জীবন ও অন্যান্য কবিতা

অ+ অ-

 

কবিতা

বাতাস কবিতা লিখে যেতে লাগলো—
এক দেশ থেকে অন্য দেশ!

বারবার লিখতে থাকলো—
তোমার ভেতরের শব্দ 
          আর যন্ত্রণাগুলো।

পাখিদের চোখের কাছে—
দীর্ঘ হতে লাগলো তার ডানা।

এই অসীম ওড়া নিয়ে—
তার কী শেষ আছে?
বাতাস, না ভাষার মতো দুলতে লাগলো—
কানে তোমার পাতার রিং
       গাছের সবচেয়ে উপরে
পাগলের মতো নাচছে!

ঋতু দিয়ে ঘেরা সেসব কথা—
বাগানের মাটি আর ঘাস
বলো, কে কার দিকে তাকালো?

বাতাস একটা কবিতা লিখেই চললো—
দীর্ঘ এক জীবনের চেয়ে দীর্ঘ
                      অন্ধকারের ভেতর,
যেন আমাদের আত্মা—
কবিতার মতো নিঃস্ব লাল হয়ে
কোথাও ফুলের মতো ফুটলো।

যে তার ঘ্রাণ পায়—
          আমি তার পাপড়ি
টুকরো টুকরো কঙ্কাল।

যেন জীবনের শেষঅব্দি আমার সাথে—
কেবল আমারই দেখা হলো।

মৃত্যু

আমার মৃত্যু হোক, 

তীব্র বাতাসে—
ধুলার কুণ্ডলিতে ঘূর্ণি খেয়ে
খণ্ড-বিখণ্ড
সমস্ত শরীরের অংশ
যদি হারিয়ে যায় 
              এখানে-সেখানে

কিংবা তার কিছু অংশ ঝুলে থাকে
দূরে, আমের ফুলে
যেন সে এক গাছ আছে
                  ঝড় আসছে—
আরও দূর থেকে
নামহীন সংকেত যেন
লা লা লা সুরের তরঙ্গে
               আল্লাহর চির আদেশে—
এক পাগল, যদি চোখ মারে
তোমার চোখে কখনও—
সে অদৃষ্ট পৃথিবীর

সকল ঋতু আর ঘৃণা...

তার বিপরীতেই ভালোবাসা
ছোট্ট এক বাবুই—
যে ঠোঁটে বুনে তার নিজের বাসা

যেন তোমার বিগত দিনের বিয়ে
এইসব ঝড়-বৃষ্টির দিনে

দূরে কেউ পটকা ফোটাচ্ছে
আহা! ঘূর্ণন—রঙ
আমার আকাশ, বালি
তোমাকে বুকে রাখি—

তুমিও কী পাগল?
বাতাসে খণ্ড-বিখণ্ড এখনও—
আমার শরীরের ভেতর ঢুকে বসে আছো!

 

ইশারা

তোমাকে খুঁজতে খুঁজতে—
মরার সামনে এসে দাঁড়িয়েছি।

যেন আল্লাহর অঙ্গুলিতে—
ফুটে ওঠা পাথর!

ভাবছি, ছুঁয়ে দেখি—
ওইসব পাথরের শরীর।

কী আছে তার ভেতর!

সে এক মিহি কণ্ঠনালী 
তুমি বললে, না—

আমাকে বাঁশি বানাও—
আর সবকটা দরজা।

যেখানে তুমি প্রবেশ করবে—
একান্তে বাজাবে সুর সারগাম।

মানুষে মানুষ মিললে—
বিদ্যুৎ ছড়িয়ে পড়ে!

পাখি তার গান গায়—
গুপ্ত এক লাল ফুলে।

গাঢ় গভীর আমার চোখ—
পৃথিবী, পৃথিবী থেকে দূরে!

কাকে যে আব্বা ডাকি—
কাকে যে বলি আম্মা—

আমার কেন ঘোর লাগে।
কেন এমন লাগে আমার।

মরার সামনে এসে দাঁড়িয়ে—

মনে হয় তুমি টান দিলেই—
ফেটে যাবে সমস্ত গুপ্ত ভাষার দানা।

খাবার হয়ে ছড়িয়ে পড়বে চারদিক—
এখানে ওখানে নানান ফুলের বাহানা।

সোনালি ঘুমের কাছে—

তুমি ছাড়া এমন ঘুম আমার
কে আর ঘুম পাড়াবে, বলো?

ও মুখে সোনা রঙ।
ও মুখে পাখি ডাকে।

আমি তার নাম লিখি—
ঠোঁটের ওপর ঠোঁট ঘষে।

কালো মসৃণ পাথরে—

তোমাকে খুঁজতে এসে
মরার সমানে দাঁড়িয়েছি।

যেন আল্লাহর অঙ্গুলিতে
মায়াবী এক ইশারা—

প্রেমের উপর পাগল হয়ে নাচছে।

 

আকাশ

বালুতে হেলানো ঘর—
আকাশের দিকে তাকিয়ে অশ্বের চোখ
দ্রুত—কোন দিকে যাবে আর
কোথায় পাবে দেশ

পাখি আর মানুষের এতো মিশ্র বেদনা—
নিরাভরণ ফুলের ক্লেশ
ভাবো বসে,

এমন নিরালা—
কোনো রকম পার পেয়ে যাও যদি
বসে থেকো কালো শাড়ির পাশে—
কুচিতে লুকানো এতো এতো যে কারুকাজ

সে কি মদ মিশ্রিত মহুয়ার বন?

শিশু কোলে নিয়ে যাচ্ছে দূর আন্তনগরে
যেখানে তার বাড়ি আঁকা—
প্রেমের মতো নিবিড় 
দাঁড়িয়ে থাকা এক দরবেশ!

যেন ফুরায় না—
সে কথা তার কোনোদিন
তবু ভাবি—

রোদের নিচে কতো ছায়া মুখ
মথের গান—
ভুলে যাওয়ার ছলে 
              হে নাথ—

তুমি কিভাবে উড়ে যাও একা—
এই সাতসকালে 

মদভরা আকাশের দিকে...

 

প্রশ্ন

আমাকে প্রশ্ন করতে হবে
অবশ্যই নিজেকে।

যেন আমি একটা পাথর
দূর থেকে কেউ ছুঁড়ে মেরেছে
অথচ কেউ না কেউ তো
ছুঁড়েছে আমাকে!

তারপর, সেই চূর্ণ-বিচূর্ণ
একটা খেলনা—
এখানে ওখানে নানা অংশ
আমি কথা বলি

কার সঙ্গে—কার অঙ্গ ধরি
সে কার নিয়তি?

আমাকে তো বুঝতেই হবে—
অবশ্যই নিজেকে।

তুমি এমন ভাবে বলে যাও—
যেন বাতাস শুনতে পায়
আমার কি কি চাই
কি কি চাইছি আমি!

আলাদা কে আর বলো?
এক জোড়া শরীর—
কখনও তারা বিচ্ছিন্ন নয়
আমরা আমাদের শুনছি

গোপনে বা প্রকাশ্যে—সে আয়না
দ্যাখো, শুধু ভালোবাসা বিষয়ে

ভালোবাসার কাছে কখনও প্রশ্ন করো না।

 

মুহূর্ত

আমার কথা আটকে যায়!

বলছিলাম, কেউ তাকে ধরে আছে—
যেন আমার গলা ফেটে বের হবে পদ্ম ফুল।

তাকে বলেছিলাম—

ধরে রাখো এই উন্মাদনা
ধরে রাখো এই কম্পন
ধরে রাখো আমার চুল

একদিন এই গভীর ঘরটায় শব্দ হবে—
হাল্কা এবং ভারি
যতোসব তোমার অলংকার
সোনা আর রূপায় বাঁধা।

সে মূহূর্ত, পাগলের ঘড়ি—
কাটায় কাটা মিলেমিশে একাকার!

দ্যাখো দূরে, যেখানেই বাগান—
সেখানেই এলোমেলো পাখির ঝাঁক
তারা সকলেই আমার নামে অঙ্কিত

অথচ কালো পাখিটাই সবচেয়ে আলাদা!

আমার গলার ভেতর বসে—
তোমার নাম ধরে ডাকছে।

আমাকে যেতেই হবে

দুনিয়া আমার জন্য না
আসলে কিছুই না আমার জন্য।

এই সঙ্গীত সঙ্গত কারণে বিরহ—
বিভূঁই পাখির মতো
       আমাকে ডেকেই গেলো
আমি শুনি-নি সেই মুহূর্ত—
মাহুত বন্ধু, কোন ইশারায়
        কোনদিকে যে চলে যায়!

সে অদৃশ্য—হাওয়ার দুল
ফেলে রেখে মেয়েমানুষের কাছে
গহনার বাজনাই মধুর।

অথচ বুলবুল ডাকে—
বিধুর বৈভবে কোনো এক ভোরে
মৌলভি জানে, 
          আমাকে যেতেই হবে...

আর ফেরা হবে না দুনিয়ার কোনোখানে।

 

জীবন

আমাকে দুঃখ করো—
আমি একটা জীবন

আমাকে ভালোবাসো—
কারণ এটা জীবন

আমাকে যখন তখন কুড়িয়ে পাও
এমনকি ছুঁড়ে দাও বাতাসে

আমি একটা জীবন—
রোজ চুমু খাই

আকাশে-পাতালে।

 

ফুলের শব্দ

তুমি এক ঋতু—
বাগান সে কথাই বলছে
         ফুলের শব্দের ভেতর
নিবিড়, একেকটি মথ
কোত্থেকে উড়ে এসে—
আবার হারিয়ে যাচ্ছে সেখানে...

ভাবছি—

সেইসব কথার মাথামুণ্ড কী 
কোথায় যাচ্ছে তারা
কোন গৃহে—
কোন দরজায়—
কোন হৃদয়ের ফাঁকে উড়ছে
       এমন হাওয়ার ইশারা

এ কী মাথার কাজ—
এ কী সর্বস্ব ব্যথা—
এ কী ছোট্ট জামা—

লুকানো দেহের আবির
         সেখানে তোমার হাত—
         যদিও আমার কপাল 
                     শিশুর মতো
তুমি যেমন ইচ্ছে—
এখন তাকে নিয়ে খেলতে পারো

দূরে, বীজ ফেটে যাওয়া শব্দ
তীব্র রোদের ফুল—
তুমি চিৎকার করো না
ভাবো, এটা তুমি এবং তুমিই
পৃথিবীর সমগ্র খেলনা—
               আর দোহাই

কে বানিয়েছে তাকে?

তার রূপ—এমন রূপক
আমাকে ভেঙে ভেঙে
যেন তুমিই আমি—
      আর আমিই তুমি 
একটি প্রশ্নের মতো
আকাশের দিকে তাকিয়ে—
হঠাৎ নিশ্চুপ বেঁকে যাচ্ছি আমি

আমাকে বুকে নাও—
ওখানে এক বাগান
দ্যাখো, ফুলের শব্দে ভেতর
             একটি মথ—
কেমন দিশেহারা হয়ে 
ঘুরে ঘুরে নাচছে...