পুরনো প্রেমিকা

অ+ অ-

 

|| ১ ||

শরতকাল। রাত আটটা। বিকেলে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে যাওয়াতে একটুও গরম নেই। মতিঝিলের অফিস পাড়ার ভবনসমূহ এবং রাস্তা-ঘাট এখনও ভিজে আছে। রাস্তার দুপাশে বাতি জ্বলছে এবং পথের উপর জমে থাকা পানিতে আলোর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। আকাশ মেঘলা থাকায় চাঁদ উঠেছে কিনা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। একটি বেসরকারি ব্যাংকের কনিষ্ঠ কর্মকর্তা বত্রিশ বছর বয়স্ক, হাতে একটি ব্যাগ, আনুষ্ঠানিক পোশাক পরিহিত আসিফ অফিস থেকে বেরিয়ে রিকশার খোঁজ করছিল। সড়কে গাড়িঘোড়ার চাপ খুব একটা ছিল না। হঠাৎ সে শুনতে পেল তার পেছন থেকে এক নারী কণ্ঠ তার নাম ধরে ডাকছে। ফিরে তাকাতেই সে চমকে উঠল। পরনে জামদানি শাড়ি, লাল ব্লাউজ, শ্যাম্পু করা ঝকঝকে কালো মসৃণ চুল, ঠোঁটে লাল লিপস্টিক, মুখে হালকা মেকআপ, বুক ও নিতম্ব ভারী, রূপসী বললে অত্যুক্তি করা হবে না, বয়সে তার সমানই এক নারী তাকে ডাকছে। এই নারীকে সে চিনে এবং ভালভাবেই চিনে। এতো সোহানা। তার সোহানা। এখন অবশ্য তার বলতে পারবে কিনা এই বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। সুদীর্ঘ আট বছর পর আবার তার সাথে দেখা। সোহানা হেঁটে হেঁটে তার কাছে এসে সেই পরিচিত মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল, কেমন আছ? সম্বিত ফিরতে আসিফের কয়েক সেকেন্ড সময় লাগল। সে বলল, ভাল আছি। তুমি কেমন আছ? রাতের বেলায় অফিস পাড়ায় কি করছ? জবাবে সোহানা বলল, এতোগুলো প্রশ্ন একসাথে করলে জবাব দেই কিভাবে! কফি খাওয়াও আগে, তারপর তোমার সব কথার জবাব দিব।

মতিঝিলের একটি ভবনের ছাদে অবস্থিত কফির দোকানের মিহি আলোয় বসে তারা কফি খাচ্ছিল। সোহানা  কথা বলছিল আর আসিফ তন্ময় হয়ে তার কথা শুনছিল। সোহানা আগের চেয়ে আরো সুন্দর হয়েছে। আসিফ পরিপূর্ণ নারীত্ব আর লালিত্যে ভরা আকর্ষণীয় সোহানার মুখচ্ছবির দিকে তাকিয়ে ভাবছিল সেই পুরনো দিনগুলোর কথা। সোহানা মৃদু হেসে কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে বলল, কি ভাবছ? সে জানাল যে, সে মতিঝিলে তার এক বান্ধবীর কাছে কী যেন একটা কাজে এসেছিল। ওর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় ফেরার জন্য রিকশা খোঁজার সময় দেখে আসিফ রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে আছে। অনেক কথাই দুজনে বলল কিন্তু পুরনো প্রসঙ্গের অবতারণা কেউই করল না। এই আট বছর কারো সাথে কারোরই যোগাযোগ ছিল না। তারা উভয়েই নিজ নিজ ফোন নাম্বার পরস্পরকে প্রদান করল। কফি খাওয়া শেষ হলে আসিফ সোহানাকে রিকশায় তুলে দিয়ে বিদায় নিল।

রিকশায় করে বাসায় ফিরতে ফিরতে আসিফ ভাবছিল সেই হারিয়ে যাওয়া দিনগুলোর কথা। সেই কবে শিক্ষা সফরে গিয়ে আসিফ জানিয়েছিল যে, সোহানাকে তার ভাল লাগে। ভীষণ ভাল লাগে। তখন তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবর্ষে পড়ে। তারপর টানা তিন বছর চতুর্থবর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা পর্যন্ত তারা চুটিয়ে প্রেম করেছিল। কিন্তু পরীক্ষার ফল প্রকাশের আগেই হুট করে সোহানা এক ব্যবসায়ীকে বিয়ে করে চট্টগ্রাম চলে যায়। বিষয়টা আসিফের জন্য ছিল অপ্রত্যাশিত এবং মর্মান্তিক। সে এই বিচ্ছেদকে কিছুতেই মেনে নিতে পারছিল না। বিষণ্নতা তাকে গ্রাস করল এবং হতাশার গভীরতর অন্ধকারে তলিয়ে গেল তার প্রাত্যহিক জীবনের আলোকোজ্জ্বল ছন্দময়তা। সে প্রায় তিন মাস নিজেকে ঘরের মধ্যে বন্দী করে রাখল এবং বাইরের পৃথিবীর সাথে যোগাযোগ এক প্রকার ছিন্ন করে ফেলল। কিন্তু গ্রীষ্ম, বর্ষা পেরিয়ে একদিন যেমন বসন্ত আসে তেমনি অনেক যন্ত্রণাদায়ক দিন আর নির্ঘুম রাত্রি পার করে সে আবার ফিরে আসল স্বাভাবিক জীবনে। মাস্টার্স পরীক্ষা দিল। চাকরির জন্য দরখাস্ত করতে লাগল এবং একটা চাকরিও পেয়ে গেল শেষমেশ।

 

|| ২ ||

আজ শুক্রবার। ছুটির দিন। আকাশের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে খণ্ড খণ্ড সাদা মেঘের পুঞ্জ ভেসে বেড়াচ্ছে বাধাহীন স্বাধীনতায়। কয়েকটা চিলকে দেখা যাচ্ছে খুব নীচু দিয়ে ঘুরে ঘুরে উড়তে। আসিফদের বাসাটা যে গলিতে তার শেষ মাথায় যে দেবদারু গাছটা আছে তার শাখায় বসে দুটো বুলবুলি লাল পুচ্ছ দুলিয়ে করছিল খেলা। একটি দাঁড়কাক সেই ভবনের তিনতলার কার্নিশে বসে ডেকে যাচ্ছিল তার স্বরে। কোন বাতাস নেই। গরমও তেমন একটা নেই। এই সকালে আসিফ ঘুমাচ্ছিল আরামে। সে তার গালে একটা কোমল হাতের স্পর্শ অনুভব করল। একটি আদুরে কণ্ঠ তাকে বলল, এই যে সাহেব, আর কত ঘুমাবে? এবার ওঠো। বেলা অনেক হয়েছে। সে চোখ খুলে তাকাতেই দেখে তৃণা তাকে ডাকছে। তৃণা মানে তার পচিশোর্ধ্ব স্ত্রী। সে সকাল সকাল গোসল সেরে আজ সুতীর একটি শাড়ি পরেছে। তৃণার শ্যাম্পু করা চুলের ঘ্রাণ আসিফের নাকে এসে লাগল। তৃণাকে রূপসী বলা না গেলেও সুশ্রী বলতে কারো আপত্তি থাকবে না। সে আসিফের জন্য নিজ হাতে বানান চায়ের কাপটি খাটের এক পাশে রাখল। তাদের তিন বছর বয়সী মেয়েটি এখনও ঘুমাচ্ছে। তৃণা বলল, নাস্তা করে বাজারে যাও। ঘরে কাঁচা বাজার কিচ্ছু নেই। আসিফ হাই তুলতে তুলতে চায়ের কাপটি হাতে তুলে নিয়ে চায়ে একটি চুমুক দিল।

তাদের সংসারে প্রাচুর্য না থাকলেও মোটামুটি সচ্ছলতা আছে। মান-অভিমান, টুকটাক মতপার্থক্য, মন কষাকষি থেকে শুরু করে ক্ষীণ ঝগড়াঝাঁটি যা আর দশটা পরিবারে হয়ে থাকেএগুলোকে বাদ দিলে তাদের দাম্পত্য জীবন মোটের উপর সুখেরই একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়। তবে আসিফ কখনো সোহানার সাথে তার অতীত সম্পর্কের কথা তৃণাকে জানায়নি। সেটা এমনই এক অতীত যেটাকে আসিফ সব সময়ই ভুলে থাকতে চাইত। হৃদয় খুড়ে বেদনা জাগাতে অন্যদের মতো সেও পছন্দ করত না।

 

|| ৩ ||

সোহানা আসিফের ফোন নাম্বার পেয়েছে প্রায় দুমাস হলো। কিন্তু এই সময়টুকুর মধ্যে সে আসিফকে একবারও ফোন দেয়নি। অন্যদিকে আসিফও তার সাথে ফোনে কথা বলেনি। কিন্তু হেমন্তকাল চলে এসেছে। নভেম্বরের এক বিকেলে আসিফ তার ডেস্কে বসে কাজ করছিল। এমন সময় কোন ফোনকল ছাড়াই সোহানা এসে তার টেবিলের অপর প্রান্তে রাখা চেয়ারটিতে বসে মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করল, কেমন আছ? আজ সে পরেছে একটি সিল্কের শাড়ি। আসিফ বলল, চা খাবে? চা দিতে বলব? সোহানা সম্মতি জানিয়ে বলল, খেতে পারি। আসিফ পিয়নকে চা-নাস্তা দিতে বলল। চা খেতে খেতে সোহানা বলল, তোমাকে একটা কথা বলতে এসেছি। কিন্তু কিভাবে বলব বা বলা ঠিক হবে কিনা বুঝতে পারছি না। আসিফ একটু আন্দাজ করার চেষ্টা করল সে কি কথা বলতে চাচ্ছে যেটার জন্য এতো ভণিতা করতে হচ্ছে। তবুও সে অভয় দিয়ে বলল, যে কোন কথাই সে শুনতে প্রস্তুত আছে। সোহানা বলল, আমার খুব বিপদ। আমাকে যদি লাখ খানেক টাকা ধার দিতে তবে খুব উপকৃত হতাম। টাকাটা আমার খুব দরকার। মাস তিনেকের মধ্যে তোমার টাকাটা আবার ফেরত দিয়ে দিব। আসিফ কিছুক্ষণ চিন্তা করল। সে ভাবল এমন একটা সময় ছিল যখন সে এক লাখ টাকাতো কোন ব্যাপারই না সোহানার জন্য জীবন পর্যন্ত বিসর্জন দিতে পারত। তবে তার কাছে এখন জমান কোন টাকা নেই। সে ল্যাপটপ কেনার জন্য এক লক্ষ টাকা সরিয়ে রেখেছে। তার ল্যাপটপটি পুরনো হয়ে গেছে এবং প্রায়ই সমস্যা করে। তবে তিন মাস ওই পুরনো ল্যাপটপ দিয়ে চালিয়ে নিতে পারবে। তাই সে জিজ্ঞেস করল, ঠিক তিনমাস পর টাকাটা ফেরত দিবেতো। সোহানা মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, হ্যাঁ। আসিফ একটি চেক কেটে পিয়নের হাতে দিয়ে বলল, এখুনি টাকাটা তুলে আনো। সোহানাকে একটু বসতে বলল। পিয়ন এক লক্ষ টাকা কিছুক্ষণের মধ্যেই তুলে এনে আসিফের হাতে দিল। সে তখন ওই টাকাটা সোহানার হাতে দিয়ে বলল, আশা করি তোমার সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। সোহানা বলল, থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ আসিফ। ইউ আর সো নাইস বলে সে চলে গেল। আসিফ আবার কাজে মনোনিবেশ করল।

 

|| ৪ ||

সোহানা টাকা ধার নেয়ার পর তিন মাস পেরিয়ে গেলেও সে এখনও টাকাটা ফেরত দেয়নি এমনকি একটিবার ফোন পর্যন্ত করেনি। আসিফও তাকে এই তিন মাসের মধ্যে ফোন দেয়নি। এই কারণে দেয়নি যে, যদি ভাবে টাকা চাওয়ার জন্য ফোন দিয়েছে। সে অফিস করে নিয়মিত এবং কাজ শেষে স্ত্রী-সন্তানের কাছে ফেরত যায়। এদিকে শীতকাল এসে আবার চলে যাবার সময়ও ঘনিয়ে এসেছে। শীতের এক রৌদ্রহীন দুপুরে আসিফ তার ডেস্কে বসে কাজ করছিল। এমন সময় একটি অপরিচিত নাম্বার থেকে তার ফোনে কল আসলো। সে কলটি গ্রহণ করে জানতে চাইল কে তার সাথে কথা বলছে। অপর প্রান্ত থেকে বলল, আমি রফিক বলছি। তোর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসমেট। তোর সাথে কথা আছে। আজ তোর সাথে দুপুরে লাঞ্চ করব। আসিফ পুরনো বন্ধুর সাথে দেখা হবে ভেবে খুশি হলো। লেখাপড়া শেষ করে বের হবার পর থেকে রফিকের সাথে তার কোন যোগাযোগ ছিল না। এরকম অনেক বন্ধু-বান্ধবই আছে তারা কে কোথায় কি করছে বা কেমন আছে সেটা সে জানে না। সবাই যে যার কর্ম ও সংসার নিয়ে ব্যস্ত থাকে। অন্যদের খোঁজ নেয়ার সময় পায় না। সে রফিককে ঠিক দেড়টার সময় তার ব্যাংকে চলে আসতে বলল। 

দুই বন্ধু মতিঝিলের একটি ভাল হোটেলে বসে দুপুরের খাবার খাচ্ছে আর কথা বলছে। রফিক চট্টগ্রামের একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে। ছুটিতে ঢাকা এসেছে। আসিফের ফোন নাম্বার যোগাড় করেছে ওদেরই আরেক বন্ধুর কাছ থেকে যার কাছে অধিকাংশ বন্ধু-বান্ধবের ফোন নাম্বার সংরক্ষণ করা আছে। কথা বলতে বলতে সোহানার প্রসঙ্গ উঠল। রফিক সোহানার সম্পর্কে অনেক কিছুই জানে যেগুলো আসিফের অজানা। রফিক তাকে জানাল যে, সোহানা ব্যবসায়ীকে বিয়ে করে চট্টগ্রাম চলে যাওয়ার পর আরেক বড় ব্যবসায়ীর সাথে তার এফেয়ার হয়। বিয়ের তিন বছরের মাথায় সে ওই বড় ব্যবসায়ীকে বিয়ে করে। প্রথম সংসারে তার একটি মেয়ে হয়। তার প্রথম স্বামী মেয়েটিকে রেখে দেয়। দ্বিতীয় স্বামীর ঘরে যাওয়ার দুবছরে মাথায় সোহানার সাথে আরো বড় এক ব্যবসায়ীর প্রেমের সম্পর্ক হয়। এই সম্পর্কের কথা জানতে পেরে তার দ্বিতীয় স্বামী তাকে ডিভোর্স দেয়। কিন্তু যে বড় ব্যবসায়ীর সাথে তার সম্পর্ক হয় সে তাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিতে অস্বীকার করে। সে তাকে রক্ষিতার মতো রাখতে চেয়েছিল। তাই দুই বছর পর সোহানা ঢাকা চলে আসে। সে আজ এক বছর হলো ঢাকায় থাকে। আসিফ ভেবে ঠিক করতে পারছিল না রফিকের কথাগুলো বিশ্বাস করবে না অবিশ্বাস করবে। কিন্তু সে রফিককে ভালভাবেই চেনে। সে মিথ্যে কথা বলার মানুষ না। কথাগুলো শোনার পর আসিফ নিজের মধ্যে কেমন একটা অস্থিরতা অনুভব করতে লাগল। কিছুতেই সে স্বস্তি পাচ্ছিল না। এগুলো যদি বাজে কোন বইয়ের গল্প হতো তাহলে হয়তো তার ভাল লাগত। তাই তাড়াতাড়ি দুপুরের খাবার সেরে সে রফিককে বিদায় করে দিয়ে অফিসে গিয়ে নিজের চেয়ারে বসল এবং কিছুক্ষণ পর শরীর খারাপের কথা বলে ম্যানেজারের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে বাসায় চলে আসলো। সে রাতে আসিফ ঠিকমতো ঘুমাতে পারল না।

কয়েকদিন পর অফিসে কাজ করার সময় বিকেল তিনটার দিকে আসিফের ফোন বেজে উঠল। সে দেখল সোহানা ফোন দিয়েছে। সোহানা বলল, কি ব্যাপার তুমি যে একবারও ফোন দিলে না এই কয় মাসে? তোমার কি টাকাটার দরকার নেই? ওটা কি ফেরত না দিলেও চলবে? তারপর সে হাসতে লাগল। হেসে হেসে আরো বলল, তুমিতো আমার বাসায় কখনো আসোনি। আমার বাসায় এসে এক কাপ চা খেয়ে আজকে টাকাটা নিয়ে যাও। আসিফ তেমন একটা কিছু বলল না। শুধু বলল, ওকে সন্ধ্যা সাতটায় আসব। ঠিকানা দাও। সোহানা ঠিকানা এসএমএস করে পাঠিয়ে দিল।

ঠিক সাতটায় আসিফ সোহানার মগবাজারের ফ্ল্যাটের কলিং বেলে চাপ দিল। সোহানা দরজা খুলে দিয়ে আসিফকে বসার ঘরে নিয়ে সোফায় বসিয়ে দিয়ে বলল, আমি আসছি। সোহানার বিশাল ফ্ল্যাট এবং তার দামী দামী আসবাবপত্র দেখে একটু অবাকই হলো আসিফ। একটু পর একটি মদের বোতল আর দুটো দামী খালি মদের গ্লাস হাতে কাতান শাড়ি পরিহিত সোহানা কক্ষে প্রবেশ করে একই সোফায় আসিফের পাশে বসল। আসিফ বলল, ওগুলোতো আমি খাই না। সোহানা অবাক হয়ে বলল, কেন ছাত্র জীবনেতো এগুলোর জন্য পাগল থাকতে। সোহানা দুটো গ্লাসেই মদ ঢেলে একটি নিজে নিল আরেকটি আসিফের সামনে টেবিলের উপর রেখে বলল, এক পেগ খেলে কিছু হবে না, খাও। আসিফ বলল, চা হবে? তাহলে দিতে বলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই চা দিয়ে গেল কাজের মেয়েটি। চা খাওয়া শেষ হলে আসিফ বলল, আমার একটু তাড়া আছে। উঠবো এখুনি। সোহানা মদের গ্লাসে চুমুক দিয়ে টেবিলের উপর সেটা রেখে আসিফের আরো কাছে ঘেঁসে বসল। ডান হাত প্রথমে আসিফের উরুর ওপর রাখল। তার আচল কাঁধ থেকে পিছলে কোলের উপর পড়ে গেল। সে তখন আসিফের দুই উরুর মাঝখানে তার হাতটি রাখল। আসিফের নাক দিয়ে গরম শ্বাস-প্রশ্বাস বেরুতে লাগল। তার হৃৎস্পন্দন দ্রুততর হলো। সে নিজেকে সংযত করে সোহানার হাতটি সরিয়ে দিয়ে বলল, আমার টাকা কোথায়? সোহানা তখন এক টান দিয়ে টিপ বোতাম দিয়ে আটকান তার ব্লাউজের সামনের অংশ খুলে ফেলে বলল, এই নাও। ব্রা দিয়ে আবদ্ধ তার স্তনাংশ দেখা যাচ্ছিল। আসিফ তখন বলল, তোমার সম্পর্কে যা যা শুনেছি কোন কিছুই দেখি মিথ্যে নয়। উত্তরে সোহানা মিটিমিটি হাসতে লাগল। আসিফ তখন বলল, তুমি অনেক নোংরা হয়ে গেছ। সোহানা এবার রেগে গিয়ে বলল, মুখ সামলে কথা বল। তুমি জান আমার সাথে রাত কাটাতে পারলে কত রথী-মহারথী নিজেদেরকে ধন্য মনে করে, তুমি জান? হুম, সতী-সাধ্বী পুরুষ আমার! আমার শরীর দিয়ে তোমার কাছে আমার যত ঋণ আছে তা শোধ করতে চাই। একদিন এই শরীরটার জন্য কী পাগলই-না ছিলে তুমি। আর আজ? মেলে দিয়েছি এই শরীর তোমার জন্য। যতদিন পর্যন্ত না তুমি মনে করবে তোমার ঋণ শোধ হয়েছে ততদিন পর্যন্ত এই শরীরে তোমার প্রবেশাধিকার থাকবে এবং বিনিময়ে কিছুই দিতে হবে না। তোমার টাকা আমি চাইলে যে কোন মুহূর্তে দিয়ে দিতে পারি। কিন্তু দিব না। তুমি জান, এই ফ্ল্যাটটি কার? আমার, এই ফ্ল্যাটের মালিক আমি নিজে। আসিফ বলল, টাকা লাগবে না। আমি আসি। সোহানা বলল, চলে যাবে ভাল কথা। তবে যদি কখনো প্রোমোশন, পোস্টিং, বিদেশি ব্যাংকের চাকরির প্রয়োজন হয় আমার কাছে আসতে ভুলো না বলে সে খিলখিল করে হাসতে শুরু করল। আসিফ ফ্ল্যাট থেকে তাড়াহুড়া করে বেরিয়ে এলো। পিছনে শুনতে পেল সোহানার উচ্চস্বরে হাসির শব্দ।

রিকশা দিয়ে ঘরে ফিরতে ফিরতে আসিফ মনে মনে বলল, ভাল থেকো সোহানা।