সুলক্ষণা ও অন্যান্য কবিতা

অ+ অ-

 

ঘড়ি

এ ঘড়ি তোমার নয় যে বৃষ্টির রাতে কাঁদেনি
যে বলেনি লাল রঙের ভেতর জমে আছে হৃদপিণ্ড
আর সেখানে তাঁদের কথা, সেখানে আমাদের কথা
চিল শকুনের চোখ ঘনীভূত অন্ধকারের বরফ জমিনে 
লকলকে আগুন। 
তুমি তার দিকে মুখ করে অপরের সাথে চলে যাও
তুমি তার উচ্ছেদ কমিটির প্রধান হও
তুমি তার আসনে বসাও বদলীজনিত লোক
তুমি তার জন্য খুলে দাও ড্রাগন শহরের ফটক

এ ঘড়ি তোমার নয় যে বিরামহীন নন্দনতত্ত্বের ভূমি 
খুঁড়ে খুঁড়ে আবিস্কার করে পদলোভী প্রলোভন রত
নেশার চেয়ে একা একা পথ চলা উত্তম। 
ছুঁয়ো না ঘড়ির কাঁটা সে এক সাহায্য সমীকরণ।

 

আগুনের মন চাষ

আগুন আমার চতুর্দশী আগুন মাঝে বাস
আগুন খেয়ে আগুন তুলি আগুন করি চাষ
ও চাষী সেই আগুন কি তুই চাস?

হাত বাড়িয়ে দে না তবে মন পেলবে ধুই
তোর ডাকে যে আগুন রাঁধি আগুন ফুলকি ছুঁই
ও চাষী তুই আগুন পেলে নিবি সবুজ ভুঁই?
 
দিনের হাওয়া ব্যস্ত থাকে রাতের হাওয়া মিঠে
সকালগুলো কাটতে থাকে ঘুণপোকা আর কীটে
ও চাষীরে মনের আগুন মনের উল্টো পিঠে।

চোখের পলক ফেলবি নারে মনের পলক ফেল
সবকিছুকে বাজি রেখে আগুন আগুন খেল
ও চাষীরে আগুন ভুঁইয়ে পরান পাখা মেল।

সূর্য ছোঁবো আকাশটাও হাতের মুঠোয় তুলে
আমরা আজি মন পোড়াবো ঝুলন দোলনা ঝুলে
ও মন চাষী আয় না তবে সব হারা সব ভুলে।

 

সুলক্ষণা 

সুলক্ষণা কোথায় থাকে বৃষ্টি বলো; কোথায় মেঘের বাড়ি
বৃষ্টি ধুয়ে দুঃখ নেবো; নেবোই দেখো মেঘের বাড়াবাড়ি, 
আমি যে সেই জেনে ছিলাম দাঁড়াও তুমি কালোমেঘের পর
আষাঢ় শ্রাবণ ভাদ্র মাসে জলের ছলে কাঁপাও থরোথর।

সুলক্ষণা নাওনি কেন গোলাপ বকুল চাইছো মেঘ আর বারি
বলছি শোন ছোট্ট থেকেই মেঘ চিনি না কোথায় পাবো বারি।
মেঘ কি তোমার চোখের মনি মেঘ কি খুবই কালো
পাহাড় বেয়ে নামে যেমন রোজ বিহানে কাজল পরা আলো?

সুলক্ষণা বললে নাকো; দেখলে নাকো; ভাঙছো পথের পথ
ক্লান্তি ধুয়ে নিতেই দেখো ছায়া হয়ে আছি তোমার পেছনে অশ্বত্থ।

 

ও ফাগুনী ফুলের তুফান

আয় ফাগুনী আয় ফাগুনী ক্যানভাসে রঙ ওম
পাড়ায় পাড়ায় উঠছে জ্বলে বাসন্তিকা মোম
ও ফাগুনী কান পেতে শোন ঢেউ তোলা তোর গান
আমার বাড়ির অভিমুখে রাখ না অভিযান

বসতে দেবো শিমুল তলে হাতে পলাশ ফুল
হিমঝুরি আর জংলীবাদাম গাব গামারির দুল 
কৃষ্ণচূড়া রুদ্রপলাশ মুচকুন্দ পায়ে
ও ফাগুনী চিরসবুজ চলনা আমার নায়ে  
ঢেউয়ের পাহাড় নিবি নে তুই নিবি অগ্নিগিরি 
চলনা এবার উদোম আকাশ সরব করে ফিরি

তোর আঁচলে তোর কপালে দেমাগ ভাঙে রোদ
পাতায় পাতায় পাখির সুরে নৃত্যরত বোধ  
ও ফাগুনী ফুলের তুফান ভূবন ভোলা রূপ
আঙুল ছুঁয়ে দে না জ্বেলে গন্ধ বিধুর ধূপ।


বীনু আপা 

আজ চৈত্র সংক্রান্তি...
ঝির-ঝিরে রোদ পর্দা সরিয়ে দৌড়াচ্ছে...
বীনু আপা আপনাকে খুব মনে পড়ছে। 
কেউ এখন আর জানায় না—আজ চৈত্র সংক্রান্তি!
ফোন করে বলে না—তোর আসা চাই-ই চাই!
চিড়ে, দধি, মুড়ি, আরও কতো কি আছে তোর জন্য!
আসবি কিন্তু! না এলে—কবিতা সংগীত সংগঠন 
সব লোপাট করে দেবো। 

আপনি ভ্রূ কাঁপিয়ে যখন অনুশাসন করতেন, 
কেন যে শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে যেত ঠাণ্ডা—জানি না! 
এমন আলগা ভয়ে ধ্বংস হয়েছে কত সভ্যতা,
জানেন বলেই আমি আর আঙুলে রাখিনি ঠোঁট 
অথচ, কম্পন থামাতে আওড়েছি কত কি হড়হড়। 

বীনু আপা, আপনি ছিলেন মায়ের বয়সী সুশীলা। 
মায়ের মতো আদল ছিল আপনার।
আমি সম্বোধন করতাম আপা, কেউ কেউ ডাকতো দি।
আপনার কিছুতেই নিষেধ নেই, নিষেধ ছিল জিহ্বায়; 
সেখানে নাকি আগুন উৎপেতে থাকে, 
আর সে আগুনে পুড়ে পুড়ে মানুষ নিঃসঙ্গ হয়ে যায়;
অদ্ভুত এমন আগুন ডিঙিয়ে আপনি অদৃশ্য হলেন। 

অরাত্রি ফুপুর বুকভরা অহংকার ছিল ভালোবাসার। 
একটা অদৃশ্য-সূতোর টানে তিনি ঘর ছেড়েছেন;
আর ফেরেননি। পরে একদিন ট্রেন নাইনে পড়ে ছিলেন।
অরাত্রি ফুপুর সেই করুন মৃত্যু আমাকে 
ভালোবাসতে দেয়নি কতগুলো বছর, 
মনে হয়েছে সম্মান হারানোর চেয়ে একাকী থাকাই শ্রেয়। 
বীনু আপা, সম্মান কুড়িয়ে যারা বেঁচে থাকতে চায় 
তাদের পবিত্রতা আপনি ছাড়া কেউ বুঝে না কেন? 
আপনাকে খুব মিস করি। আপনি ফিরবেন না জেনেও 
পদধ্বনি শুনতে ইন্দ্রিয় উদ্গ্রীব হয়ে আছে।