সংস্কার করেছেন। তার মত, বাংলা ভাষায় স্ত্রী-বাচক সর্বনাম নাই, তাই বইয়ে ‘সে’ কে পাল্টে করা হয়েছে ‘শে’। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শিবনাথ বিশ্বাস, মূল প্রচ্ছদের ডিজিটাল মানউন্নয়ন করেছেন আতা মজলিশ। দাম রাখা হয়েছে ৩০০ টাকা।
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন