মার্কিন কিংবদন্তি কবি নিকি জিওভান্নির কবিতা
|| নিকি জিওভান্নি ||
আফ্রো-আমেরিকান কবি, প্রাবন্ধিক ও অধ্যাপক নিকি জিওভান্নি [১৯৪৩-২০২৪]। ১৯৬০ ও ৭০-এর দশকের কালো মানুষের অধিকার আন্দোলন তার কাব্যকে দিয়েছিল মানবিক কণ্ঠস্বর। তিনি ‘ব্ল্যাক আইকন পোয়েট’ নামে পরিচিত। বর্ণবাদবিরোধী রাজনীতি ও কবিতাকে এক করে দেখেছেন। বিশেষত কবিতায় তিনি কালো মানুষের মুক্তির আকাঙ্ক্ষা এবং তাদের সংস্কৃতিকে লালন করেছেন আজীবন। ‘ব্ল্যাক ফিলিং, ব্ল্যাক টক’, ‘ব্ল্যাক জাজমেন্ট’ এবং ‘দোজ হু রাইড দ্য নাইট উইন্ডস’-এর মতো কাব্যগ্রন্থগুলোতে ১৯৬০-এর দশকে ব্ল্যাক আর্ট মুভমেন্টে অংশ গ্রহণের প্রভাব দেখা যায়। তার কবিতায় বর্ণবাদ বিরোধিতার পাশাপাশি সামাজিক সংস্কৃতি এবং আফ্রো-আমেরিকান মূল্যবোধের বিষয়গুলো উঠে এসেছে। তার প্রেমের কবিতা বিশেষভাবে বিখ্যাত, যেখানে তিনি ভালোবাসার জটিলতা, মানবিক সংযোগ এবং আন্তঃসম্পর্কের বিষয়গুলো প্রকাশ করেছেন। গভীর আবেগ ও মানবতার প্রতি দায়বদ্ধতার জন্য কবিতাকে তিনি লড়াইয়ের ভাষা আকারে হাজির করেছেন। রাটগার্স, ওহাইও স্টেট এবং কুইন্স কলেজ, সিটি ইউনিভার্সিটি অফ নিউ ইয়র্কসহ অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন নিকি জিওভান্নি। তিনি ১৯৮৭ থেকে ২০২২ পর্যন্ত ভার্জিনিয়া টেক-এ ফ্যাকাল্টি হিসেবে কর্মরত ছিলেন, যেখানে তিনি ইউনিভার্সিটি ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রতিধ্বনির জন্য তার কবিতাগুলো অনুবাদ করেছেন আহসানুল করিম।
ছবি © nikki-giovanni.com
|| একটা দারুণ ডিমভাজি লিখেছি ||
একটা দারুণ ডিমভাজি লিখেছি… আর খেয়েছি
গরম গরম একটা কবিতা…
তোমাকে ভালোবাসার পর
গাড়ির বোতাম লাগিয়ে… কোটটাকে হাঁকিয়ে
বাড়ি ফিরেছি… বৃষ্টিতে…
তোমাকে ভালোবাসার পর
লালবাতিতে চালাইছি… এবং সবুজে
থেমেছি… মাঝামাঝি কোথাও ভেসে থেকেছি…
বিক্ষিপ্ত আমি এখানে সেখানে…
তোমাকে ভালবাসার পর
বিছানাটা আঁচড়ে… মাথার চুলগুলো
নিবিয়ে… হয়ত মাথাটা গেছে আমার…
সে যাগগে কি আসে যায়
দাঁতগুলো বিছিয়ে দিয়ে… পোশাকটা
কুলকুচি করে… দাঁড়িয়ে
নিজেকে শুইয়ে দিলাম… ঘুমোব বলে…
তোমাকে ভালবাসার পর
মূল: I Wrote a Good Omelet
|| তুমি চলে গ্যাছো ||
তুমি চলে গ্যাছো
যেন একটা মাছির মতন
দেয়ালে বসা
সাথে ওৎ পেতে থাকা মাকড়শা
তুমি চলে গ্যাছো
যেমন হাপিশ গত সপ্তার বেতন
এ সপ্তার খরচ মেটাতে গিয়ে
তুমি চলে গ্যাছো
পঁচিশ আর তিরিশের মাঝের
ওই বছরগুলোর মতন
তোমার কোন অস্তিত্বই ছিল না যেন
আর এই পাকাচুলগুলো
না থাকলে
আমি তো জানতামই না যে
তুমি এসেছিলে
মূল: You Were Gone
|| অনুমোদনের সীমা ||
একটা মাকড়সা মেরেছি
বিষাক্ত খুনি বাদামী জাতের নয়
এমনকি ব্ল্যাক উইডোও নয়
সত্যি বলতে কি
ওটা ছিল ছোট
কাগজের মতো গায়ের রঙ
দৌড়ে পালানো উচিত ছিল ওর
যখন বইটা হাতে তুলে নিয়েছিলাম
অথচ পালায়নি সে
আর ভয় পাইয়ে দিয়েছিল বেশ
তাই পিষে মারলাম তাকে
আমার মনে হয় না
আমার সে অধিকার আছে
কাউকে খুন করার
স্রেফ
ভয় পেয়েছি বলে
মূল: Allowables
|| বেছে নেওয়া ||
যদি আমি সুযোগ না পাই
যা আমি করতে চাই
তবে আমার কাজ হলো
যা করতে চাই না
তা না করা
একই হয়তো হলো না
কিন্তু এটুকুই বড়জোর আমি
পারি
যদি আমি না পাই
যা আমি চাই... তবে
আমার কাজ হলো সেটুকুই চাওয়া
যেটুকু আছে আমার
আর খুশি থাকা
এই ভেবে যে অন্তত
চাওয়ার জন্য রইলো আরো কিছু
যখন পারি না যেতে
যেখানে আমার যাওয়া
প্রয়োজন... তখনও যেতে হয়ই...
সেই দিকে যেদিকে পথের চিহ্ন নিয়ে যায়
যদিও বুঝতে হয়
সমান্তরাল এই যাওয়া
ঠিক পাশ কাটিয়ে যাওয়া নয়
যখন আমি পারি না বোঝাতে
যা অনুভব করি ভিতরে ভিতরে
তখন আমি চর্চা করি
এমন কিছু অনুভবের যা আমি বোঝাতে পারি
এবং এগুলো যে একই হলো না
তা আমি জানি
আসলে এর জন্যেই তো মানুষ
আর সব প্রাণীর মাঝে একা
কাঁদতে শেখে
মূল: Choices
|| ভারসাম্য ||
জীবনে
আমরা সবসময়ই
ভারসাম্য রেখে চলি
যেমন আমরা মাকে সামলাই
বাবার বিপরীতে
কিংবা এক শিক্ষকের
বিপরীতে অন্য শিক্ষককে
(শুধু পরীক্ষার ফলাফল সামলে নিতে)
তিন চিমটি নুন
এক আউন্স সত্যের সাথে মিশিয়ে
আমাদের সহজ কালো আত্মা
কিংবা রাস্তায় ওই ছন্দময় শ্বেতাঙ্গরা
ইদানিং আমার কেবলই মনে হচ্ছে
তুমি হয়ত আমাকে কিছু বলতে চাইছ
একসময় আমরা সারারাত কথা বলতাম
আর একসঙ্গে একাকী কত কী করতাম
অবশেষে আমি শুরু করেছি
(কোন এক অনুভূতির প্রতিক্রিয়ায়)
একাকীত্বের সুখ
এবং
তোমাকে ভালোবাসার যন্ত্রণার মাঝে
ভারসাম্য রাখার চেষ্টা
মূল: Balances
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন