পুনর্জাগরণ ও অন্যান্য কবিতা

অ+ অ-

 

রাত্রির প্রাগকথন

অযুত সূর্যাস্তের পর দেখা হবে আমাদের—আরেকটা শীতের রাত জমতে থাকা রক্তশূন্য গোধূলির খোপে খোপে।

পাহাড়ের ছায়ায় কথা বলছে ডাকু ও হার্মাদ।

যখন জীবন গড়িয়ে যায় রক্তের কাছে, কিছুই তখন আর থামাতে পারে না। কুকুরেরা পাহারা দেয় মৃতদেহগুলি, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সৌরভের ভেতর।

অন্ধকার তার নখর দিয়ে সন্ধ্যাকে খামচে ধরেছে। আর অনাবৃষ্টির প্রান্তরে ধূসর খরগোশ, আর হাওয়া—চলাচলের পুনরুক্তিতে সেলাই করে চলেছে রাত্রির ছাইরঙা কালো-কৌপিন। 

 

এই এক পথ

এই এক পথ, ফুলের গর্ভাশয়ে সমাপ্তি যার প্রাচীন অ্যাসিরিয়ায়। এরই নিচে বয়ে গেছে খঞ্জরের-রক্ত-ধোয়া নদী।

তবু, কে তুমি আমাদের অভিজ্ঞান-রচয়িতা? অস্তাচলে শোভমান বিষণ্ণ দূর্গের ছায়ায় পাথর বিয়ালো পাথর সারাটা মৌসুম।

অনন্ত দাবানল সেই থেকে শুরু,
আগুন কাঁপছে আগুনের অন্তর্নিহিত বেগুনি শীতলতায়।

পাহাড়চূড়ার মন্দিরে বলি দেয়া মানুষের কাটামাথা ঢাল বেয়ে অবিরাম গড়িয়ে পড়ছে আর গড়িয়ে পড়ছে আর গড়িয়ে পড়ছে। আর গোধূলি ভরে উঠছে গভীর রক্তরাগে তাদের হো-হো হাসির হল্লায়। 

স্বপ্নহীন রাত, নক্ষত্রহীন আকাশ সেই থেকে শুরু। 
জলদানবেরা শিকার করছে মাছ ও কচ্ছপ তমসা পরিবৃত খাঁড়িতে খাঁড়িতে৷ 

তবু হাওয়া, মেঘ ও মাটির মধ্যস্থতাকারী, যুদ্ধের মাঠে আমাদের বিবাহ হয়েছে; হত্যা ও খঞ্জরের মাঝপথে বয়ে যাও তুমি, আমার সকল ফুলে রক্ত লেপে দিয়ে...

 

পুনর্জাগরণ

দ্রুতলিখনের ভাষায় রচিত ভাড়াটে খুনিদের এই জানালাবিহীন ঘর। আর রহস্যময় একটি চিঠির কেবল হাতবদল, হেমন্তের মদের দোকানে। 

বধ্যভূমির পথে সারি সারি পাথর, বিকচ মুণ্ডু যেনবা। 

বিষণ্ণ শহর, 
তোমাকে কী নাম দেবো আমি?

কারফিউর অন্ধকারে আমাদের উন্মত্ত মিলনের রাত৷ গুপ্ত সংকেতে আমাদের প্যারানয়েড রোদের দুপুর।

তারপর যুদ্ধবিমান। বাতাসের নিরুচ্চার অভিশাপে পরাগশূন্য হেমন্তের অন্তিম মাধুরী। রণাঙ্গনে গুলিবিদ্ধ ঘোড়ার শেষ চিৎকার। 

তবু, মাইনের ওপর দাঁড়িয়ে আমরা গোলাপের সৌন্দর্য যাচনা করেছি৷ 

বিষণ্ণ শহর, 
পুনর্জাগরণের মতো সুন্দর হও তুমি। 

 

অভ্যুত্থানপর্ব

অনেক জন্ম আগে দেখা হয়েছিল আমাদের, অলীক অন্ধকারে তোমার স্তন স্ফীত হয়ে ওঠা রাত্রি-সরোবরে। 

জীবনের বিকল্প তুমি। গুপ্ত ছাপাখানা। 

মৃত্যু ও ক্ষুধাকে পরাভূতকারী, আস্তাবলের গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে সমস্ত সরাইখানায় 
এরই মাঝে আমাদের মিলিত হতে হবে, দিকচক্রবাল হাতড়ে ফেরা বিষণ্ণ শিশুদের ফিরিয়ে আনতে
শীতের আসন্ন যুদ্ধের ব্যাপারে ভীত সেসব শিশুরা

এরই মাঝে দুজন মিলে শূন্য হয়ে ওঠা। রাত্রির উদ্ভট কলকব্জার নিচে উদ্ধত কামান, কুচকাওয়াজ ও অভ্যুত্থান ব্যর্থ করে দিয়ে...

 

শেষের শুরু

আর কোনো জিজ্ঞাসা নেই, শেষ হলো আমার অন্বেষণ। 

আফিমযুদ্ধ শেষে অক্ষৌহিণী সেনাদল ঘুমিয়ে পড়েছে, এই অলিভ বনের শান্ত ক্যানোপির নিচে।

 চোখ মেলো, অন্ধ-জানালা। কুয়াশার কাফন উবে যাচ্ছে ধরাপ্লাবী রোদের তাড়নে। জ্বলে উঠছে আদিগন্ত খুলি ও করোটি।

 অনন্ত নাস্তির পারে উড়ে যাচ্ছে একাকিনী মেঘ। 
পথে পথে চিলঘর। মৌন-শিখর।

ফেরার সকল পথ ভরে আছে শোণিতের লালে। ঘোড়ার কাটা মাথায়। 

আর কোনো জিজ্ঞাসা নেই। অনন্ত রাত্রির মতো মৃত্যু এসে ঢেকে দিয়ে যাবে আমাদের।

সেনাছাউনির বাইরে—বয়ে যাবে অনিঃশেষ জলপাই বনের বাতাস।