কবিতা সমাজের মধ্যে থাকুক: শুনতারো তানিকাওয়া
দুটো কথা
২০১৯ সালের নভেম্বরের ২৯ তারিখে, জাপান ফাউন্ডেশন পুরস্কার ২০১৯-এর স্মৃতিতর্পণ উপলক্ষ্যে, শুনতারো তানিকাওয়াকে নিয়ে মিমি য়ো সুমাসো: কথা, কবিতা এবং সংগীতসন্ধ্যা নামের একটি অনুষ্ঠান হয়; ‘মিমি য়ো সুমাসো’-র অর্থ ‘যত্ন সহকারে শোনা’। অনুষ্ঠানের প্রথমার্ধ্ব ছিল শিজিন নান্তে য়োবারেতে [‘কৃপা করে কবি বলে অভিহিত করুন’]-এর সহলেখক মিজ ওজাকি মারিকোর সঙ্গে—কবিতালেখা, আন্তর্জাতিক ভাববিনিময় এবং অন্যবিধ প্রসঙ্গে—তানিতাওয়ার কথোপকথন। দ্বিতীয়ার্ধ্বে ছিল তানিকাওয়ার পুত্র—বিশিষ্ট সংগীতকার, পিয়ানোশিল্পী এবং আয়োজক—কেনসাকো তানিকাওয়ার কনসার্ট। পিতাপুত্রের কবিতাপাঠ এবং পিয়ানোবাদনের যুগলবন্দি ছিল সেদিনের অন্যতম আকর্ষণ। সেদিন কবিকণ্ঠে তাঁর বিখ্যাত কবিতা শোনো, আর বাঁচো এবং আর-সব বিখ্যাত কবিতা শুনে দর্শকশ্রোতারা অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েছিলেন এবং আবেগময় উচ্চারণে তাদের অনুভূতি জ্ঞাপন করেছিলেন যার শব্দরূপ ছিল এরকম: ‘তানিকাওয়ার কবিতার মুখোমুখি হয়েছিলাম যখন আমি প্রাথমিক স্কুলের ছাত্র ছিলাম, আর আমার জীবনের বাঁকে বাঁকে তাঁর কবিতাগুলো ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী। আজকের এমন একটা হৃদয়স্পন্দিত অনুষ্ঠানে আসার সুযোগ পেয়ে ঋদ্ধ হয়েছি আমি।’ ‘পিতাপুত্রের সুস্থিত যুগলবন্দি ছিল আশ্চর্যসুন্দর’ এবং ‘কী-এক কারণে আমি কান্না থামাতে পারিনি। আর আমার কঠিন মন প্রশান্তিতে ভরে উঠেছিল।’
এই বিশেষ সাক্ষাৎকারটিতে জাপানি ভাষা, পারস্পরিক যোগাযোগ এবং কাব্যরচনা বিষয়ে তানিকাওয়া খোলামেলা কথা বলেছেন।
জাপান ফাউন্ডেশনের অনুষ্ঠানে শুনতারো তানিকাওয়া ও ওজাকি মারিকো © ছবি: কাতানো তমহিরো
প্রশ্ন: বলা হয়ে থাকে যে, জাপানি ভাষার ওপর আপনার গভীর বোধগম্যতা রয়েছে যা যে-কোনো ভাষাবিদের সমতুল। আপনি মাদার গুজ, পিনাট সিরিজ এবং আরও কিছু রচনার অনুবাদের কাজও করেছেন। জাপানি ভাষাকে অন্য ভাষার সঙ্গে কীভাবে তুলনা করবেন আপনি?
উত্তর: জাপানি ভাষা যেমনটা আমি জানি অন্য ভাষা তেমনটা জানি না, তাই তুলনা করাটা কঠিন। কিন্তু আমার ধারণা, জাপানি ভাষায় প্রকাশের যে অস্পষ্ট রূপ রয়েছে কবিতায় তা ভালোভাবে প্রকাশ করা যায়। উদাহরণত, ইংরেজিতে কর্তা ছাড়া কোনো বাক্য সম্পন্ন হয় না। জাপানি ভাষায় কর্তা ছাড়া বাক্য রচনা সহজ, সুতরাং জাপানিতে কর্তা ছাড়াই একটি কবিতা লিখে শেষ করা যায় এবং কে কথা বলছে সেই কর্তার রূপটিকে চেনা যায়। কিন্তু আমার কবিতা যখন অনুবাদিত হয় তখন প্রায়শই আমার কাছে জানতে চাওয়া হয় যে ঠিক কে কথা বলছে, আসলে তো আমি জানি না ঠিক কে বলছে। আমার মনে হয় ইংরেজি ও ফরাসিভাষীরা এ ব্যাপারটাকে পছন্দ করে না, কিন্তু জাপানিরা সহজেই এটাকে কবিতা হিসেবে নিয়ে নেয় ।
প্রশ্ন: ১৯৬৬ থেকে ’৬৭ সাল পর্যন্ত আপনি ব্যাপকভাবে ইউরোপ আমেরিকা ভ্রমণ করেছেন। জাপান ফাউন্ডেশনের আয়োজনে কোলন, বার্লিন, রিগা এবং ২০০৩ সালে প্যারিসে কবিতা পাঠের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণও করেছেন। বাইরের জগতের এই ব্যাপক অভিজ্ঞতা, আন্তর্জাতিক বিনিময় এবং বহুজাতিক মিথস্ক্রিয়া কী প্রভাব ফেলেছে আপনার ওপর?
উত্তর: জাপানের বাইরে যখন আপনি যাবেন তখন অনেক বিরল বিষয়, যেমন খাবারদাবার বা দৃশ্যাবলি, আপনি দেখতে পাবেন। অন্য অনেক পর্যটকের মতোই ভ্রমণের সময় এসব দুর্লভ জিনিসকে উপভোগ করার আগ্রহ আমার মধ্যেও থাকে। ভাষার ক্ষেত্রে বললে, আমি জাপানিই শুধু বলতে পারি, তাই অন্য দেশের মানুষজনের সঙ্গে সরাসরি আলাপচারিতায় মশগুল হতে পারি না। কিন্তু প্রাত্যহিক আলাপন থেকে কবিতাপাঠ আলাদা ব্যাপার, এটা এক ধরনের পারফরমেন্স, তাই শ্রোতা যদি শব্দার্থ না-ও জানেন তবু পারফরমেন্স যদি ভালো হয় তাহলে সেখানে অনেক অনেক কিছু পাওয়ার থাকে যা শ্রোতাকে মুগ্ধ করতে পারে। সমগ্র পৃথিবীর মানুষ বাদ্যযন্ত্রও বাজায়, সেরকমই, বাইরের কবিদের সঙ্গে একই মঞ্চে ওঠাও এক মজার অভিজ্ঞতা। ভাষিক প্রতিবন্ধকতা যে থাকে না তা নয়, তবু অর্থকে কম গুরুত্ব দিয়েই আমি শব্দের ধ্বনিমাধুর্যকে উপভোগ করি।
প্রশ্ন: দেখা গেছে, এমনকি যখন অন্য ভাষাভাষীদের উদ্দেশে আপনি জাপানি ভাষায় আপনার রচিত কাপা [জাপানি লোককাহিনির এক কাল্পনিক প্রাণী] কবিতাটি পড়েন, তখনও তা সুন্দর হয়ে ওঠে। অর্জিত বিদেশি অভিজ্ঞতা বা অনেক ভাষায় আপনার কবিতার অনুবাদের বিষয়টি কি আপনার ওপর কোনো প্রভাব বিস্তার করে?
উত্তর: আমার মনে হয়, আমি যতটুকুন সচেতন সম্ভবত তার থেকেও বেশি আমাকে প্রভাবিত করে থাকতে পারে।
এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত নই, কিন্তু আমি মনে করি, যেহেতু আমি আমার প্রিয় কবিদের কবিতা মূল ভাষায় পড়তে পারি না, তাই জাপানি অনুবাদে পড়েই আমি তাদের দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হই। মি. ওগাসাওয়ারা তোয়োকি কর্তৃক ফরাসি কবি জাঁক প্রেভেরের কবিতার জাপানি অনুবাদ পড়েই আমি এই কবির কবিতার দ্বারা প্রভাবিত হই। দেখুন, এক্ষেত্রে আমি কিন্তু জাপানি অনুবাদেই প্রভাবিত হয়েছি। একই কথা শেকসপিয়রের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। মি. ইয়োশিদা কেনিচির জাপানি অনুবাদে বোধগম্যতার সংযোগসূত্র এবং গল্প বলার ধরনটায় আমি আগ্রহী হই, এবং তা আমাকে প্রভাবিত করে আর এই শৈলীর অনুকরণে সেই প্রভাবটা দেখা যায়।
আমাদের প্রজন্মকে প্রাথমিক স্কুল থেকেই ধ্রুপদি চিনা কবিতা শিখতে হতো, সুতরাং এটাও আমার কাব্যশৈলীকে প্রভাবিত করেছে বলে মনে হয় আমার। চিনাভাষা খুব অনড়, বিশেষত গেঞ্জিকাহিনির [দ্য টেল অব গেঞ্জি] জাপানি থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। সময়ে সময়ে এই রীতিটি আমি আমার কবিতায় ব্যবহার করেছি।
আমার মনে হয়, জাপানি ভাষা যে চিনা হিরাগানা এবং কাতাকানা লিপি ব্যবহার করছে তা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমার বিশ্বাস, এটা কিছু-একটা যোগ করে চলে।
জাপান ফাউন্ডেশনের অনুষ্ঠানে শুনতারো তানিকাওয়া © ছবি: কাতানো তমহিরো
প্রশ্ন: অন্যদিকে, আপনি বলেছেন যে মাঝেমধ্যে শব্দকে আপনি বিশ্বাস করতে পারেন না, আর এ কারণে অনুভবকে ঠিকঠাক শব্দে আনা দুষ্কর। এটা এমনই, যে, তথ্য এত দ্রুতগতিতে আসা-যাওয়া করছে যেন একে প্রণালিবদ্ধ করার সময় আমাদের নেই। অন্যের সাথে যোগাযোগ এবং যোগাযোগের ভাষা কেমন হওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
উত্তর: প্রকাশের জন্য যে শব্দ ক্রিয়াশীল তাকে বাদ দিয়ে বলা যায়, মোটের ওপর আমার মনে হয়, দুজন মানুষের আলাপ-আলোচনার শব্দ অতি গুরুত্বপূর্ণ। দুজনের কী ধরনের সম্পর্ক হচ্ছে তার ওপর ভিত্তি করেই শব্দচয়ন নির্ধারিত হয়। উদাহরণত, যদি আপনার সঙ্গী বা সঙ্গিনী এমন একটি অবস্থায় থাকে যখন সে কথা বলতে পারছে না, তখন কীভাবে আপনি তার সাথে যোগাযোগ করবেন? এখন সমাজে প্রতিবন্ধী লোকজন ক্রমশ সাবলীল হচ্ছে, সুতরাং এসব মানুষের সাথে যোগাযোগ বাড়ানোর ব্যাপারে আমাদের সেরাটা করতে হবে। এই প্রতিবন্ধিতার বিষয়টা বাদ দিলেও, পরস্পর যোগাযোগের বিষয়টা সত্যিই কঠিন একটা বিষয়। এমনকি দুজন জাপানির মধ্যেও সঠিক বিষয়টা বোঝানোর ব্যাপারটা দুরূহ হতে পারে কখনও কখনও। এজন্যই আমার মনে হয় মানুষের ভাষাগত যোগাযোগের দক্ষতার বিষয়ে আমাদের অধিক গুরুত্ব দেওয়া উচিত। জাপানিরা এ বিষয়ে একরকম উদাসীনই, তুলনামূলকভাবে বলার জায়গাটায়। স্কুলে, পঠন আর লিখনের ব্যাপারটা শিখানো হয় কিন্তু কথন আর শ্রবণের ওপর কমই শেখানো হয়। যখন কোনো আলোচনায় উত্থাপিত প্রশ্ন আর বক্তব্য আমি শুনি, মনে হয় তা যোগাযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে খুবই দুর্বল। আমার মনে হয়, জাপানিদের মধ্যে যেভাবে কথাবার্তা হয় সে বিষয়টায় আমাদের যত্নশীল হওয়া দরকার।
প্রশ্ন: যখন আপনি কথা বলেন তখন সেখানে কি এমন কিছু থাকে যে-বিষয়টাতে আপনি সাবধানতা অবলম্বন করে থাকেন?
উত্তর: না, মোটেও না [হাসি]! আমার কাজ লেখার সাথে সংশ্লিষ্ট তাই লেখার সময় আমি সাবধান থাকি। কিন্তু বলার বিষয়টাতে আমি অতটা মনোযোগ রাখতে পারি না, স্বাভাবিকভাবে যতটুকুন ভাষিক সক্ষমতা আমার রয়েছে বলার সময় আমি তা-ই ব্যবহার করে থাকি।
প্রশ্ন: আপনার বন্ধুবৃত্ত বেশ বড়ো। আপনি কি মনে করেন অন্যের সাথে মিথষ্ক্রিয়ার এক শক্তিশালী ইচ্ছা আপনার মধ্যে রয়েছে যেমনটা আপনি বলেছেন আপনার নিঃসঙ্গতার দুই বিলিয়ন আলোকবর্ষ নামের কবিতার বইটিতে?
উত্তর: সত্যি বলতে কি, অন্যের সাথে মেলামেশার কোনো দৃঢ় ইচ্ছা সুনিদ্দিষ্টভাবে আমার মধ্যে নেই। তুলনা করে বললে, আমি এমন ধরনের মানুষ যার কাছে, সত্যিসত্যিই, অন্য মানুষের প্রয়োজন নেই। যেহেতু মা-বাবার একমাত্র সন্তান ছিলাম, তাই আমাকে একাএকাই খেলাধুলা করতে হতো, আর বিশেষত একা থাকতেই খুব স্বচ্ছন্দ বোধ করতাম। একই সাথে আমি এও বুঝতাম যে মানুষ হিসেবে তা মোটেই কাঙ্ক্ষিত নয় [হাসি]। সচেতনভাবেই আমি অন্যদের সঙ্গে মিশি, কারণ এর অন্যদিকটাও আমি বুঝি যে এটা একদম ঠিক হচ্ছে না। বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ পেলে আমি নিজেকে একদম খুলে দেব আর গভীর বিষয় নিয়েই কথাবার্তা বলব, কিন্তু তা না হলে মামুলি কথাবার্তাই চলতে থাকবে।
প্রশ্ন: আধুনিক-কালের সমাজে এটা মনে হয় যে তথ্যরা খুব দ্রুতগতিতে আসছে-যাচ্ছে আর একে প্রক্রিয়াজাত করার কোনো সময় নেই আমাদের। আপনার কি মনে হয় কাব্যকে [কবিতা এবং কাব্যিক আবেগ] উপলব্ধ করার সময়টা আমরা হারিয়ে ফেলেছি?
উত্তর: আমার মনে হয় না আমরা কবিতাকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে হারিয়ে ফেলেছি, সম্ভবত। একে আমরা বোধগম্য করি কি করি না, বা একে মূল্যবান মনে করি কি করি নাজ্জসেটাই বিষয়। আমার ধারণা, সহজাত কবিতা সবসময়ই আমাদের সাথে থাকবে। যখন কম্পিউটার গেমস এবং এ ধরনের বিষয়গুলো জনপ্রিয় হচ্ছে, ভাষা অব্যর্থভাবে পরস্পর-বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে, তখন নিজ জায়গায় তা হয়তো ঠিকই আছে, কিন্তু আমার মনে হয় কিছু একটা হারিয়েও যাচ্ছে। উদাহরণত, দীর্ঘ আলাপ-আলোচনা করার সুযোগ কমে গেছে, বা ধীরে-কথা-বলা মানুষের সাথে কথাবার্তা বলার জায়গাটায় মানুষের ধৈর্য কমে গেছে।
ভাষা মূলত একটি ব্যক্তিগত বিষয়, সুতরাং একে নিজের মতো করেই বুঝতে হবে। কিন্তু আপনি কি মনে করেন না কথা-বলার গতি খুব বেড়ে গেছে? টিভি রেডিও শুনলে মনে হয় সবাই খুব দ্রুতচালে কথা বলছে। আলাপের সময় যিনি প্রথমে বলছেন তার কথা শেষ না-হতেই অন্যরা সবাই বলা শুরু করছেন। আগে তা হতো ধীরে-সুস্থে।
শুনতারো তানিকাওয়া © ছবি: ইউজেন হোসিকো/এএফপি
প্রশ্ন: আপনি আপনার কবিতায় সময়ের বৈশিষ্ট্যকে প্রকাশ করেছেন।
উত্তর: স্বাভাবিকভাবেই সব বদলে যায়। সবই সদা পরিবর্তনশীল। এই সদা পরিবর্তনশীলতা একদিকে কবির জন্য উত্তম।
প্রশ্ন: আপনি কি এই বোঝাচ্ছেন যে আপনার এই বদলে যাওয়াটা বহুরূপী গিরগিটির মতোই?
উত্তর: হ্যাঁ, আর সময়ের দ্বারা প্রভাবিত হওয়া ভালো ব্যাপার। এখন আপনি তা করতে পারেন আর না-করলে সফলতা পাওয়া যায় না। ঠিক আছে?
প্রশ্ন: আপনি কি নতুন বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করার কথাই বলছেন?
উত্তর: এটা নির্ভর করে কী অন্তর্ভুক্ত করছেন আপনি। লেখার সময় শৈলীটিই আসল কথা। আমার বিশ্বাস, সুসমঞ্জস শৈলীই আসল, কিন্তু শৈলীর ভিতরে অন্তর্ভুক্ত তথ্য আর জ্ঞান অবিরাম পরিবর্তিত হয়। আমাদের কাজের ক্ষেত্রে কীভাবে নিজস্ব শৈলীকে ব্যবহার করে এসব লেখা বা বলা যায় সেটাকে চিহ্নিত করা এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
প্রশ্ন: কবিতায় আপনি অযুত অযুত কৌশল প্রয়োগ করে থাকেন; মনে হয় না যে তা একই ব্যক্তির লেখা। এখনও কী নতুন কিছু অবশিষ্ট আছে যাকে ব্যবহার করতে চাইছেন আপনি?
উত্তর: আমার মনে হয়, এটা কঠিন কাজ হবে। এখনও নতুন নতুন বিষয় নিয়ে চেষ্টা করতে আমি সক্ষম কিন্তু ভবিষ্যতে তা আমি বন্ধ করে দিতে চাই। মনে হয় সেটা করা ক্লান্তিকর হবে।
প্রশ্ন: প্রায় সত্তর বছর ধরে কবিতা লিখছেন; আপনি বলেছেন যে টানা লেখা আপনি পছন্দ করেন না, কবিতা লেখা সহজ, কারণ তা আকারে ছোটো হয়। আরও বলেছেন, কবিতা লেখা আপনি চালিয়ে যাবেন, কারণ তা থেকে আপনার রুজি-রোজগার হয়। দীর্ঘকাল সুসমঞ্জসভাবে লেখালেখি করে কবিতার কোন দিকগুলোকে আপনার আকর্ষণীয় বলে মনে হয়?
উত্তর: আচ্ছা, প্রথমত কবিতাকে আমার ভালোই লাগে না [হাসি]! আমি যখন তরুণ ছিলাম কবিতা আমি একেবারেই পছন্দ করতাম না, আর কখনোই ভাবিনি যে কবি হব। যখন কবিতার জগতে প্রবেশ করলাম, মনে হলো এটা একবারে একঘেয়ে একটি কাজ। মনে হলো, একে আমি আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে পারব, আর নিজেকেও এই পথে আমি বদলে ফেলেছিলাম। সবাই কবিদের এই অবস্থাটা মেনে নেয় যে কবিরা সমাজবিচ্ছিন্ন, আলাদা সত্তা; সহজভাবে বললে, তারা রুজি-রোজগারে অক্ষম। আমার মনে হলো, সমাজে কবিতা তখনই থাকবে যখন কবিতা তার নিজের ভূমিকা পালন করেই আয় করতে পারবে। আমি চেয়েছিলাম কবিতা সমাজের মধ্যে থাকুক।
প্রশ্ন: ছবির বই, নাটক, ফটোগ্রাফ, সিনেমা এবং আরও অনেক ক্ষেত্রে আপনি নিজেকে যুক্ত রেখেছেন। সংগীতে রয়েছে আপনার গভীর জ্ঞান, আর চিত্রকলাও আপনার সুপরিজ্ঞাত।
উত্তর: হ্যাঁ, কিন্তু আমার পছন্দগুলো খুব নির্দিষ্ট। এটা সত্যি যে সিনেমা, চিত্রকলা আর সংগীতে আমার আগ্রহ রয়েছে। নিজ পছন্দের বিষয়ের সাথে আমি একযোগে কাজ করতে পারি, কিন্তু এর বাইরের কোনো কিছুতেই আমার প্রায় কোনো আগ্রহ নেই।
প্রশ্ন: শুধু শিল্পে সীমাবদ্ধ না থেকে, চারপাশের মানুষসহ নানাবিধ উৎস থেকে আপনি আপনার পরিগ্রহণ জারি রেখেছেন।
উত্তর: আমার জন্য এসব মানুষেরা হলো ‘অপর’। আমি তাদের কাছ থেকে উদ্দীপনা পাই আর তা আমার কবিতা লেখার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। মোদ্দা কথা, কবিতা লেখার কাজটা নিজে নিজে করা যায় না।
ভূমিকা ও অনুবাদ: কুমার চক্রবর্তী
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন