‘দিনের শেষে’ হুমায়ূন আহমেদের বিকল্প পাঠ

অ+ অ-

 

সাদাসিধে জহিরকে ভালবাসে অরু, তরু নামের দুই মামাতো বোনই। কিন্তু জহির তাদের ভালবাসা বুঝতে পারে না বা বুঝলেও না বোঝার ভান করে থাকে। উপন্যাসের শুরুটা হয়, জহিরের অফিসের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা করিম সাহেবের বর্ণনা থেকে। জহিরের প্রতি তার ভাবনা থেকে মোটামুটি জহিরের চরিত্র সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায়।

 

আমার কিছু কথা

কোনো জটিলতা নেই, ভাবনাচিন্তা করতে হবে না এবং খুব কম সময়ে পড়ে ফেলা যাবেএমন সুযোগ আসলেই আমি বাসার বুকশেলফ থেকে হুমায়ূন আহমেদের বই পড়া শুরু করি। নিখাদ বিনোদন আর সময় কাটানোর জন্য তার লেখার বিকল্প খুব কমই আছে। তবে সত্যি বলতে, যখন হুমায়ূন আহমেদের দিনের শেষে বইটা পড়ছিলাম, নিজের পাঠক হৃদয় নিয়ে বেশ আফসোসই হচ্ছিলো। স্কুল-কলেজে পড়ার সময় কিছু পড়তে গেলে মনে তেমন ভাবনা খেলা করতো না। কিছু বই হৃদয়ে দাগ কাটতো, কিছু দাগ কাটতো নামোটা দাগে এই পার্থক্য ছাড়া কোনো বই নিয়ে আমার বিশেষ ভাবনার কিছু ছিল না। আমি সেসব নিঝুম দুপুর হারিয়ে ফেলেছি, যখন কিশোরী মন নির্বিবাদে কোনো উপন্যাসে ডুবে থাকতে পারতো। এখন যতখানি পড়ি, ততোটাই ভাবি। যা সত্যিকার অর্থেই বিনা প্রশ্নে কোনো লেখককে ভালবাসার জায়গাটা কমিয়ে দেয় অনেকখানিই।

 

জবাবদিহিতা

আগেই বলে নিচ্ছি, হুমায়ূন আহমেদের দিনের শেষে উপন্যাসের কোনো বুক রিভিউ করছি না। বইটি পড়তে আমার ভালোই লেগেছে। পড়ে ভালো লেগেছে কি-না তা বলতে পারছি না। এক টানে এক/দেড় ঘণ্টার মধ্যে পড়ে ফেলেছি। এটিই হুমায়ূন আহমেদের বিশেষত্ব। তবে ৮৭ পৃষ্ঠার কোনো বই পড়তে বেশি সময় লাগে না। আর তা যদি হয় হুমায়ূন আহমেদের, তাহলে তো কথাই নেই। যদিও, পড়ে শেষ করার পর মনের মধ্যে বেশকিছু প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। এটা নিয়ে আমার নিজস্ব কিছু ব্যাখ্যা এবং ভাবনাও আছে যা আমি লেখাটিতে তুলে ধরতে চাচ্ছি।

এক সেমিনারে বাংলাদেশের একজন স্বনামধন্য চলচ্চিত্র সমালোচক বলেছিলেন, ভাবনার উদ্রেক করে না এমনকিছু নিয়ে তিনি সমালোচনা করেন না। মূলত হুমায়ূন আহমেদের পরিচালিত সিনেমা প্রসঙ্গেই তিনি একথা বলেন। তার এই উক্তিটির সুর ধরে বলতে চাই, এই উপন্যাসেও তেমন কোনো উপাদান নেই। নিছক আমার মনের বিক্ষিপ্ত ভাবনাগুলোকে ভাষায় রূপ দিতেই এই লেখা।

উপন্যাসের বিশেষ চরিত্রে ছিল, অরুর স্বামী আজাহার। যিনি বেশ কায়দা করে মানুষের আকর্ষণের উদ্রেক হয় এমনভাবে গল্প করেন। তিনি মদ খান, তাস খেলেন, সংসার ছেড়ে আসায় তাকে হতাশ মনে হয় কিন্তু স্ত্রীকে তার মত করে ভালোও বাসেন। তবে অরু যে জহিরকে ভালবাসে তা জানার পরও তিনি জহিরের প্রতি বেশ উদার। কথা শুনে মনে হয়, জহিরের প্রতি তার কোনো বিদ্বেষ তো নেইই বরং তিনিও এই মানুষটির প্রতি মমতাবান। হুমায়ূন আহমেদের বইয়ে চরিত্রের স্বাভাবিকতা থাকে না কিন্তু তার জাদুকরী লেখা দিয়ে দর্শককে অস্বাভাবিক বিষয়ও বেশ স্বাভাবিকভাবে গেলান।

 

সারকথা

দিনের শেষে বইটি একটি প্রেমের উপন্যাস, তা বলাই বাহুল্য। উপন্যাসের শুরুতে তিনি ইশরাত নামের কাউকে উৎসর্গ করেন যেখানে লেখা ছিল, জনম জনম কাঁদিও। এটি উল্লেখ করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, উপন্যাসে জনম জনম কাঁদিব গানটি কয়েকবার আসবে এবং তা পরিস্থিতির সাথে বেশ ভালোভাবে মানিয়ে যাবে। হুমায়ূন আহমেদের বইয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জীবনানন্দ দাশের গান-কবিতার ব্যবহার বেশ ভালো লাগে আমার।

যাই হোক, মূল কথায় ফিরে আসি। উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র জহির নামের একজন যুবক। হুমায়ূন আহমেদের নায়কদের সিগনেচার বৈশিষ্ট্যের একটি হলো, নায়ককে শুরুতে মনে হবে বোকা প্রকৃতির কিন্তু কাহিনির ভেতরে ঢুকলে বোঝা যাবে, তিনি অত্যন্ত বুদ্ধিমান।

সাদাসিধে জহিরকে ভালবাসে অরু, তরু নামের দুই মামাতো বোনই। কিন্তু জহির তাদের ভালবাসা বুঝতে পারে না বা বুঝলেও না বোঝার ভান করে থাকে। উপন্যাসের শুরুটা হয়, জহিরের অফিসের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা করিম সাহেবের বর্ণনা থেকে। জহিরের প্রতি তার ভাবনা থেকে মোটামুটি জহিরের চরিত্র সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায়। তার কথা ও বিভিন্ন কার্যক্রম পড়ে বোঝা যাচ্ছিলো, তিনি জহিরকে বেশ স্নেহ করেন কিন্তু কাহিনির শেষের দিকে বলেন, তোমাকে আমি কী রকম পছন্দ করি তা কি তুমি জানো? এমন বক্তব্যের কোনো প্রয়োজনই ছিল না। গল্পে বেশ হালকা চালে একে একে চরিত্র প্রবেশ করিয়ে দেওয়ার কায়দাটি আমার ভালো লেগেছে। অনেকটা স্পটলাইট একজন থেকে অন্যজনে ঘুরে ঘুরে আসার মত ব্যাপার।

তবে, উপন্যাসের শুরুতে যতটা গুরুত্বের সঙ্গে করিম সাহেবকে আনা হয়েছিলো, ততোটা গুরুত্ব তিনি পরবর্তীতে পাননি। এমনটা ঘটেছে, অরুর ছোট বোন তরুর ক্ষেত্রেও। তার সাথে জহিরের কথোপকথন শুনে মনে হচ্ছিল, তরুর চরিত্রটি হুমায়ূন আহমেদের অন্যান্য নায়িকার তুলনায় বেশ স্বাভাবিক এবং তার চেয়েও বড় ব্যাপার ছিল, তরু অন্যান্য নায়িকার মত রূপবতী ছিল না। কিন্তু করিম সাহেবের মত তরুর গুরুত্বও ক্রমে ফুরিয়ে যায়। গল্পের অন্যতম কেন্দ্রীয় চরিত্র হয়ে উঠে অরু। হবে না-ই বা কেন হুমায়ূন আহমেদের গল্পের নায়িকা তো সাধারণ কেউ হতেই পারে না। অরু আত্মকেন্দ্রিক, ছন্নছাড়া স্বভাবের মেয়ে যে কিনা বরিশাল মেডিকেলে পড়া বাদ দিয়ে তার কলেজের ইতিহাস বিভাগের একজন স্যারের কথার প্রেমে পড়ে তার সঙ্গে পালিয়ে যায়। সেই স্যারের আবার স্ত্রী সন্তানও রয়েছে। কিন্তু অরু মনেপ্রাণে ভালবাসে জহিরকে।

উপন্যাসের বিশেষ চরিত্রে ছিল, অরুর স্বামী আজাহার। যিনি বেশ কায়দা করে মানুষের আকর্ষণের উদ্রেক হয় এমনভাবে গল্প করেন। তিনি মদ খান, তাস খেলেন, সংসার ছেড়ে আসায় তাকে হতাশ মনে হয় কিন্তু স্ত্রীকে তার মত করে ভালোও বাসেন। তবে অরু যে জহিরকে ভালবাসে তা জানার পরও তিনি জহিরের প্রতি বেশ উদার। কথা শুনে মনে হয়, জহিরের প্রতি তার কোনো বিদ্বেষ তো নেইই বরং তিনিও এই মানুষটির প্রতি মমতাবান। হুমায়ূন আহমেদের বইয়ে চরিত্রের স্বাভাবিকতা থাকে না কিন্তু তার জাদুকরী লেখা দিয়ে দর্শককে অস্বাভাবিক বিষয়ও বেশ স্বাভাবিকভাবে গেলান। আজহার চরিত্রটির ভালো মানুষী অস্বাভাবিক। উপন্যাসে বোঝা যাচ্ছিলো, কেবল লেখক চাইছেন বলেই জহিরের প্রতি সবাই অকারণে মমতা প্রদর্শন করেন কিন্তু তাতে তার দুর্ভাগ্য ঘোচে না একটুও।

জহির গ্রামের সাধারণ নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলে। বিএ পরীক্ষায় সেকেন্ড ক্লাস পাওয়ার পর সে যখন ঢাকা আসে, প্রচণ্ড ঠান্ডার মধ্যেও তার গায়ে ছিল একটা ছেড়া সোয়েটার যা ঢাকতে সে ফুল হাতা শার্ট পরেছে আর গলায় ছিল লাল রঙের মাফলার। হুমায়ূন আহমেদের নায়িকাদের মধ্যে মায়াভাব প্রবল থাকে। যে কারণেই হয়ত অরু-তরু দুই বোন জহিরের সরলতা আর অসহায়ত্বের প্রতি মমতাময়ী হয়ে তার প্রেমে পিছলে যায়। পুরো কাহিনীতে এমন কোনো বিষয় নেই যা ব্যাখ্যা দেবে কেন দুজন কিশোরী জহিরের প্রেমে ব্যাকুল।

তবে, বইয়ের সবচেয়ে বিরক্তিকর জায়গাটি হলো, জহিরের মেয়ে দেখতে যাওয়া, মেয়ে পছন্দ হওয়া এবং পরবর্তীতে বিয়েটা ভেঙ্গে যাওয়া। আসমানী নামের যে মেয়েটিকে জহির ও তার মামা দেখতে যায়, তার আগেও একবার বিয়ে হয়েছিলো কিন্তু তা টেলিফোনে। কিন্তু আসমানীর আমেরিকা প্রবাসী স্বামীই বিয়ের প্রায় এক বছরের মাথায় টেলিগ্রামে কোনো কারণ উল্লেখ না করেই সম্পর্ক বিচ্ছেদ করার কথা বলে। কখনো স্বামীর সঙ্গে আসমানীর দেখা হয়নি; এমনটাই পাত্রপক্ষকে জানানো হয়। কিন্তু আমাদের নায়ক তো জায়গামতো খুবই বুদ্ধিমান, তিনি ঠিকই ধরতে পারেন তথ্যটি আসলে ঠিক নয়। হুমায়ূন আহমেদের নায়িকাদের মতো এই আসমানীও অত্যন্ত রূপবতী, মুখে মায়াভাব প্রবল, স্বভাবে অত্যন্ত কোমল।

বইয়ের পৃষ্ঠা কমার সঙ্গে সঙ্গে পাঠক পাঠিকারা যখন মোটামুটি নিশ্চিত আসমানীর সাথেই জহিরের বিয়েটা হতে যাচ্ছে, ঠিক তখনই একের পর এক দুর্যোগের ঘনঘটা আসতে থাকে। প্রথমে অরু নিখোঁজ হয়ে যায়, তারপর জহিরের চাকরি চলে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়, বিয়ের দুইদিন আগে আসমানীর প্রথম স্বামী এসে হাজির হয় এবং বিয়েটা ভেঙ্গে যায় আর সবশেষে যা না করলে চলছিলোই না, পা পিছলে গর্ভবতী অরুর রক্তপাত শুরু হয় এবং সে ও তার গর্ভের সন্তান মারা যায়। যারা হুমায়ূন আহমেদের বই পড়ে অভ্যস্ত তারা নিশ্চয়ই এ ধরনের সমাপ্তির সাথে পরিচিত আছেন। শেষে ট্র্যাজেডি না দিলে চলছে না বলে দুম করে সব দুঃসংবাদ একসাথে হাজির করে উপন্যাস শেষ করে দেওয়াটা মোটেই ভালো লাগেনি।

‘দিনের শেষে’ বইটি বেশ সম্ভাবনাময় ছিল। কয়েকটি চরিত্র যেমনজহির, অরু, তরু, মামী, করিম সাহেব, আজাহার, আসমানী  নিয়ে আরও কাজ করতে পারতেন লেখক। তার প্যাকেজ নাটক আর উপন্যাসগুলোর মধ্যে পার্থক্য একটাই। নাটকে জোর করে হলেও নায়ক-নায়িকার শুভ পরিণয় হবে আর উপন্যাসে ঠিক তার উলটো চিত্র। 

 

শেষ কথা

হুমায়ূন আহমেদ লেখার সময় খুব বেশি সঙ্গতি-অসঙ্গতি নিয়ে যে ভাবতেন না, সেটি তার  লেখা পড়লেই বোঝা যায়। মানুষ হিসেবেও তিনি ছিলেন আনপ্রেডিক্টেবল। তাই তার লেখায় সঙ্গতি না থাকাই সঙ্গতি। এই উপন্যাসের সবচেয়ে অস্বাভাবিক চরিত্র হলো জহিরের। লেখক চাইছেন বলেই তিনি কিছু না করেও নারীদের ভালবাসার পাত্র, শুধু নারী নয় পুরুষও যে তার প্রতি স্নেহপরায়ণ হয়ে উঠতে পারে তা প্রমাণ করতেই করিম সাহেবের চরিত্রটি এসেছে। এরপর তার দুই মামাতো বোন অরু-তরু, একজন বরিশাল মেডিকেলে পড়তো, আরেকজন বিশ্ববিদ্যালয়ে বোটানিতে অনার্স করছে। কিন্তু জহির গ্রাম থেকে আসা সাধারণ একটি ছেলে, জহির বোকা বলেই দুই বোন তার প্রেমে অস্থিরএমনটা কোনো যুক্তি দিয়ে আসলে ব্যাখ্যা দেওয়া যায় না। তবে লেখকের অন্যান্য বইয়েও সরল অভাবী ছেলের প্রতি মেয়েদের বিশেষ ভালবাসা আছে বলে দেখিয়েছেন তিনি।

তার উপন্যাসের কোনো নায়কই ভালবাসা থেকে প্রত্যাখ্যাত হোন না। যদিও লেখকের নিষ্ঠুর বাসনার বলি হয়ে বেশিরভাগ সময়ই নায়ক-নায়িকা এক হতে পারেন না। এখানেও তাই হয়েছে। অরুকে জহির মনে মনে পছন্দ করলেও তা নিয়ে বিশেষ কিছু ঘটেনি। অরু জহিরকে ভালবাসার পরও পালিয়ে যায় আরেকজন বিবাহিত মানুষের সঙ্গে। অরুর বোন তরুও তাকে ভালবাসলে তা নিয়ে জহিরের উদাসীনতা ছিল বলে মনে হয়। এদিকে জহিরের আসমানী নামের যে মেয়েটির সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয়, তার রূপের বর্ণনা ছাড়া শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে কিছু উল্লেখ ছিল না। অথচ আমেরিকা প্রবাসী যে ছেলের সঙ্গে তার বিয়ে হয় সে ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনে পিএচডি করছে। বইটি পড়ার সময় এ প্রশ্নটি বারবার ঘুরছিল, শুধুমাত্র সুন্দরী হলেই কি যোগ্যতাসম্পন্ন ছেলের সঙ্গে বিয়ে হওয়া সম্ভব? বইয়ের শুরুর দিকে, জহিরের সাথে তরুর আলাপচারিতা থেকেও বিষয়টা আরও পরিষ্কার হয়। যেমন তরু বলে, একটা মেয়ের কেমন বিয়ে হবে কী রকম বর হবে তা নির্ভর করে মেয়েটা দেখতে কেমন। মেয়েটি বুদ্ধিমতি কি-না, পড়াশুনায় কেমন, তার মনটা কেমন এইসব দেখা হবে না।

হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাসের নায়িকারা বেশিরভাগ সময়ই প্যাসিভ ভূমিকায় থাকে। সবসময়ই তাদের প্রেম ভালবাসায় আকণ্ঠ ডুবে থাকতে দেখা যায় তাও আবার পুরোটাই মনে মনে। কোনো নায়িকাই সরাসরি নায়ককে ভালবাসার কথা জানাবে না। জানালেও সেটি আবার মিথ্যা কথা বলে চালিয়ে দেবে।

এরপর আসা যাক, বইয়ের আরেক চরিত্র আসমানীর দিকে। স্বামী হিসেবে আমেরিকা প্রবাসীকে নিয়ে তার আবেগ অনুভূতি ছিল তা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু আরেকজনের সঙ্গে বিয়ে ঠিক হওয়া এবং মনের ভাব আদানপ্রদানের পরেও কিভাবে যে ছেলেটা তাকে ছেড়ে গিয়েছিলো, সে ফিরে আসতেই বর্তমানকে এক লহমায় ভুলে যাওয়া সম্ভব, তা শুধু আসমানীর স্রষ্টাই জানেন। একজন নারী কী পুরোটাই আবেগের পুতুল মাত্র? তার নিজস্ব বিবেক বিবেচনা বলতে কিছুই নেই? স্বামী ফিরে আসার পর যৌক্তিক কারণ দেখালেই সেটি গ্রহণ করতে হবে?

দিনের শেষে বইটির শেষে একগাদা দুঃখ আরোপ না করলে এটি আরও স্বাভাবিক হতো বলে মনে হয়েছে। পরিস্থিতি যদি একান্তই ডিমান্ড করে ট্র‍্যাজিক সমাপ্তি, সেক্ষেত্রে ট্র্যাজেডি দেওয়াই যায়। কিন্তু পাঠককে দুঃখবিলাস করতে এই অকারণ ট্র‍্যাজেডি বেশ হাস্যকর। বইটা পড়ে মনে হয়েছে, লেখকের ইচ্ছা করছে না বলেই মাঝপথে লেখা শেষ করে দিয়েছেন। বইয়ের শুরুতে যে গুরুত্ব ছিল, শেষে তার ছিটেফোঁটাও দেখা যায়নি।

‘দিনের শেষে’ বইটি বেশ সম্ভাবনাময় ছিল। কয়েকটি চরিত্র যেমনজহির, অরু, তরু, মামী, করিম সাহেব, আজাহার, আসমানী  নিয়ে আরও কাজ করতে পারতেন লেখক। তার প্যাকেজ নাটক আর উপন্যাসগুলোর মধ্যে পার্থক্য একটাই। নাটকে জোর করে হলেও নায়ক-নায়িকার শুভ পরিণয় হবে আর উপন্যাসে ঠিক তার উলটো চিত্র।

হুমায়ূন আহমেদ বাংলাদেশের অত্যন্ত জনপ্রিয় লেখক। তার বহু সৃষ্টিকর্ম আমি উপভোগ করেছি, ভালবেসেছি এবং হৃদয়ে ধারণ করেছি। ভবিষ্যতেও করবো। তবে আফসোসের কথা এটাই, লেখক তার চমৎকার লেখনশৈলী যদি আরেকটু সচেতনভাবে ব্যবহার করতেন, তাহলে হয়তো বাংলাদেশ তার কাছ থেকে আরও কিছু অসাধারণ সৃষ্টিকর্ম পেতে পারতো।