ডেফোডিল ও অন্যান্য কবিতা
ইউটার্ন
আমরা মিতালি শহরে ঢুকছি কেবল।
জঙ্গল বিশিষ্ট ঘরবাড়ি ছোট ছোট,
কত নষ্ট ফসল আর মাঠের চাহনি
পিছে ফেলি
টাটকা লাল শাকের খেত
লম্বা গাছের মাথায় সূর্য ডুবার দৃশ্য
যে বাতাসে কমপক্ষে ৭টা ফুলের সুবাস মিশি আছে
তাও পার হইলাম. প্রজাপতির পাক খাওয়া ডাবগাছের পুকুর
পাতার নিচে ঢাকা পড়া পাখির রং
একা একা উড়া মেঘের আকাশ
ডানে বায়ে গভীর খাদ
পোকার আওয়াজ
রাস্তার ধারের টিভিঅলা চায়ের দোকান
পাশে পশুদের শুকনা ঘাস!
আমরা চাই না পৃথিবীতে আর সন্ধ্যা হোক
বনফুলের নাচন না দেখার আগে.
আমাদেরে ডাকে
আমাদেরে টানতে থাকে পিছনের দিকে!
আমরা প্রেমে পড়লে
এ রকম ইউটার্নে ভাবতে থাকি
কুয়াশার সকাল
রেইনি ডে আমাদেরে উদাস না করলেও!
আমার বাগান ও জানালা
বাগানের মধ্যে রঙ নিজে নিজে বাতাসে যেন ব্যাপন হয়।
হয়ত একটা স্থিরতা বাগানের ভিতর রয়।
একটা স্তব্ধ হাওয়া বিড়াল পাতার আড়ালে
ভাল করি তাকানের আগেই মোছা পড়ে,
হারানো এসব বেড়াল!
একটা দিন আসে সকালে বেড়াইতে বাগানে আর বিকালে
চলিয়া যায়!
নিঃশব্দ সমঝোতায় আসে গতকাল আজকার লগে
কে কতটা অষ্পষ্ট হবে!
জানালার কাছে দাড়ায় বাগানের সুন্দর কিছু দেখার
উদাসীনতা ছাড়া বাগানের নিত্য বস্তু ধরা দেয় না!
আমার উপচায় পড়া মন
কারে যেন ডাকে
কারা কারা নিরুত্তর বুঝা কঠিন!
প্রতিধ্বনি ফেরেশতাদের মতো দলে আসে
শূন্য বাগান পাওয়া কঠিন!
আমি ছড়ায়ে ছিটায়ে রব কভু
অলসপাখির ডাকনাম মনে আসুক!
আঘাতপ্রাপ্তদের মতো
গান গাইতে মন চায়
বরং কোনো ক্ষণস্থায়ী দৃশ্য হই না কিছুক্ষণ
ঐ দিকটায়!
দেয়ালের পর
পুরানা ইটার দেয়ালের পর বসি।
সামনে তাকাইলে দেখি
এক জটলা লোক দূরে গান গায়
কেও চা খায়, কেও মোবাইল টিপে, কেও
চউখ বুজি দেখার বিরতি
নিতেছে যেন সে বসি আছে
এইখানে সিনেমা হলের ভিতর!
পিছনে তাকাইলে দেখি
মাঝ বয়সী অশথ বট হিজল আর জাম
গা ঘেষি জলের পর দুলতেছে।
একটা কাক একবার জামে বসে একবার
হিজলে।
কে কার একাকিত্ব
মুছতেছে!
যেন আমি পলাতক খুনের আসামি
বেশিখন রই না একখানে পুরা করি না কোনো দেখন
ইটার দেয়াল ছাড়ি অন্যদিকে
কোনখানে যে চলিয়া যাই!
দূর
জলের উপর ঝুঁকি থাকা কৃষ্ণচুড়া ডালপাতা
ওইসব পাতা নাড়ায়ে কাপায়ে চিরন্তন যেনো
আসে টুনটুনি কাক আর বসন্ত বাউড়ির ডাক মাখা বাতাস
বকুল তলে বসা আমার কাছে
দূরে কোলাহল নাই পুলপারের নামে জল পার হয় লোকজন
একদল হাস আসে গুলমোহরের তলে
কাওরে দেখি না
তবু যেনো কার ডাকে
তারা গুগলি খাওয়া শেষ না হতে
কোথায় চলিয়া যায়
তবু আমি এতিম হই না!
দূর হইতে আমিও একটা দৃশ্য
ছোট নদীর এপার
ওপাররে দৃশ্য হিসাবে আকুল দেখাদেখি করে
দিনের নিকটে আলো আসে যতক্ষণ
তাই দূর এত ভালো, ভালো রয়ে যায়।
ডেফোডিল
আব্বার মৃত্যুর পর আমার সাথে এই প্রথম দেখা হইল।
একটা রেলস্টেশনে। কোনো কথা হইলো না।
শুধু আমার দিকে একবার তাকাইলেন। আমিও।
অন্য একটা ট্রেনে উঠি পড়লেন, মনে হইল
ততটা ব্যস্ততা নাই তার, তবু ট্রেন ফেল করতে চাইলেন না!
ট্রেন ফেল করলে কী ফের দুনিয়ার জীবনের
ভেতর গোত্তা খাইয়ে চলি আসতেন!
আমার সাথে কোনো অভিমান ছিল কী তার!
পিতা-পুত্র কোনো ভুল বুঝাবুঝি!
স্বপ্নের ভিতর সবাই অমর
জীবন ও স্বপ্নের ভিতর যে পাতলা অচ্ছ দেয়াল
তার এপারে একটাই তো গণার মতো দৃশ্য:
সবাই
সন্ধ্যার ডেফোডিল ফুলের বাগানে তর্কাতর্কি
করতেছে আর করতেছে!
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন