গল্পের বইয়ের নাম কেন ‘সিসিফাস শ্রম’?
আনিসুর রহমান নবীন নিরীক্ষাপ্রবণ গল্পকার। গত ক’বছর ধরে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লিখছেন গল্প। সে সব গল্প থেকে বাছাই করে এবার প্রকাশ করলেন প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘সিসিফাস শ্রম’। বইটি প্রকাশ করেছে প্রথমা প্রকাশন। মোট ৯টি গল্প আছে এই বইয়ে। বইয়ের নাম কেন সিসিফাস শ্রম? বলা যায়, গ্রিক পুরানের চরিত্র সিসিফাস। জিউসের অভিশাপে অভিশপ্ত হয়ে সিসিফাস একটা পাথর ঠেলে তোলে পাহাড়ের চূড়ায়। কিন্তু পাথরটা একসময় নিজের ভারেই গড়িয়ে পড়ে। অর্থহীন হয়ে যায় সমস্ত কাজ। এই বইয়ে জীবনের অর্থহীনতার গল্পগুলো বলেছেন গল্পকার।
সুখ, প্রাপ্তি মানুষের জীবনের একটা ক্ষণস্থায়ী ব্যাপার। এর বিপরীতে মানুষের জীবন তো নিরন্তর সংগ্রামের। মানুষ তার স্বপ্নের পেছনে ছোটে, জীবনের গ্লানি থেকে দূরে থাকতে চায়। কিন্তু সে মুছে ফেলতে পারে না এসব। বারবার ফিরে আসে তার কলুষিত অতীত, অসহায়ত্ব, মানসিক টানাপোড়েন। প্রতিনিয়ত সে সিসিফাসের মতোই জীবন যাপন করে। এই নিয়তি থেকে তার মুক্তি নেই।
নিরীক্ষাধর্মী নতুন আঙ্গিকের এসব গল্প পরাবাস্তবের ঘোরলাগা ধূসর জগতে টেনে নিয়ে যায় পাঠককে। ‘এপিটাফ’ গল্পে জীবনের অর্থহীনতার দায় নিতে হয় পূর্বপুরুষদের। ‘সিসিফাস শ্রম’ এবং ‘ভ্রষ্ট গণক ও বিকলাঙ্গ তাস’ গল্পে সেই দায় গিয়ে পড়ে বঞ্চিত-লাঞ্ছিত অতীতের ওপর। ‘মাস্টারপিস’ গল্পে গ্লানি, অবক্ষয় আরো ঘনীভূত হয়ে হাজির হয় অবাস্তব কল্পনার দুনিয়ায়।
‘অচেনা মানুষ’ গল্পে কথক নিজের সঙ্গে নিজের বোঝাপড়ার দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়ে পড়ে। ‘সেলিব্রেটিং সেঞ্চুরি উইথ আদুরী’ ও ‘১৯৮০’ গল্পে সামাজিক-রাজনৈতিক চাপে পিষ্ট মানুষের অসহায়ত্ব তুলে আনে আমাদের সামনে। ‘আগর আলীর প্রাতর্ভ্রমণ’ এবং ‘অক্টোবরের শেষ বিকেল’ গল্প দুটি জীবনের শেষ সীমায় পৌঁছানো বৃদ্ধদের মনোবিকলন ও জীবন নিয়ে নানা দার্শনিক প্রশ্নের মুখোমুখি করে। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী মাসুক হেলাল। মূল্য রাখা হয়েছে ২৫০ টাকা।
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন