ঈশ্বরের দিকে

|| ১ ||
ঈশ্বর আমার পাশে পাশে হাঁটেন, চিরনির্জনের
দেশে আমাদের যখন দেখা হয়! আমরা তখন
ব্যাকুল, কল্পনা পেরিয়ে এতদূর দেশে এসেছি।
এখানে ভালো লাগছে, কেননা ঈশ্বরের সান্নিধ্য
অন্য কোথায় কী ভাবে পেতাম। মানুষ কতো
কী করে, ঈশ্বরের দেখা পেতে! অথচ সহজ
পাওয়ার দেশে কতো সহজে উনার দেখা মেলে।
এই যে চিরনির্জন সেই দেশ, ইহা স্বর্গ নয়।
স্বর্গ যে সাধুদেরই স্থান। ওখানে আমার যাওয়া
সমীচীন নয়। আমি ঈশ্বরের সাথে… কেননা
অপ্রতিহত পেয়েছি উনাকে!
|| ২ ||
ঈশ্বর পৃথিবীর সকল নদীর পাড়ে থাকেন,
চিরপ্রবহমান। স্নান সেরে প্রতিদিন আমাদের
দেখা হয়। উনি আমারে নির্জনের শিক্ষা
দিতে থাকেন। সবাক হওয়ার পর প্রথম
বচন যেদিন তিনি শিখিয়েছিলেন, আমার
পুলক তখন নক্ষত্রগুলার সমান দূরবর্তী হয়ে
জ্বলেছিল। এই দূরত্বের নাম উনি দিয়েছিলেন—
ঈশ্বরসমান। আমি শিখেছিলাম, জলে হরিণ
মুখ লাগাতেই তা মুক্ত হয়ে ওঠে। নারীরা গা
ধুতে গেলেই জল পবিত্র হয়ে ওঠে। আরও
শিখেছিলাম, বচন শেখার পর বচন দিতে হয়
পৃথিবীকে—ঈশ্বরের নাগালের বাইরে যাওয়া
যাবে না। কেননা ঈশ্বর অপ্রথাগত। অবিনশ্বর
ঈশ্বরের তুতোভাই
|| ৩ ||
ঈশ্বর হতে চেয়েছি, মানুষ নয়। তবু মানুষ
হিসাবে যখন এসেছি, মেনে নিয়েছি। এভাবে
পৃথিবী প্রদক্ষিণ করে যাচ্ছি। আমার যন্ত্রণা
বুঝে ঈশ্বর এসেছেন। বলেছেন—ঈশ্বর হওয়া
খুব সহজ। শুধু দূরত্বের বগলটুকু মেপে যেতে
হবে। তারপর থেকে আমি যতই দূরে যাই
ঈশ্বর ততই কাছে আসেন। একপর্যায়ে ধরে
ফেলেন এবং ঈশ্বরত্ব লাভের কঠিন শিক্ষা
দিতে থাকেন। আমি ভুলে যেতে থাকি আয়ু,
নক্ষত্র, পৃথিবী। হাসতে হাসতে আমাকে তিনি
পরামর্শ দেন ক্ষমতারোগ থেকে দূরে থাকতে।
তা মানতে থাকার একপর্যায়ে আমি পৃথিবীতে
আবার ফেরত আসি।
|| ৪ ||
ঈশ্বরের নিজের কোন বিষাদ নাই। সব মানুষরে
গছায়ে দিয়া উনি ঝাড়া হাত-পা। যতবার আমাদের
দেখা হয়, এ বিষয়ে কথা বললে তিনি মৃদু হাসেন।
হাসিতে পৃথিবীতে যে পরিবর্তন ঘটে, তাতে ভূমিকম্প
হয়ে যায়। আমি কোনোভাবেই এর দুঃখ এড়াতে না
পেরে করুণ চোখে তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকি। তখন
ঈশ্বরের যথা-অস্বস্তি আমি খেয়াল করি। নিজের কোন
বিষাদ না থাকাতে আমার বিষাদে তিনি আক্রান্ত হন।
লক্ষ্য করি, কান্না বিষাদ হর্ষ সান্ত্বনা কোনোটাই উনার
অভিধানে নাই! তবে কি আমি বোবা-ঈশ্বরের কান্নার
প্রতিবিধান! আমি আরক্ত-আয়নার ঈশ্বরকে ভালোবাসি।
|| ৫ ||
ঈশ্বর যখন এসেছিলেন, তখন সমুদ্র কেঁপেছিল।
আমার বাড়ির পাশের সমুদ্র। ঈশ্বর আর আমার
আলিঙ্গন সেই সমুদ্রের সামনেই ঘটেছিল। এরপর
সমুদ্র প্রত্যাশামাফিক আমার ঘরের সামনে প্রতিদিন
একটা একটা করে ঢেউ রেখে যায়। এভাবে অনেক
ঢেউ জমা হলে আমার নিজস্ব সমুদ্রে আমি ঈশ্বরকে
ডেকে বসাই। তিনি আমারে স্রোতের বিরুদ্ধে লড়াকু
হওয়ার শিক্ষা দিলেন এবং চেতনা, বিপ্লব ইত্যাদি
সম্পর্কেও অনেক কথাবার্তা বললেন। বোঝালেন,
ঢেউ কী ভাবে ওসবে উজ্জ্বল কর্তৃত্বের সৃষ্টি করে
এবং তারুণ্য কী ভাবে বিপ্লবের ভেতর তপ্ত শ্বাস
ছড়িয়ে দেয়!
কবিতাগুলো ভালো লাগলো। শুভেচ্ছা কবির জন্য।
Saidul Islam
জুন ০৫, ২০২৫ ০৮:০৮