রাখীর তর্জনী
মারুফকে কোথাও ব্লক না করেই হেলালকে বিয়ে করে ফেলল রাখী।
ব্লক মারুফও করতে পারত, ইনফ্যাক্ট মারুফেরই বেশি করার কথা। অপমান তার হয়েছে, মন তারই ভেঙ্গেছে। মন হয়তো রাখীরও ভেঙ্গেছে, কিন্তু সে দ্রুত সেগুলো কুড়িয়ে জোড়া দিয়ে ফেলেছে। হেলাল কেমন আঁঠা সেটা ভালো করে না জেনেই। হেলালের আঁঠা নিয়ে মারুফের বিস্তর সন্দেহ আছে, নিজের কাছে স্বীকার না করলেও অভিশাপের মতো কিছু কথা সে বিড়বিড় করে উচ্চারণ করেছে। হেলালের আঁঠা যেন বেশি টেকসই না হয়, এরকম অভিশাপ নয়। ওদের বিয়ে যেন টেকসই না হয়- অনেকটা এইরকমের অভিশাপ। কিন্তু নিজের কাছে এই প্রতিজ্ঞাও করে নাই যে, রাখীর বিয়ে ভাঙলেই সে আবার রাখীকে বিয়ের ইচ্ছা প্রকাশ করবে। তাহলে রাখীর বিয়ে ভাঙলে লাভ কি, সেই হিসেবও করে নাই সে। কিন্তু অভিশাপ লেগে গেছে কিনা সেটা পরীক্ষা করতেই রাখীকে ফেসবুক, ইন্সটাগ্রামে ব্লক করল না। ফোন থেকে নাম্বার ব্লক তো করলোই না, ডিলিট পর্যন্ত করল না। মানে সব আগের মতোই থাকল, শুধু তুমি আর আমার থাকলা না-টাইপ কাণ্ড ঘটে গেল। সেই কাপালিকের গলাকাটার মতো। তলোয়ার এত নিখুঁত ধারালো ছিল যে একপোচে গলা কাটা গেছে, কিন্তু মুন্ডু গড়িয়ে পড়ে নাই, চিকন সুতার মতো একটা দাগ শুধু।
আসলে তো রাখী আর মারুফের বিয়ের বয়সই হয় নাই, মানে আঠারো হয়েছে, কিন্তু অনার্স ফাইনাল হয় নাই। প্রেমটাও হয় নাই ঠিকমতো। মানে মাস তিনেক গেছে কেবল, একটা ভ্যালেন্সটাইন ডেও প্যাচে নাই। অনেক সময় আছে ভেবে তারা পরস্পরকে বিছানা অফার করে নাই, হালকা চুমু টুমু হয়েছে কেবল। ঢাকা শহরের একপ্রান্তে ছোট একটা ক্যাম্পাস তাদের, বুয়েটের মতো শুনতে বটে আসলে বুটেক্স। মানে এখানেও সবাই ইঞ্জিনিয়ার। ঢাকার বাইরে থেকেই এসেছে দুইজন, থাকে হলেই। তাদের এখন বিয়ের চিন্তাই করার কথা নয়। কী এমন ঘটল যে ধুম করে বিয়ে করে ফেলতে হলো রাখীকে। এটা নিয়ে মারুফকে কোনো কথা বলে নাই সে। মারুফ অনেক ভেবে দেখেছে, হয়তো ফ্যামিলির প্রেসার। ফ্যামিলির প্রেসার হলে রাখীকে মাফ করে দেওয়া যায়। কিন্তু মাফ করতে ইচ্ছা করে না মারুফের। হয়তো মারুফের সঙ্গে বেশিদূর যেতে চায় নাই বলেই, ধুম করে বিয়ে করে ফেলেছে। এটা হলেও তো রাখী মাফই পায়। আরো খারাপ কারণ খুঁজতে খুঁজতে মারুফ ভাবে, পয়সাওয়ালা জামাই পাইছে দেখে ভেগে গেছে, শালী। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেল, হেলাল কোনো পয়সাওয়ালা বোয়াল মাছ নয়, মফস্বলের এক কলেজে বাংলার লেকচারার। রাগে দুঃখে কাঁদতে ইচ্ছা করে মারুফের। দুনিয়া চলে গেছে কোথায়, পাশ করে তারা দুইজন সুন্দর বিদেশ চলে যেতে পারত, তা না কলেজের বাংলার মাস্টার, ছিঃ! কোনোভাবেই মাফ পায় না রাখী।
বন্ধুবান্ধব বুদ্ধি দিল, রাখীকে ব্লক করে দে, বিয়ের ছবি টবি পোস্ট করবে, দেখে তোর খারাপ লাগবে, রাগ হবে, তার চেয়ে ব্লক করে দিয়ে ভুলে যা। তাও ভালো যে রাখী আর মারুফ ক্লাসমেট নয়, ব্যাচমেট। ক্লাসমেট হলে কমন বন্ধু আরো বেশি হতো, আবার ক্লাসে গেলে দেখা তো হতোই। এখন শুধু ফোনে ভারচুয়ালি ব্লক করলেই দেখা-সাক্ষাৎ একদম কমে যাবে, পুরোপুরি এড়ানোও যাবে। আবার ব্লক করলে আরেকটা উপকারও হয়, পুরোনো চ্যাট মোছে। ছবি টবি ফোনে যা আছে ওগুলো ফেলে দিলেই সব সহজ। একটা মানুষকে ভোলা খুব কঠিন কিছু তো না। রাখী একটা সামান্য মেয়ে, দেখতেও তেমন ভালো নয়, গলার স্বর কেমন ফ্যাসফ্যাসে, রেজাল্টও মাঝারি। এমন মেয়েকে চাইলেই ভোলা যায়। বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে কনভিন্স হয়েই গিয়েছিল মারুফ। মাঝরাতে রাখীকে ব্লক করতেই ঢূকেছিল ফেসবুকে; গায়ে হলুদের অনেকগুলো ছবি পোস্ট করেছে কেউ, রাখীকে ট্যাগ করে। রাখী পোস্ট করে নাই, রাখী গত পনেরো দিনে কোথাও কিছুই পোস্ট করে নাই। মারুফ দিন দুনিয়া ভুলে রাখীর গায়ে হলুদের ছবি দেখতে শুরু করল।
খুব যে সুন্দর লাগছে তা নয়, হলুদ রঙটা মারুফের পছন্দই নয়, হলুদে সতেজ কিছু নাই, কেমন মরা রং, দুনিয়ার সবকিছুই মরার আগে হলুদ হয়। কেমন থিকথিকে ঘিনঘিনে বাজে একটা রঙ। উৎকট সাজগোজ করেছে মেয়েগুলো। মারুফ কয়েকবার চেষ্টা করল ছবির অন্য মেয়েগুলোকে দেখতে। অচেনা মেয়েদের নাভির কাপড় সরে গেছে কিনা, কারো বুকের বামপাশের কতটা দেখা যায়, কার ক্লিভেজ কতটা প্রকট, কার ঠোঁট কত পুরু বা পাতলা, এসব দেখতে ভালই লাগছিল। নিচের দিকে নামতে নামতে একটা ছবিতে আটকে গেল, হলুদের মঞ্চে একা বসে আছে রাখী। রাখীর পেছনে লালরঙে—রাখীর হলুদ সন্ধ্যা—লেখা সাদা ব্যানার, গাদা ফুল আর সুপারি পাতায় সাজানো ব্যাকগ্রাউন্ড, সব হালকা ব্লার করে দেওয়া, অদ্ভুত একটা আলো, যেন চাঁদের আলোয় বসে আছে বিষণ্ন রাখী। বুড়ো আঙ্গুল আর তর্জনী দিয়ে ছবিটা বড় করে চোখের কাছে আনল মারুফ। ফুলের গয়না মাথায়, গলায়, হাতে। আরো জুম করে রাখীর বাম হাত আনলো ফোনের পর্দা জুড়ে। কোলের উপর আলগোছে ফেলে রাখা রাখীর সুগন্ধি হাত। কী যেন একটা লোশন হাতে মাখে রাখী, যতোবার হাতে চুমু খেয়েছে মারুফ, ততোবার হালকা একটা মিষ্টি গন্ধ পেয়েছে। অবাক হয়ে বলেছে, ‘তোমার হাতে ফুলের গন্ধ রাখী, সাপ আসবে!’ ফুলের গন্ধ নিয়েই আচ্ছন্ন হয়ে থাকতে পারত মারুফ, কিন্তু কপালে আরো দুর্ভোগ ছিল, চোখে পড়ে গেল রাখীর তর্জনীতে চিকন সোনালী আংটি! রাস্তার পাশের ফেরিওয়ালার কাছ থেকে একসঙ্গে দুইটা আংটি কিনেছিল তারা, একটা সোনালী আরেকটা রূপালী। আংটি নয় ঠিক, কোনো কারুকার্য নাই, পাথর নাই, শুধু গোল। রাখীর চিকন অনামিকায় বড় হচ্ছিল বলে তর্জনীতে পরিয়েছিল মারুফ সোনালীটা। মারুফের মোটা অনামিকায় টাইট হচ্ছিল বলে কনিষ্ঠায় রুপালীটা পরিয়েছিল রাখী। রাখী সেই আংটি খোলে নাই! মারুফের পুরো দুনিয়াই ব্লার হয়ে গেল। সামান্য একটা আংটি এইভাবে তার গলা চেপে ধরবে, ভাবে নাই সে, দম বন্ধ হয়ে এলো।
ব্লক না করেই ফেসবুক থেকে বেড়িয়ে এলো। দুই তিন দিন ঝিম মেরে থেকে ঠিক করে ফেলল, দেশে আর থাকবে না। অনার্স ফাইনাল দিয়েই চলে যাবে বিদেশ। পরীক্ষা দেওয়াই কঠিন হয়ে যাবে মনে হচ্ছে। না দিয়েই চলে গেলে ভালো হয়। বন্ধুদের বলল, ‘দেশে আর থাকবো না, কষ্ট হচ্ছে, শালা।’ দুই একজনের বড়ভাই বিদেশে থাকে, যোগাযোগ করিয়ে দিল। বিপুল উৎসাহে কাগজপত্র নিয়ে ছোটাছুটি শুরু করে দিল মারুফ। বন্ধুদের কেউ কেউ রাখীর বিয়েতে গেল, চুপচাপ ফিরেও এলো, কেউ ফেসবুকে ছবিও দিলো না, কিছুই লিখলও না। বন্ধুদের আড্ডায় রাখী চ্যাপ্টার ক্লোজ হয়ে গেল। মারুফের পাসপোর্ট রেডি হয়ে গেল, মালেশিয়ার এক বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স করার একটা সম্ভাবনাও দেখা দিলো। অনার্স দিয়েই যেতে হবে কোনো উপায় নাই।
বাড়িতেও সবাই মেনে নিলো, মারুফের আব্বা বলল, ‘ও ফারুকের মা, যাবার দে উয়াক।’ বড়ভাই ফারুককে তেমন ভয় পায় না মারুফ, শুধু মায়ের কান্না ভয় পায়। ঢাকায় পড়তে এসে প্রত্যেক মাসে বাড়ি গেছে সে, বাপ ভাই বিরক্ত হয়ে বলেছে, ‘ঢাকা রংপুর কি সোজা কথা?’ কটমট করে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে মারুফের আব্বা বলেছে, ‘এত জার্নি করে শুধু তোর জন্য।’ একমাস পেরোলেই ফোনে মায়ের গলা ভিজে উঠত, আর ছুটত তার কোলের ছাওয়াল। কিন্তু মারুফের কান্দুনি মা রাজি হয়ে গেল। টাকা পয়সার চিন্তা করতে মানা করে ছোটভাইয়ের পিঠ থাপড়ে দিল ফারুক। এইবার শুধু অনার্স ফাইনালের জন্য পড়তে বসা বাকি।
হলে নিজের রুমটার তাকিয়ে মারুফের মনে হলো, এইখানে মানুষ থাকে না, গরু থাকে। এইখানে লেখাপড়া তো দূর, কবিতা লেখার পরিবেশও নাই। ফোন থেকে ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম আগেই ফেলে দিয়েছে, রাখীর গায়ে হলুদের ছবি দেখার পরই। রুম থেকেও অনেক কিছু ফেলে টেলে দিয়ে পরিস্কার করে ফেলল, বিছানা টেবিলের আগের জায়গা বদলে দিল, রুমমেট বাদল টু শব্দও করল না, রাখী রাখী করে যে বন্ধু কান্নাকাটি করে নাই, সেই খুশিতেই মাফ করে দিলো সব।
পড়তে বসার আগে নিজের ল্যাপটপে একবার, শেষবার ফেসবুকে ঢুকল মারুফ।
ভয়ে ভয়ে ঢুকল রাখীর আইডিতে, বিয়ের ছবি যথারীতি রাখীকে ট্যাগ করে পোস্ট করেছে কেউ।
আইডিতে কিছুই বদলায় নাই—রাখী নিজে, ম্যারিটাল স্ট্যাটাসও না। মানে সে হয়তো ফেসবুকে ঢোকেই নাই, আইডি ডিএক্টিভও করে নাই।
হাত জুম করবে না ভাবতে ভাবতেই জুম করেই ফেলল। এখনো বাম হাতের তর্জনীতে সাপের চিকন জিভের মতো আংটি। মারুফের সমস্ত শরীরের রাগ চোখে চলে এলো। ল্যাপ্টপের কীবোর্ডে ঘুষি মেরে চিৎকার করে বলল, ‘শুয়ারের বাচ্চা, আংটি ক্যান খুলিস না!’ বাদলের হাতে পানির গ্লাস ছিল, এত জোরে চমকালো যে গলার পানি নাক দিকে বেরিয়ে এলো, হাতের গ্লাস মেঝেতে পড়ে দশ টুকরা হয়ে গেল।
তুফানের বেগে রুম থেকে বেরিয়ে গেল মারুফ। বাদলের হুঁশ ফিরতে কিছুক্ষণ লাগল। লম্বা দম নিয়ে বিরক্ত হয়ে ভাবল, শালা মারুফ ট্রেনের নীচে ঝাপ দিতে গেল নাকি! তারপর বিড়বিড় করে বলল, ‘মরুক শালা।’
আরো কিছুক্ষণ পরে ভয় করতে লাগল, বন্ধুদের গ্রুপে জানিয়ে দিল ঘটনা। কয়েকজন গেল খুঁজতে, কয়েকজন রুমে দৌড়ে এলো। মারুফের টেবিলে ল্যাপটপ তখনও খোলা, ঘুষিতে তেমন কিছু হয়নি। বাদল একবার টাচপ্যাডে আঙ্গুল লাগাতেই পর্দায় ভেসে উঠল রাখীর হাত। সবাই দেখল রাখীর তর্জনীতে মামুলী এক পিতলের আংটি। এবার বাদল বিড়বিড়িয়ে বলল, ‘শালা রাখী আংটি ক্যান খুলিস না।’
ঘন্টাখানেক পরে রুমে ফিরে এলো মারুফ, সঙ্গে আরো কয়েকজন। মারুফের রাগ কমেছে মনে হলো, চোখ লাল। ঘাড় ব্যাকা করে বলল, ‘হেলালের খোঁজ নে, দেখা করব।’ সবাই একসাথে বলল, ‘হেলালকে দিয়া কী করবি?’ মারুফ মুখ খিঁচিয়ে বলল, ‘চুম্মা খামু।’ বাদল বলল, ‘ব্যাডা মানুষরে খাইলে আমারেই খা আয়।’ আরেকজন বলল, ‘খা খা খা বক্ষিলারে কাচা ধইরা খা।’ মনে হল, বিপদ কেটে গেছে, হাসাহাসি আড্ডায় বদলে গেল, ধীরে ধীরে বিড়ির ধোঁয়ায় রুম ভরে গেল, দুই একটা বোতলও চলে এলো। এখানে ওখানে ব্যাকাত্যাড়া হয়ে ঘুমিয়ে গেল কেউ কেউ; দুই তিনজন নিজেদের রুমে চলে গেল শেষরাতের দিকে। কিন্তু এতসব করেও কোনো লাভ হলো না, পরের দিন হ্যাঙওভার কাটিয়ে মারুফ ঘোষণা দিল, ‘হেলালের খোঁজ নে, আমাকে জানতেই হবে রাখী শালাকে কেন বিয়ে করেছে!’ বন্ধুরা বিরক্ত হয়ে বলল, ‘তুই শালা ফাত্রামী করতাছস, হেলালরে জিগানির কিছু নাই, রাখীরে জিগা!’
বন্ধুদের মনে কোনো শয়তানি ছিল না। তারা ভেবেছিল, দুইজনের একটা শেষ বৈঠক হওয়া দরকার। রাখী যদি বুঝিয়ে বলে, বিয়েটা সে কেন করেছে, তাহলে মারুফের জন্য মাফ করে দেওয়া সহজ হয়। রাখী কিছুই বলে যায় নাই, হয়তো এটাই সহ্য হচ্ছে না বন্ধুর। দুই বন্ধুর বিয়েতে তারা বরযাত্রী কন্যাযাত্রী হতে পারে নাই, কিন্তু দুই দলে ভাগ হয়ে তাদের বৈঠকের ব্যবস্থা করতে পারল। এটা দুই নেতাকে যুদ্ধবিরতির টেবিলে বসিয়ে দেওয়ার মতো কূটনৈতিক তৎপরতার সামিল।
সামনে সবার অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা, সারাবছর লেখাপড়া না করাদের বহুমূল্যবান প্রস্তুতিমূলক ছুটি চলছে। রাখী বিয়েশাদী শেষ করে হলে ফিরে এসেছে। নিরপেক্ষ বন্ধুদের দফায় দফায় বৈঠকের পর নিরপেক্ষ ভেন্যুতে এক বিকালে মুখোমুখি বসিয়ে দেওয়া গেল মারুফ ও রাখীকে। তারা পরস্পরের ভাষা না বুঝতে পারে, এই অযুহাতে বন্ধুদের একটা দল দোভাষী হিসেবে বৈঠকে হাজির থাকতে পারত। তারা প্রেম করতে যাচ্ছে না যে অত প্রাইভেসি দরকার। আবার দুইজনকে বৈঠকে পাঠিয়ে তারা যে শান্তিতে পড়তে বসবে, তাও পারছে না। একটা অশান্তি যেন লেগে গেল ঢাকার আকাশে। অকারণে হর্ন বাজাতে লাগল জ্যামে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ির দল। বাইকে বাইকে ফুটপাতে উঠে পড়ার প্রতিযোগিতা লেগে গেল। বাদল বলল, ‘শালাদের সাথে গোপনে ক্যামেরা ফিট কইরা দেওনের দরকার আছিল, বাইরে বইসা শোনা যাইতো কী কয়!’ রাখীর রুমমেট নীলা চোরের মতো গলায় হড়বড় করে বলে ফেলল, ‘আমি একটা মোবাইলে আমারে রিং দিয়া রাখীর ব্যাগে দিয়া দিছি, ধুর শালা এই টেনশন নেওয়া যায় নাকি, দুইটায় মারামারি লাইগা গেলে, তখন?’ বাদল বলল, ‘শালা তোর কী বুদ্ধিরে, স্পিকার অন কর।’ স্পিকার অন করে গোল হয়ে বসল সবাই।
সব সুনসান। কিছুক্ষণ পরে কথা শোনা গেল। রজকিনীর পায়ের মতো ঠাণ্ডা গলায় মারুফ বলল,
ধুম কইরা না বলেকয়ে হেলালরে বিয়ে করলি ক্যান?
রাখী ফোস করে নিঃশ্বাস ফেলল, সময় নিল, তারপর বলল, কারণ আছে, তোকে বলা যাবে না।
মারুফের গলা একপ্রস্থ উঁচু হলো—আংটি ক্যান খুলিস না?
রাখী বলল, টাইট হয়া আটকায়ে গ্যাছে, খোলে না।
এদের কথা শুনে গোল হয়ে বসে থাকা স্পাই বন্ধুর দল ফিচফিচ করে হাসছিল, হঠাৎ রাখীর চিৎকারে থেমে গেল সবাই। একসঙ্গে দৌড় লাগালো মিটিং ভেন্যুর দিকে।
রাখী বাঁহাতি। বাম হাতের তর্জনী কাটা যাওয়ার পর, অনার্স ফাইনাল দেওয়ার জন্য বিকল্প রাইটারের আবেদন করল সে, শিক্ষকদের বৈঠকে বিশেষ বিবেচনায় অনুমতিও মিলল। অন্য বিভাগের এক জুনিয়র মেয়েকে পাওয়াও গেল, যে রাখীর কাটা আঙ্গুলের বিকল্প হতে রাজি হলো।
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন