জীবনানন্দের কবিসত্তা: কখনো ডায়োনিসুস কখনো অ্যাপোলো

অ+ অ-

 

আজ এ কথা সর্বজনবিদিত, কবি হিসেবে জীবনানন্দ ছিলেন বহুমুখী ও বহুপ্রজ। জীবদ্দশায় নিজের লেখা খুব অল্প কবিতাই তিনি প্রকাশ করেছিলেন, কিন্তু তার অপ্রকাশিত কবিতার ভাণ্ডার এতোই বিশাল যে এখনো প্রায় প্রত্যেক বছরই তাঁর নতুন কবিতার সংকলন বের হচ্ছে। এই যে বিপুল পরিমাণ কবিতা জীবনানন্দ লিখেছিলেন, এর মধ্যে বৈচিত্র্যের কোনো অভাব নেই। ধূসর পাণ্ডুলিপি-তে যে জীবনানন্দকে আমরা দেখি, সাতটি তারার তিমির-এ তিনি অনেকটাই বদলে গেছেন; আবার ১৯৩২ সালে জীবনানন্দ যে চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে যে ধাঁচের কবিতা লিখেছেন, ১৯৪০ সালে এসে জীবনানন্দ সেই ধাঁচের কবিতা আর লেখেনইনি বলতে গেলে; সময়ের সাথে সাথে তাঁর দেখার চোখ যেমন পাল্টে গেছে, তেমনি আরো পরিণত ও আরো পরিবর্ধিত হয়েছে তার চেতনা-জগৎ। জীবনানন্দের কবিসত্তা ও কাব্যবিশ্বের এই রূপান্তর নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। তাঁর জীবদ্দশায় তো বটেই, এমনকি আজো জীবনানন্দের কবিতার বাঁকবদল নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হয়ে চলেছে নানা দিকে। অনেকের কাছেই জীবনানন্দ মানেই ধূসর পাণ্ডুলিপি, বনলতা সেন, কিংবা রূপসী বাংলা-র স্বপ্নগ্রস্ত, অস্তিত্ব-বিমুখ, ঘোরাবিষ্ট, ক্লান্ত, মৃত্যুকামী জীবনানন্দ; জীবনানন্দের পরিণত পর্বের রচনায় তারা আসল জীবনানন্দের স্বাদ খুঁজে পান না। উদাহরণ হিসেবে এখানে জীবনানন্দের বিশ্বস্ত পাঠক বুদ্ধদেব বসু-র কথা বলা যায়। ১৯৪৮ সালে সাতটি তারার তিমির প্রকাশিত হওয়ার পর বুদ্ধদেব লিখেছিলেন,

ইতিহাসের চেতনাকে তার সাম্প্রতিক রচনার বিষয়ীভূত করে তিনি এইটেই প্রমাণ করার প্রাণন্তকর চেষ্টা করছেন যে, তিনি পেছিয়ে পড়েননি। করুণ দৃশ্য ও শোচনীয়। এর ফলে তার প্রতিশ্রুত ভক্তের পক্ষে তার কবিতার সম্মুখীন হওয়া সহজ আর দুর্বোধ্য বলে আপত্তি নয়, নিরসুর বলে আপত্তি, নিরস্বাদ বলে। (কবিতা চৈত্র, ১৩৫০, সম্পাদক বুদ্ধদেব বসু)

বলাই বাহুল্য, জীবনানন্দের এই মূল্যায়নের ক্ষেত্রে বুদ্ধদেব বসু একা নন, তাঁর দলে আছেন বিখ্যাত ও অখ্যাত আরো অনেকেই। জীবনানন্দের কবিতায় ইতিহাস ও সময়-চেতনার আবির্ভাব কিংবা জীবনানন্দের রাজনীতি ও সমকাল-সচেতন হয়ে ওঠা-কে অনেকেই তাঁর কবিসত্তার অবনতির লক্ষণ হিসেবেই পাঠ করেছেন। সতীর্থ বিষ্ণু দে কিংবা সুধীন্দ্রনাথ দত্তের সমকাল-সচেতনতাকে তাঁরা স্বছন্দচিত্তে গ্রহণ করে নিলেও পরিণত ও পরিবর্তিত জীবনানন্দকে তারা স্বাগত জানান নি। শুরুর দিককার জীবনানন্দের সঙ্গে পরের দিককার জীবনানন্দের দূরত্ব যেমন স্পষ্ট, তেমনই অনেকের পক্ষেই অনতিক্রম্য।

জীবনানন্দের কবিসত্তার এই রূপান্তরকে অনেকে অনেকভাবে ব্যাখা করেছেন। বাংলা কবিতার মনোযোগী পাঠকেরা সেইসব ব্যাখ্যার সঙ্গে পরিচিত রয়েছেন নিশ্চয়ই। সুতরাং এখানে সেসবের পুনরাবৃত্তি না করে আমরা মূল আলোচনায় অগ্রসর হবো। জীবনানন্দের কবি-জীবনকে দুটি কালপর্বে বিভক্ত করবো আমরা। এক. ডায়োনিসীয় পর্ব, যার দ্বারা আমরা জীবনানন্দের কাব্যচর্চার প্রাথমিক পর্ব, তথা ধূসর পাণ্ডুলিপি থেকে বনলতা সেন-র কবিতাগুলো লেখার পর্বটাকে বুঝবো। ১৯২৭ সালে ঝরা পালক প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে আনুমানিক ১৯৩৮/৩৯ সাল পর্যন্ত এই পর্বের ব্যাপ্তি। উল্লেখ্য যে, বই আকারে রূপসী বাংলা জীবনানন্দের মৃত্যুর পরে প্রকাশিত হলেও রূপসী বাংলার কবিতাগুলো এই পর্বেই লেখা; সুতরাং রূপসী বাংলা-কে ডায়োনিসীয় পর্বের সৃষ্টিকর্ম হিসেবেই আমরা বিবেচনা করবো।

দ্বিতীয় পর্ব, তথা জীবনানন্দের পরিণত পর্বকে আমরা অ্যাপোলনীয় পর্ব হিসেবে চিহ্নিত করবো। সাতটি তারার তিমির, বেলা অবেলা কালবেলা-র কবিতাগুলোসহ ১৯৩৮/৩৯ সালের পরে জীবনানন্দ যেসব কবিতা লিখেছিলেন, সেগুলোকে আমরা অ্যাপোলনীয় পর্বের রচনা হিসেবে গণ্য করবো। সাম্প্রতিককালে প্রকাশিত কৃষ্ণা দশমী এবং সূর্য অসূর্যলোক-সহ জীবনানন্দের মৃত্যুর পরে প্রকাশিত তাঁর পাণ্ডুলিপির কবিতার বৃহত্তর অংশটি মূলত এ পর্বেরই রচনা।

কেনো ডায়োনিসীয় এবং কেনো অ্যাপোলনীয়? এ দুইয়ের তফাত কী এবং সেই তফাতের তাৎপর্যই বা কী? স্মরণীয় যে, গ্রিক পুরাণ মোতাবেক ডায়োনিসুস হচ্ছেন ফসল, উর্বরতা, উৎসব, ধর্মীয় পরমানন্দ ও সুরার দেবতা। অন্য দিকে অ্যাপোলো হচ্ছেন যুক্তি, আলো, শান্তি, শৃঙ্খলা, ভারসাম্য, কাব্য, জ্ঞান ও ভবিষ্যদ্বাণীর দেবতা। জার্মান দার্শনিক ফ্রেডরিখ নীৎশে The Birth Tragedy গ্রন্থে প্রাচীন গ্রিক সংস্কৃতির দুটি গাঠনিক মূলনীতি হিসেবে ডায়োনিসীয় ও অ্যাপোলনীয় ধারণা দুটির অবতারণা করেছিলেন। নীৎশের মতে, ডায়োনিসুস হচ্ছে সেই শক্তি, যার মাধ্যমে মানুষ প্রকৃতির সাথে তার আদিম একতা (primordial unity)-র অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারে। ডায়োনিসুস সভ্যতা ও সংস্কৃতির উপর প্রকৃতিকে, যুক্তির উপর প্রবৃত্তিকে এবং শৃঙ্খলার উপর বিশৃঙ্খলাকে প্রাধান্য দেয়। বিচ্ছিন্ন, চিন্তাশীল কোনো সত্তা হিসেবে নয়, বরং প্রকৃতি ও স্বীয় প্রবৃত্তির ডাকে সাড়া দিয়ে ডায়োনিসুস একজন মাতালের মতো আত্মবিস্মৃত হয়ে ফিরে যেতে চায় জীবনের আদি উৎসে, এবং এই মহাপৃথিবীর সঙ্গে মিশে গিয়ে উদযাপন করতে চায় এই নিরর্থক, যন্ত্রণাদায়ক, পার্থিব অস্তিত্বকে। পক্ষান্তরে, অ্যাপোলো হচ্ছে মানুষের যুক্তি-বুদ্ধির প্রতীক। প্রবৃত্তিকে যুক্তির শিকলে বেঁধে রাখা হচ্ছে অ্যাপোলোর কাজ। প্রকৃতির সঙ্গে মিশে না গিয়ে বরং স্বীয় যুক্তি, বুদ্ধি ও জ্ঞানের ভিত্তিতে এই সভ্যতা নির্মাণের শক্তি হচ্ছে অ্যাপোলো। গ্রিক ট্রাজেডি-র উত্থান-পতন ব্যাখা করতে গিয়ে নীৎশে ডায়োনিসীয় ও অ্যাপোলনীয় ধারণা দুটি ব্যবহার করেছিলেন। বিস্তারিত জানার জন্য আগ্রহী পাঠক নীৎশেThe Birth of Tragedy গ্রন্থটি পাঠ করে দেখতে পারেন।

এখন ফিরে আসা যাক মূল আলোচনায়। জীবনানন্দের ডায়োনিসীয় পর্ব বলতে আমরা সেই কালপর্বটাকে বোঝাচ্ছি, যখন জীবনানন্দের কবিতায় উপরিউক্ত ডায়োনিসীয় প্রবণতাগুলো আধিপত্য লাভ করেছে। এর মানে এই নয় যে এই পর্বের কবিতায় অ্যাপোলনীয় প্রবণতা নেই। অবশ্যই আছে, কিন্তু একটু চোখ-কান খোলা রাখলে যেকোনো পাঠকই বুঝবেন অ্যাপোলনীয় প্রবণতাগুলোকে ছাপিয়ে সমুজ্জ্বল হয়ে উঠেছে জীবনানন্দের ডায়োনিসীয় ঝোঁকগুলো। যে কারণে ধূসর পাণ্ডুলিপি বা রূপসী বাংলা-র কবিতাগুলোকে এতো স্বপ্নকাতর ও ভাবাবিষ্ট মনে হয়; যেনো, জীবনানন্দ এক বিশেষ ঘোরের বশে এই কবিতাগুলো লিখেছিলেন, যে ঘোর তাকে এগিয়ে নিয়ে গেছে লাইনের পর লাইন, ফলে কবিতাগুলো লেখার সময় সচেতন নির্মাতা হিসেবে জীবনানন্দকে যেনো সক্রিয় হতে হয়নি একদমই। এই পর্বের কবিতাগুলো উপভোগ করার জন্য পাঠককে আপন বুদ্ধির উপর খুব একটা নির্ভর করতে হয় না। বরং পঞ্চ-ইন্দ্রিয় সমেত স্বয়ং জীবনানন্দই যেনো সংক্রমিত হতে থাকেন পাঠকের আত্মায়। হয়তো এ কথা মাথায় রেখেই ধূসর পাণ্ডুলিপি-র আলোচনায় বুদ্ধদেব বসু লিখেছিলেন,

আমাদের কবিদের মধ্যে জীবনানন্দ সবচেয়ে কম আধ্যাত্মিক, সবচেয়ে বেশি শারীরিক, তাঁর রচনা সবচেয়ে কম বুদ্ধিগত, সবচেয়ে বেশি ইন্দ্রিয় নির্ভর। তাঁর এই বিশেষত্বই কীটস ও প্রির‍্যাফেলাইটদের কথা মনে করিয়ে দেয়।

ডায়োনিসীয় পর্বের জীবনানন্দকে মনে হয় ক্লান্ত, বিচ্ছিন্ন ও নিরাশাগ্রস্ত; বিচ্ছিন্নতা ও নিরাশা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তিনি মৃত্যুকে ডাকেন বন্ধুর মতো করে; তিনি মিশে যেতে চান প্রকৃতির হাজারো দৃশ্য, গন্ধ, শব্দ ও ঘটনার মধ্যে। প্রকৃতিতে বিলীন হয়ে যাওয়ার এই কাতরতা ধূসর পাণ্ডুলিপি-তে আছে, বনলতা সেন-এ আছে। রূপসী বাংলায় মাঝেমাঝে আমাদের মনে হয়, তিনি প্রকৃতিতে বিলীন হয়েই গেছেন, যেনো তিনি অর্জন করেছেন ডায়োনিসুসের সেই আদিম একতা (primordial unity)। ডায়োনিসুস-অধিকৃত জীবনানন্দের প্রমাণ হিসেবে আমরা হাজির করতে পারি মৃত্যুর আগে, অবসরের গান, জীবন, আমি যদি হতাম, হাওয়ার রাত, হায় চিল, শিকার, বনলতা সেন-সহ অজস্র বিখ্যাত কবিতা। রূপসী বাংলার সনেটগুলো তো আছেই। এই পর্বের কবিতায় বহু দেশজ শব্দের সফল ব্যবহার করেছেন জীবনানন্দ। ফলে অনেক কবিতারই প্রাকৃত-স্বভাব বৃদ্ধি পেয়েছে, আদিম আবেগের প্রকাশে এসেছে প্রাবল্য।

অ্যাপোলনীয় পর্বে এসে জীবনানন্দের মনোজগতে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে, যা বোঝা যায় ক্রমশ বুদ্ধি-নির্ভর কবিতা লেখার দিকে জীবনানন্দের ঝুঁকে পড়া দেখে। এই পর্বের বেশির ভাগ কবিতা পড়ার সময় পাঠকের মনে হবে কবিতাগুলো লেখার সময় জীবনানন্দ সুনিশ্চিতভাবেই জানতেন তিনি কী লিখছেন এবং কেনো লিখছেন। কোনো বিশেষ ঘোর তাকে অধিকার করে রাখছে না আর, বরং প্রায়শই কবিতাগুলোতে আমরা দেখতে পাই অজস্র সচেতন ও সুচিন্তিত মন্তব্য। সমকালীন পৃথিবীর বিভিন্ন অনুষঙ্গ ঢুকে পড়তে লাগলো জীবনানন্দের কবিতায়, তাঁর প্রকৃতিমগ্নতাও কমে আসতে লাগলো ধীরে ধীরে। দীপ্তি ত্রিপাঠী যেমন লিখছেন, মৃত্যু-চেতনাকে অতিক্রম করার জন্য এই পর্বে ইতিহাস-চেতনার আশ্রয় নিলেন জীবনানন্দ; চিন্তাশীল পর্যবেক্ষকের মতো মানুষের সামাজিক ও সামষ্টিক অস্তিত্ব নিয়ে মাথা ঘামালেন তিনি। এতোদিন তিনি নিরর্থক মানব-অস্তিত্বের অমোচনীয় অন্ধকার নিয়ে মাথা ঘামিয়েছেন, এখন তিনি সক্রিয় হলেন সভ্যতার বুকে নেমে আসা অদ্ভুত আঁধারের বিষয়ে। আবার, ডায়োনিসীয় পর্বের নিরাশার জায়গায় মাঝেমাঝে দেখা দিতে লাগলো এক ধরনের সূক্ষ্ম আশাবাদ। জীবনানন্দ যেনো আর মিশে যেতে চান না প্রকৃতিতে; বরং এই পৃথিবীই হয়ে উঠলো তার গন্তব্য; মানুষের ভুলত্রুটি আর নৈতিক-রাজনৈতিক অধঃপতন মেনে নিয়েই এই সভ্যতার শরিক হয়ে বেঁচে থাকতে চাইলেন তিনি। নির্জনতা থেকে নেমে এসে শামিল হলেন জনতায়।

প্রথম কবে এবং কোন কবিতায় জীবনানন্দের মনোবিশ্বের এই রূপান্তর ঘটেছিলো, তা নির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল। কিন্তু কাব্যগ্রন্থ অনুযায়ী যদি হিসেব করি, তো মহাপৃথিবী বোধ করি প্রথম কাব্যগ্রন্থ, যেখানে জীবনানন্দের অ্যাপোলনীয় প্রবণতাগুলো ব্যাপকভাবে প্রকাশ পেতে শুরু করেছিলো। মহাপৃথিবী-কে গণ্য করা যায় জীবনানন্দের কাব্যচর্চার দুটি পর্বের সন্ধিস্থল হিসেবে। কারণ এখানে অ্যাপোলনীয় ধাঁচের অনেক কবিতা যেমন আছে, তেমনি আছে তীব্র ডায়োনিসীয় রসে জারিত বেশ কিছু কবিতা। আবার কয়েকটি কবিতায় অ্যাপোলনীয় ও ডায়োনিসীয় বৈশিষ্ট্যের কার্যকরী সংমিশ্রণও দেখা যায়। আট বছর আগের একদিন এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ। যাই হোক, মহাপৃথিবী-র পরের জীবনানন্দ মূলত অ্যাপোলো-চালিত জীবনানন্দ; নাগরিক বুদ্ধিজীবীর মতো ব্যক্তি, সমাজ ও বিশ্ব নিয়ে জীবনানন্দ তাঁর সুচিন্তিত বক্তব্যগুলোর শিল্পিত প্রকাশ ঘটিয়েছেন এই পর্যায়ে। আদিম আবেগের প্রাবল্য এবং জীবনের আদি উৎসে ফিরে যাওয়ার যে তাড়না তাঁর প্রথম দিককার কবিতাগুলোকে অধিকার করে রেখেছিলো, তাকে অতিক্রম করে জীবনানন্দ নজর ফেরান সমকালীন পৃথিবীর দিকে, সেই পৃথিবীর শুভ-অশুভের দিকে, সেই পৃথিবীতে মানুষের অবস্থার দিকে। যা দেখলেন, তা বেদনাদায়কই। তার সারমর্ম হয়তো পাওয়া যাবে অদ্ভুত আঁধার এক কবিতায়:

অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ-পৃথিবীতে আজ,
যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দ্যাখে তারা;
যাদের হৃদয়ে কোনো প্রেম নেই–প্রীতি নেই–করুণার আলোড়ন নেই
পৃথিবী অচল আজ তাদের সুপরামর্শ ছাড়া।
যাদের গভীর আস্থা আছে আজো মানুষের প্রতি
এখনো যাদের কাছে স্বাভাবিক ব’লে মনে হয়
মহত্‍‌ সত্য বা রীতি, কিংবা শিল্প অথবা সাধনা
শকুন ও শেয়ালের খাদ্য আজ তাদের হৃদয়।

এই কবিতার কবিকে ধূসর পাণ্ডুলিপি-র কবি হিসেবে চিনে নেওয়া বেশ কঠিন সন্দেহ নেই। কিন্তু এইখানেই জীবনানন্দের মাহাত্ম্য। তিনি কখনো ডায়োনিসুস, কখনো অ্যাপোলো; কোনো বিশেষ কাব্যাদর্শে সীমায়িত হয়ে থাকার বদলে নিজেকে সর্বদা অতিক্রম করে যেতে চেয়েছেন তিনি। সফল হয়েছেন কিনা, সে বিচারের ভার পাঠকের উপর।