মার্কেজ আমাকে গল্পের দুর্দান্ত শক্তিটা কী, তা শিখিয়েছেন

অ+ অ-

 

নাইজেরিয়ার বিখ্যাত লেখক ও ঔপন্যাসিক চিমামান্দা নগোজি আদিচের বিদ্যমান লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে বৃটেনের দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকায়। লেখায় এনিড ব্লাইটনের রহস্যময়তা, চিনুয়া আচেবের শক্তি এবং ম্যাগাজিন পড়ার আনন্দ নিয়েও কথা বলেছেন তিনি। প্রতিধ্বনির পাঠকের জন্য চিমামান্দা আদিচের লেখাটি তুলে ধরা হলো। দ্য গার্ডিয়ান-এ প্রকাশিত লেখাটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন সাদাত সায়েম

 

ছোটবেলার বই পড়ার স্মৃতি

আমার বয়স তখন প্রায় আট। নাইজেরিয়া ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে আমাদের বাড়ির নিচতলায় আলোক-উজ্জ্বল ঘরে বসে এনিড ব্লাইটনের ফেমাস ফাইভ’’ সিরিজের একটি বই পড়েছিলাম। আমি এর আগেই পড়তে শিখেছিলাম, কিন্তু এটি আমার বই পড়ার স্মৃতিগুলোর মধ্যে প্রথম দিককার স্মৃতি। সে এক অসাধারণ আনন্দের অনুভূতি, পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা সেই অনুভূতি, একদিকে চাচ্ছিলাম অন্ধকূপের রহস্যের সমাধান হোক, কিন্তু গল্পটা শেষ হয়ে যাক, সেটাও আবার চাচ্ছিলাম না।

চিমামান্দা নগোজি আদিচে © ছবি: নিউ ইয়র্ক টাইমস

বেড়ে ওঠার সময় প্রিয় বই

আমি ক্যামারা লেয়ের দ্য ডার্ক চাইল্ড’-এর গভীর প্রেমে পড়েছিলাম, যা সম্ভবত কথাসাহিত্যে একটি নির্দিষ্ট ধরনের নস্টালজিয়ার প্রতি আমার আগ্রহের জন্ম দেয়। আমি পেসসেটার্সও [বিভিন্ন আফ্রিকান লেখকের ইয়ং এডাল্ট বইয়ের সিরিজ] পছন্দ করতাম, কারণ সেগুলো পড়ার ফলে আমি একটি (ইতিবাচক) প্যান-আফ্রিকান সংবেদনশীলতা অর্জন করতে শুরু করি।

 

যে বইটি কৈশোরে আমাকে বদলে দেয়

আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধুর ভাই আমাকে গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের ওয়ান হান্ড্রেড ইয়ারস অব সলিচ্যুড’ [নিঃসঙ্গতার একশ বছর] বইটি দেন। এই বই পড়ার আগে কোন বই পাঠ করে এমন তীব্র প্রতিক্রিয়া আমার হয়নি। বইটিতে যখন আমি স্বর্গে আরোহণকারীর [রেমিদিওস] অংশটুকু পড়ি, তখন আমার যে তীব্র শারীরিক অনুভূতিটি হয়েছিল তা আমি কখনই ভুলব না। এটি আমাকে গল্পের দুর্দান্ত শক্তি, আপনার কল্পনাকে যুক্ত করার এবং জিনিসগুলোকে আপনার মনে স্থায়ীভাবে গেঁথে দেয়ার গল্পের ক্ষমতা সম্পর্কে এমনভাবে শিখিয়েছে যা অন্য আর কিছুর পক্ষে সম্ভব নয়।

 

যে লেখক আমাকে বদলে দিয়েছেন

আমি প্রায় ছয় বছর আগে ক্যারল অ্যান্ডারসনের ‘হোয়াইট রেইজ’ পড়েছিলাম। এই বই পড়ার আগে আমি সবসময় আফ্রিকান আমেরিকানদের জন্য ক্ষতিপূরণের ধারণায় বিশ্বাস করতাম, তবে আমার সেই ধারণাটি ছিল অস্পষ্ট, আর সম্ভবত তা বাস্তবধর্মী ছিল না। সুন্দরভাবে লেখা সেই ইতিহাস [হোয়াইট রেইজ] বিষয়টি সস্পর্কে আমাকে অন্যভাবে ভাবতে বাধ্য করেছিল।

 

যে বইটি বারবার পড়ি

চিনুয়া আচেবের ‘অ্যারো অব গড’, কারণ এটি সাহিত্য যে মানুষকে কোন কিছু জানায় ও আনন্দ দেয় বা এমনকি তা করা উচিতও, তার একটি দুর্দান্ত উদাহরণ।

চিমামান্দা নগোজি আদিচে ©  ছবি: দ্য আফ্রিকান রিপোর্ট

যে বই পুনরায় পড়তে পারিনি

বয়স যখন আরো কম ছিল আমি জেমস হ্যাডলি চেজের ক্রাইম ফিকশন উপন্যাসগুলো পছন্দ করতাম। কয়েক বছর আগে আমি তা পুনরায় পড়ার চেষ্টা করি, কিন্তু প্রথম পৃষ্ঠাটিও শেষ করতে ইচ্ছা করেনি।

 

অনেক পরে এসে যে বইয়ের দেখা পাই

আন্দ্রেজ সেজসিপিওরস্কি-এর দ্য বিউটিফুল মিসেস সিডেনম্যান’। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার পোল্যান্ডের অবস্থা নিয়ে এই বিস্তৃত, পরিপক্ক উপন্যাসটি আমার ওপর তীব্র প্রভাব ফেলে, সম্ভবত এই কারণে যে আমি সেই সময়ে নাইজেরিয়ান-বিয়াফ্রান যুদ্ধ নিয়ে গবেষণা করছিলাম। বিষয়টা ছিল আমার জন্য হৃদয়স্পর্শী, কারণ সেই যুদ্ধে আমার দাদা ও নানা উভয়েই মারা গিয়েছিলেন।

 

বর্তমানে যে সব বই পড়ছি

আমি একই সময়ে একাধিক বই পড়ি, সম্ভবত তা কোন একটা কিছুতে স্বল্পসময় মনোযোগ ধরে রাখতে পারা নামক আধুনিক যন্ত্রণার প্রমাণ, এবং আমি যেসব বই পড়তে শুরু করি তা যে সবসময় শেষ করি তাও নয়। তবে আমি মেরি গর্ডনের পেব্যাক এবং পেনেলোপ লাইভলির দ্য রোড টু লিচফিল্ড উপভোগ করছি, এবং দুটোই শেষ করব কারণ তারা খুবই ভাল, মনস্তাত্ত্বিকভাবে তীব্র এবং জ্ঞানী। সবেমাত্রই আমি একজন তুখোড় নাইজেরীয় অনুসন্ধানী সাংবাদিক ডেভিড হুন্ডেইনের লেখা দ্য জঙ্গল পড়তে শুরু করেছি। এবং, ভাষার অন্তর্নিহিত সৌন্দর্যের কথা মনে রাখতে আমি রিতা ডোভ, জ্যাক গিলবার্ট এবং লিয়ান ওসুলিভানের কবিতা সংকলনগুলোর মধ্যে আগাগোড়া ডুবে আছি।

 

আয়েশ করতে যা পড়ি

আটলান্টিক এবং নিউ ইয়র্কার ম্যাগাজিনের জমতে থাকা সংখ্যাগুলো পড়ে আমি আয়েশ করি, কারণ আমি জানি যে প্রতিটি সংখ্যার মধ্যে রত্ন-সদৃশ কিছু থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।