ভাবের অধরাকে ভাষায় ধরা
বাতিঘর প্রকাশ করেছে কবি সাজ্জাদ শরিফের প্রবন্ধের বই ঈশ্বর দর্শন: অবাক থেকে বাক ছাপিয়ে। ভূমিকা বাদে বইতে চারটি আলাদা আলাদা গদ্য সংকলিত হয়েছে—জাগ্রত অবস্থা; বিপর্যস্ত ভাষা; চোখের দেখা, মনের বোঝা ও অব্যক্তের ভার। বইটি আকারে ছোট, বিষয়ের দিক থেকে চিন্তা দায়ক। মূলত কবিতার ভাষার সঙ্গে দর্শনের বোঝাপড়া, ভাষার ভেতরের মনোজগতকে ধরা কিংবা বোঝা, শিল্পের সঙ্গে কবিতার ভাষা সম্পর্ক, ভাষা কিভাবে পরমের দিকে যায়—এমন নানা বিষয় বইতে বিশ্লেষিত হয়েছে। বইয়ের ভাল দিক হলো—সংযুক্ত লেখার নন্দন ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে দুনিয়ার আলোচিত কিছু শিল্পকর্ম উপস্থাপন করা হয়েছে। লেখক এখানে অপর শিল্প চিন্তার সঙ্গে নিজের শিল্প চিন্তার পরাগায়ন কিংবা মিল-অমিল-সমিল-বৈপরিত্যের দৃষ্টিভঙ্গিগুলো সামনে এনেছেন।
বইয়ের প্রথম গদ্যের শিরোনাম ‘জাগ্রত অবস্থা’। লেখক শুরুর এই গদ্যে মানুষ ভাবের অবয়ব বা ভাষার দিকে কিভাবে যাত্রা করেছেন, সে বিশ্লেষণ হাজির করেছেন। তার চিন্তার কেন্দ্রে বিষয় তিনটি—ঈশ্বর, মানুষ আর প্রাকৃতজন। কমলকুমারের সহায় নিয়ে তিনি বলছেন, ‘মানুষের মানুষ হয়ে ওঠা মানে ‘প্রাকৃতজন’ হয়ে ওঠা।’ এই প্রাকৃতজন পরমের সাক্ষাৎ পায়। মানুষ পায় না। কিন্তু কিভাবে? প্রথমত ভাবের অবয়বে, দ্বিতীয়ত দৃশ্যশিল্পে আর তৃতীয়ত ভাষায়। জার্মান দার্শনিক মার্টিন হাইডেগার ভাষা বিষয়ক প্রবন্ধে বলেছেন, ‘মানুষ কথা বলে। ভাষাও কথা বলে।’ মানে ভাব যখন অর্থ রূপে ধরা দেয়, তখন পরম ভাষা হয়ে ওঠে। বইতে লেখক বলছেন, ‘মানুষের বাইরে যেমন ভাষা নাই, আবার ভাষার বাইরেও মানুষ নাই।
’বিপর্যস্ত ভাষার প্রবন্ধে সাজ্জাদ দেখিয়েছেন, কবিতায় কিভাবে চেনা-জানা অভিজ্ঞতার ভাষাকে বিপর্যস্ত করে দেয়। মানে প্রাত্যহিত অভ্যস্ততার ভাষাকে শিল্প বা কবিতা কিভাবে অচেনা করে তোলে। তার মত, ‘অজ্ঞেয়কে ধরার জন্য কবি বা শিল্পী গ্রাহ্যতার সীমা যেভাবে পার হয়ে যান, তাতে ভাষা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।’ শেষ রচনার শিরোনাম ‘অব্যক্তের ভার’। এতে তিনি কবিতাকে বিশেষ রূপে সংজ্ঞায়িত করতে চেয়েছেন। বলছেন, ‘কবিতা ভাষাভূত মানবচেতনা। অথবা বলতে পারি অব্যক্ত ভাবের ভাষায় ব্যক্ত রূপ।’ তবে বইটি পাঠকের কবিতা বা শিল্প বিষয়ে নানা চিন্তার খোরাক যোগাবে। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী সব্যসাচী হাজরা। দাম রাখা হয়েছে ২২০ টাকা।
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন