মাড়

অ+ অ-

 

সপ্তাহে দিন সাতটা, তার মধ্যে পাঁচ দিনই সুফলার মা আসে মাড় চাইতে।

তবে সেটার চাইতেও বড় সমস্যা সুফলার মায়ের আছে হাতটানের অভ্যাস। গামলায় মাড় নিতে গিয়ে রসুনটা-পেঁয়াজটা দেয় গায়েব করে। মহল্লার খালা-ভাবিদের ভাষ্য ঠিক এমনটাই। আমি আম্মার ন্যাওটা। দুপুরের খাওয়া-খাদ্য হয়ে গেলে যে বৈকালিক অবসর, আম্মার সাথে সে অবসরে আমিও বেরোই পাড়া বেড়াতে; এদিকে এমন কোনো জায়গা নেই যে-আড্ডায় ওঠে না সুফলার মায়ের কথা। আর উঠতেই, অবধারিতভাবে, তার মাড় চাওয়ার গল্প চাউড় হয় ঠোঁটে ঠোঁটে।

সবচে বেশি বলে বুলবুলি খালা। পান তার মুখে লেগেই থাকে, সেই মুখের ভেতর জর্দার সুবাস আর সুফলার মায়ের জন্য গালাগালি, ভিজে থাকে একই সাথে। পারলে আমি অবশ্য তার মুখে রাখি মুখ ঢুকিয়ে। ঘ্রাণে বন্ধ হয়ে আসে নাকআমার হাপুস নজর দেখেই কিনা কে জানে, কোনো কোনো দিন বুলবুলি খালা খেয়ে ফেলা পানের দলা জিভের আগায় নিয়ে, জিভটা সাপের মতন বের করে, আমার সামনে লকলকায়। মুখে থাকে সরল জিজ্ঞাসাখাবি?

আম্মার দিকে তাকাই ড্যাবা চোখে। সম্মতি দিলে নিশ্চয় ঝাঁপিয়ে পড়ব ওই জিভের ওপর। কিন্তু কোনোদিনই সম্মতিটা পাই না। আম্মা বলে, না জি বুবু। এইটুকুন বয়সে পান কী খ্যাবে?

তা এইটুকুন বয়েস যে আমার তা কিন্তু একেবারেই না। কিছু কিছু বুঝ ভেতরে ভেতরে খলবলায়। বুলবুলি খালার স্খলিত শাড়ি, ব্লাউজ উপচে বুকের খাঁজ, এইগুলোর দিকে না চাইতেও নজর চলে যায়। বুলবুলি খালা ট্যারাচোখে তাকিয়ে বুঝেও নেয় সবই কিনা কে জানে। আলগোছে আঁচলটা ঠিক করে নেয় তখনই, কিন্তু খুব যে ইচ্ছায় করে, মনে হয় না সেটাও। ফলে দুতিনটা মিনিট পরই, আঁচল আবার পড়ে গড়িয়ে, মুখে আবার পানের চোটপাট, এবং সুফলার মাকে নিয়ে বিস্তর গালিগালাজ।

এত মাড় সুফলার মা কী করে, এমন প্রশ্ন ওঠে অবশ্য মাঝেমধ্যে, কিন্তু সেটা অন্যদের ঝাপটানো সমালোচনায় হারিয়ে যেতে সময়ও নেয় না। সিদ্ধান্ত সহজমাড় নেয়ার নামে তো শুধু আসে আসলে... কিন্তু যাওয়ার সময় আলুটা, মুলাটা, পেঁয়াজটা, আনাজটা ভট মেরে নিয়ে যাওয়াই তো সুফলার মা’র লক্ষ্য। এটাই তার পেশা। চুরিটাই তো তার মূল উদ্দেশ্য। বুলবুলি খালা বলে, সুফলার মা খানকি। সুফলার মা চোর!

চোর ব্যাপারটা ধরতে পারি, খানকিটা পারি না। ফিরতে ফিরতে আম্মাকে জিজ্ঞেস করি। আম্মা দেয় অদ্ভুত উত্তরবলে, বিকালে তুই খেলতে যাইস না ক্যান মাঠে? আমার পিছে পিছে কী?

 

এগারটা থেকে সাড়ে এগারটার দিকে আসে সুফলার মা। দরজায় কড়া নাড়ে একবার। তারপর সুর করে ডাকেভাবি? ভাবি আছেন জি বাড়িতে?

সবাই জানে এ সময় আম্মা বাড়িতেই থাকবে, তাও থাকবে ওই রান্নাঘরেই জগত ওলোট-পালোট হয়ে গেলেও এর অন্যথা কেউ কোনোদিন দেখেনি। আমাদের সদর দরজা থেকে রান্নাঘরে দূরত্ব দশ কদমও না এদিকে। একটু উঁকি দিলে দেখাও যাবে আম্মাকে। তবুও সুফলার মায়ের প্রতিদিনের এই এক নাটক। আম্মাও অবশ্য এ নাটকে অংশ নেয়। রান্নাঘরের চুলার ভেতর লাকড়ি ঠেলে দিয়ে বলেকে?

হামি জি ভাবি। সুফলার মা। কী করছেন জি?

বলতে বলতে সুফলার মা ঢুকে যায় ভেতরে। দাঁড়ায় একেবারে রান্নাঘরের সামনে। হাতে অ্যালুমিনিয়ামের গামলা। দেখতে পাচ্ছে রান্না করছে আম্মা, তাও গলায় মধু ঢেলে বলেরানছেন জি ভাবি?

আম্মা আর কী করবে, পিড়াটা ঠেলে দেয় তা দিকে। তবে বসতে বলে না। বরং বলে, রান্না ছাড়া আর কাজ কী! রহিমের আব্বা বাজার ক্যরা আনতে দিরুম ক্যরছে জি অ্যাইজ। কখন যে কী করব মাথায় খারাপ ল্যাগছে...

‘ভাত? ভাত রানছেন জি ভাবি?

‘হুম। রানছি না ফের।

‘মাড়? মাড়গুলান কি এট্টু পাব?

আম্মা একটু সময় নেয় এবার। বুঝতে পারি শক্ত কথা বলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে আসলে। ওদিকে সুফলার মায়ের মুখে একটা আশঙ্কাও ছড়িয়ে পড়েছে হঠাৎই। এই বুঝি মুখের ওপর দরজাটা বন্ধ হয়ে গেল! সে তাড়াতাড়ি বলে ওঠে, আসলে সুফলার আব্বা কাইলকা চাঁপাই য্যাবে তো, কোর্টে একটা কাজ... ওই যে ডহরের পাশের যে ভুঁইটা হাড়ঘে... ওইটা জাল ক্যরা নিছে সুফলার চাচারা... ওই ল্যাগায়... শার্টে দিতুন জি একটু মাড়...

আম্মার ডাল টগবগায়। মুখেও সেই টগবগানো আভা। অন্যদিন হলে ডাল নামিয়ে নিত আম্মা, আজ নামায় না। বলে, ক্যান? তুমরা কি খালি পোলাও র‍্যানছো নাকি, মাড় হয় না তুমারঘে?

সুফলার মা উত্তর দেয় না। গুমোড় ফাঁস হলে দেবেই বা কী! আম্মা মুখ ঝামটায় শুধু, চুলায় আঁচ বাড়ায় অকারণেই। বলে, ‘অ্যাজ রহিমদের স্কুলের ডেরেসে মাড় দিতে হ্যবে... অ্যাজ পারতুন না মাড় দিতে!

কথাটা কষ্ট করেই হজম করে সুফলার মা। যেন একটা থাপ্পড়ই খায় গালে। অদৃশ্য। কিন্তু অপমানের নীল একটা স্রোত গালের ওপর দিয়ে বয়ে যেতে দেখি আমি। হাসার চেষ্টা করে জোর করে, পারে না। একটু মায়াই লাগে আমার। আম্মার লাগে না। বলে, ফের কুনোদিন লিও ন্যাহলে...

এরপর আর থাকা যায় না। কোনোমতে মাথাটা নাড়িয়ে চলে যায় সুফলার মা। আম্মা গড় দেওয়া মাড় ফেলে দেয় ড্রেনে।

বিকালে হয় আম্মার জয়জয়কার; বুলবুলি খালা তো বটেই, মিনা ভাবিও হড়বড়ায়। আম্মাকে কথা দিয়ে জাপটেই ধরে প্রায়এই এদ্দিনে একটা কামের কাম করছেন জি ভাবি! চোরটাকে এমন ক্যরাই শায়েস্তা করতে হ্যবে... তাহ্যলে খানকিটা বুঝবে কত ভাতে কত মাড়...

প্রশংসা কার না ভালো লাগে!

দেখলাম, আম্মার নাকফুলটা বিকালের কমলা রোদে বারবার ঝিলিক দিয়ে যাচ্ছে। বুলবুলি খালা চিবানো পান সমেত জিভটা বার করে দেয় আমার সামনে। আজকে আর জিজ্ঞাসা না, সোজা নির্দেশ করবখা!

আম্মার দিকে তাকাই আমিও তখন। ওমা, মুখে কোনো না নাই তারও। বরং অদ্ভুত এক জৌলুশ। ৪০/৪২ বছরে এত প্রশংসা কখনো পায়নি সে। সেটা এখনও হজম করে উঠতে পারেনি। বুলবুলি খালা আর অপেক্ষা করে না; আমার মুখের ভেতর ঠুসে দেয় তার জিভটা। হা করি দ্রুত। একটা মিষ্টি সাপ, চিবানো পান-জর্দাসমেত, ঢুকে যায় মুখের ভেতর। শীতল অথচ উষ্ণ, পিচ্ছিল অথচ দৃঢ়! এক নিমিষেই বেরিয়ে আসে জিভটা, কিন্তু আমার জিভে পড়ে থাকে তার চিরস্থায়ী জর্দাঘ্রাণ। আমার হাফপ্যান্টে সেই প্রথম অনুভূত হয় আলগা টান। লালচে আভা সেদিনের মতো ছড়িয়ে পড়ে সারা শরীরে। সামান্য জর্দায় এত নেশা?

ফিরতে ফিরতে আম্মা বলে, বুলবুলির কাছে আর যাবি না, বুঝলি?

আমি উত্তর করি না। আমি তখনও, সারা মুখের ভেতর নিয়ে, চিবিয়ে যাচ্ছি সন্ধ্যার বুলবুলি খালাকেই।

 

এরপর আরো তিন দিন আসে সুফলার মা। হাতে অ্যালুমিনিয়ামের সেই গামলা। গলায় জোর করে নিয়ে আসা খুশি। আর চোখে প্রাপ্তির উচ্চাশা মাখানো ঝিলিক। সেটা মিলিয়ে যেতে সময়ও নেয় না অবশ্য। আম্মারা তখন একজোট। অনেক তো হয়েছে... সুফলার মাকে আর মাড় দেয়া যাবে না। চোরকে চুরি করতে দেয়ার সুযোগ কেইবা করে দেবে?

এর মধ্যে অবশ্য আমার সন্দেহ শুরু হয় সুফলার মায়ের চুরির ব্যাপারটা নিয়ে। আমি কখনোই তাকে দেখিনি এটা-ওটা সরাতে। কিংবা আম্মার অনুপস্থিতিতে রান্নাঘরে ঢুকে যেতে! চোর হলে সে কি কখনো না কখনো চোখে পড়ত না আমাদের?

আমার এই সন্দেহকে কষে একটা থাপ্পড় মারতেই কিনা কে জানে, বাজারে ধরা পড়ে সুফলার মা। বমাল।

ঘটনাটা ঘটে এমন যে মাজিদ মিষ্টিওয়ালার দোকানে গেছিল সুফলার মা। চেয়েছিল এক পোয়া রসগোল্লা। মাজিদের ছেলে নাইম চারটা রসগোল্লা তুলে যখন মাপ দিচ্ছিল তখনই সুফলা মা নাকি হাত ঢুকিয়ে দেয় ক্যাশে। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই ব্লাউজের ভেতর চালান করে দেয় তিনটা পাঁচশ টাকার নোট। ব্যাপারটা নাইমের চোখে ধরা পড়তে সময় নেয় না। তৎক্ষণাৎ ব্লাউজ খুলে উদ্ধারও করা হয়েছে ঘর্মাক্ত নোটগুলোকে।

বুলবুলি খালা খুব রসিয়ে রসিয়ে গল্পটা করে। সুড়ুৎ করে পানের পিকও টেনে নেয় মুখের ভেতর এরই মধ্যে। বলে, খোলা বাজারে বেলাউজ খুলছে খানকিটা। খুললে কি... চামচিকার মতন দুধ... কেহু চোখের ঝোলও ঝ্যাড়বে না!

বলতে বলতে আমার দিকে চকিতে তাকিয়ে নেয় বুলবুলি খালা। চেয়েও দৃষ্টি সরাতে পারি না আমি। চুম্বকের মতোই আটকে আছে দৃষ্টি বুলবুলি খালার বুকের দিকে। আঁচলটা সরে আছে। ভরাট পুষ্ট বুক। সত্যিই, সুফলার মা এর কাছে কিছুই না!

আম্মা বলে, কী যে কহনা তুমি ব্যাটাবেটির সামনে... তালবাল কিছুই নাই তোমার!

বুলবুলি খালা মিচকা হাসে। বলে, ব্যাটাও বড় হ্যয়া গেছে জি আপনার। জমিনে শুয়ালে জমিন ফুটা ক্যরা দিবে দেইখেন...

কান লাল হয়ে যায় আমার। আম্মা ধমকায়চুপ করো তো বুলবুলি...

বুলবুলি খালা চুপ একটু করেই যায়; কিন্তু সে আর কতক্ষণ! একটু পরেই আবার বলে ওঠে, সুফলা... ওই খানকির বেটিটা... মিরগির রুগী ক্যহা ব্যাঁচা গেছে এবার। ন্যাহলে শালিস ব্যসতো। ভরা বাজারের ভিত্রে বেলাউজ খুল্যা... ছি ছি ছি... কেলেংকারি কারবার!

সালিশ না বসলেও সুফলার মায়ের চলাফেরা আগের মতো থাকে না আর। আমাদের মহল্লাতে তাকে আর তেমন দেখাও যায় না আসতে। একদিন জিজ্ঞেসই করে ফেলি আম্মাকেসুফলার মা আর আসে না আম্মা?

আম্মা উত্তর করেনা। কিন্তু প্রশ্নটা যে তার ভেতরেও আছে তা বোঝা যায়। চোখে দেখি বিচলনও। কিন্তু মিনা ভাবি বলে, যাক যা হওয়ার ভালো হ্যয়েছে জি। চুন্নিটা নিজেই বিদায় নিছে।

আম্মা বলে, কই গেছে?

‘শুনছি যে রাজশাহী নাকি গেছে।

‘ক্যান?

‘কে জানে ক্যান!

বুলবুলি খালা হাসে। রগড়ের ভাঁজে বলে, কেহু জানুক কি না জানুক... হামি জানি, হামি জানি...

আম্মা একটু আশা নিয়েই জিজ্ঞেস করে, ক্যান গেছে রাজশাহী?

‘খানকিরা ক্যান যায়?

বুলবুলি খালা এবার শরীর দুলিয়ে হাসে৷ তার আঁচল খসে আসে আবারও। জর্দার ঘ্রাণ ছড়িয়ে যেতে থাকে বাতাসে। আমার নাক বন্ধ হয়ে যায় সুখে। চোখ আটকে যায় বুলবুলির খালার দুলে দুলে ওঠা শরীরের অতন্দ্রে।

 

সুফলার মা কেন রাজশাহী গিয়েছিল তা জানা যায় আরো কিছুদিন পর। সুফলার মৃত্যু সংবাদের সাথে। তের বছর বয়সী সুফলার মৃগিরোগ ছিল। মাঝে রোগের তীব্রতা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়লে তাকে নিয়ে প্রথমে জেলা হাসপাতালে, পরে রাজশাহী নেয় সুফলার মা। লাভ তাতে হয়নি অবশ্য কিছুই। নবম দিনে সুফলা হাল ছেড়ে দিয়ে মৃত্যকে সহজ হিসেবে গ্রহণ করে। বলা যায় প্রায় নীরবেই।

এসব কিছুই হয়তো আমাদের জানা হতো না; কিন্তু একদিন সুফলার মা নিজেই আসে বাড়িতে। নাহ, অ্যালুমিনিয়ামের গামলা নিয়ে আসেনি। সুর করে ভাবিও ডাকেনি। দরজায় কড়া নাড়ার ভদ্রতাটুকুও আজ সে করেনি। আম্মা উঠানে কাপড় মেলছিল রান্না শেষে। সুফলা মা নিঃশব্দে পেছনে এসে দাঁড়ায় শুধু। অস্ফূটে বলেভাবি...

আম্মা ঘুরে তাকায়। সুফলার মা আম্মার পায়ের কাছে পড়ে। দুহাত দিয়ে আম্মার দুটো পা জাপটে ধরে। বলেঅনেক জ্বালাইছি আপনাকে ভাবি, হামাকে মাফ ক্যরা দিয়েন জি...

আম্মা কী করবে বুঝতে পারে না। সুফলার মাকে তুলতে চায় মাটি থেকে, কিন্তু নেই যেন সেই শক্তিও। সুফলার মা বলে, এই কদিন সুফলা খালি আপনার কথা ক্যহতো জি ভাবি... ক্যহতো যে সে স্যারা উঠলে আপনার কাছে অ্যাসবে... দেখা করবে...

আম্মার চোখে বিচলন। এমনকি প্রশ্নও। অথচ কী এক জড়তায় প্রশ্নটুকুও করতে পারে না আম্মা।

সুফলার মা এদিকে থামে না, বলেই যেতে থাকে... সুফলা ক্যহতো... রহিমের মা খালাম্মা খুবই ভালো জি আম্মা। সে হামার খাওয়ার জন্য মাড়ের ভিতরে বেশি ক্যরা ভাতও দিয়া দেয়... লবণ দিয়্যা মাড়ভাত ম্যাখা খ্যাতে জে কী মজা... ভাবি জি, ও ভাবি... আপনার ভাইয়ের জমি জাল হওয়ার পরে সুফলার মুখে যে দুটা ভাত দিতে পারছি সে আপনার দেওয়া মাড়ের জন্যই পারছি... বেটিটা আপনাকে দেখতে চ্যাহছিল... তার এই শেষ সাধটা মিট্যাতে পারনু না জি...

আম্মা পাথরের মতো দাঁড়িয়ে থাকে। গড় দেয়া হাড়ি থেকে মাড় উপচে উপচে পড়তে থাকে রান্নাঘরে। আম্মা বা সুফলার মা, কারো কোনো বিকার হয় না।