সোনা

অ+ অ-

 

ভোরে আমার এমনি ঘুম ভাঙে না। মোবাইলে অ্যালার্ম দিয়ে রাখতে হয়। ভোর সাড়ে চারটা। বোতাম ফোনের ঝাঁঝড়া হয়ে যাওয়া স্পিকারটায় অ্যালার্মটা কক-কক করে বাজতে শুরু করলে ধড়ফড় করে ঘুম থেকে উঠি। এক বছর হয়ে গেল প্রায়তবুএই অ্যালার্মের আওয়াজ এখনও অভ্যাস হয় নাই আমার।

আমাদের গ্রামের সাইজ চোঙার মতো। বড় থেকে ধীরে ধীরে গ্রামের ঘরবাড়ি মিলিয়ে গেছে একটা বিন্দুতে। যেখানে মিলিয়েছেসেখানই পুনর্ভবার বাঁক। বাঁকের ওপর বারোমাস ধরে থাকে কাশফুল। ভোরের না ফোটা আলোয় কাশগুলো ভূতের মতো দোলেহাওয়া খায়। তাকালেই বুকের ভেতর দ্রিম করে শব্দ হয়। ঘর থেকে বেরিয়ে বাঁকটা পর্যন্ত যাই একটানা।

বাঁকের ওপর ঢিবি। ঢিবির ওপর উঠলে বামপাশে যেমন দেখা যায় কাশবনডানপাশে তেমনই হাটখোলার মাঠ। মাঠের দিকে তাকিয়ে থাকি সূর্য না ওঠা পর্যন্ত। ৩৬৫ দিন পার হয় কি হয় নাইকিন্তু এখনও যা দেখতে পাওয়ার কথাতা দেখি নাই। দেখি নাই বলেই জীবনে আমার কোনো উন্নতি নাই। অথচ উন্নতির দরকারখুবই দরকার!

বাপ আমার কানা। ডান চোখটা ছানিতে খেয়ে নিয়েছে। বাপ প্রতিদিন ঘ্যানায় ছানিটা যে কাটবার লাগে বেবেদনা হয় বেজায়দেখকেমন ঘোলা ধরছে এরপর ফাইট্টা যাইবো রে শালা!

জবাব আমি দেই না এসব কথার। বাপের ঘ্যানানোর তাল নতুন না। শরীরের বল শেষ হওয়ার পর থেকেই গলার জোর ডেগচির মতো চাঙা। ঘ্যানানো আর ত্যানা পেঁচানোই তার কাজ এখন। মিলনের বাপ বলেছেকদিন পরই চক্ষুশিবির হবে। তখন মুফতে চোখের অপারেশন করা সম্ভব। বাপকে সে কথার বলার ইচ্ছাও জাগে না। যখন হবেতখন হবে!

এমনিতে আমাকে সকাল-সকালই বেরোতে হয়। লতিফুর লোক হিসেবে খচ্চরের বেশি খারাপ। কীটনাষকের ব্যবসা তার খোয়াড় মোড়ে। দোকান খুলতে হয় আমাকেই। খুলেই পানি মারাঝাঁট দেয়া। এরই ভেতরে আসে লাট সাহেবের পুত। তখন দৌড়ে-ঝাপ্টে চা নিয়ে আসতে হয় নিতাইয়ের দোকান থেকে। এক কাপ চা খেয়েআমাকে কুত্তার বাচ্চা বলে দিন শুরু হয় লতিফুর ব্যাপারির। এই গালাগালি চলে তার রাত পর্যন্তই। দুপুরে অবশ্য এক ঘণ্টার বিরতি। দেড়টা থেকে আড়াইটালতিফুর বাড়িতে যায় ভাত খেতে। এ সময় দোকানে একলা ঝিমাই আমি। রোদ-ধুলা খাইভাত আমার আর খাওয়া হয় না। অথচ সারাদিনের খিদা নিয়ে রাতে যখন নলা চালাই গলায়বাপের সেই এক ঘ্যানঘ্যানচোখটায় বেদনা রে বাপছানিটা কাটি দে বাপ!

চাইলেই অনেক কিছু করা যায় না। আকিমুন বু পারেনিআমি কোন ছাড়!

আমার চাইতে সাত বছরের বড় আকিমুন বু। তাহলে আমার যদি এখন পনের হয়বুয়ের বয়স পনের যোগ সাত বিশের বেশিইনাবুবু কত কী চেয়েছিল করতেপুনর্ভবায় গামছা পেতে ট্যাংরা আর পুঁটি ধরতে ধরতে বু বলছিলএকদিন দেখবি গামছায় মাছ নাসোনা উঠব। এই একতাল সোনা। তখন কী করব জানিস?

কী?

তিন কেজি গরুর গোশ কিনব। তিন কেজি। কষায়া রাইন্ধা এক মাস ধইরা খামু।'

আমারেও দিস।'

আচ্ছা দিমু। আব্বারেও দিমু। দিমু না?

খুব ইচ্ছা হয় না বলতেতবু বলিহ। দিস। তার তো লোল বেশি। না দিয়া খাইলে তোর প্যাট খারাপ করব রে!

আকিমুন বু কি আমিকেউই সোনা পাই না। দিনের পর দিন ট্যাংরা ওঠেপুঁটি ওঠে। মাঝে মাঝে কাঁটাপাতাসি। আকিমুন বু আমার চোখের সামনেই বড় হতে থাকে। মাছ ধরার সময় তার জামার ফাঁক দিয়ে ঘন কালো বুক দেখা যায়। বোঁটা খেজুরের মতন এবড়ো-খেবড়ো। আমি তাকিয়েই থাকি। বুবু আমার মাথায় চাটি মারেহারামজাদালায়েক হইয়া গেছোস?

তা একটু হয়েছিই। লুঙ্গির নিচে আস্ত এক সাপ। রাত-বিরাতে তার ফোঁসফাঁস। এক রাতে ঘুমের মধ্যেই আকিমুন বুর শরীরে চড়ে বসি। বুবুর বুক ভরা গাঢ় ঘুমের তাজা লালা। আমার হাত পিছলে যায়। খেঁজুর কাঁটায় আটকে থাকে আঙুল। পাজামার ফিতায় এত গিঁটটান পড়তেই বুবুর ধাক্কাকুত্তার বাচ্চাখেঁচতে শিখোস নাই?

কে আর এসব শেখায়যা শেখার নিজে নিজে শিখি।

হাটবারে যে ম্যাজিক রতন আসেসে আঙুলে আঙুল ঘষে দেখায়। পুনর্ভবায় ডুবে সাপের ফনা নামাই। ব্যথায় ভরে যায় তলপেট। ডবকা হয়ে ফুলে ওঠে দুইটা বিচিই। আকিমুন বুকে দেখাই। আকুন্দা পাতা বাটে বুবু। যত্ন করে লাগিয়ে দেয়। সাপের ফনা আবার তাক করে আকাশে। বুবু বলেলাল টুকটুক বউ আনব তোর জন্য। ভাবিস না ভাই!

আমি বলিজলদি আনিস। রাইতে আমার শরীর ভইরা জ্বর নামে।

আর কটা দিন সবুর কর না। এইবার যদি সোনা পাই…’

সোনা আমরা পাই না। কিন্তু কীভাবে কীভাবে জানি আকিমুন বু সোনার ঠিকানা ঠিকই পায়।

পানির নিচে হ্যাংলা হয়ে গামছা তুলে ধরতে ধরতেই বুবু হঠাৎই সব ছেড়ে দেয়। ভেতর থেকে দুইটা পুঁটি লাফ দিয়ে পুনর্ভবায়। এরপরই বুবু সব ছেড়ে-ছুড়ে ডাঙায় দাঁড়ায়।

কী হইল?

এই ফ্যাদার মাছ আর ধরতাম না।'

মাছ তো ধরি না বুবু। সোনা ধরার জন্যই না…’

সোনা পায়ে হাঁইটা আসব না রে। সোনার কাছে যাওন লাগবরাস্তা বহুত দূরের। টাকা লাগব চল্লিশ হাজার!

এত টাকা কই পাবি?

প্রশ্নটা আমি করি ঠিকইকিন্তু এও তো জানি বুবুর কাছে এসবের উত্তর নেই। অথচ কী বিস্ময়বুবু ঠিকই উত্তর দেয়বাপে দিবো!

বাপের কাছে চল্লিশ হাজার কেনচল্লিশ টাকাও নেই। আকিমুন বু এবার গজরায়কেমুন বাপ তুমিপয়দা দিয়াই খালাশভিটা আছে ঘর নাইঢেকি আছে চাউল নাই না এক টুকরা জমি আছে না আছে পোখর জন্মের পর থেইকা চাকরানি হইয়া আছি। পোলার জন্ম নিয়ায় মায়েরে কবরে দিছো কী ইচ্ছা ঠ্যাঙের উপর ঠ্যাঙ তুইলা খাইবাসেই খাওনের জন্যই তুমার চল্লিশ হাজার দিতে হইব। কই থেইকা দিবা আমি জানি না কিছুই!

কেই বা জানে!

চার হাজার টাকা দেখিনি আমি এক সাথে। আকিমুন বুও দেখেছে কিনা সন্দেহ। এই যে এত চল্লিশ হাজার চল্লিশ হাজার করেসেটা এক সাথে দেখতে কেমন তাই জানে না।

বাপের চোকির নিচে ঘুমাই আমরা। বাপের ঘরঘরানি নাক ডাকা শুরু হলে আকিমুন বুকে জিজ্ঞেস করিচল্লিশ হাজার পাইলে সোনা আনতে পারবি বু?

হুম।'

অনেক সোনা?

অনেক।'

কী করবি সোনা দিয়াগরুর গোশতো খাবি?

তোর বিয়াও দিব লাল টুকটুক বউয়ের সাথে। আকুন্দবাটা তখন আর লাগব না।'

আর কী করবি?

এই ভাঙা ঘরটা ফালায়া আরও দুইটা ঘর তুলব। একটা গাইগরু কিনব। দুধ দিবো সেইটা। ভরা ভরা ওলান থাকব ওইটার।'

আমি মুখ লাগায়া খামু তাইলে।'

আইচ্ছা খাইস।'

সুখে আমার মাথা ঝিমঝিমায়। জীবন এত সুন্দর হয়ে যাবে তাহলেচারদিকে সুখ আর সুখ থাকবে আমাদের। আমাদের ধুলোর দুনিয়াটা মচমচ করবে নতুন জুতার মতো। আকিমুন বুকে জাপটে ধরি আমি। বলিআমি তোরে চল্লিশ হাজার টাকা দিবো বুবু তুই শুধু সোনা নিয়া আসিস। অনেক সোনা। অনেক।

আকিমুন বু ঝাপটা মেরে সরিয়ে দেয় আমাকে। বলেসর কুত্তার বাচ্চা!

আমি ছিটকে সরে যাই। ওপরের কুত্তা কেঁউ কেঁউ করে ওঠে ঘুমের মধ্যেই।

 

রতনে রতন চেনেশুয়োরে চেনে কচু

ফলেদেখা গেল মিলন চেনে লতিফুর ব্যাপারিকে।

চল্লিশ হাজারের ফয়সালা এই চোঙার গ্রামে কেউ করতে পারলে নাকি লতিফুরই করতে পারে। মিলন তার সাইকেলের পিছে বসিয়ে নিয়ে যায় খোয়ার মোড়।

লতিফুরের বাপ নাকি চোর ছিল। শরীরে তেল মেখে ন্যাংটা হয়ে রাতে চুরি করতে বেরোত। একবার জমশেদ মাস্টারের বাড়ি থেকে বেশ কয়েক ভরি সোনা চুরি করে ইন্ডিয়া পালিয়েছিল। মাস দুয়েক পর ফিরে এসে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজি হয়ে যায়। বেশভূষাও পাল্টে যায়। ফলে চুরির আঙুল তার দিকে ওঠা কঠিন হয়ে পড়ে। তারও কয়েক মাস পর লতিফুরের বাপ এই দোকান দেয়। শরীর বসে যাওয়ায় নিজে আর দোকানে বসে না। বসে লতিফুর। বসতে না বসতেই সে এখন খাঁটি ব্যাপারি। এক নামে দশগ্রাম চেনে। জেলাসদরেও তার চিনপরিচয় আছে। তিনটা কোম্পানির সাথে ডিলারশিপ। চাষীদের ধারে কীটনাষক দিয়ে সারাবছর রক্ত চুষে খায়। কাঁচা টাকা তার কাছে আছে।

কিন্তু থাকলেই বা কীপরের হাতের ধন দেখে চোখ টাটিয়ে লাভ কী!

কিন্তু মিলনের সাথে লতিফুরের সেটিং আছে কোনো। মিলনকে বেশ খাতির করে লতিফুর। বলেভিটার কাগজ আছেনাকি এজমালি?

মিলন আমার দিকে তাকায়। আমি কার দিকে তাকাব না বুঝে মাটির দিকে তাকিয়ে থাকি। লতিফুর বলেযদি কাগজ থাকেতাইলে বিবেচনা করা যাইব। চল্লিশ হাজার তো মুখের কথা না!

ঘটনা জানাতেই আকিমুন বু লাফ দিয়ে ওঠে। দুপুর বেলাতে বাপকে সে টেনে-হিঁচড়ে গাছতলায় নিয়ে গিয়ে বসায়। বলেহাওয়া-বাতাস লাগাও একটু শরীরে। গায়ের থেকে তুমার গুয়ের গন্ধ আসে আব্বা!

বাপ আমার গাছতলায় পটাং হয়ে থাকে। রোদের ঝিলিকে তার চোখে ছানি আরও স্পষ্ট হয়। ভ্রু কুঁচকে লোকটা ঘ্যানাতে থাকেছানিটা কাটা লাগে রে বাপ বেদম বেদনা করে বাপ রে!

আমি তখন বুবুর গায়ে গা লাগিয়ে রাখি। চোকির তলা থেকে বুবু বের করে ফেলেছে টিনের বাক্সটা। তার ভিতরে কত যে হাবিজাবি। তারই অনেক ভিতরে একটা দলিল। রঙচটা। পুরনো। কিন্তু দলিল তোআকিমুন বু উঁচু দাঁতগুলো আর কোনোমতেই ভেতরে রাখতে পারে না।

ব্যাপারি দলিল দেখে কিছুক্ষণ। ঠোঁট ওল্টায়দেড় কাঠার ভিটা। তাও ৪৮-এর অদল-বদল। এইটা বন্ধক রাখলে কি আর চল্লিশ হাজার পাওয়া যায়?

আকিমুন বু এবার বাপের মতো ঘ্যানায়দেখেন না ভাই। দেখেন

দলিল দেখার বদলে লতিফুর আমাকে দেখে। বলেশুধু দলিল নাঅরেও বন্ধক রাখো তাইলে। দোকানে একজন লোক দরকার। যদ্দিন না টাকা সুদ সমেত ফেরত দিতেছও এইখানেই কাজকাম করবেরাজি?

চল্লিশ হাজার টাকা সত্যি সত্যি পেতে যাচ্ছি ব্যাপারটা এত কাছের হয়ে যায় যে অন্য যে কোনো কাজের জন্যই আমরা আসলে রাজি। লতিফুর পরের দিন টাকা দেয় দুই বান্ডিল। বুবু একটা বড় কাপড়ে টাকাগুলো বেঁধে ফেলে। আমার হাত শক্ত করে ধরে ঘরে ফেরে। রাতভর ঘুমাতে পারে না। আমি বুবু দুইজনেই উঠানের নিমগাছের নিচে বসে থাকি।

তুই ফিরবি কবে বুবু?

যাইতেই তো পারি নাই এখনও। কিন্তু ফিরব। যত তাড়াতাড়ি পারি ফিরব।'

সোনা নিয়া ফিরবি না?

সোনা আনতেই তো যাইতেছি।'

সোনা আনলে কী করবি বুবু?

ভিটার দলিল ছাড়ামু। ভাঙা ঘরটা ভাইঙা আরও দুইটা ঘর দিমু। তিন কেজি গরুর গোশত কিনমু।'

গাইগরু কিনবি নাগাইগরুর ওলানে মুখ লাগায়া দুধ খাইতে দিবি না?

আকিমুন বু তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। তারপর কামিজটা উঠিয়ে নেয়। বলেএখনই খা। খা

আমি তাকিয়ে থাকি।

বুবু বলেতোর আশা পূরণ কইরা খা

আমি মুখ বাড়াই।

বুবু বলেকামড়াইস না কুত্তার বাচ্চা খা

আমি চোখ বন্ধ করে নিই।

বুবু বলেসোনা আনলে আমাদের সব হইব রে ভাই। সবতুই অপেক্ষা করিস। এক ভোরেআমি চইলা আসমু একবস্তা সোনা নিয়া। হাটখোলার মাঠ দিয়া...

 

বুবু পাশের গ্রামের আজমতের সাথে শহরে চলে যায় এর পরের দিনই। সেখান থেকে যাবে সে বিদেশে। বিদেশে অনেক কাজঅনেক সোনা।

লতিফুর আমাকে ঝাঁটাচায়ের কাপ বুঝিয়ে দেয়। তার ব্যবহার করা পুরনো মোবাইলও দেয় একটা। সকাল-বিকাল যেন খবর দিতে পারি দোকানের।

আমাদের জীবন চলতে থাকে একটানা একই রকম।

দিনে দিনে চোখের ছানির মতো বাপের ঘ্যানানি বাড়ে। লতিফুরও অচেনা হতে থাকে ধীরে ধীরে। ফুটফরমায়েশের সাথে সাথে গালাগালিও বাড়ে। এরপর রাতের বেলা দোকানের ঝাঁপি বন্ধ করে বাড়ে তার শরীর মালিশ। রসুন কোয়া মিশিয়ে গরম সরিষার তেল দিয়ে তার ঘাড়-পিঠ-কোমর-পাছা-পা মালিশ করে দিতে হয়।

ভিটার সাথে সাথে আমিও বন্ধক লতিফুরের কাছে।

বাপে একদিন ছুরি চালিয়ে কেটে ফেলতে যায় ছানিটা। তাতে ছানি নাকাটা পড়ে চোখটাই। কোনো কালের কালো মণিটা ফিনকি রক্তের সাথে বেরিয়ে আসে। বাপ গোঙায়। কিন্তু বাপের এই গোঙানি আমার কান পর্যন্ত আসে না। শুধু খবর আসেআকিমুন বু নাকি বিদেশ যায়নি আজমতের সাথে আকিমুন বু পালিয়ে গেছে। চল্লিশ হাজার টাকা নিয়ে আজমতের সাথে ঘর বেঁধেছে ঢাকাতে। নতুন জীবন তাদের। আজমত রিকশা চালায়। আকিমুন বু গার্মেন্টেসে কাজ করে।

মিলনের কথা আমার বিশ্বাস হয় না। কিন্তু লতিফুর ব্যাপারি খুব বিশ্বাস করে। তাকে মালিশ করতে গিয়ে আমাকে উল্টে দেয়। আমি বুঝে উঠতে পারি না কী হতে যাচ্ছে আমার সাথে। কিন্তু শরীর ঠিকই বোঝে। সাপটা ফোঁস করে ওঠে ঠিকই। তবে ও পর্যন্তই। তীব্র ব্যথার সাথে সাপ তার সকল বিষের কথা ভুলে যায়। লতিফুর বলেতোর বইন তো বাটপারি করছে তোর সাথে। এমন ছিনাল বইন থাকে কারুর বে তোর বাপ রে আর তোরে রাস্তায় ফালায়া রাইখা গেছে এখন কী করবি সারাজীবন ঠাপ খা জীবনের ঠাপ...

আমার জবান চলে না। চাইলেও চালাতে পারি না অবশ্য। ভিটার সাথে আমিও তো বন্ধক লতিফুরের কাছে।

বাপ রাতে ঘ্যানায়। তার চোখ ফুলে ঢোল। ঢোলের ভেতর রক্তপুঁজ। বলেএইবার মইরা যাব রে বাপ অষুধ আইনা দে অষুধ খাই

আমি বলিসোনা আসতেছে আব্বা হাটখোলার মাঠ ধইরা এক বস্তা সোনা আসতেছে আসলেই অষুধ খাওয়ামু এই ভাঙা ঘরটা ফালায়া নতুন দুইটা ঘর করুম এইখানে। একটা গাইগরু কিনমু। ওলান ভরা দুধ তার। লাল টুকটুক বউ আনমু আমার। আর আনুম তিন কেজি গরুর গোশত!

আমারেও দিস খাইতে…’

দিমু। তোমারেও দিমু!

ভোর সাড়ে চারটায় আমি প্রতিদিন পুনর্ভবার ভিটার ওপর দাঁড়াই। দূরে হাটখোলা মাঠ। একদিন সেই মাঠ দিয়ে সোনা আসবে আমাদের। একবস্তা সোনা। এরপর আমাদের আর কোনো কষ্ট থাকবে না!