৩৬ আগস্ট 

অ+ অ-

 

৩৬ আগস্ট 

|| এক ||

সব দেয়াল লিখন 
ম্লান হয়ে যাবে একদিন 
এ শ্রাবণধারা
রাজপথ থেকে 
ধুয়ে মুছে দিবে 
যত রক্ত আলপনা
পিতার ঝাপসা চোখ 
পথ খুঁজে নিবে 
অচেনা দিগন্তে
বোনের আহাজারিও
বুকচাপা কষ্টে বন্দি
নতুন আয়নাঘরে
মিছিলের হাতগুলো 
ফিরে যাবে তার 
দৈনন্দিন কাজকর্মে

শুধু এই হাত থেকে 
আরবের সবটুকু আতরও 
মুছে দিতে পারবে না 
রক্তের ঘ্রাণ 


|| দুই ||
  
এই মেট্রোরেলের জন্য আমার কান্না হচ্ছে 
এই সেতু ভবনের জন্য আমার কান্না হচ্ছে
  
এই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের জন্য আমার কান্না পাচ্ছে 
এই বিটিভি-বিটিআরসির জন্য আমার কান্না পাচ্ছে  

এই ফ্লাইওভারের জন্য আমার কান্না হচ্ছে 
এই সংসদের জন্য আমার কান্না পাচ্ছে

এই গণভবনের জন্য আমার কান্না হচ্ছে
আমার কান্নাগুলোর জন্য আমার কান্না পাচ্ছে 

আমার কান্নাহীনতার কথা আজ না হয় থাক


|| তিন ||

ইন্টারনেট বন্ধ ছিল বলে কিছু দেখতে পাইনি, হেলিকপ্টার থেকে পানি ছিটানোর দৃশ্য, যে পানিতে আরও বেশি আগুন লেগে গিয়েছিল, সাঈদের এমন যিশুর মতো দাঁড়িয়ে যাওয়া, ক্রুশবিদ্ধ দেশের এইসব রক্তক্ষরণ, মুগ্ধের মুগ্ধতা, সাঁজোয়া যান থেকে নীরবে ফেলে দেয়া যুবকের আধমরা দেহ, সেই রক্তাক্ত শরীর নিয়ে হিংস্র কোন প্রাণীর মতো কাড়াকাড়ি, একাত্তরের সেই ছবিটার মতো রিকশার পা-দানিতে যে ক্ষত-বিক্ষত শরীর তখনও বেঁচে ছিল, হাসপাতালে নিতে না দেয়া বা আহতের গুলিবিদ্ধ স্থানে বেয়নেট চার্জ, বহুতল ভবনের কার্নিশে চারটি গুলি খেয়েও যে লুকাতে চেয়েছিল, ঐ অবুঝ কেন ভবনের ছাদে খেলতে গিয়েছিল, পড়ালেখা না করে কী এমন ছাইভস্ম দেখতে জানালার পাশে এসেছিল সেই পরীক্ষার্থী, এমন কী তারও আগে টুপি-জোব্বা পড়া যে শিশুটি লাল শাপলাফুল হয়ে গিয়েছিল, সে তো রাজাকার।


|| চার ||

প্রকৃত বিপ্লব হয় না 
হয়নি, হবে না 
রক্তদাগ মুছে দেবে কি
আশা আলপনা

উল্টোরথে যাবে স্বদেশ
ফের ভুলে গিয়ে শোক 
তবু এটা একমাত্র পথ
বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক


|| পাঁচ ||
 
একটি আগস্ট জুলাই হয়ে যায় কী করে 
চৌদ্দ বছর রাতের পরে আসা ভোরে

ক্যালেন্ডারের বিগত দুই হাজার বছর 
উপলক্ষ পেয়েছে কী এমনই বর

পারি দেওয়া রক্তস্নাত একেকটা দিন
মায়ের শোক ও অশ্রুকণার চেয়ে মলিন 

নয় দফাতে গুলি খেয়ে একটি দফা
কে ভেবেছে লাল শ্রাবণে দফারফা 

পারিনি যা আমরা যতো আইবুড়োরা
একপলকে করে দিলো কেমনে ওরা


|| ছয় ||

হেলিকপ্টার থেকে সবকিছু ছোট মনে হয় 
মরা ক্ষেত, বক্ররেখা নদী, পাহাড় না মেঘদল
অগ্নিদগ্ধ গ্রামগঞ্জ, এ চেনা শহর জুড়ে ভয়
মিছিলকে মনে হয় ঘরপোড়া পিঁপড়ের ঢল

হেলিকপ্টারে বসে সবকিছু ছোট মনে হয়
মানুষের ক্ষতমুখ, লাশ নিয়ে যায় যারা কাঁদে
সামান্য রক্ত কি চোখে পড়ে, পোড়া ভবনের ছাদে 
খেলতে যাওয়া শিশুটিও যেন আর শিশু নয়