অ-লোকসামান্য গ্রাম

অ+ অ-

 

এই এক গাঁও, ঐ এক গাঁও‌ মধ্যে ধু ধু মাঠ, 
ধান কাউনের লিখন লিখি করছে নিতুই পাঠ।  

সংসারী মানুষেরা যখন-তখন চা খেয়ে আসি বলে বেরিয়ে যাবার ছুতা দিতে পারে না। হয়তো সেই চা-খোর ফাঁক পেয়ে পনের বছর আগের এক রাতে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলউদাসীন, চায়ের খোঁজেইআর কিছু না। চা খুঁজতে গিয়ে অবশেষে চিত্রকল্পের গ্রাম খুঁজে পেয়ে কবিতায় থিতু হয়েছেন আর সংসার হয়ে আছে উদাসীন, চায়ের পেয়ালাও জুড়িয়ে গেছে।

কবিতার গ্রামে কবি একটা ঘরও খুঁজে পেয়েছেনকয় কুঠুরি কয় দরোজা জানা নাই, তবে দরোজাগুলো খোলা আছেসাক্ষাৎপ্রার্থী ভেতরে যেতে পারলে কবিকে কি পাবেন আদৌ কিংবা তাঁকে পাবেন অখণ্ড?

কাছেই বটবৃক্ষ, একা। তার জানালার সবদিক খোলা। তার ছায়ায় বসে গঞ্জিকাবাংলা ভাষায় খুব কথাবার্তা আর গান  চলছে। সেখানে বসে এই গ্রামের মানুষেরা দাবাও খেলে। আড়াই লাফ দেয়ার আগেই মেধাবী অশ্ব কাত হয়ে মরে থাকে।

গ্রামের শেষ মাথায় কুঁড়েঘর থেকে এক অন্ধ লোকের হাসি শোনা যাচ্ছে। তার হাতে একটা পারদলেপা আয়না। নিজের চেহারা ভুলে গেছে সে লোক। তার আলো দেখার স্মৃতি দূরের তারার মতো। তার স্বপ্ন ভেসে যায় উজ্জ্বল রোদে, এমনকি  বোবা চোখও  সেই রোদ- ঝাঁঝ সমীহ করে। এই রোদের পিঠে চেপে আলোর গতিতে দূরে তারার জমিনে পৌঁছাতে পারবে কবে? কে যেন তাকে জনান্তিকে প্রশ্ন করে: মরে গেলে কোথায় যাবেন কিছু ঠিক করেছেন? 

নির্ভয় সে। নূহের প্লাবন এলেও দুইশো ছয়টা হাড়ের নৌকায় ভেসে যাবে সবুজ এক জনপদে।

এই গ্রামে এখনও দাদী নানীরা খুব ঝাল করে সালুন রাঁধেন। নাতি-নাতনীরা গুলতি দিয়ে শিকার করে গাছে গাছে মাটির পাখি। সেই গাছের নিচে বসে বয়ান দিচ্ছেন ত্রিকালদর্শী এক ঈশ্বরতুল্য বিদ্যাসাগর!

রনক জামান এই গ্রাম কুড়িয়ে পেয়েছেন। আসুন খুব আলগোছে বইটার মলাট খুলি :

এ-তীর্থে আসবে যদি ধীরে অতি পা ফেলো সুন্দরী... 

এই গ্রাম কুড়িয়ে পেয়েছি: রনক জামান; প্রকাশক: বৈভব; প্রচ্ছদ: রাজীব দত্ত; প্রকাশকাল: নভেম্বর ২০২৪