আকাঙ্ক্ষা ও অন্যান্য কবিতা

অ+ অ-

 

আকাঙ্ক্ষা

তোমার সাথে বড়ো হতে চেয়েছিলাম আমি
তোমার সঙ্গে বুড়ো হতে চেয়েছিলাম।
চায়ের ধোঁয়ায় তোমার মুখটা আবছা যেই
বাতুলতায় আমার কোন সঙ্গী নেই।
চা-এর সাথে টা-এর মতো চেয়েছিলাম, আমি
তোমার সঙ্গে বুড়ো হতে চেয়েছিলাম।

ব্যস্ত ঘড়ি উড়ছে ধুলায় সময় নেই...
শুনে আমি খুব বকেছি বাতাসকেই
আবেগী মন ভুল করেছে বারংবার।
তুমি আমার আরেকটি ভুল টালমাটাল।

ক্লান্ত কাঁধে তোমার স্পর্শ শীতল হাত
উষ্ণ বুকে জমেছে আজ দীর্ঘরাত।
বদলে যাওয়া আমার বাড়ি আমার ঘর
এ সংসারের আমরা স্বপ্ন বুনেছিলাম!

তোমার সঙ্গে বুড়ো হতে চেয়েছিলাম
আমি তোমার সাথে বুড়ো হতে চেয়েছিলাম।

 

রূপকথার মতো সত্যি

প্রচণ্ড শব্দে লুটপাট হচ্ছে দেবশিশুদের প্রাণ,
অভিশাপ দিতে দিতে উড়ে যাচ্ছে তারা স্বর্গের দিকে।
সন্তানসম্ভবা মেয়েগুলোর নিথর দেহ লুটিয়ে পড়ে অছে
সভ্যতার জুতার তলে।
পেটের তলদেশ ভেদ করে মাটির গভীরে গড়িয়ে যাচ্ছে
রক্তিম গোলাপের পাঁপড়ি।

পৃথিবীর কেন্দ্রের উত্তপ্ত গলিত লাভা তারা নিভিয়ে দিবে এইবার।
এই সেই মাটি যে মাটিতে জন্ম হয়েছিলো তাদের, 
ইতস্তত পায়ে হেঁটে গিয়েছিলো তাদের মেয়েবেলা এ মাটিরই হাত ধরে।
এ দেশেই জন্মেছিল তারা, তাদের মা, তাদের মা-রা।
আজ সেই মাটিতে সৎকার হচ্ছে তাদের রক্ত, তাদের স্বপ্ন,
তাদের প্রেম, মায়া আর মানুষ হবার অধিকার।

প্রচণ্ড শব্দে লুটপাট হচ্ছে যৌবন, গ্রীবার রেশমি পশম পোড়ানো রোদ,
লুটপাট হচ্ছে শোবার ঘরের আড়াল। মায়ের কোল।
চারদিকে বারুদ আর মাংস পোড়া গন্ধ
প্রচণ্ড শব্দে খসে পরছে ইট, শুরকি, পলেস্তরা, স্বস্তি, মাথা গোজার একটুকরো ছাদ।
হাহাকার করতে করতে খসে পড়ছে তারা অট্টালিকার শরীর থেকে।

শেষ বিস্ফোরকটি শরীরকে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করার আগমুহূর্তে 
একজন শুভ্র শ্মশ্রুমন্ডিত অভিজ্ঞ মানুষ ধ্বংসস্তুপে বসে 
অপুর্ব সুরে বাজিয়ে যাচ্ছেন তাঁর পিয়ানো।
যদি শান্তি ফিরে আসে সেই আসায়। আর অবাক হয়ে ভাবছেন...    

এতো প্রচণ্ড শব্দ করে লুটপাট হয়ে যাচ্ছে সব, তবু কেউ শুনতে পাচ্ছে না কেন!

 

পথিক

শব্দে বধির
হেঁটে চলি ধীর, পায়ে।
ধোঁয়ার নাচন
করছে মাতম
ধুলময় কাঁথা, গায়ে।

 

আমি হারিয়ে যাচ্ছি...

মাঝে মাঝে বাসা ছেড়ে পালিয়ে আসি
কোথাও নিস্তব্ধতা নাই,
এমনকি একাকী দাঁড়িয়ে থাকা কোন সুউচ্চ বিল্ডিংয়ের মাথায়ও একাকীত্ব নাই
যেখান থেকে পা ঝুলিয়ে বসে দেখতে পারি
এই ভণ্ড পৃথিবীকে।

বাক স্বাধীনতা নিয়ে যখন উচ্চপর্যায়ের সবাই খুব গলার রগ ফুলাচ্ছে,
তখন নিজের দিকে তাকিয়ে দেখি 
আমার মতো একজন সাধারণ মেয়ের তারও তো নিজের কথাগুলো বলার কোন যায়গা নেই!
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে প্রতি সকালে আমিতো কত চেষ্টা করি চিৎকার করে 
তোমাদের অন্যায়ের কথাগুলো বলতে কিন্তু কোনো শব্দ বের হয় না।  
চেহারা থেকে মুছে গিয়েছে ঠোটদুটো। শুধু চোখদুটো তাকিয়ে দেখে।
টাওয়ালে মুখ মুছে বেরিযে আসি যেন সদ্য ফোটা গোলাপ, 
কোন পাপের হাত যাকে স্পর্শ করেনি, অন্যায় কি যে জানেই না।
যেমনটা তোমরা আশা করো তেমন হতে গিয়ে মস্তিষ্ক থেকে মুছে ফেলেছি প্রকৃত আমিকে 
কিন্তু মন থেকে হয় না!
স্বামী-সন্তানসহ বোকা বোকা চেহারা করে হাসি মুখ কিছু সেলফির বাইরে 
জীবনের সীমানা এখন খুব অজানা মেয়েদের।
হয়তবা সব মানুষেরই।
এই বিশ্বাসহীনতা এবং বাক্যহীনতা আমাকে ক্রমশ কল্পনাহীন করে তুলছে।
আমি তোমাদের শেখানো ভাষায় কথা বলছি শুধু তাই না 
আমার অভিব্যক্তিগুলোও তোমাদের মতো হয়ে যাচ্ছে।
একই জোয়ারে গা ভাসিয়ে একই সাজে মুখে রং মেখে 
এক অন্ধকার গুহার দিকে হেঁটে চলেছি।

আমি হারিয়ে যাচ্ছি...
আমরা হারিয়ে যাচ্ছি...