কাব্যে ‘গ্রামের লোকেরা যা বলে’
বাতিঘর থেকে প্রকাশিত হয়েছে আলতাফ শাহনেওয়াজের কাব্যগ্রন্থ ‘গ্রামের লোকেরা যা বলে’। গতিশীল এই সময়ে প্রতিমুহূর্তের জীবনযাপনে এবং বেড়ে ওঠায় যে নাগরিক-জঙ্গম, সেখানে গ্রাম কি আমাদের কাছে কেবলই স্মৃতি? এ নগর সভ্যতার অত্যুজ্জ্বল পাটাতনে দাঁড়িয়ে এখন কীভাবে কথা বলে গ্রামের লোকেরা? নাগরিক-বাস্তবতায় তাঁদের অবস্থান আজ কোথায়? গ্রামীণ চিহ্নগুলো মুছে তাঁরা কি শামিল হতে চায় নগরসভায়, নাকি বুকের গভীরে কোথাও রেখে দেয় ফেলে আসা গ্রামের সারল্যনির্ঝর ছবি?
নতুন কাব্যগ্রন্থটি পাঠককে এসব প্রশ্নের মুখোমুখী করবে। এই বইয়ের ৩৫টি খণ্ড খণ্ড কবিতার মধ্য দিয়ে এমন এক অখণ্ডতা রচিত হয়েছে, যেখানে ‘স্মৃতি-সত্তা-ভবিষ্যৎ’—গাঢ় বেদনায় সব একাকার হয়ে, কাব্যিক মুহূর্ত সৃষ্টির মাধ্যমে শেষ অব্দি কথা বলেছে বর্তমানের মাটির ওপর দাঁড়িয়েই। কবি জীবনানন্দ দাশ বলেছিলেন, ‘হৃদয়ে কল্পনা ও কল্পনার ভিতরে অভিজ্ঞতার স্বতন্ত্র সারবত্তা’ই কবির কবিতাকে অনন্য মার্গে উন্নীত করে। জীবনানন্দের অনেক পরের কবি আলতাফ শাহনেওয়াজের নতুন কাব্যগ্রন্থ ‘গ্রামের লোকেরা যা বলে’ আদতে সেই ‘হৃদয়ের কল্পনা’ ও ‘অভিজ্ঞতার স্বতন্ত্র সারবত্তা’কেই ধারণ করে আছে।
আদতে আলতাফ শাহনেওয়াজের এই বইয়ের কবিতাগুলোতে আছে তার ছিন্নভিন্ন জীবনের গল্প। জীবন ক্ষয়ে পড়া এই মেট্রোসিটি মানুষ থেকে শুধু নিয়েছেই, বিনিময়ে দিয়েছে কিছু বেদনার মুহূর্ত। লেনদেনের এক অদ্ভূত ঘোরটোপে আটকে আছে জীবন ইট-কাঠের এই ব্যস্ত নগরে। স্মৃতি এই বইয়ের কবিতার ভর বিন্দু। যা সত্তার সঙ্গে মিশে বর্তমানের ভাষা সৃষ্টি করের এই কবি। কোনোদিনই হয়তো সেই আমার বেড়ে ওঠার গ্রামে আর ফেরা হবে না!
সব মিলিয়ে গ্রামহীন মানুষের হাহাকার আর যাতনাই ধ্বনিত হয়েছে ‘গ্রামের লোকেরা যা বলে’র কবিতাগুলোতে। বস্তুত তীব্র-তীর্যকভাবে এমন সারল্যমাখা আলাপ ‘গ্রামের লোকেরা’ ছাড়া আর কে-ই-বা করতে পারে! বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী সব্যসাচী হাজরা। মুদ্রিত মূল্য ২০০ টাকা।
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন