প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদাদের সুন্দর জীবনীগ্রন্থ

অ+ অ-

 

ষাটের দশকে কবি সুফিয়া কামালের অনুপ্রেরণায় বিপ্লবী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারকে নিয়ে একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন লেখক মালেকা বেগম। আর প্রীতিলতাকে নিয়ে পূর্ণাঙ্গ জীবনীগ্রন্থ প্রকাশ করলেন ২০১৮ সালে। প্রীতিলতাকে নিয়ে লেখকের এই দীর্ঘ ভ্রমণ বলতে গেলে বেশ শ্রমসাধ্য ও সময়সাপেক্ষ ছিল। সেই সময়ে বইপত্রের অপ্রতুলতা, প্রীতিলতার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাথে যোগাযোগের সীমাবদ্ধতা এর কারণ। মালেকা বেগম প্রণীত প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার বইটি প্রকাশ করেছে প্রথমা প্রকাশন। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন অশোক কর্মকার। মূল্য রাখা হয়েছে ১৭০ টাকা।

এদেশের মানুষ যেমন দেশ নিয়ে উচ্ছ্বসিত, ইতিহাসের অনেক অধ্যায় এবং চরিত্র নিয়ে গৌরব বোধ করেন, তেমনি প্রায় সব বড় মানুষই ব্যক্তিজীবনে সামাজিক উপেক্ষা ও সমকালীন নিন্দুকদের উৎপীড়নের শিকার হয়েছেন। এতদ সত্বেও বাঙালির সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসে আছে উত্তরণের অনেক অর্জন, অর্জনের অনেক মাইলফলক। আর এসবের পেছনে আছে অনেক ব্যতিক্রমী অগ্রণী মেধাবী ব্যক্তিত্বের ভূমিকা। তাঁদের সম্পর্কে জানা কেবল ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন নয়, ভবিষ্যতের পাথেয় সঞ্চয়েরও সুযোগ তৈরি করে। মালেকা বেগমের বইটিও সে সুযোগ তৈরি করে দিল। বলা চলে, বইটি ইতিহাসের সূত্রানুসন্ধানে বিশেষ কাজে লাগবে।

প্রাচীনকাল থেকে আধুনিক কাল পর্যন্ত বাঙালির প্রামাণ্য ধারাবাহিক ইতিহাস রচিত হয়নি। প্রীতিলতার বিপ্লবী জীবন নারীদের জন্য এক বিশেষ অনুপ্রেরণা যুগে যুগে। আজও যখন মেয়েরা বিয়ে-সংসার ইত্যাদি নিগড়ে আবদ্ধ। ক্ষণে ক্ষণে পিছুটান যখন নারীর পথ রোধ করতে উদ্যত, তখন সেই বৃটিশ আমলে একজন বাঙালি মেয়ে কিভাবে বিয়েকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করেছেন, বাবার চাকরি চলে যাওয়ার পর সংসারে ভার ছিল যার ওপর, সেই মেয়ে স্কুলের চাকরি ছেড়ে পরিবারের মায়া ত্যাগ করে কীভাবে দেশের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছেন এটা সবাইকে জানানোর এক তীব্র তাগিদ থেকে লেখক মালেকা বেগম লিখলেন প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার বইটি। প্রীতিলতা শুধু সেই সময়ের নন, যুগে যুগে নারীদের জন্য এক বড় অনুপ্রেরণা। এই বইয়ে প্রীতিলতার শৈশব, কৈশোর, তাঁর শিক্ষাজীবন, বিপ্লবী দলে যোগদান, ১৯৩২ সালের ২৪শে সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ ও ধরা পড়ার পর পটাসিয়াম সায়ানাইড খেয়ে স্বেচ্ছামৃত্যু বেছে নেয়া এ সবই বিস্তারিতভাবে উঠে এসেছে।