খুনি

অ+ অ-

 

অপেক্ষা করতে কার ভালো লাগে? আমি অপেক্ষা করছি একটা খুন করব বলে। খুনের  আদেশ আছে। ওই যে দেখতে পাচ্ছেন আকাশী রঙের গেইটটা ওটা দিয়েই লোকটা বের হবে। আমি তার-ই অপেক্ষায় আছি।  বের হওয়া মাত্র মাথায় পরপর দুটো গুলি চালাব। একেবারে মারিও পুজোর উপন্যাস গডফাদারের নায়কের মতো। তারপরে আমি উধাও। সোজা বিদেশে। ভিসা করাই আছে। প্লেনের টিকেটও কাটা আছে। শুধু সময় মত এয়ারপোর্টে হাজির হওয়া। কিন্তু এই টং দোকানে বসে অপেক্ষা করতে করতে তো হয়রান হয়ে গেলাম। দু-কাপ চা খেয়ে ফেলেছি এরমধ্যে। সিগারেট যে কয়টা খেয়েছি সেটা গুনি নাই বলে বলা যাচ্ছে না। The Terminal নামে একটা ইংরেজি ছবি দেখেছিলাম। ছবির নায়ক ইমিগ্রেশন পার হওয়ার আগেই তার পাসপোর্ট হারিয়ে ফেলে। এখন সে দিনের পর দিন রাতের পর রাত অপেক্ষা করে কবে ইমিগ্রেশন পার হয়ে তার নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছুবে। কিন্তু পুলিশ তাকে কোনভাবেই পাসপোর্ট ছাড়া ইমিগ্রেশন পার হতে দেয় না। তার অপেক্ষার পালা শেষ হয় না। ক্রমাগত সে অপেক্ষা করে যেতেই থাকে। জীবনটাও নাকি সে রকম এক দীর্ঘ প্রতীক্ষা। দুঃখ-কষ্ট থেকে পরিত্রাণ পাবার প্রতীক্ষা। অসুস্থতা থেকে মুক্তি লাভের প্রতীক্ষা। অভাব-অনটন থেকে বেরিয়ে আসার প্রতীক্ষা। প্রিয়তমার সাথে মিলিত হওয়ার জন্য প্রতীক্ষা। সর্বোপরি মৃত্যুর জন্য প্রতীক্ষা। আমিও এ কাজটা সমাধা করতে পারলে আমার যন্ত্রণাক্লিষ্ট, আতঙ্কভরা, শঙ্কাপূর্ণ জীবন থেকে রক্ষা পাব। জীবনের আরেক নাম নাকি টেনশন। টেনশন বিহীন জীবন নাকি হয় না। কিন্তু আমার টেনশন তো জীবনটাকে রক্ষা করার টেনশন। বেচে থাকার টেনশন। জানটাকে সবসময় হাতের মুঠোয় নিয়ে ঘুরি। একটু এদিক-অদিক হলেই জানটা হাত ফসকে বেরিয়ে যাবে। এতো দুশ্চিন্তা নিয়ে কি বাঁচা যায় বলুন! কিন্তু শালা তো বের হচ্ছে না। এদিকে আমি ঘেমে চুপসে যাচ্ছি। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে যাচ্ছে। হাতের তালুও ভিজা। টেনশনে থাকলে আমার হাতের তালু, পায়ের পাতা ঘামে ভিজে যায়। আমি টের পাচ্ছি আমার মোজা ভিজে গেছে। আমার জুতার মোজা আমি প্রতি সপ্তাহেই ধুই। নইলে তা থেকে বিশ্রী দুর্গন্ধ বেরোয়। শুনেছি বড়ভাই নাকি কখনোই মোজা ধুয়ে পরে না। নতুন এক জোড়া মোজা এক সপ্তাহ পরে। এরপর সেটা ফেলে দিয়ে আরেক জোড়া নতুন মোজা পরে। মাসে চার জোড়া মোজা তার লাগে। হিসেব করলে দেখা যাবে জুতায় যা খরচ হয়, তারচেয়ে বেশি খরচ হয় মোজাতে। সে আছে আরামেই। কিছুদিন আগে মার্কেটের চাঁদা যে হজম করত তাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিয়ে তা এখন নিজে ভোগ করছে। আর আমি যে লোকটাকে মারতে এসেছি তাকে সরাতে পারলে এই বিশাল এলাকার ডিশের ব্যবসাটা বড়ভাইয়ের হস্তগত হবে। সে তখন মজাসে রসমালাই খাবে। বসে বসে লাখ লাখ টাকা ইনকাম। ইংরেজিতে একটা কথা আছেA man who lives by bullet dies by bullet। আমাকে শেষ করে দেয়ার জন্য প্রতিপক্ষ ওঁত পেতে বসে আছে। যে কোন সময়ে ওরা আমাকে খতম করে দিতে পারে। শুধু বড়ভাই আছে বলে কিছুটা রক্ষা পাচ্ছি। আমি এরকম জীবনের ইতি টানার জন্যই সিদ্ধান্ত নিয়েছি বিদেশে চলে যাব। আর দশটা মানুষের মতো সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যাপন করব। বড়ভাই আমার বিদেশে যাওয়ার সব বন্দোবস্ত করে দিয়েছেন। বায়িং হাউজের কর্মকর্তা সাজিয়ে ভিসা পাইয়ে দিয়েছেন। বিনিময়ে তার এই কাজটা আমাকে করে দিতে হবে। শুধু এই একটা কাজ। তারপরই আমি পাব নিরাপদ আর নিঃশঙ্ক একটা জীবন। কিন্তু আমি এতো নার্ভাস হয়ে পড়ছি কেন? আমার বগলও ঘেমে গেছে। বুকের ধুকপুকানিটা কিছুতেই কমছে না।

সিগারেটের ধোয়া ছাড়তে ছাড়তে আকাশের দিকে চাইলাম। সূর্যটা ছাই রঙা মেঘের আড়ালে লুকিয়ে আছে। কিন্তু তার বিচ্ছুরিত বর্ণাঢ্য রশ্মিগুলো মেঘদের মূঢ় ম্লান দেহ ভেদ করে বেরিয়ে এসে আকাশকে করছে স্বর্গীয় মহিমায় উদ্ভাসিত। কোথাও লাল কোথাও নীল আবার কোথাও সবুজ, হলুদ, বেগুনী বা পিঙ্গল বর্ণ ছড়িয়ে পড়ছে এই শহরের সুউচ্চ অট্টালিকার সুবিন্যস্ত শিখরে। অনেক দূরে তিনটা চিল ধীর স্থির গতিতে ঘুরে ঘুরে চক্কর দিচ্ছে আকাশের সাজান দৃশ্যপটে যেন কোন তাড়া নেই ওদের। শুনেছি বৃষ্টি নামলে ওরা উঠে যায় আরও উঁচুতে একেবারে মেঘের উপরে। উত্তর দিক থেকে এক জোড়া জঙ্গলি কবুতর খুব দ্রুত উড়ে উড়ে বিলীন হয়ে গেল দক্ষিণ দিগন্তের সীমাহীন শূন্যতার অপরিহার্যতার মাঝে। এখানকার ভবনগুলো দক্ষিণমুখী। আমি যে টং দোকানটায় বসে আছি সেটা সারি সারি ভবনের মাঝ দিয়ে যে রাস্তাটা গেছে সেই পূর্ব দিকের রাস্তার পাশে দুটো বড় এপার্টমেন্ট ভবনের মাঝখানে। দোকানের পিছনে একটা কাঁঠাল গাছ, একটা মাঝারি আকারের বটগাছ নির্দ্বিধায় দাঁড়িয়ে আছে। একটা দাঁড়কাক সেই কখন থেকে তার স্বরে ডেকেই যাচ্ছে বটগাছের উঁচু কোন ডালে বসে। একটুও বাতাস নেই। গাছের পাতাগুলো পর্যন্ত যেন নড়াচড়া করতে ভয় পাচ্ছে। ভবনের সামনের রাস্তা এখনো পাকা করা হয়নি। এই এবড়ো-থ্যাবড়ো রাস্তার দুপাশে ইতঃস্তত চিকন চিকন ঘাস আর নাম না জানা লতা-পাতা গজিয়েছে। আমার শিকার ওই আকাশী রঙের গেইট দিয়ে বেরুবে। কিন্তু ওখানে একটা সাদা রঙের প্রাইভেট কার দাঁড়িয়ে আছে অনেকক্ষণ যাবত। ভেতরে চালক বসে আছে। বোধ হয় এই এপার্টমেন্টে কেউ বেড়াতে এসেছে। টং দোকানে দুজন কলেজ পড়ুয়া এসে প্রথমে চা খেল, তারপর সিগারেট খেল, কম্প্যুটার গেম নিয়ে কথা বলতে বলতে। তারপর চলে গেল। এরপর এক রিকশা চালক চা আর বনরুটি খেয়ে চলে গেল। আমি আরেক কাপ চায়ের অর্ডার করে আরেকটা সিগারেট ধরালাম।

হঠাৎ আকাশী রঙের গেইটটায় চোখ আটকে গেল। না, আমার শিকার বের হয়নি। ওই গেইট দিয়ে বেরিয়েছে এক পচিশোর্ধ্ব রূপসী নারী। বয় কাট চুল, স্লিম ফিগার কিন্তু বুক ভারী। ঠোটে লাল রঙের লিপস্টিক, পড়নে ঘিয়ে রঙের জামদানি, হাতে সোনার বালা। মুখ মেকআপ করা সত্ত্বেও ওর ন্যাকা ন্যাকা চেহারা ঠিকই বেরিয়ে আসছে। ন্যাকা মেয়েদেরকে আমি দুচোখে দেখতে পারি না। ওই নারীকে দেখে অনেক আগে পড়া কোন এক গল্পের এক আমলার ন্যাকা ন্যাকা কথা বলা, ইংরেজি জানা বয়-কাট চুল স্ত্রীর কথা মনে পড়ে গেল, যাকে দেখে আমলার গাড়ির ড্রাইভার সেরকম ন্যাকা ন্যাকা কথা বলা, ইংরেজি জানা বয়-কাট চুল স্ত্রীর স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। পেছন পেছন যে লোকটি এলো তাকে দেখে আমার চক্ষু ছানাবড়া হয়ে গেল। অমন রূপসী মহিলার এমন কুৎসিত স্বামী হতে পারে! কুচকুচে কাল, ইয়ে মোটা ভুঁড়ি। চেহারা সুরত যদি ভাল হতো তাও রক্ষে ছিল। মোটা মোটা ঠোট, নাক চ্যাপ্টা, দুগাল জুড়েই ব্রণ ভর্তি। মাথার তালু উত্তর দক্ষিণে চুল শূন্য। ওই সুন্দরী মহিলা এর সাথে রাতে সোয় কিভাবে সেটা ভাবলে তাজ্জব লাগে। আমাকে যদি কেউ লাখ টাকা দিয়ে কোন কুৎসিত মেয়ের সাথে শয্যায় যেতে বলে আমি পারব না। আমার শিশ্ন কোনমতেই উত্থিত হবে না। পৃথিবীতে টাকার জন্য মানুষ কতো কিছুই না করে! সেই দম্পতি গেইটের সামনে অপেক্ষমাণ গাড়িতে উঠে চলে গেল।

আমি অস্থির হয়ে আমার শিকারের জন্য অপেক্ষা করছি। আমার ইনফরমেশন ঠিক আছে তো? আমাকে বলা হয়েছে দুপুর তিনটা থেকে চারটার মধ্যে সে ভাত খেয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে তার অফিসে যায়। কিন্তু এখন তো সোয়া চারটা বাজে। আমি এখানে এসেছি ঠিক তিনটা বাজে। তাহলে? শালা বেরুতে দেরী করছে কেন? আমার অস্থিরতা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে লাগল। আমি আরেকটা সিগারেট ধরালাম। হোন্ডার শব্দ পেলাম। দেখলাম একটা ছেলে বয়স বিশ-বাইশ হবে পেছনে বান্ধবীকে নিয়ে খুব দ্রুত হোন্ডা চালিয়ে আমার সামনে দিয়ে চলে গেল। হোন্ডার পেছনে বান্ধবী থাকলে বোধহয় শরীরে জোশ এসে যায়। এতে করে হোন্ডার গতিও বেরে যায় আর ঘন ঘন ব্রেক কষতেও মজা লাগে। কারণ বান্ধবী তখন আরও জোরে বুক দিয়ে বন্ধুকে চেপে ধরে। আজকাল যে কেমন কিসিমের হোন্ডা বেরিয়েছে পেছনটা অনেক উঁচু। ওখানে কেউ বসলে মনে হয় যেন সে চালকের ঘাড়ের উপর বসে আছে।

মোবাইলে একটা মেসেজ আসার শব্দ হলো। ঘামে ভেজা হাতের আঙ্গুলগুলো দিয়ে পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে দেখি বড় ভাইয়ের পিএ মেসেজ পাঠিয়েছে। লিখেছে কি খবর। পিএ খুব জরুরী হলে ফোন করে। নচেৎ মেসেজ পাঠায়। জবাবে আমি ঘামে ভেজা আঙ্গুল দিয়ে লিখে দিলাম Not yet। পিএ পিস্তল-টিস্তল জোগাড় করার বেলায় খুবই পারদর্শী। তাছাড়া বড় ভাইয়ের খুব বিশ্বস্ত। সে আর আমি সমবয়সী অর্থাৎ তার এবং আমার বর্তমান বয়স প্রায় আটাশ। আমরা সহপাঠীও বটে। মানে একই স্কুলের একই ক্লাসে পড়েছি। সে কলেজে উঠে এই লাইনে এসে পড়ে টাকার অভাবে। আর আমি এই লাইনে আসি আজ থেকে পাঁচ বছর আগে, যখন আমি ভার্সিটিতে তৃতীয় বর্ষে পড়ি। আমি গুড্ডুকে গুলি করে মেরে ফেলেছিলাম। সে আমার ছোট ভাইয়ের খুনি। ভার্সিটিতে প্রথম বর্ষে পড়ুয়া আমার ছোট ভাইয়ের অপরাধ ছিল এই যে সে জহিরদের সাথে চলাফেরা করত। এলাকায় তখন গুড্ডুদের খুব দাপট ছিল। আমার ছোট ভাই, জহির-এদেরকে গুড্ডুরা প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবল। তাই একদিন রাতের বেলা বাসা থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে গুলি করে হত্যা করে আমার ভাইকে। আমি তিন মাসের মাথায় প্রতিশোধ নিয়েছিলাম। সে-ই প্রথম খুন। এরপর আর কখনো কাউকে খুন করিনি। তারপর পিএ আমাকে বড় ভাইয়ের আশ্রয়ে নিয়ে আসে। সেই থেকে বড় ভাইয়ের সাথে আছি। 

যতই সময় গড়িয়ে যাচ্ছে আমার হৃৎস্পন্দন ততই দ্রুততর হচ্ছে। সেই তেরতলা ভবনের আকাশী রঙের দরজাটার দিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখছি আর ভাবছি এই যে এতক্ষণ যাবত চায়ের দোকানে বসে আছি দোকানদার আবার কোনকিছু সন্দেহ করবে নাতো। সে সন্দেহ করলেই-বা কী। আজ রাতেইতো আমার ফ্লাইট। রাত্রি দশটা বিশে। কাজ সেরে এখান থেকে যাব বাসায়। ওখান থেকে সোজা বিমানবন্দরে। তারপর প্যারিস। ব্যাস। সাড়ে চারটা বেজে গেছে। আসরের আজান দিচ্ছে। কিন্তু দরজা দিয়ে কেউ বেরুচ্ছে না। না, বেরিয়েছে ষাটোর্ধ এক মহিলা। আঁটোসাঁটো করে সিল্কের শাড়ি পড়া, খাটো আচল, খাটো ব্লাউজ। মেকআপ সত্ত্বেও মুখের আর গলার বলিরেখাগুলোকে লুকিয়ে ফেলতে পারছে না। এই মহিলা আধুনিক অনেক চিত্রকরের মডেল হতে পারবেন। কারণ একটা সময় ছিল যখন শিল্প সাহিত্য ছিল সুন্দরের পূজারী অর্থাৎ সৌন্দর্য প্রকাশের মাধ্যম। তখন শিল্পীরা নারীর, প্রকৃতির, ঈশ্বরের সৌন্দর্য প্রকাশ করার চেষ্টা করত। কিন্তু আধুনিক কালে এসে কুৎসিত জিনিসও শিল্প সাহিত্যের উপজীব্য হয়ে গেল। তখন কবিরা লিখলেন বিবমিষা উদ্রেককারী কবিতা। চিত্রকরেরা আঁকলেন বার্ধক্যে জর্জরিত নারীর ঝুলন্ত, চুপসান স্তনের ছবি। তাই বলছি এই মহিলাও তার ঝুলে যাওয়া চুপসানো স্তন নিয়েও কোন আধুনিক শিল্পীর মডেল হতে পারবেন। সবাই যৌবন চায় চিরযৌবন। গ্রিক পুরাণের টিথোনাসের কথা হয়তো শুনে থাকবেন। দেবতা তাকে অমরত্ব দান করেছিল। কিন্তু সে দেবতার কাছে চিরযৌবন চাইতে ভুলে গিয়েছিল। তাই একসময় সে বৃদ্ধ হয়। তারপর আরও বৃদ্ধ হয়। কিন্তু মারা যায় না। এভাবে বৃদ্ধ হতে হতে একসময় সে চলৎশক্তি রহিত হয়ে বিছানায় শয্যাশায়ী হয়ে পড়ল। কিন্তু মারা যাচ্ছে না। কারণ দেবতা তাকে অমরত্ব দান করেছেন। তখন সে দেবতাকে বলল হে দেবতা চিরযৌবন ছাড়া অমরত্ব অর্থহীন। আমাকে তুমি মৃত্যু দান কর।

রাস্তায় লোকজনের চলাচল ধীরে ধীরে বেড়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ টুপি মাথায় দিয়ে নামাজের জন্য যাচ্ছেন। টং দোকানেও চা-প্রেমিক মানুষজনের আনাগোনা আস্তে আস্তে বারতে লাগল। পুলিশের একটি টহল যান অতি ধীরে রাস্তার উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে যেতে থাকল। কিন্তু আমার শিকার কোনমতেই বেরুচ্ছে না। আমি সেই দরজাটার দিকে চেয়ে চেয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। চলে যাব কিনা ভাবছি। এমন সময় হ্যাঁ ঠিক এমন সময়ই আমার শিকার দরজা দিয়ে বের হলো। আর সে মুহূর্তেই ফোনটা বেজে উঠল। কোন কিছু না ভেবেই ফোনটা পকেট থেকে বের করলাম। দেখি পিএ ফোন করেছে। কলটা ধরতেই পিএ কান্না জড়ান কণ্ঠে বলল বড় ভাইতো আর নেই। মগবাজার রেলগেইটের কাছে কারা যেন বড় ভাইকে গুলি করেছে। উনার গায়ে আটটা গুলি লেগেছে এবং তিনি ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন। এতক্ষণ পর আমি স্বাভাবিকভাবে দম নিতে পারলাম। আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। আমি দোকানের সামনে পার্ক করে রাখা আমার হোন্ডাটা তাড়াতাড়ি স্টার্ট দিলাম।  

প্যারিসের রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে ভাবছি জীবনটা এমন না হয়ে অন্য রকমওতো হতে পারত।