আপনি আচরি সদাচার [১ম পর্ব]

অ+ অ-

 

|| সংস্কৃতি

সংস্কৃতি এক ব্যাপক পরিসর। সদাচার ও অসদাচার উভয়ই সংস্কৃতি সম্পৃক্ত। প্রবাদে বলে, এক দ্যাশে গালি আরেক দ্যাশে বুলি। তবে সংস্কৃতি জগতে সদাচারই গণ্য, মান্য, প্রত্যাশিত, প্রশংসিত। অসদাচার নিন্দনীয়, পরিত্যাজ্য এবং অপসংস্কৃতির প্রকাশ হিসেবে পরিগণিত। মনীষী আহমদ শরীফ সংস্কৃতিকে ব্যাখ্যা করে বলেছেন, আচরণে সুরুচি ও সৌন্দর্য বুদ্ধিজাত সৌজন্য, নির্মিত সামগ্রীতে শ্রী, যন্ত্রে উৎকর্ষ, চিন্তায় শ্রেয় বুদ্ধির দীপ্তি, কর্মে কল্যাণ চেতনার ব্যঞ্জনা, কথায় সৌজন্যের আভা, সজ্জায় সৌন্দর্য, আলাপে আন্তরিকতার ও বিনয়ের মাধুর্য, চোখে প্রীতি-প্রসন্নতার প্রভা এবং জীবনাচারে সম ও সহস্বার্থে স্বাধীকারে সংযমের, সহিষ্ণুতার, সহযোগিতার ও সহাবস্থানের প্রয়োজনীয় গুণের বা প্রত্যাশিত আচার-আচরণের বা ব্যবহার নীতিরীতির অনুশীলনে ও প্রয়োগের আগ্রহ আর সুরুচির ও সৌজন্যের সামগ্রিক লাবণ্যই সংস্কৃতি। অর্থাৎ, মানুষের অভিজ্ঞতায়, সমষ্টির ধারণায় ও চর্চায়, চর্যায়, সমাজের প্রতি রন্ধ্রে অরুচিকর আচরণ, বিশ্রী সামগ্রী, কিম্ভুত অনিষ্টকর সামগ্রী, রূঢ় আলাপ, কুৎসিত ভঙ্গি, হীনদৃষ্টি, অপ্রসন্ন অভিব্যক্তি, অযাচার, অসম, স্বার্থপর, অসংযমী ও আধিপত্যমূলক স্বভাব, অসহিষ্ণুতা, অসহযোগিতা, উপক্ষো, অপমান, দুঃশাসন ও দুর্নীতি, অসৌজন্য, অবহেলা, বিভৎসতা, অশ্লীলতা ইত্যাদি যা কিছু ব্যক্তি ও সমাজে কিংবা প্রতিষ্ঠান-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণের, দলের, সমষ্টির আচরণে বিরাজমান, তা অপসংস্কৃতি তথা অসংস্কৃত আচার, বিশ্বাস, ব্যবহার ও আচরণ। অপসংস্কৃতির বিপরীতে দাঁড়িয়ে সংস্কৃতি অবলোকন করাই সভ্যের স্বভাব, প্রগতির লক্ষণ, শুদ্ধাচারীর কার্য, মানুষের সদাচার অর্জনের নিরন্তর প্রক্রিয়া।

তবে এই প্রক্রিয়া স্থির নয়, বরং পরিবর্তনশীল। অসংস্কৃত, আদিম, অপরিশীলিত, অমার্জিতের বিপরীতে কল্যাণরূপ প্রত্যাশিত জীবনাচার, আচরণ, কার্যকলাপ, অগ্রসরতা, শুভ পরিবর্তন, সহিষ্ণুতা, শ্রেণি বিদ্বেষী চেতনার বিলোপের মাধ্যমে সমতা, প্রগতি ও অগ্রগতির সর্বজনীনতা দ্বারা সংস্কৃতি বিবেচ্য। শতাধিক পশ্চিমা সংজ্ঞায় সংস্কৃতি-অনুসন্ধানীগণের অতৃপ্তিজনিত দ্বান্দ্বিক প্রেক্ষাপটে আহমদ শরীফ আরও বলেছেন, সংস্কৃতি আক্ষরিক অর্থে সংস্কার, পরিমার্জন, বিকৃতিবর্জন, ঔজ্জ্বল্যসাধন, সংশোধন, ক্ষয়, ম্লানিমাবিদূরণ, পূর্বপূর্ষতায় ও সৌন্দর্যে পুনঃপ্রতিষ্ঠিতকরণ, মেরামত, উৎকর্ষসাধন, প্রভৃতি অভিধাজ্ঞাপক। একই রকম কথা সমসাময়িক ফোকলোর তাত্ত্বিক (আমেরিকান) অ্যালেন ডান্ডেস অন্যভাবে বলেছেন। তিনি বলেছেন যে, প্রত্যেকেই লোক। প্রত্যেকে বলতে যেকোনো ভাষার, যেকোনো লিঙ্গের (নারী ও পুরুষ এবং লিঙ্গ বৈচিত্র্যের সকলে), স্থানের, কালের, ক্ষেত্রের, অর্থনৈতিক অবস্থার, ধর্মীয় পরিচয়ের, জাতি পরিচয়ের, পেশা পরিচয়ের, ভালো বা মন্দ যেভাবেই চিহ্নিত করা হোক না কেন, ব্যক্তিমাত্রই লোক। লোক বলতেই সংস্কৃতির অধীনচর্যায়, চর্চায়, বিশ্বাসে, অবিশ্বাসে, ভাষায়, ভাষাহীনতায়, খাদ্যাভ্যাসে, যৌন চেতনায়, শ্রেণি চেতনায়, বয়সভেদে, আদিমতায়, বৈজ্ঞানিক পরিমণ্ডলে, নব নব প্রযুক্তির বলয়ে, ভূ-প্রকৃতিক বিন্যাস, অর্থনৈতিক অবস্থা ও অবস্থান, সমাজ ও রাষ্ট্র-কাঠামোর স্বরূপ, বাস্তব, কল্পনা, পরিস্থিতি এবং প্রেক্ষাপটে নির্বিশেষে সংস্কৃতিই মানুষের পরিচয়। প্রতিনিয়ত সংস্কারের ভেতর দিয়ে জীবন যাপন করাই মানুষের ধর্ম। জগত যেমন স্থির নয়, সংস্কৃতিও তেমনি অনিত্য। সংস্কৃতির কাজ মানুষকে সময়চক্রের অনন্তপথে পরিশীলনে রত রাখা। যেহেতু মহাজাগতিক, বৈশ্বিক বা স্থানিক মানব-জীবন-পদ্ধতি, প্রকৃতি, জলবায়ু, প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ, উৎপাদন ব্যবস্থা, সম্পদের মালিকানা ব্যবস্থা, ব্যবসায় নীতি, স্থানিক ও বৈশ্বিক বিবর্তন, বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার আর আবিষ্কৃত বস্তু এবং বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব ও সূত্র, ধারণা, প্রযুক্তি, অস্ত্র, যুদ্ধ, মহামারী ইত্যাকার পুশ ও পুল ফ্যাক্টরের সাপেক্ষে প্রতি মুহূর্তে পরিবর্তনশীলতার সাপেক্ষে সংস্কৃতি অনিত্য, তাই সংস্কৃতিকে বুঝতে হয় অজস্রমুখী সামগ্রিকতার নিরিখে। অগণিত প্রজাতির সর্বপ্রাণউদ্ভিদ ও প্রাণিকুলের মধ্যে মানুষ উন্নততর, উচ্চতর, অধিক পরিমার্জিত, নতুন কালে, নতুন নতুন প্রেক্ষাপটে কল্যান-স্বার্থানুগ গ্রহণযোগ্য জীবন পদ্ধতির নব নব রূপের দিকে অগ্রসর হয় সংস্কৃতির বলে। তাই সংস্কৃতি আদতে হয়ে ওঠে অননুমেয় সদা প্রবহমান জীবনধারা, জীবনযাপন ও সৌন্দর্যবোধ। সে মহাপ্রবাহপথে আজ যা সংস্কৃতি কাল তা অপসংস্কৃতি হয়ে ওঠা বিস্ময়কর নয়, আজ যা অপসংস্কৃতি কাল তা সংস্কৃতিরূপ বিবেচিত হওয়া অলীক নয়। এক দেশে যা পাপ গণ্য, অন্য দেশে পুণ্য তাই হওয়া সংস্কৃতির স্বাভাবিক স্বভাব। সে কারণে, সংস্কৃতি ও লোকসংস্কৃতি ইত্যাদি পরিভাষা মারফত লোকের সঙ্গে লোকের ফারাক করার প্রবণতা বৃহত্তর অর্থে অপসংস্কৃতিরই নামান্তর। কেননা, সংস্কৃতি জগতে শিক্ষিতজনের (স্বাক্ষরদের), এলিটের, অর্থবানের, বিজ্ঞান চেতনায় পুষ্টদের, ধর্মচেতনায় আবিষ্টদের, সাফ পরিধেয় সমৃদ্ধদের, প্রমিত ভাষা ব্যবহারকারীদের বিপরীতে নিরক্ষর, দরিদ্র, পশ্চাদপদ, আদিম, গ্রামীণ (গ্রাম্য), ছোটলোক, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, হিজড়া, সমকামী, বহুগামী, ব্রাত্য, বাউল, বয়াতি, কৃষক, শ্রমিক, জেলে, জোলাদের কেবল লোক গণ্য করার মধ্যে সংস্কৃতিতে সংস্কৃতিতে দেয়াল রচনা করাই সার হয়। আমজনতা অভিধায় অভিষিক্ত জনগণের বাইরে বেরিয়ে বেশি লোক, অতি লোক, ভদ্রলোক হবার সাংস্কৃতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে অপ্রয়োজনীয় ও পরিহার্য শ্রেষ্ঠত্ববাদের প্রতিষ্ঠা হয়। এর বেশিকিছু নয়। অতএব, রাষ্ট্রীয় জগতে, প্রাতিষ্ঠানিক পরিসরে, একাডেমিক চত্ত্বরে সংস্কৃতি এক একীভূত তথা অন্তর্ভূক্তিমূলক, সমন্বিত তথা কমপ্রিহেনসিভ পরিভাষা হিসেবে গণ্য ও গ্রহণীয় হওয়াই বাঞ্ছনীয়। কেননা, সংস্কৃতি মানুষের চিন্তা, কাজ, আচরণ, আচার, দৃষ্টিভঙ্গি, অভিব্যক্তির সেই প্রত্যাশিত বহিঃপ্রকাশ এবং অন্তর্ভূক্তিমূলক প্রগতিশীল প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে মানুষ, মানুষের সমাজ ও মানুষের কল্যাণে প্রতিষ্ঠিত ছোট কিংবা বড় অথবা বৃহত্তর প্রতিষ্ঠান কাউকে অপর বিবেচনা না করে, কাউকে বাদ না দিয়ে সর্বজনের সমঅগ্রগতি, উন্নতি ও কল্যাণ সাধনের নিমিত্তে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ ও পালন করতে সচেষ্ট হয়। এটাই সাংস্কৃতিক কামনা। মানবিক, প্রকৃতিবান্ধব, আদর্শ নিরপেক্ষ রাষ্ট্র, সমাজ ও বিশ্বব্যবস্থা বজায় রাখার প্রয়োজনে সে কারণেই মানুষের সংস্কৃতিমানতা সর্বাগ্রে গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ সংস্কৃতিমান হলে, সদা পরিবর্তনশীল জাগতিক পরিপ্রেক্ষিতে, নব নব আবিষ্কার ও উদ্ভাবনের প্রেক্ষাপটে, উৎপাদন ও বণ্টন ব্যবস্থা, চিন্তা ও চেতনাগত বিবর্তনের পটভূমিতে পরিবর্তনশীল সংস্কৃতির সুষম পরিসরে সভ্যতা প্রাগ্রসর হয়।     

সংস্কৃতির মহাপরিসরের বোঝাপড়া এই নিবন্ধের উদ্দেশ্য নয়। স্থান, কাল, সময়ভেদে ভাব, বৈশিষ্ট্য, ভিন্নতা, বৈচিত্র্য, প্রবহমানতা, চর্চা, চর্যা, সাধারণ অর্থ, অন্তর্নিহিতার্থ, তাৎপর্য, উপযোগিতা ইত্যাদি বহুমাত্রিকতা ও বহুমুখিতার আলোকে এক্ষণে সংস্কৃতি বিষয়টিকে আপাত উপলব্ধি করতে পারলেই আমাদের কাজ চলে যাবে। কেননা, এই সংক্ষিপ্ত আলোচনায় আমরা সংস্কৃতির রীতি-রেওয়াজের গ্রহণীয়তার আলোকে কাঠামোগত ও প্রাতিষ্ঠানিক এবং সামাজিক ও ব্যক্তিক সদাচার তথা শুদ্ধাচার চর্চা বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করব, যাতে প্রয়োজনবেধে আলোচ্য বিষয় যথেষ্ট বিস্তারের ভবিষ্যত-উদ্যোগ উৎসাহ পায়। এক কথায়, এই নিবন্ধে, সংস্কৃতিকে সংস্কার অর্থে পরিশীলন ও সর্বজনীন কল্যাণ অর্জনের মনস্তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

 

|| সদাচার

সাংস্কৃতিক ব্যবহার বিকাশের শর্ত সদাচার। সংস্কৃতিমান মাত্রই সদাচারী। সততা ও আদর্শ নিষ্ঠাই সংস্কৃতিমানের ব্যবহারিক বৈশিষ্ট্য। সদাচারী ব্যক্তি মানবিক। যদিও সদাচারের ধারণা স্থান, কাল, পরিপ্রেক্ষিতভেদে নিত্য ও পরম নয়। ভিন্নতা ও বৈচিত্র্যই জাগতিকতার সৌন্দর্য। তবে সংস্কৃতি মূলত ক্রিয়াশীল মানবিকতার উৎকর্ষ সাধনের নিমিত্তে। সংস্কৃতি অন্যায়, অপরের পক্ষে ক্ষতিকর, কুৎসিত কার্য, অভ্যাস, আচরণ, অভিব্যক্তি, অনুশীলন অনুমোদেন করে না; নিষেধ করে, নিরুৎসাহিত করে। সংস্কৃতিতে সদাচারই প্রত্যাশিত এবং সভ্যতার নিয়ন্তা বিবেচিত। সমাজে, প্রতিষ্ঠানে, রাষ্ট্রে ও বৈশ্বিক পরিসরে ব্যক্তির আকাঙ্ক্ষা গৌণ নয়, বরং মূখ্য। অবশ্য সমষ্টি ও সর্বজনীনতার নিরিখেই সাংস্কৃতিক সদাচার গণ্য। জ্ঞান, বুদ্ধি, যুক্তি, বিবেক, বিবেচনা, নীতি ও সর্বজনীন কল্যাণাদর্শের অনুগত থাকার মধ্য দিয়ে সদাচারের প্রতিষ্ঠা হয়। সদাচারী ব্যক্তিদের সংযম, পরমতসহিষ্ণুতা, নিয়ন্ত্রিত বচন ও বিনয়, পরস্পারিক শ্রদ্ধাবোধ ও সম্প্রীতির অনুভব চর্যায় ও চর্চায় সদাচারের কাঠামোগত সম্প্রসারণ ঘটে। সদাচারী নারী ও পুরুষ অপরের প্রতি সেরূপ আচরণ করে না, যা অপরের মধ্যে খুঁজে পেলে তার আপন বেদনা, বঞ্চনা ও বৈষম্যবোধের, অপমানের ও অবমানের, উপেক্ষা ও ঘৃণার উৎপাদন হতে পারে। সদাচারীর বৌদ্ধিকতা অপর প্রাণের থেকে আপন প্রাণের ভিন্নতার বিপরীতে নৈকট্যের ঐক্য অবলোকন করে, অনুভব করে, মান্য করে। অতএব, সদারই সংস্কৃতি তথা সংস্কৃত জীবনাচার।

 

|| সংস্কৃতি: ব্যক্তি ও সমাজ

ব্যক্তি সমাজের একক, সংস্কৃতির ধারক, বাহক, উদ্যাপক, সঞ্চারক, চালক ও পরিচালক, পরিবর্তনকারী, পুনরুজ্জীবক, স্রষ্টা। যুথবদ্ধ ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে সমাজ, সম্প্রদায়, গোষ্ঠী, জাতি, গোত্রসমষ্টি। ব্যক্তি-সমন্বিত দলের, গোত্রের, গোষ্ঠীর, সম্প্রদায়ের, সমষ্টির, জাতির পরিচয় চিহ্নিত হয় সংস্কৃতির নিরিখে; সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য, স্বভাব, আচরণ, আচার, বিশ্বাস, ইতিহাস, ঐতিহ্য, ব্যবহার, ভাষা, মনোভাব, অভিব্যক্তির আলোকে। সংস্কৃতি বিনির্মাণ, বহন, চর্চা, পরিবর্তন, পরিশীলন, নির্ধারণ, উদ্যাপন সৃষ্টিজগতে মানুষেরই কারবার, অন্য প্রাণীর নেই বললেই চলে। ব্যক্তি দ্বারা সৃষ্ট সংস্কৃতি গ্রহণীয় হলে তা সমাজে, সম্প্রদায়ে, সমষ্টিতে প্রচারিত, প্রতিফলিত, প্রতিপালিত, উদ্‌যাপিত, সঞ্চারিত, জাগরিত, নবায়িত হয়; কালে কালে পরিবর্তমান প্রেক্ষাপটে হয়ে যায় বিলুপ্তি প্রবণ, বিলুপ্ত। অবশ্য সুপ্তও থাকতে পারে সাংস্কৃতিক উপাদান; এবং প্রয়োজনে ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ কিংবা সম্প্রদায়ের চেতনা, চর্চা ও চর্যায় হতে পারে, পুনর্জাগরিত হয়ও।

সাধারণভাবে সবার জানা কথা যে, সমাজ, সম্প্রদায়, গোত্র, গোষ্ঠী স্থানিকতার নির্দিষ্টতায় চিহ্নিত হয়। নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের ভাষা, উৎপাদন ব্যবস্থা, প্রতিবেশিতা, প্রথা, পরিবার কাঠামো, খাদ্যাভ্যাস, অনুষ্ঠান, অনানুষ্ঠানিকতা, পারস্পারিক মিথস্ক্রিয়া ও সম্পর্কের প্রকৃতি, প্রযোজনা, বিনোদন, বেদনা, উদ্যাপন দ্বারা সংস্কৃতি বিশিষ্টতা পায়। সংশ্লিষ্ট সম্প্রদায়ের পরিচয় প্রকাশিত হয়জাতিগত, সমাজগত, গোষ্ঠীগত, গোত্রগত পরিচয় সংস্কৃতি দ্বারা। সম্পূর্ণ মানবসমাজে স্থান-কালভেদে বিরাজ করে ভিন্নতা, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য। নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভিন্নতার সমন্বয়ই আসলে। সমাজের অন্তর্ভূক্ত প্রত্যেক ব্যক্তিই ভিন্ন বটে। সে কারণেই সমাজ সম্বন্ধে বলা যায়সকলেই ভিন্ন/ এসসঙ্গে অনন্য। বাংলার মেলায় শিশুদের আকর্ষণীয় খেলনা রঙিন ঘূর্ণি পাওয়া যায়। বাঁশের ছোট্ট কাঠির মাথায় গুনাতারের আংটায় লাগানো কাগজের ঘূর্ণি থাকে আটকানো। ঘুর্ণিতে থাকে কম করে চার রঙের পাখা। পাঁচ, ছয় বা সাত রঙের ঘুর্ণিপাখাও হয়। শিশুরা তা কখনো বাতাসের বিপরীতে ধরে, কখনো দৌড় দিয়ে পাখায় হাওয়ার বেগ তৈরি করে, কখনো বা ফুঁ দিয়ে দ্রুত ঘোরায়। তখন আশ্চর্য পুলক ও শিহরণ শিশুমনে জাগিয়ে ঘূর্ণির বহু রঙ এক রঙে পরিণত হয়। তখন আর রঙের ভিন্নতা দৃশ্যমান থাকে না। একাকার হয়ে যায়। ঘূর্ণি থামলে আবার সেই লাল, হলুদ, নীল, সাদা, কালোর ভিন্নতা দেখা দেয় বহু রঙের কাগজ বিশেষভাবে কেটে ভাঁজ করে বানানো মজার অরিগ্যামি পণ্য ঘূর্ণির গায়ে। তো, ব্যক্তি এমনই। সমাজে পারস্পারিক বহুমুখী মিথস্ক্রিয়ায়, লেনদেনে, বন্ধুতা-মিত্রতা-শত্রুতায়, প্রেমে-বিরহে-বিচ্ছেদে-মিলনে, কর্মে-অবসরে, আলাপে, গ্রন্থনে সম-সংস্কৃতিমুখী গতি লাভ করে পরস্পরের সঙ্গে একাকার হয়ে যায়। ব্যক্তিবর্গের স্বতন্ত্র বোধের ঐক্যের প্রয়োজনে সমাজের প্রতিষ্ঠা। সংস্কৃতিই সমাজ প্রতিষ্ঠার সূত্র। সংস্কৃতিতে ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির ও ব্যক্তিবর্গের বন্ধন রচনা করে সাংস্কৃতিক উপাদানসমূহবস্তু, বস্তুর আকার ও ব্যবহার আর যত্ন, ভাবযা অদৃশ্য, অধরা, বিমূর্ত, নিরাকার অথচ মানবিক নূরের বিভায় সাকার। ব্যক্তিহীন সমাজ যেমন অকল্পনীয়; সংস্কৃতিহীন সমাজ তেমন অসম্ভব। থাকলেও তা ঠুনকো, অসংস্কৃত, অকেজো, অস্তিত্বহীন। সংস্কৃতিই সমাজের, সম্প্রদায়ের, জাতির, গোষ্ঠীর আসমান সমান ছাতা।

তবে, ধর্মের উদ্ভব ও বিস্তারের পরবর্তীকালে, মতাদর্শের বৈশ্বিক পরিভ্রমণের প্রভাবে, মহাবিশ্বে প্রযুক্তির প্রসারে, রাজনীতি ও বানিজ্যের, যুদ্ধ ও শান্তির, বিভাজন ও সম্প্রীতির, বিনাশ ও সুরক্ষার, প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট ভূ-বিপর্যয় ও সুরক্ষার, বিশ্বায়ন ও ঔপনিবেশায়নের দ্বারা স্থানিকতা পরাক্রান্ত হয়। বহিরাক্রমণের শিকারে ও বাধ্য দাসে রূপান্তুরিত হবার ফলে সম্প্রদায়ের, সমাজের স্থানভেদ ঘুচতে শুরু করে। আবার স্থানিকতা থেকে ব্যক্তি, ব্যক্তির সমাজ, সমাজের ব্যক্তি, তাদের সংস্কৃতি, সংস্কৃতির ব্যক্তি ও সমাজ, সংস্কৃতিঋদ্ধ সম্প্রদায় ও সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি স্থানভেদ মাড়িয়ে স্থান নির্বিশেষে নতুন ধর্মীয় সম্প্রদায়, আদর্শিক সম্প্রদায়, প্রযুক্তিক সম্প্রদায়, দার্শনিক সম্প্রদায়, বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়, ভাষা সম্প্রদায়, সাহিত্য সম্প্রদায়, ব্যবসা সম্প্রদায়, কারখানা সম্প্রদায়, মালিক সম্প্রদায়, শ্রমিক সম্প্রদায়, শাসক সম্প্রদায়, শাসিত সম্প্রদায়, শোষিত সম্প্রদায়, রাজনৈতিক সম্প্রদায়ের অন্তর্ভূক্তি লাভ করে। আরব, পারশ্য, ভারত, বাংলা, মালয়, ইউরোপ, আমেরিকায় বিস্তৃত হয়ে ছড়িয়ে আছে যেমন নানান ধর্মের সমাজ, তেমনি নানা পেশার সমাজ, বিবিধ মতাদর্শিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক সমাজতাদের হয়তো ভাষার ঐক্য নেই, খাদ্যের ঐক্য নেই, পরিধেয়ে ঐক্য নেই, ব্যবহার্য বস্তুতে ঐক্য নেই, সংগীতে ঐক্য নেই, আছে বিশ্বাসে, মরমে, ধর্মে, কার্যক্রমে। আবার এও এক নতুন সাংস্কৃতিক সম্প্রদায় বটে বিশ্বব্যাপী যারা আপন ভাষা বিসর্জন দিয়ে বেছে নিল উপনিবেশের, ব্যবসার, প্রযুক্তির, প্রচার মাধ্যমের, বিশ্বায়নের একক ভাষামুক্তবাজারের নামে, নয়া উদারবাদের নামে। তদুপরি ব্যক্তির, সমাজের, জাতির বাধ্যতামূলক নিরুপায় স্থানান্তর তো ঘটেই। তৈরি হয় অজানা ভূমি, প্রকৃতি ও পরিমণ্ডলে শরণার্থী আবাস। ক্রমে তাতে জরিত হয় শরণার্থী সংস্কৃতি, নতুন সম্প্রদায়, নতুন ভূরাজনীতি। সৃষ্টি হয় সংস্কৃতির নতুন বিন্যাস। সাথে সাথে তৈরি হয় সহায়ক সম্প্রদায়দুনিয়ার নানা প্রান্ত থেকে মানবিক সহায়তা দিতে একত্র হওয়া অসংখ্য ভিন্ন সংস্কৃতির ভিন্ন ভিন্ন সমাজের, ভাষার ব্যক্তি ও গোষ্ঠী দ্বারা গড়ে ওঠা নব্য সম্প্রদায়, নতুন সংস্কৃতি তাতে আপনি জন্ম নেয়, বিস্তৃত হয়। মানুষ নিজেকে আবিষ্কার করে নতুন পরিচয়ে।

তাহলে ব্যক্তি, সমাজ ও সংস্কৃতির সম্পর্ক জটিল, বহুমাত্রিক, তবে, আধুনিকায়ন, নবায়ন, পরিবর্তন, উদ্ভাবন, পুনর্জাগরণ, পরিশীলন, প্রগতি-প্রবণ মানুষের আবশ্যকীয় প্রবণতা। বিরাজিত, প্রতিষ্ঠিত, চর্চিত চর্যা ও সংস্কৃতি পাঠ করেই না পরিপ্রেক্ষিত-জনিত চাহিদা ও মানবাধিকার ভিত্তিক ব্যক্তিক, সমাজিক, প্রাতিষ্ঠানিক রাষ্ট্রীয় সংস্কৃতির উৎকর্ষ সম্ভব হবে, সম্ভব হবে শুদ্ধাচার তথা সদাচারের প্রতিষ্ঠা, সকল নেতিমুক্ত আপত শুদ্ধ সদাচারী পরিকাঠামো, কাঠামো, ব্যবস্থা, ব্যবহার, আইনের প্রয়োগ, পরিকল্পনার বাস্তবায়ন। জলবায়ু পরিবর্তন, আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় রাজনীতির নতুন বিন্যাসে ঐতিহ্য, ইতিহাস, বাস্তবতা ভিত্তিক নতুন সংস্কৃতির সৃষ্টি, বিকাশ ও প্রতিষ্ঠা হতে থাকবে। এ প্রক্রিয়া চলমান।

    

|| ব্যক্তি ও সমাজে সদাচার

ব্যক্তি ও সমাজের পারস্পারিক নির্ভরতা বিদ্যমান। ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট সামাজিক কাঠামোগত প্রেক্ষপট উপেক্ষা করে কেবলই নিজস্ব চিন্তা, বিশ্বাস, মতাদর্শ ও আচরণের চর্চা করতে পারে না। অন্যদিকে, সামাজিক কাঠামোর বিকাশ, বিন্যাস এবং টেকসই সাংস্কৃতিক সক্ষমতা নির্ভর করে সমাজবদ্ধ ব্যক্তির বিশ্বাসের ব্যাপ্তি, সীমাবদ্ধতা, জীবিকা ও কর্মক্ষমতার উপর, অপরাপর ব্যক্তি ও সমাজে প্রভাব বিস্তারের শক্তির উপর। ভিন্নভাবে দেখতে গেলে সামাজিক কাঠামোর ভিত আসলে ব্যক্তির চিন্তা দক্ষতা ও কর্ম ক্ষমতার যোগফল। সমাজের উপর ব্যক্তির নির্ভরতা বজায় থাকে পারস্পারিক সহমর্মিতা, নিরাপত্তা, সহানুভূতি, লেনদেন, দ্বন্দ্বের মাত্রা, সহিষ্ণুতা, ন্যায্যতা ও সামষ্টিগতভাবে মানবিক পরিস্থিতি মোকাবেলার মাধ্যমে। অতএব, ব্যক্তি নাকি সমাজের উৎপত্তি অথবা কার্যক্রম কিংবা গুরুত্ব আগে, সে তর্কে সদাচরী সংস্কৃতির উন্নতি হবে না। সমন্বয়ের পথই সংস্কৃতির পথ। তবে, চলমান পুঁজিবাদী ব্যবস্থা, ধনতন্ত্রে, প্রতিযোগিতাপূর্ণ নগরীয় পরিকাঠামোর ভেতরে, নির্দিষ্ট সমাজ কাঠামোয় বিকশিত ব্যক্তির অবস্থান এবং ব্যক্তির উপর সামাজিক কাঠামোর প্রভাব স্পষ্ট ব্যাখ্যা করা দুরূহ। কিন্তু ব্যক্তিকে চিহ্নিত করার ক্রমবর্ধমান প্রবণতার যুগেও সমাজের অস্তিত্বের বিকল্প প্রতিষ্ঠান নেই, হয়তো এখানেই আমাদের রাষ্ট্রকে বিকল্প হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। ব্যক্তি ও সমাজের পারস্পারিক নির্ভরতার গুরুত্ব তাত্ত্বিকভাবে টিকে আছে, সংরক্ষণবাদী ও উদারপন্থীদের দীর্ঘমেয়াদী বিতর্ক চলমান থাকা সত্ত্বেও। কেননা, সমাজ কাঠামো প্রভাবিত পটভূমির বিপরীতে ব্যক্তি খুব বেশি র‌্যাডিক্যাল হতে সক্ষম নয়, এবং তা করলে বা করার চেষ্টা করলে তা সমাজে সে ব্যক্তি অসামাজিক বিবেচিত হয়। অসামাজিকতা প্রতিহত করা সমাজের টেকসই থাকার ঐতিহ্যবাহী উপায়। এভাবে সমাজ ব্যক্তির উপর প্রভাব তৈরি করে কিন্তু ব্যক্তিকে বন্দি করতে না। প্রত্যেক স্বাধীন ব্যক্তির বিশ্বাস, চিন্তা, আচরণ ও কার্যের সমন্বয়েই নির্দিষ্ট স্থানে, ভাষায়, ধর্মে, পেশায়, প্রযুক্তি জগতে সমাজ পরিস্ফূটিত, প্রতিষ্ঠিত, পরিবর্তিত, নবায়িত হয়। ফলে, ব্যক্তির শুদ্ধাচার বা সদাচার এবং সমাজের শুদ্ধাচার বা সদাচার পারস্পারিক সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গিগত, আচরণগত এবং কার্যগতভাবে অবিচ্ছেদ্য হিসেবে পাঠ করতে হয়। ব্যক্তি তাঁর অনন্য ভিন্নতা বজায় রেখেও, সামাজিক পরিসরে অপরাপর মানুষের দ্বারা ইতোমধ্যেই প্রতিষ্ঠিত প্যাটার্ন অনুসারেই ব্যবহারিক ও আচারিক ভূমিকা পালন করে। ব্যক্তি হিসেবে জীবনধারণ ও যাপন অসম্ভব হেতু তথাকথিত চূড়ান্ত ব্যক্তি-স্বাধীনতার আলাপ শেষ পর্যন্ত সামাজিক পরিসরেই তুলতে হয়। অর্থাৎ, সমাজ এমন এক পাটাতন যা এড়িয়ে ব্যক্তির দাঁড়াবার জায়গা থাকে না। শূন্যতার পরিসরে ব্যক্তির অস্তিত্ব অলীক, কেননা ব্যক্তির অস্তিত্ব কেবল অপর ব্যক্তির অস্তিত্বের সাপেক্ষেই জাহির হতে পারে।

সুতরাং সদাচারের সঙ্গে ব্যক্তি ও সমাজের সম্পর্ক বিবেচনায় নিতে হলে প্রথমেই আমাদের খুঁজে বের করতে হবে যে, কেন নির্দিষ্ট সমাজ কাঠামোর অধীনে ব্যক্তি বিশেষ বিশ্বাস লালন করেন, বিশেষ অভিব্যক্তি, ব্যবহার, আচরণ প্রকাশ করে, সিদ্ধান্ত নেয় এবং সমাজের অপরাপর ব্যক্তি ও ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করে। আমাদের গভীরভাবে সমাজতাত্ত্বিক, মনস্তাত্ত্বিক ও সাংস্কৃতিক তদন্ত করে বোঝার চেষ্টা করতে হবে যে, সমাজিক কাঠামোঐতিহ্য, রীতি, অনুশাসন, প্রথা, রাষ্ট্রের ও স্থানীয় সরকারের আইন ও বিধি, উৎপাদন ব্যবস্থা, পণ্য, লেনদেন, ব্যবসা, খাদ্য ব্যবস্থাকীভাবে ব্যক্তিদের বিশ্বাস, আচরণ, আচার, আনুষ্ঠানিকতা, অনানুষ্ঠানিকতা, প্রাতিষ্ঠানিকতা, অপ্রাতিষ্ঠানিকতা, ভাষা, ইশারা, সংকেত, ব্যবহার্য বস্তু ইত্যাদিকেঅর্থাৎ, সংস্কৃতিকে প্রভাবিত করে, নিয়ন্ত্রণ করে, অনুমোদন করে, নিরোধ করে, নিষেধ করে, প্রতিহত করে কিংবা উৎসাহিত করে। দেখতে হবে, সমাজের একক হওয়া সত্ত্বেও ব্যক্তি কখন, কী প্রক্রিয়ায় ব্যতিক্রম তৈরি করে, তা সে ব্যতিক্রম ইতিবাচক হোক অথবা নেতিবাচক। এবং কীভাবে সে ব্যতিক্রম, সৃষ্টিশীলতা, ধ্বংসাত্মক প্রবণতা সামাজিক কাঠামোয় শৃঙ্খলা অথবা বিশৃঙ্খলার বিস্তার ঘটিয়ে থাকে। তাহলে সমাজ বিনির্মাণের প্রশ্নে কার্যকরভাবে তাৎক্ষণিক, স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী কার্যক্রম প্রাতিষ্ঠানিক, উপানুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক পর্যায়ে নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন করার ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যাবে। আচার-আচরণই যেহেতু ব্যক্তির পরিচয়, সমাজের চিহ্ন, জাতির বৈশিষ্ট্য নির্ধারক এবং সদাচারই যেহেতু সর্বজনীন কাম্য, এবং যেহেতু ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র, ব্যবস্থা ও ব্যবস্থার কার্যকারিতা পরস্পর নির্ভর, অতএব, পারস্পারিক সম্পর্ক, দ্বন্দ্বও মিলনকে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যে উন্নীত করাকে প্রাতিষ্ঠানিক পদক্ষেপ হিসেবে নিতে হবে। কেবল ব্যক্তির দানবীয় বিকাশে সমষ্টির, সমাজের, সম্প্রদায়ের, জাতির কল্যাণ সমতার ভিত্তি থেকে সরে যাবার ঝুঁকি এড়াতে পারবে না। ব্যক্তির সদাচার সমন্বিতরূপে সমাজেরই সদাচার। সদাচারেই সর্বজনের সম্মিলন, সম্প্রীতি, আত্মবল, সামষ্টিক শক্তি, সুখ ও কল্যাণ।

আসছে দ্বিতীয় পর্ব