গ্রেটা বারডেটের ‘বুড়ি মেরির জমানো টাকা’
গ্রেটা বারডেট
গ্রেটা বারডেট যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় ক্রেক ডিটেকটিভ সিরিজের লেখক। রবার্ট ডব্লিউ লাউন্ডসের সম্পাদনায় ক্রেক ডিটেকটিভ পত্রিকার চতুর্থ খণ্ড দ্বিতীয় সংখ্যায় ‘দেন লিভ টু ইউজ ইট’ শিরোনামে ১৯৪৩ সালের মার্চে এই গল্পটি প্রকাশিত হয়েছিল। অর্কিডস ফর ম্যাডামসহ বেশ কিছু জনপ্রিয় গোয়েন্দা বইয়ের লেখক তিনি। প্রতিধ্বনির পাঠকের সুবিধার্থে অনুবাদক মাসুদ আনোয়ার গল্পটির নাম দিয়েছেন বুড়ি মেরির জমানো টাকা।
বুড়ি মেরির জমানো টাকা
ছোট্ট নোংরা রুম। কিন্তু ঢুকতেই মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল অ্যানির। অনুসন্ধিৎসু চোখে রুমের চারদিকটা তাকাল। ময়লা আবর্জনা, পুরনো ভাঙাচোরা জিনিসপত্র আর ছেঁড়া কাপড়চোপড়ের স্তূপ। কোনো কিছু লুকিয়ে রাখার আদর্শ জায়গা। অ্যানির বিশ্বাস, এসবের মধ্যে কোথাও ডার্র্টি মেরি তার টাকা-পয়সা লুকিয়ে রেখেছে। প্রায় সময়ই ঘরটা দেখলে তার বুকের ভেতর ধক করে উঠত। আর এখন তার হৃৎপিণ্ড রীতিমতো লাফালাফি শুরু করেছে। যেন বুকের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসবে উত্তেজনায়। বিতৃষ্ণ মুখে একগাদা ন্যাকড়ার ভেতর নিজের থলথলে হাতের মোটা আঙুল ঢুকিয়ে দিল ও। হাতড়ে দেখছে টাকাটা পাওয়া যায় কিনা।
একটা কথা সত্যি, মেরি বেশ পরিচিত মহিলা। অ্যানি এটা পছন্দ করে না, তবু স্বীকার করতে বাধ্য হয় মনে মনে। এতে অবশ্য মেরির ওপর ওর ঘৃণা আরো বেড়ে যায়। হাতড়ে দেখতে গিয়ে একরাশ মাকড়শার জাল জড়িয়ে যায় ওর হাতে। টাকাটা পাওয়ার উদগ্র বাসনা ওর মনকে এমনভাবে জড়িয়ে রেখেছে যে, ব্যাপারটা খেয়ালই করেনি। ওর উদ্দেশ্য, মেরি ফিরে আসার আগে টাকাটা হাতিয়ে নেয়া। তাই তাড়াহুড়ো করতে হচ্ছে ওকে।
মেরি মসনকে অনেকদিন ধরে চেনে সে। শুধু চেনাই নয়, এতদিন ধরে একটু একটু করে ওর সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তুলেছে। বিরক্তিকর এই মহিলার সাথে রাতের রাত একত্রে বসে পান করেছে। উদ্দেশ্য ছিল, বুড়িকে ঠেসে মদ গিলিয়ে মাতাল করে ওর মনের কথাগুলো টেনে বের করে নেয়া। ভেবেছিল, বকার ঘোরে বুড়ি হয়তো একদিন বলেই ফেলবে, নিজের জমানো টাকাটা কোথায় লুকিয়ে রেখেছে। কিন্তু কোনোদিনই বুড়িকে বেসামাল হতে দেখেনি। কারণ ওর আগে সে নিজেই বেসামাল হয়ে পড়েছে।
তবে হাল ছাড়েনি ও। ওর একমাত্র ধ্যান-জ্ঞান হলো, কীভাবে মেরির টাকাগুলো হাতানো যায়। কিন্তু এখনো তার সুলুক-সন্ধান বের করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। কী পরিমাণ টাকা থাকতে পারে, আন্দাজ করার চেষ্টা করেছে সে। নিশ্চিত হতে পারেনি। তবে সেটা যে নেহাত কম নয়, এ ব্যাপারে তার কোনো সন্দেহ নেই। মেরি কখনো পারত পক্ষে একটি সেন্টও খরচ করে না। প্রতিদিন কাকডাকা ভোরে উঠে ঘর ছাড়ে নিত্যকার কাজে। কাঁধ থেকে ঝোলানো ক্যানভাসের থলেটা নিয়ে সারা দিন শহরের আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়ায় টোঁ টোঁ করে। পুরনো কাগজপত্র, খালি ক্যান আর ওয়েস্ট পেপার বক্স কুড়িয়ে বেড়ায়। সারাক্ষণ বিড় বিড় করে কথা বলে নিজের সাথে, কখনো গুন গুন করে গানটানও গায়। ব্যাপারটা নির্ভর করে ওর মেজাজ-মর্জির ওপর। মেজাজ খারাপ থাকলে বিড় বিড় করতেই বেশি দেখা যায়।
সারাক্ষণই কিছু একটা পরে থাকে সে। নতুন একটা পেলে সেটা তার ওপর চড়ায়। এক সাথে তিনটা টুপি পরে সে। একটার ওপর আরেকটা। চেহারা-ছুরতে হতদরিদ্র এক মহিলা মেরি। দেখলে মানুষের সহানভূতি জাগে। ওর বাড়িয়ে দেয়া শীর্ণ নোংরা হাতে টাকা-পয়সা খুব একটা মন্দ পড়ে না।
কাকতাড়ুয়ার মতো নোংরা বুড়ি বছরের পর বছর ধরে এভাবে মানুষের কাছ থেকে টাকা-পয়সা পেয়ে আসছে। বিশেষ করে বৃষ্টি কিংবা শীতের দিনে এর পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ-তিনগুণও হয়ে যায়। এর ওপর কুড়িয়ে পাওয়া জিনিসপত্র বিক্রি করে পাওয়া টাকা-পয়সা তো আছেই। শহরে প্রায় সবাই চেনে এই টোকাই মহিলাকে। সবখানেই ওর অবাধ যাতায়াত। ফলে মাঝে মধ্যে অসাবধান মানুষদের কাছ থেকে দামি কিছু হাতিয়ে নিয়ে আসাও ওর পক্ষে অসম্ভব নয়।
মেরি তাকে কখনো বলেনি, তবে মদ খেয়ে মাতাল অবস্থায় কখনো হয়তো এক-আধটু মুখ খুলেছে। অবশ্য নির্দিষ্ট করে বলেনি কিছু কখনো। তাতে অবশ্য কিছু আসে যায় না। অ্যানি বেকুব নয়, কত টাকা জমতে পারে, সে ব্যাপারে মোটামুটি একটা আন্দাজ করতে পারে সে। বেশ কিছু টাকা যে মেরির কাছে আছে, সেটা টাকা-পয়সা নিয়ে কথা বলার সময় ওর চোখের ঝিলিক দেখইে জানা হয়ে গেছে।
সিঁড়ির নিচে একটা ছোট অন্ধকার কবরের মতো ঘরে ঘুমোয় মেরি। সারা ঘর নানারকম আবর্জনা, ভাঙা জিনিসপত্র আর ছেঁড়া টুকরো কাপড় চোপড়ে ঠাসা। ঘিঞ্জি বটে, তবে টাকা পয়সা লুকিয়ে রাখার আদর্শ জায়গা। এছাড়া আর রাখার জায়গাই বা কোথায় বুড়ির? আঁতিপাাঁতি করে খুঁজছে অ্যানি। এখানে ওখানে মোটা সোটা আঙুলগুলো ঢুকিয়ে গুঁতিয়ে দেখছে। আবর্জনায় পরিণত হওয়া ভাঙা চোরা কিছু টেবিলের ড্রয়ার খুলে দেখতে হচ্ছে। অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকায় প্রচুর ধুলো জমে আছে। জামা-কাপড় নোংরা হয়ে যাচ্ছে, বুঝতে পারছে অ্যানি। তবে ওদিকে পাত্তা দিচ্ছে না খুব একটা। উত্তেজনায় কাঁপছে সে। এই পাওয়া গেল বলে বুড়ির টাকার খোঁজ। তারপর ওকে আর পায় কে? সব নিয়ে চম্পট দেবে। কী করবে ওর কাকতাড়ুয়া বুড়ি?
ড্রয়ারের পর ড্রয়ার, খড়ের স্তূপ আর নোংরা কাপড়চোপড়ের নিচে হাত ঢুকিয়ে দিচ্ছে সে। প্রতি মুহূর্তে আশা করছে, এই বুঝি পাওয়া গেল...পাওয়া গেল! কিন্তু কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না এখনো। ওর ভেতরে উদ্বেগ বাড়ছে। দিন শেষ হয়ে আসছে প্রায়। মেরির ফেরার সময় হয়ে এসেছে। সব কিছুই আবার ওলট পালট করে দেখতে শুরু করল সে পাগলের মতো। কিন্তু একটা মুদ্রা বা নোট কিংবা মূল্যবান কোনো কাগজপত্র কিছুই পাওয়া গেল না।
হতাশায় ভেঙে পড়ার দশা হলো অ্যানির। অসংখ্য ভাঁজে বিকৃত হতাশ বয়সী মুখ নিয়ে উঠে দাঁড়াল। কোমরে হাত দিয়ে ভাবতে লাগল শেষ পর্যন্ত অনিবার্য আশঙ্কাটার কথা। যদি টাকাটা এখানে না থাকে, তাহলে মেরি সেটা অন্য কোথাও রেখেছে। কিন্তু সেটা কোথায় হতে পারে?
ব্যাপারটা অবশ্য আগেই আন্দাজ করতে পেরেছিল সে। টাকাটা হয়তো এখানে না-রেখে অন্য কোথাও নিরাপদে রেখেছে মেরি। কিন্তু সেটা কোথায় হতে পারে, বুঝতে পারছে না। তবু সে এখানে ঢুকেছে, টাকাটা যে আসলে এখানে নেই, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্যে। এ জন্যে খোঁজার কাজটায়ও একটু বেশি তাড়াহড়া হয়ে গেছে। ফলে অনেক কিছুই ভালোভাবে দেখা হয়নি। ওর অনেকগুলো ছেঁড়াখোঁড়া পুরনো পোশাক পড়ে আছে, ওগুলো কি ভালোভাবে দেখা হয়েছে?
কিন্তু এখন সে আরেক সমস্যায় পড়েছে। টাকাটা এখানে না-থাকার যেমন সম্ভাবনা আছে বলে ভাবছে সে, তেমনি থাকার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। যদি টাকাটা এখানে থাকে, তাহলে আজ সন্ধেয় ফিরে এসে যখন ঘরের লণ্ডভণ্ড অবস্থা দেখবে মেরি, সাথে সাথে হুঁশিয়ার হয়ে টাকাটা সরিয়ে ফেলবে এখান থেকে। আর কোনো দিন তা পাওয়ার আশা থাকবে না। আচ্ছা, এমন কী হতে পারে না যে, বুড়ি টাকাটা তার পুরনো কাপড়চোপড়ের কোনো একটার সাথে সেলাই করে রেখে দিয়েছে?
টাকাটা অ্যানির দরকার। যেভাবেই হোক, ওটা তাকে পেতেই হবে। সে জন্য যা যা করা উচিত, সবই সে করবে। সে একজনকে ভালোবাসে।
কিন্তু তাকে আকর্ষণ করার মতো বয়স এখন তার নেই। ওর সারা মুখে অসংখ্য ভাঁজ। কোমরে মেদ জমে গেছে। থলথলে বুক আর পেট। কিন্তু জো থম্পসনকে তার চাই। লোকটা সারাক্ষণ মিকের বারে পড়ে তাকে। দেদার মদ গেলে। কিন্তু ওকে আকর্ষণ করার কোনো ক্ষমতাই এখন তার নেই। তবে প্রচুর টাকা দিয়েই হয়তো লোকটাকে কাছে পেতে পারে সে। তাই তার প্রচুর টাকা চাই। প্রচুর টাকার গন্ধ পেলে লোকটা চাই কি তাকে বিয়েও করতে পারে। যেভাবে হোক, জোকে তার চাই। সে জন্যে দরকার টাকা আর বিয়ের সময় পরার জন্যে দামি কাপড়চোপড়।
মেরির টাকাটা হাতাতে পারলে ব্যবস্থাটা হয়ে যেত। কিন্তু বুড়ি মাগী টাকাটা এখানে না-রাখায় ব্যাপারটা কিছুটা জটিল হয় দাঁড়িয়েছে। টাকাটা হয়তো সে নিজের সাথেই রেখেছে। তেমন হয়ে থাকলে ব্যাপারটা একটু জটিল হয়ে গেল আর কী? দীর্ঘশ্বাস ফেলল সে। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। টাকাটা পাওয়ার জন্যে মেয়েলোকটাকে খুনই করতে হবে।...কিন্তু কীভাবে?
আচমকা বুকের ভেতর ধক করে উঠল ওর। মেরির গানের সুর এসে কানে ঢুকল তার। সিঁড়ির গোড়ায় তার পায়ের পরিচিত শব্দটাও শোনা গেল। ওর গানের সুর আর ধুপধাপ পায়ের শব্দ শুনে বোঝা গেল, আজ দিনটা অ্যানির জন্যে ভালই।
টেবিলের ওপর রাখা হাতুড়িটার দিকে তাকাল সে। কাজে লাগতে পারে মনে করে জিনিসটা সেই এনেছিল সাথে করে। এতক্ষণ পর মনে হলো, ওটা নিয়ে এসে একটা কাজের মতো কাজ করেছে সে। টেবিলের কাছে গিয়ে হাতুড়িটা তুলে নিল। তারপর দরজার কাছে গিয়ে ঘাপটি মেরে দাঁড়াল। অপেক্ষা করতে লাগল।
গানের সুর আর পায়ের শব্দ আরো কাছে শোনা যাচ্ছে। মেরি মনে হচ্ছে একটা আধ্যাত্মিক গানের সুর ভাঁজছে। ওর বয়সী গলায় সুরটাকে স্রেফ ঘড় ঘড় শব্দ বলেই মনে হচ্ছে। আস্তে করে দরজা খুলে গেল। মাথা নিচু করে রূমে ঢুকতে গেল মেরি। ওর চোখ অবশ্য সামনে, নিচের দিকে। দরজা খুলে যাওয়াতে অ্যানি ওর দৃষ্টির আড়ালে চলে গেছে। কাঁধের ওপর থেকে ব্যাগটা নামিয়ে মেঝের ওপর রাখল সে। তারপর মাথা তুলে সোজা হতে গেল। পেছনে দরজাটা বন্ধ হয়ে যেতে দেখে ঝট করে ঘুরে দেখতে চাইল।
এক মুহূর্ত ইতস্তত করল অ্যানি। তারপরই হাতুড়িটা নামিয়ে আনল মেরির মাথার ওপর। মেরি বোধ হয় শেষ মুহূর্তে টের পেয়েছিল, একটা আতঙ্কিত গোঙানি বেরিয়ে এল ওর গলা থেকে। দু’হাত একত্রে তুলল মাথার ওপর প্রতিরোধের ভঙ্গিতে। কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে।
হাতুড়ির বাড়ি খেয়ে মেঝেয় লুটিয়ে পড়ল মেরি। ধরফর করছে। থামল না অ্যানি। এবার নিচু হয়ে আবার হাতুড়ির বাড়ি লাগাল। বার কয়েক প্রবল ভাবে কেঁপে উঠে স্থির হয়ে গেল মেরির শরীর।
হাঁফাতে হাঁফাতে সোজা হয়ে দাঁড়াল অ্যানি। হাঁ করে নিঃশ্বাস টানছে। বাম হাতের বাহুতে কপালের ওপর জমে ওঠা ঘাম মুছল সে। নিচের দিকে তাকাল। মরে পড়ে আছে মেরি। হাত থেকে ঠক করে হাতুড়িটা ফেলে দিল সে মেঝের ওপর। উবু হয়ে বসল ও। হাঁটুর ওপর ভর দিয়ে মেরির নোংরা পোশাকের মধ্যে হাত চালাল। ঠাণ্ডা মাথায় কাজ করছে অ্যানি। কোনো বিকার নেই ওর মধ্যে। মেরির সবার ওপরে পরা পোশাকটির ভেতর হাতড়ে দেখল সে। মিনিটখানেক সময় ব্যয় করল। এরপর তার নিচে পোশাকটির দিকে মন দিল। প্রতিটি জায়গায় হাত গলিয়ে দেখছে। ফোলা কোনো জায়গার সন্ধান করছে, যেখানে মেরি তার টাকাটা লুকিয়ে রাখতে পারে। কোথাও কিছু পাওয়া যাচ্ছে না। মেরির গায়ের সবগুলো পোশাক আঁতি পাঁতি করে খুঁজল ও। আস্তে আস্তে মনের ভেতর ঠাণ্ডা একটা ভীতির আভাস পাচ্ছে। সেটা নোংরা মেয়েলোকটাকে খুন করেছে বলে নয়, টাকাটা হয়তো পাওয়া যাবে না—এই ভেবে।
আর মাত্র একটা পোশাক বাকি। ওটা সবচেয়ে নিচের জামাটা। লেপ্টে আছে মেয়েলোকটার হাড্ডিসার গায়ের সাথে। ওটাতে হাত দিতে ভয় পাচ্ছে। যদি টাকাটা পাওয়া না যায়? তাহলে একটা মানুষকে খুন করে ফেলার মতো ওর এই অপরাধের কোনো মানে থাকবে না।
আচমকা যেন খেপে গেল ও। উন্মাদের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ল মৃত মেয়েমানুষটার গায়ের ওপর। ওর গায়ের সবার নিচে পরা পোশাকটা প্রায় প্রতিটি অংশ টেনে ছিঁড়ে ফেলার মতো করে দেখতে লাগল। কিছুই পাওয়া গেল না। আচমকা খেপাটের মতো চিৎকার করে লাফিয়ে উঠল অ্যানি। আবার বসে পড়ল মৃতদেহের পাশে। ফের খুঁজতে শুরু করল পাগলের মতো। এখন আর কোনো কৌশলের ধার ধারছে না। টেনে ছিঁড়ে ফেলতে চাইছে পোশাক। যেন ওভাবে ছিঁড়ে খুড়ে ফেললে বেরিয়ে পড়বে মেরির লুকনো টাকাটা। শেষ পর্যন্ত হ্যাঁচকা টানে পুরনো পোশাকটা ছিড়ে ফেলল সে। টেনে বের করে এনে মেঝেয় বিছিয়ে এর প্রতিটি ইঞ্চি খুঁজতে শুরু করল।
...কিছুই পাওয়া গেল না। মানে টাকাটা নেই ওর সাথে!
হতাশায় প্রায় ফুঁপিয়ে উঠল অ্যানি। এতক্ষণের প্রত্যাশা ও পরিশ্রমের বিফল সমাপ্তি আর শেষ পর্যন্ত মেয়েলোকটাকে খুন করে ফেলার মতো কাজটা বিরাট এক গ্লানির মতো বুকের মধ্যে জমা হতে শুরু করল আচমকা। তারপরের ঘটনাগুলো ঘটতে লাগল খুব দ্রুত। ওর পেছনের দরজাটা আচমকা খুলে গেল। পর মুহূর্তেই অস্ত্র হাতে ঢুকে পড়ল পুলিশ, অ্যানির দিকে তাক করল।
আতঙ্কে গলা চিড়ে চিৎকার বেরিয়ে এল অ্যানির। সহজাত প্রবৃত্তিতেই প্রথমে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করল ও। পর মুহূর্তে বুঝতে পারল, কোনো লাভ নেই। পুলিশের কঠিন হাত ধরে ফেলল ওকে।
হাতুড়ির ঘা খাওয়ার আগে অ্যানিকে দেখে ফেলেছিল মেরি। অ্যানির উদ্দেশ্য আঁচ করতে পেরে আতঙ্কে চিৎকার করে উঠেছিল ও। ও চিৎকার
শুনেছিল সিঁড়ির গোড়ায় খেলা করা এক শিশু। শিশুটি ওর মাকে গিয়ে ব্যাপারটা জানাতেই মহিলা এসে দরজা ফাঁক করে ঘটনা দেখে নিচে গিয়ে রাস্তার পুলিশকে জানায়।
পরদিন অ্যানির সেলে গিয়ে হাজির হয় ওর পক্ষে নিযুক্ত সরকারি উকিল। অ্যানির সাথে কথা বলে সে। মেরির ঘরের ভেতর কিংবা তার শরীরে পরা কাপড়চোপড়ের মধ্যে কোনো টাকা পয়সা না-পাওয়ার কারণ জানায় সে অ্যানিকে।
মেরির যেমন টাকা জমানোর দিকে নজর ছিল, তেমনি টাকাটা কীভাবে নিরাপদে রাখা যায়, সেদিকেও খেয়াল ছিল। সে ওর জমানো একটি টাকাও নিজের কাছে না রেখে সব ব্যাংকে জমা রেখেছিল। ওর নামে প্রায় ৫ হাজার ডলার জমা আছে ব্যাংকে।
‘তাতে কী?’ রাগ আর আতঙ্কে গুঙিয়ে উঠল অ্যানি। ‘তা জেনে তো এখন আর কোনো লাভ হচ্ছে না আমার।’
‘তা অবশ্য ঠিক বলেছ,’ হাসল ওর আইনজীবী। ‘এতে তোমার কোনো লাভ হচ্ছে না আর। তুমি জান কিনা জানি না। মেরির লাং ক্যান্সার ধরা পড়েছিল। সে আর বেশিদিন বাঁচত না। বেশি হলে সপ্তাহ কয়েক মাত্র বাঁচত।’
‘কী বলছ তুমি।’ অবাক হলো অ্যানি। ‘আমি তো জানতাম না।’
‘তুমি ওর সাথে কথা বলতে, গল্প করতে, এক সঙ্গে বসে পান করতে, অথচ তা জানতে না—এবং এও জানতে না যে, ও তোমাকে পছন্দ করত, বন্ধু ভাবত।’
‘তাতে কী?’
‘না, কিছু না,’ বিষণ্ন স্বরে মাথা নাড়ল সরকারি উকিল। ‘তবে ওর ইচ্ছে ছিল, মরার আগে নিজের জমানো সব টাকা তোমার নামে উইল করে দেবে। ব্যাংককে সে ব্যবস্থা করার জন্য গতকালই, তোমার হাতে খুন হওয়ার আগে, তাগিদ দিয়ে এসেছিল সে।’
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন