হৃদয়ের ভেতর এক শূন্যতার গহ্বর

|| ১ ||
দেয়ালে লেগে আছে হলদে রোদ ঝলমল
আকাশের তাকালেই দেখি ছাই মেঘ বিস্তর
উড়ু উড়ু ও-ছাঁদের মেলে দেয়া ভেজা কাপড়
ক্লিপের আদতে আটকে থাকে আদলে জীবন
লাল শাক মেখে নেয়া গরম ভাতে, লেবু কচলে ডাল খেতে অমৃত লাগে। সে বলে এমন তৃপ্ত খাবারের পর ভাত-ঘুমিয়ে তলিয়ে যেতে হয় যত দূর শস্যের দেশে হলুদ ফুল আর পাহাড়ি সবুজ মিশিয়ে যায়। পায়ের ওপর ভর করে আসে সূর্যের দেশ, ডুবে যাওয়ার আগে ভেঙ্গে যায় অনাবৃত শস্যের সারগাম!
জন্ম নদীর কিনারে দাঁড়িয়ে ফিরতে হলো
রোজ একই জায়গায় থেকে ফিরে আসি, কেন?
তাকিয়ে দেখি বুকের মধ্যে নেমে যাচ্ছে বিকেল
নীলাভ গগনে বিশালাকার মেঘমল্লার, সুরমা রঙা।
|| ২ ||
বৃষ্টি এলো কালো মেঘে মেঘে
তোমার কথা জলের গায়ে থাকে
জানালার গ্লাসে ধুলো ধুয়ে গেলে
ভেজা মাটির ঘ্রাণ বাষ্প হয়ে এলে
কথা ছিলো এমন দিন এলে
আমরা যাবো গোপন অভিসারে
কথা ছিলো সকল অজুহাতে
আমরা দুজন ভিজবো শহর জুড়ে
একই পোষাকে আঁকবো পরস্পর
শীৎকার আর কামিনীর নির্যাস
তোমার সাথে বাঁচিয়ে রাখা শ্বাস
রক্তজবার নোনা জলের জ্যোৎস্না
|| ৩ ||
সবুজ আর লালচে ঘ্রাণে
কোথায় সে? জ্বলছে নিভছে
জলের ভাগ ফলের অংশে
আনত তনু পুড়ছে নাশপাতি বনে
একলা ঘরে কেমন করে
কেউ কি আর খবর রাখে
তোমার মনের অন্ধকারের
তরঙ্গ জলের ঋজু দ্বীপে
অস্থিসন্ধির ব্যথার তোপে
পৃথিবীর অসীম দুঃখ আছে
সেই নিভু আঁচ রন্ধে রন্ধে
বাতাস বইছে খুব
আনমনা ফুলেদের অসুখ
তোমার ঠোঁটেও জ্বর ফুটছে
নামছে না সেই ঘোর লাগা তুরুপ!
|| ৪ ||
দুনিয়াতে অনুসরণের ভিড়ে
পুরুষ ও নারীর আশ্রয় একই
তুমি বলেছিলে—কেউ সহজ নয়
আমি বলেছিলাম—কেউ কঠিনও নয়
এই জমিনের সকল বোধ তো মানুষের
আমার চুলে হাত বুলিয়ে তুমি বললে
আত্মার কাছাকাছি অসীম দুঃখ গাঁথা থাকে
আমি কাঁদছিলাম নীরব শিশুর মতন
অনুভব করতে থাকি তুমি পুড়ছিলে
আহত পাখির ডানা ঝাপটায়
হৃদয়ের ভেতর এক শূন্যতার গহ্বর
আমাকে জড়িয়ে কাঁদতে থাকলে তুমি
চাহিদার খেয়ালে আমরা ভুলে যাই
কে পিতা কে মাতা কে স্বামী কে স্ত্রী আর কে সন্তান
এমন সংকটাপন্ন মূহূর্ত সেও তো স্বাভাবিক এই মানব জনম শুধু নিংড়ে নিতে জানে
কতটুকুই বা ফিরিয়ে দিতে পারে আত্ম-স্বাদ, শব্দের কঙ্কাল…
|| ৫ ||
মানুষ ভেঙে পড়লে শক্তিশালী হয়ে ওঠে
একথা বিশ্বাস করাতে পারি না কাউকে!
ভেঙ্গে যাওয়া মানুষই প্রথম আবিষ্কার করে অনুভূতির ফাটল। স্তম্ভিত হয়ে যাওয়ার যে ক্ষমতা তা শুধু তারাই অনুধাবন করতে পারে। শরীরের প্লাটিলেট ওঠা-নামা করে। ভেঙে পড়ার পর অজস্র মানুষের ভেতর আলাদা করে চিহ্নিত করা যায় নিজেকে। চোখের ভাষা পরিবর্তন হয়ে যায়। অপ্রিয়জন কে এড়িয়ে যাওয়ার তাড়না থাকে না। নিজস্ব শব্দগুলো নীরবতার কুণ্ডলী পাকিয়ে গিলে ফেলা যায় সহজে। রাগ-ক্রোধ ক্রমেই সহনশীল হয়ে ওঠে। একলা ঘরে কান্নাদের ভাষাও বদলে যায়। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে রক্তে ভেসে যেতে থাকে পেখম। কোন দেব-দেবী আসেনি জখমে লাগিয়ে দিতে ওষুধ। ঘুমকে তখন পরম আপন মনে হয়। চিহ্ন হারিয়ে শব্দরা তীব্র যন্ত্রণায় জলরঙ হয়ে অদৃশ্য হতে চায়। নিজেকে নতুন করে বুঝে নেয়ার ভাষা আবিষ্কার হয়ে যায়। ভেঙে পড়ার পর পথে নামলে ভীড়ের ভেতর কণ্ঠস্বর শুনলেই বুঝে ফেলা যায় বিপরীতে সেও ভেঙে আছে কি নেই। যারা সহসাই বলে তুমি ভেঙে পড়ো না; তাদের মধ্যে হয়তো কেউ জানে অথবা কেউ জানে না, ভেঙে পড়া মানুষ দুনিয়াতে সবচেয়ে বিপজ্জনক। সহসা বেঁচে থাকার ভানে ভেঙে যাওয়া মানুষ ফিনিক্স পাখি হয়ে জন্ম নেয়া, এক চমকপ্রদ একক!
|| ৬ ||
আকাশ দেখেছিস তুই নীল নীল ভীষণ রকম নীল
সেই আকাশ রঙের নীচে বসে একলা মনে
তুই কার সাথে বন্ধু পাতাস
তুই যে মনে মনে চুমু খাস
আরেকটু করে কাছে চাস
সন্ধ্যার আলোয়
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন