গারো সংস্কৃতির নানা বৈচিত্র্য

অ+ অ-

 

গারো সমাজে বিবাহিত পুরুষ মারা গেলে মিমাংকামের গুরুত্ব অনেক। বিবাহিত মহিলা বা অবিবাহিত যুবক-যুবতী মারা গেলে তেমন গুরুত্বপূর্ণ না। বিবাহিত পুরুষ স্ত্রীর মাচং চাৎচি বা মাহারির লোক নয়, সে অন্য মাহারির। শুধুমাত্র সংসার করার জন্য সে স্ত্রীর পরিবারে এসেছিল। মারা যাওয়ার পর সে আর স্ত্রীর গৃহে থাকতে পারে না। তার আমা মানক চ্রারা মিমাংকামের মাধ্যমে তার আত্মাকে মায়ের বা মানকের বাড়িতে নিয়ে যাবে। আর এ অনুষ্ঠানই হলো মিমাংকাম।

 

খ্রিস্ট ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার পর গারোরা নিজেদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে কিছুটা উদাসীন। আদি সাংসারেক গারোদের মতো নিজেদের কৃষ্টি, প্রথা, পার্বন, সংস্কৃতি চর্চা ও সমৃদ্ধিতে নিরঙ্কুশ মনোযোগী না হলেও সেই মিৎদে মান্দেনি চাসংও বা দেবতাদের যুগ হতেই গারো সমাজে নিজস্ব সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড চলমান। নিজস্ব সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড অপরাপর জাতি-গোষ্ঠীর থেকে গারোদের পৃথক জাতিসত্তা হিসেবে পরিচিত ও মর্যাদা দিয়ে এসেছে। সমাজের অভ্যন্তরে মূল্যবোধ তৈরি ও গতি দিয়ে এসেছে। সমাজ ও সমাজের মানুষকে আলোকিত ও বিকশিত করে এসেছে। আর সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডগুলোর কিছু সামাজিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বাদে সবই জুম চাষ ও কৃষিকে উপজীব্য করে। এর কোনটা নতুন জুম জমি নির্বাচনকে নিয়ে, কোনটা জুম জমির কেটে ফেলা জঙ্গল শুকিয়ে পুড়িয়ে চূড়ান্তভাবে চাষের উপযোগী করে তোলাকে কেন্দ্র করে, কোনটা বীজ রোপনের সময়কে উদ্দিষ্ট করে, কোনটা প্রাকৃতিক দুর্যোগ পোকামাকড় ও জীবজন্তু থেকে ফসলকে রক্ষা করায় দেবতাকে কৃতজ্ঞতা জানাতে, কোনটা নতুন ফসল কর্তনকে উদ্দেশ্য করে, কোনটা ফসল কাটা শেষ ও ঘরে তোলার আগে, কোনটা ফসল ঘরে তোলার পর দেবতার উদ্দেশ্যে নৈবেদ্যকে কেন্দ্র করে।  সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডগুলো গারো সমাজের জীবনাচরণ, উৎপাদন, জনসংস্কৃতি ও প্রথাগত বিশ্বাসের ওপর নির্ভরশীল। 

 

দেন বিলসিয়া

বছরের শুরুতে উৎকৃষ্ট ও উপযুক্ত জুম জমি নির্বাচন এ উৎসবের উদ্দেশ্য। রীতি অনুযায়ী গৃহস্থ চাষের আগে নির্বাচিত জুম জমির যেকোন কোণ পরিস্কার করে রেখে আসে। গারোদের বিশ্বাস রাতে গৃহস্থ অবশ্যই গভীর ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখবে। স্বপ্ন যদি ভাল দেখে তবে নির্বাচিত জুম জমি চাষের উপযুক্ত, আর যদি খারাপ দেখে তবে নির্বাচিত জুম জমি উপযুক্ত নয় ধরে নেয়া হবে এবং সে জমি বাদ দিয়ে অন্য আরেকটি জমি পুনরায় একইভাবে যে পর্যন্ত-না গৃহস্থ ভাল স্বপ্ন না-দেখে জমি পরিস্কার করা চলতে থাকবে। এভাবে জমি নির্বাচন জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে শেষ হলে নকমার বাড়িতে বেদী নির্মাণ ও পাঁঠা বলি দেয়ার মাধ্যমে দেন বিলসিয়া উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এ দিন নকমার গৃহে সবাই একত্রিত হয়ে খাওয়া-দাওয়া করে। এটি গারোদের প্রথম উৎসব।

 

আগালমাকা

নির্বাচিত জুম জমির কেটে ফেলা জঙ্গল শুকোলে তাতে আগুন ধরিয়ে চূড়ান্তভাবে জমি পরিস্কার ও চাষের উপযোগী করে তোলা হয়। আগুনে পোড়ানোর এ কাজ মার্চের শেষ ও এপ্রিলের প্রথম দিকে করা হয়। এরপরই আগালমাকা উৎসব শুরু হয়। উৎসবের দিন সকালে গ্রামের প্রতিটি পরিবার নিজ ক্ষেতে গিয়ে ডিম ও নকমা মোরগ উৎসর্গ করে। প্রথমে ব্যক্তিগত ও পরে সবাই মিলে ফসল ও বীজের মিৎদে বা দেবী মেয়ানমা রংকিমমেমার উদ্দেশ্যে আমুয়া ক্রিৎদা বা পূজো দেয়। বিকেলে নকমার গৃহে গ্রামবাসীরা একত্র হয়ে পানাহার করে। বয়স্করা দিনে ও অল্প বয়সীরা রাতে প্রতিটা বাড়িতে নেচে-গেয়ে কয়েকদিন ধরে আনন্দ উৎসব করে।

 

বিগত বছরের নির্বাচিত জুম জমিতে ধান বীজ রোপনের আগে আসিরকা উৎসব পালন করা হয়। উৎসবের আগে গ্রামবাসীরা সবাই মিলে গরু ক্রয় করে। উৎসবের দিন এ গরু জবাই করে প্রতিটা পরিবারের জন্য মাংস ভাগ করে বিতরণ করে দেয়া হয়। পরের দিন গ্রামবাসীরা সকলে নিজ জমিতে গিয়ে মিৎদে সালজং-এর উদ্দেশ্যে ডিম উৎসর্গ করে। রীতি অনুযায়ী এ দুদিন গারোদের জমিতে কাজ করা নিষেধ।

 

আসিরকা

বিগত বছরের নির্বাচিত জুম জমিতে ধান বীজ রোপনের আগে আসিরকা উৎসব পালন করা হয়। উৎসবের আগে গ্রামবাসীরা সবাই মিলে গরু ক্রয় করে। উৎসবের দিন এ গরু জবাই করে প্রতিটা পরিবারের জন্য মাংস ভাগ করে বিতরণ করে দেয়া হয়। পরের দিন গ্রামবাসীরা সকলে নিজ জমিতে গিয়ে মিৎদে সালজং-এর উদ্দেশ্যে ডিম উৎসর্গ করে। রীতি অনুযায়ী এ দুদিন গারোদের জমিতে কাজ করা নিষেধ। পরের দিন হতে সবাই নিজ জমিতে রোপন কাজ শুরু করে দেয়।

 

রংচুগাল্লা

গারোদের বিশ্বাস দেবতারা নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাকে, পোকা-মাকড় ও জীব-জন্তু থেকে চাষকৃত জুম জমির ফসলাদি রক্ষা করেন। আর এর কৃতজ্ঞতাস্বরূপ দেবতাদের তুষ্ট করতে, ফসল ঘরে তোলার আগে, দেবতাদের উদ্দেশ্যে অননি চিননে বা ভোগ দিয়ে গারোরা উৎসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এ উৎসব ধান কাটার সাথে সাথে হয়। ধান কাটার পূর্বে জমির কিছু অংশ পরিস্কার করে সেই পরিস্কার জায়গায় চিড়া, গুড়, লেবু ইত্যাদি দেবতার উদ্দেশ্যে ভোগ দিয়ে পালন করা শুরু হয়। এ উৎসবের আরেকটি বিশেষত দিক হলোউৎসবের মধ্য দিয়ে পরবর্র্তী বছরের জন্য উৎকৃষ্ট বীজ নির্ণয় ও সংগ্রহ করা হয়। পুরাণ কথানুযায়ী, রংচুগাল্লা উৎসব না হওয়া পর্যন্ত গারোরা কেউ দূরে বেড়াতে যায় না, নতুন আত্মীয়তা গড়ে তোলে না, বিচার-সালিশ করে না, আনন্দ-ফুর্তি করে না। এ উৎসব আগস্ট মাসে অনুষ্ঠিত হয়।

 

জামেগাপ্পা আহাওয়া

জামেগাপ্পা আহাওয়া উৎসব পালনের আগে নকমা তারিখ নির্ধারণ করে গ্রামবাসীদের জানিয়ে দেয়। উৎসবের দিন সকালে প্রত্যেকে নিজ ক্ষেতে গিয়ে মাছ উৎসর্গ করে এবং যে সরু চোকা বাঁশের সাহায্যে ধান ও অন্যান্য ফসলের বীজ রোপন করা হয়েছিল সেটা বোরাং-এর কাছে জড়ো করে রাখে। ধান কাটার শেষ পর্যায়ে কয়েকগুচ্ছ ধানের শীষের থোকা বাঁশের কাছে রেখে আনুষ্ঠানিকভাবে ধান কাটা শেষ করা হয়।  ধানগুচ্ছ গৃহস্থ যখন বহন করে নিজ ঘরে নিয়ে যায় তখন ছেলেরা আহাওয়া ধ্বনিতে গৃহস্থকে অনুসরণ করে। এরপর পরবর্তী জুম চাষের মৌসুম পর্যন্ত তারা আহাওয়া শব্দ করতে থাকে। ফের নতুন মৌসুমে জুম জমির জঙ্গল কাটা শুরু হলে সাথে সাথে আহাওয়া শব্দ করা বন্ধ করে দেয়। ধান কাটা শেষ হলে সেপ্টেম্বর মাসে এ উৎসব হয়। উৎসবের আগে দামা ও ক্রাম বাজানো নিষেধ। গারোদের বিশ্বাস দামা ও ক্রামের শব্দে ধানগাছের বৃদ্ধি ও ফলন ব্যাহত হয়। উৎসবের আগে আতপ চাউলের ভাত খাওয়াও নিষেধ।

 

গারোদের বিশ্বাস ও পুরাণ কথানুযায়ীধান ও অন্যান্য ফসলাদির বীজ প্রাপ্তি, জমি নির্বাচন, রোপন ও এ সংক্রান্ত বিভিন্ন পার্বন, ফসল উত্তোলন, কৃতজ্ঞতা ও নৈবেদ্য তাৎপর্যে এটি গারোদের প্রধান উৎসব। বলা হয়, এটি নতুন ধান ও ফসলাদি পাওয়ার পর নৈবেদ্য ও নবান্ন উৎসব। এ উৎসব রোগালা, চাচাত সওয়া, ক্রাম গগাতা বা জল ওয়াৎদা এ তিন পর্বে অনুষ্ঠিত হয়। গারো পুরাণ অনুযায়ী, পূর্বে গারোরা জুম চাষ করতে জানত না। জঙ্গল থেকে বিভিন্ন ধরনের বন আলু ও ফল সংগ্রহ করে খেত। মিৎদে সালজং এ দুর্দশা দেখে আয়সে নাম্মী এক গারো বিধবা মহিলার জন্য মিমা মিসি বা ধানের বীজ দেয়। শর্ত দেয় প্রতি বছর এ ধান চাষ করে চাউল বানিয়ে খাওয়ার আগে আমাকে স্মরণ করে, অননি চিননে বা ভোগ দিয়ে, তারপর খাবে। সে থেকে গারোরা নতুন ধান, শাক-সবজি, ফল-ফলান্তি আগে মিৎদে সালজংকে ভোগ দেওয়ার পাশাপাশি বীজের মা মেয়ানমা রংকিমেমাকেও ভোগ দিয়ে তারপর খায়।

 

ওয়ানগালা

রীতি অনুযায়ী জামেগাপ্পা আহাওয়া উৎসব পালনের এক মাস পর ওয়ানগালা পালন করতে হয়। গারোদের বিশ্বাস ও পুরাণ কথানুযায়ীধান ও অন্যান্য ফসলাদির বীজ প্রাপ্তি, জমি নির্বাচন, রোপন ও এ সংক্রান্ত বিভিন্ন পার্বন, ফসল উত্তোলন, কৃতজ্ঞতা ও নৈবেদ্য তাৎপর্যে এটি গারোদের প্রধান উৎসব। বলা হয়, এটি নতুন ধান ও ফসলাদি পাওয়ার পর নৈবেদ্য ও নবান্ন উৎসব। এ উৎসব রোগালা, চাচাত সওয়া, ক্রাম গগাতা বা জল ওয়াৎদা এ তিন পর্বে অনুষ্ঠিত হয়। গারো পুরাণ অনুযায়ী, পূর্বে গারোরা জুম চাষ করতে জানত না। জঙ্গল থেকে বিভিন্ন ধরনের বন আলু ও ফল সংগ্রহ করে খেত। মিৎদে সালজং এ দুর্দশা দেখে আয়সে নাম্মী এক গারো বিধবা মহিলার জন্য মিমা মিসি বা ধানের বীজ দেয়। শর্ত দেয় প্রতি বছর এ ধান চাষ করে চাউল বানিয়ে খাওয়ার আগে আমাকে স্মরণ করে, অননি চিননে বা ভোগ দিয়ে, তারপর খাবে। সে থেকে গারোরা নতুন ধান, শাক-সবজি, ফল-ফলান্তি আগে মিৎদে সালজংকে ভোগ দেওয়ার পাশাপাশি বীজের মা মেয়ানমা রংকিমেমাকেও ভোগ দিয়ে তারপর খায়। আর স্মরণ করে ভোগ দেয়ার এ উৎসবটি ওয়ানগালা নামে পরিচিত। উৎসবের অন্যতম দিক হলো এ সময়েই গারো যুবক-যুবতীরা নিজেদের পছন্দানুযায়ী সঙ্গী নির্বাচনে ব্যস্ত হয়, অভিভাবকেরাও নিজেদের সন্তানদের জন্য পাত্রপাত্রী নির্বাচনে মনোযোগী হয়। মিগং বা কাঞ্চন নামের এক ধরনের গাছ আছে, এ গাছের ফুল ফোটা শুরু হলে উৎসবটি পালন করতে হয়। কাঞ্চন ফুল অক্টোবর মাসে ফোটে। অবশ্যই পূর্ণিমা রাতে ওয়ানগালা করতে হয়।

 

নক নাপবা

নক মানে ঘর, আর নাপবা মানে প্রবেশ। নক বা ঘর ইচ্ছে করলেই গারোরা যখন-তখন যেখানে-সেখানে তৈরি করতে পারে না। মিৎদের অনুমতি চেয়ে নিতে হয়। যে জায়গায় ঘর তৈরি করবে সে জায়গা পরিস্কার করে কলা পাতায় মিৎদেকে ভোগ দিয়ে ঘর তৈরি করার বাসনা জানাতে হয়। মিৎদে বা দেবতা যদি অনুমতি দেয় তবে রাতে গভীর ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে দেখা দিয়ে অনুমতি দেবে। যদি না দেয় তবে সে জায়গা ত্যাগ করে অন্যত্র একইভাবে মিৎদের উদ্দেশ্যে ভোগ দিয়ে ঘর তৈরি করার বাসনা জানাবে। এভাবে অনুমতি না পাওয়া পর্যন্ত মিৎদের উদ্দেশ্যে ভোগ দিয়ে বাসনা জানাবে। অনুমতি দিলে ঘর তৈরি করার আয়োজন করবে। এ ঘর তৈরি করার বাঁশ-কাঠও গারোরা মিৎদের অনুমতি না নিয়ে কাটে না। এভাবে নতুন ঘর তৈরি করার পরও গারোরা সরাসরি নতুন ঘরে বসবাস শুরু করতে পারে না। কামাল বা পুরোহিত গয়রা মিৎদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘর উৎসর্গ করার পর বসবাস শুরু করতে পারে। আর এসব আনুষ্ঠানিকতার পর সন্ধ্যায় একসাথে খাওয়া-দাওয়া করে নক নাপবা বা ঘর উৎসর্গ শেষ হয়।

 

নক মানে ঘর, আর নাপবা মানে প্রবেশ। নক বা ঘর ইচ্ছে করলেই গারোরা যখন-তখন যেখানে-সেখানে তৈরি করতে পারে না। মিৎদের অনুমতি চেয়ে নিতে হয়। যে জায়গায় ঘর তৈরি করবে সে জায়গা পরিস্কার করে কলা পাতায় মিৎদেকে ভোগ দিয়ে ঘর তৈরি করার বাসনা জানাতে হয়। মিৎদে বা দেবতা যদি অনুমতি দেয় তবে রাতে গভীর ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে দেখা দিয়ে অনুমতি দেবে। যদি না দেয় তবে সে জায়গা ত্যাগ করে অন্যত্র একইভাবে মিৎদের উদ্দেশ্যে ভোগ দিয়ে ঘর তৈরি করার বাসনা জানাবে।

 

মিমাংকাম

মানুষ মরে গেলে সৎকার পরবর্তী যে আনুষ্ঠানিকতা তাই মিমাংকাম। মিমাংকাম শব্দের মিমাং মানে আত্মা, কাম মানে কাজ। মানে আত্মার কাজ, শ্রাদ্ধের কাজ। গারোদের বিশ্বাস মানুষ মারা গেলে তার আত্মা মিমাং হয়ে যায় এবং এ মিমাং কোনদিন মরে না, পুনর্জন্ম নেয়। তাদের বিশ্বাস জীবদ্দশায় ব্যক্তি ভাল কাজ করলে পুনর্জন্মে সে মানুষ হয়ে জন্ম নেয় এবং পৃথিবীতে সুখে শান্তিতে বসবাস করে; খারাপ কাজ করলে কুকুর, বিড়াল, গরু ইত্যাদি হয়ে জন্ম নেয় আর মানুষের ঘরে কাজ করে আগের জন্মের ঋণ, দেনা, চুরি ইত্যাদির দায় পরিশোধ বা প্রায়শ্চিত করে। এ কারণে গারোরা গৃহপালিত পশুপাখিদের প্রহার করে না, অত্যাচার করে না। মনে করে, এরাও একসময় মানুষ ছিল।

পূর্বে মানুষ মারা গেলে গারোরা সাথে সাথে গরু মহিষ মারতো, এখন গাছ কাটে। এটি করার উদ্দেশ্য হলোমৃত ব্যক্তির আত্মা যাতে নিঃসঙ্গ না হয়, একাকী যাতে মিমাং আসং চিৎমাং-এ না যায়, সঙ্গী হিসেবে গরু, মহিষের বা গাছের আত্মা যাতে মৃত ব্যক্তির আত্মাকে সঙ্গ দেয়, একসাথে মিমাং আসং বা আত্মার দেশ চিৎমাং-এ যায়।

গারো সমাজে বিবাহিত পুরুষ মারা গেলে মিমাংকামের গুরুত্ব অনেক। বিবাহিত মহিলা বা অবিবাহিত যুবক-যুবতী মারা গেলে তেমন গুরুত্বপূর্ণ না। বিবাহিত পুরুষ স্ত্রীর মাচং চাৎচি বা মাহারির লোক নয়, সে অন্য মাহারির। শুধুমাত্র সংসার করার জন্য সে স্ত্রীর পরিবারে এসেছিল। মারা যাওয়ার পর সে আর স্ত্রীর গৃহে থাকতে পারে না। তার আমা মানক চ্রারা মিমাংকামের মাধ্যমে তার আত্মাকে মায়ের বা মানকের বাড়িতে নিয়ে যাবে। আর এ অনুষ্ঠানই হলো মিমাংকাম। মিমাংকামের দিন মৃত ব্যক্তির আত্মার উদ্দেশ্যে যে দেল্লাং নকথিপ বা আত্মার ঘর তৈরি করা হয় তা পুড়িয়ে ফেলা হয়। আর শিমুল গাছের ফুল যখন লাল হয়ে ফুটবে, চাঁদ যেদিন পূর্ণিমা হবে, সেদিন মিমাংকাম হবে।

সামাজিক সাংস্কৃতিক ও কৃষিকে কেন্দ্র করে গারোদের আরও উৎসব পার্বন থাকলেও সেসব বর্তমান সমাজ প্রগতির সাথে, শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞান, বিশ্বাস ও জীবনচর্চার সাথে বা সাংসারেক ধর্ম হতে খ্রিস্ট ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার পর ধর্মীয় অনুশাসন ও বিধিনিষেধের সাথে যায় না। আর প্রথাগত এসব সংস্কৃতি সাংঘর্ষিক হওয়ায় গারোরাও পালন করে না।