জিয়া হাশানের ভাষার পথ?
সোনায় সোহাগা কাহিনি
জিয়া হাশান
প্রকাশক: হাওলাদার প্রকাশনী
প্রচ্ছদ: মোস্তাফিজ কারিগর
মূল্য: ৩০০ টাকা
দীর্ঘ দিন ধরে গল্প লিখছেন জিয়া হাশান। বিষয় এবং গদ্যভাষা—এই দুয়ের বৈচিত্র্যের কারণে তিনি অনেক আগেই পাঠক ও সমালোচকদের নজর কেড়েছেন। জিয়া হাশানের বিষয়-ভাবনার প্রসঙ্গে বলতে হয়, তার ঝুলিতে সোনায় মোড়া কাহিনির কোনও অন্ত নেই। সেসব কাহিনি খুব সহজেই লক্ষ্যভেদী গল্পে রূপ নেয়। লক্ষ্যভেদী—এই শব্দটা আনতে হলো এই জন্য যে জিয়া হাশান যা বলতে চান তা তিনি ঠিকঠাকমতো বলেন—পরতে পরতে যুক্তি গেঁথে তোলা কোনও সন্দর্ভেও আমরা যেমন একটা স্পষ্টতা লক্ষ করি। গল্পের বিষয়বৈচিত্র্যের সাথে সমান তালে চলতে থাকা গদ্যভাষা সংক্রান্ত তার যত পরীক্ষা-নিরীক্ষা। নতুন ভাষা খুঁজবার অভিযানে এমনই অক্লান্ত তিনি।
আজকালকার গল্পে বা উপন্যাসে আমরা দেখছি যে বেশির ভাগ লেখকই বিষয় হাতড়ে মরছেন যেন! এর ফলাফল এই যে আমাদের সামনে হাজির হচ্ছে মূলতই মধ্যবিত্তকে জীবনের পর্যবেক্ষণের নামে লেখকদের ব্যক্তিক সব অনুভূতির প্রকাশ। মধ্যবিত্তের আশা-আকাঙ্ক্ষার গল্প তাই আমাদের শোনা হয় না, আমরা কেবল কিছু রোমান্টিক কচকচানিই দেখতে পাচ্ছি। জিয়া হাশান এখানেই ব্যতিক্রম ধারার এক জন সৈনিক বলে বিবেচিত হয়ে আসছেন। তার গল্পে কেবল মধ্যবিত্তের জীবনই আমরা দেখি না, সেখানে ঢুকে পড়ছে বাংলাদেশের বৃহৎ জীবন—গার্মেন্টস-ফার্মের শ্রমিক, ইটভাটার শ্রমিক, ক্ষেতখোলার সামান্য কৃষক প্রভৃতি। জিয়া হাশানের ‘সোনায় সোহাগা কাহিনি’-তে এদের পদচারণাই মুখ্য হয়েছে।
‘সোনায় সোহাগা কাহিনি’-র ‘গ্রামে তার খাঁটি ও নির্ভেজাল নাম...’ শীর্ষক গল্পে আমরা দেখি, মেঘনা-পারের আবুইল্যার চরে অদ্ভূত এক ঘটনা ঘটছে—লঞ্চগুলোর সার্চ লাইটের তীব্র আলো এসে পড়ছে বেড়ার ঘরগুলোতে, উজ্জ্বল হয়ে উঠছে ঘরগুলোর কোনাকানচি, আর তা’তে করে নারী-পুরুষের গোপনীয়তা বিঘ্নিত হচ্ছে। এর ফলাফল এই যে নারীরা অন্তঃসত্ত্বা হতে পারছে না। জিয়া হাশান তাই রিট পিটিশন পর্যন্ত গল্পকে টেনে নিয়ে যেতে কুসুর করেন না। পরিপার্শ্ব থেকে এভাবে রাজনীতি আমাদের ব্যক্তিক জীবনে সার্চ লাইটের তীব্র আলোর মতো করে অনুপ্রবেশ করে। ‘পোয়াতি বানানোর খেলা’-তে আমরা দেখি, যুবতী খুদি আর তার চৌদ্দ বছরের মেয়ে সিতু শ্রমিক হিসেবে কাজ করে কোনও গার্মেন্ট-ফার্মে। সমস্যা হয় যখন আন্তর্জাতিক শর্ত হিসেবে শিশু শ্রমিকদেরকে ছাটাইয়ের প্রশ্ন ওঠে। খুদি তার গ্রামে গিয়ে চেয়ারম্যানের কাছ থেকে বয়স বাড়িয়ে দিয়ে জন্ম নিবন্ধন সনদ তুলতে যায়। সেখানে উপরি দেবার প্রশ্ন এলে খুদি দেখে যে তার পক্ষে এভাবে অর্থ ব্যয় করা সম্ভব নয়। তো উপায় কি? পাড়াপড়শিরা তাকে বুদ্ধি দেয়, যদি সিতু গর্ভবতী হয় তবে তার গতর স্বাস্থ্যে ভরে উঠবে, আর তখন তাকে পূর্ণবয়স্ক শ্রমিক হিসেবে চালিয়ে দেয়াটা সম্ভব হতে পারে। পরে অবশ্য গর্ভনাশ করতে হবে কেননা অন্তঃসত্ত্বাদেরকে কোনও গার্মেন্ট-ফার্মেই কাজে রাখা হয় না। এই যুক্তি মেনে নেয় খুদি। তখন পাড়াপড়শিদের সহযোগিতাতে দৃশ্যপটে আবির্ভূত হয় সাইদুল। সাইদুল ইতোমধ্যে নারীদেরকে গর্ভবতী করবার ক্ষেত্রে বুৎপত্তি দেখিয়েছে। সিতুর মতো স্বাস্থ্যহীনার সাথে শুতে রাজি হয় সাইদুল তবে সে শর্ত জুড়ে দেয় একটা—সিতুর মা খুদিকে সে ভোগ করতে চায়। এ প্রস্তাবে হতভম্ব হয়ে যায় খুদি। সাইদুলের এক কথা—শ্রমের মজুরি তো দিতে হবে! আর ব্যাপারটা তো হরহামেশাই ঘটছে গার্মেন্ট-শ্রমিকদের ভেতরে—মা’র হিল্লে করতে হলে সাথে উপরি হিসেবে তার মেয়েকেও চাই! কাজেই রাজি হতেই হয় খুদিকে। দেখা যায়, সাইদুল যখন সিতুকে নিয়ে ঘরের দোর দিচ্ছে তখন ডাবল কনডম নিয়ে নিজের পালার জন্য বাইরে অপেক্ষা করতে থাকে খুদি। এমনই হৃদয় বিদারক গল্প জিয়া হাশান আমাদের সামনে হাজির করেন! মূল্য দিচ্ছে কারা? কোনও রকমে খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকা তবে এত অপমানকর? আমরা, মধ্যবিত্তরা, দরিদ্র মানুষদের এই জীবন সম্পর্কে কতটুকু জানি? জিয়া হাশান আমাদেরকে সেই খামতির কথা এভাবে স্মরণ করিয়ে দেন।
‘প্রাণ প্রোডাক্ট’ তীব্র অস্বস্তিতে এমন আরেকটা গা-শিউরে দেবার মতো গল্প। গোলাপি ব্রিক ফিল্ডের ইটের মান পড়ে যাচ্ছে। মাটির কোনও সমস্যা নেই—পরীক্ষা-নিরীক্ষা তা আগেই বলেছে। ইটের মান ভাল হচ্ছে না বলে ইটভাটার মহাজন করিম বেপারি ব্যবসা গুটিয়ে নিতে চায়। কাজেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে লতিফ কারিগর। সকলেই বলে যে আসলে প্রেতাত্মারা ভর করেছে ভাটাতে। এমন অশুভ কারণেই ভাটার ইট আর মানসম্মত হচ্ছে না। তারা বলে, জ্যান্ত কোনও প্রাণ বলি দিলেই কেবল প্রেতাত্মারা শান্ত হতে পারে। কাজেই লতিফ কারিগর আছিয়া নামের ভাসমান, স্বামীহারা এক যুবতীর সাথে সঙ্গম করে এমন একটা ভাবনা থেকে—ভাটার আগুনে সে নিজের সন্তানকে উৎসর্গ দেবে। ‘বিনয় বালার বাড়ি দখলের দিন’ গল্পটা অস্বস্তির কারণে আমাদের গা শিউরে দেয় না বটে, তবে গল্পে বর্ণিত নগ্ন রাজনীতি আমাদেরকে বিহ্বল করে দেয়। নিচু জাতের মানুষ বিনয় বালা। ছোট একটা জায়গাতে বাড়ি তুলে থাকে সে, চাষাবাদের জন্য তার কোনও জমি নেই, মানুষের জমিতে শ্রম দিয়ে সে খায়। তার এই বসতবাটির ওপরে নজর পড়ে এলাকার ক্ষমতাসীন দলের নেতা আজিজ সিকদারের। বিনয় বালার বসতবাটি কিনে নিয়ে সে কাঠ চেড়াইয়ের কল বসাতে চায়, বিনিময়ে সে অর্থ দিতে চায় কিছু। বিনয় বালা বুঝতে পারে, আজিজ সিকদার ঠিকঠাকমতো জমির দাম পারশোধ করবে না। জমির দাম পেলে সাম্প্রদায়িক সংখ্যাগরিষ্ঠদের দেশে সে আর থাকতে চায় না, চলে যেতে চায় ওপারে। এমন একটা পরিস্থিতিতে সে আজিজ সিকদার-বিরোধী চেয়ারম্যান সোবহান মৃধার কাছে যায়। সোবহান মৃধা আরেক কাঠি সরেস—আজিজ সিকদারের আগ্রাসন ঠেকাবার জন্য সে বিনয় বালার বসতবাটিতে তার অনুগতদের জন্য একটা ক্লাবঘর তুলতে চায়। এবার প্রমাদ গোনে বিনয় বালা কেননা ক্লাবঘর তো আসলে মাগনা জমি দখলের রাস্তা ছাড়া আর কিছুই নয়! এমন একটা উভয় সঙ্কটে এলাকার কোব্বাত চাচা বিনয় বালার বাড়িতে এক জন হুজুর নিয়ে আসে। হুজুর দোয়াকালাম পড়ে বেঁধে দেয় বিনয় বালার বাড়ি যাতে করে কেউ আর ক্ষতি করতে সীমানার ভেতরে ঢুকতে না পারে! তো লাভ হয় এতে করে—বিনয় বালার বাড়ি দখল করতে আসে আজিজ সিকদারের দল; তারা দেখে, আগে থেকেই সেখানে ওৎ পেতে আছে চেয়ারম্যানের দলের লোক জন। কিন্তু দুই আগ্রাসী দলের কেউ আর ভয়ে বিনয় বালার বাড়ি দখল করতে এগোয় না।
দেখা যাচ্ছে, জিয়া হাশান আঞ্চলিক ক্রিয়া [প্রথম উদাহরণ: ঝাঁপাইয়া; দ্বিতীয় উদাহরণ: ধরাইয়্যা, ছুটাই, খাইয়্যা, দিয়া, ধরা খাওয়া, ছাড়াইয়্যা, কইরা লয়] এবং কথ্য ভাষার মান ক্রিয়াপদ [প্রথম উদাহরণ: হানা দেয়, করে তোলে; দ্বিতীয় উদাহরণ: দেয়, ফেরা, আনে, মুখ থুবড়ে পড়া] একই বাক্যে মিলিয়ে প্রয়োগ করছেন। ব্যাকরণে এটাকে আমরা ‘গুরুচণ্ডালী দোষ’ বলে থাকি। আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে, এই ক্রিয়াপদগুলো সবই আঞ্চলিক ক্রিয়াপদ হলে কী আরও ভাল হতো না?
এ তো গেল জিয়া হাশানের ‘সোনায় সোহাগা কাহিনি’-র গল্পের জগতের কথা। এবার তার ভাষাশৈলী নিয়ে আলাপ সেরে নিতে চাই। সচরাচর কথ্য রীতির গদ্যে আমরা একটা মান ভাষার মৌখিক রীতি অনুসরণ করে থাকি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং প্রমথ চৌধুরী এমন একটা কৌশল নিয়ে এগিয়েছিলেন। এ পথেই দু’বাংলার লেখকেরা এখন অবধি হাঁটছেন। অবশ্যই ভাষাতে আঞ্চলিক বিভিন্নতা রয়েছে, তা প্রতিফলিত হয় কেবল সংলাপ-অংশের নাম শব্দ, বিশেষণ এবং ক্রিয়াপদে। আঞ্চলিক ভাষাকে ধরবার জন্য এই রীতিই আমরা এখন পর্যন্ত অনুসরণ করে আসছি। জিয়া হাশান কথ্য রীতিতে আঞ্চলিকতা প্রযুক্ত করছেন একটু ভিন্নভাবে। তিনি যেটা করছেন তা হলো: সংলাপ-অংশ বাদেও বর্ণনামূলক জায়গাতে তিনি আঞ্চলিক নাম শব্দ, বিশেষণ এবং ক্রিয়াপদ ব্যবহার করছেন। ক’টা উদাহরণ দিয়ে ব্যাপারটা পরিষ্কার করবার চেষ্টা করা যাক:
[১] ‘...তা বিপুল দাপটে আবুইল্যার চরের ওপর ঝাঁপাইয়া পড়ে। তার ঘরদুয়ার উঠান-বারান্দা মায় গোয়াল-ভাড়ারঘর—সর্বত্র বিপুল বিক্রমে হানা দেয়। আলোয় উদ্ভাসিত করে তোলে পুরা চরাচর।’ [‘গ্রামে তার খাঁটি ও নির্ভেজাল নাম...’, পৃ.১০]
[২] ‘...মেয়াদ পাড়ি দেয়া এক বাক্স অষুধ একদিন আমার হাতে ধরাইয়্যা দেয় ম্যানেজার...মোটা কমিশনের মুলার টানে বাইক ছুটাই। আধাবেলার মাথায় ম্যানেজারের প্রেসক্রাইব করা গঞ্জে হাজির হই। কিন্তু ভাগ্য সেদিন ফেরে না, বরং পুরা কান্নি খাইয়্যা গোত্তা দিয়া মুখ থুবড়ে পড়ে। ফলে পুলিশের হাতে বামাল ধরা খাই। দুদিনের মাথায় ম্যানজার ছাড়াইয়্যা আনে কিন্তু কোম্পানি স্ট্যান্ড রিলিজের কড়া সাবানের এক ঘষায় গায়ের দাগ ছাফ-ছুফ কইরা লয়। [‘আমার আলাপ কেবল বিজনেস নিয়া’, পৃ.৩০]
উপরের উদাহরণ দু’টোতে আমরা বেশ কিছু আঞ্চলিক নাম শব্দ, বিশেষণ এবং ক্রিয়াপদের উপস্থিতি দেখতে পাচ্ছি। শব্দগুলো মোটা দাগে বাংলাদেশের পূর্ব এবং দক্ষিণ অঞ্চলের কথ্য ভাষা থেকে নেয়া। উল্লেখ্য, এই শব্দগুলো দীর্ঘ দিন ধরে বাংলাদেশের রাজধানীতে বসবাসরত বিভিন্ন অঞ্চলের মুখে মুখে বিবর্তনের প্রক্রিয়াতে স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। এদিক থেকে শব্দগুলো আমাদের চোখে লাগছে না। আমরা স্মরণ করতে পারব, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যুক্তি দিয়েছিলেন যে কলকাতা এবং কলকাতার সন্নিহিত এলাকার আঞ্চলিক ভাষাই কথ্য রীতিতে প্রয়োগ করা শ্রেয়। কথ্য ভাষার রাজধানী-তত্ত্বের এই যুক্তিতে এসব নাম শব্দ, বিশেষণ এবং ক্রিয়াপদের ব্যবহার নিয়ে আপত্তি করা চলে না। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, জিয়া হাশান আঞ্চলিক ক্রিয়া [প্রথম উদাহরণ: ঝাঁপাইয়া; দ্বিতীয় উদাহরণ: ধরাইয়্যা, ছুটাই, খাইয়্যা, দিয়া, ধরা খাওয়া, ছাড়াইয়্যা, কইরা লয়] এবং কথ্য ভাষার মান ক্রিয়াপদ [প্রথম উদাহরণ: হানা দেয়, করে তোলে; দ্বিতীয় উদাহরণ: দেয়, ফেরা, আনে, মুখ থুবড়ে পড়া] একই বাক্যে মিলিয়ে প্রয়োগ করছেন। ব্যাকরণে এটাকে আমরা ‘গুরুচণ্ডালী দোষ’ বলে থাকি। আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে, এই ক্রিয়াপদগুলো সবই আঞ্চলিক ক্রিয়াপদ হলে কী আরও ভাল হতো না?
ভাষা একটা গতিময় চলরাশি। বিবর্তনের মাঝ দিয়ে ভাষার মৌখিক রূপের গতি-প্রকৃতি কী হবে তা কেউ বলতে পারবে না। সে ক্ষেত্রে মৌখিক ভাষার মান বাঁধতে যাওয়াটা এক ধরনের স্থির ধারণা বৈকি! তবে, স্বল্প কালে, মৌখিক ভাষাকে আশ্রয় করে গড়ে ওঠা লিখিত ভাষার রূপ কেমন হবে তা নিয়ে ভাবতে দোষ হয় না কেননা লিখিত ভাষার জরুরি ব্যবহারিক মাত্রা রয়েছে। কথাটা তুলবার কারণ এই যে আমরা দেখছি, ব্যবহারিক ভাষা যেমন লিখিত ভাষাকে প্রভাবিত করে তেমনই লিখিত ভাষাও আবার মানুষের ব্যবহারিক ভাষাকে প্রভাবিত করতে পারে যা লিখিত রূপ থেকে ছড়িয়ে যায় মানুষের মুখে মুখে। এমন বিতর্ক প্রমথ চৌধুরী এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে সেকালের লেখক এবং পণ্ডিতদের হয়েছে। শেষপর্যন্ত কলকাতা নির্ভর মৌখিক ভাষা অবলম্বনে গঠিত লিখিত ভাষার একটা কথ্য রূপ আমরা সকলে গ্রহণ করেছি। এখানে জিয়া হাশান আমাদেরকে প্রশ্ন করেন, তবে রাজধানী হিসেবে ঢাকায় প্রচলিত গড় মৌখিক ভাষার রূপ [সব আঞ্চলিক ভাষা যেখানে এসে দ্রবীভূত হয়] কেন লিখিত ভাষাতে আমরা মেনে নেব না? এ বিতর্ক চলছে, চলুক। বিবর্তন কোন দিকে যাবে তা বলাটা শক্ত বৈকি। তবে একটাই কথা—এখানে মধ্যপন্থার কোনও অবসর নেই—যদি ভবিষ্যতের লিখিত ভাষার চেহারা ঢাকাভিত্তিক একটা গড় ভাষা অনুযায়ী নির্দিষ্ট হয়ে যায়, সেটাকেই আমরা, অন্তত স্বল্প মেয়াদে হলেও, অনুসরণ করব। তা’তে কারও আপত্তি থাকবার কথা নয়। এমন একটা জরুরি প্রশ্নের সমাধানের বেলাতে জিয়া হাশানের গদ্যভাষা বিষয়ক পরীক্ষা-নিরীক্ষা নিশ্চয় গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে হাজির হবে।
পরিশেষে, আমরা বলতে চাই, জিয়া হাশানের ‘সোনায় সোহাগা কাহিনি’ সুখপাঠ্য একটা গল্পের বই। এর ঝরঝরে ভাষা আমাদেরকে জাদু করে রাখে আগাসে গোড়া। বিষয় এবং ভাষা নিয়ে এমন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় তিনি আমাদেরকে আরও ঋদ্ধ করবেন বলে আশা করি।
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন