পৃথিবীর পথে ও অন্যান্য কবিতা

অ+ অ-

 

 

পৃথিবীর পথে

কে জানে, আমিই কি-না সুদূর নীহারিকা হতে 
বিচ্ছুরিত কিছু আলো, অনাদি কালের পিঠে চড়ে
পৌঁছেছি সবুজ ঘাসের পৃথিবীতে, 
তোমার সম্মুখে আজ
মাঠের বুকের প’রে রেখে পিঠ আমার—
বৃথাই মেপেছি এ জনমের দ্রুতি।

আরও পথ পাড়ি দিয়ে, যাবো শেষে কোন দেশে 
জানি না তা আমি, জানে না তা কেউ;
এ জীবন নূনের দানা থেকেও ছোট
পাড়ি দেওয়া কঠিন, এ সময়ের ঢেউ!

 


চলে যাওয়া বলে কিছু নাই

চলে যাওয়া বলে কিছু নাই, 
নাই কিছু চিরতরে রাখারও
তুমি যাচ্ছো চলে, বিদায় বিদায় বলে, যাও
ফিরে আসবে তুমিও, ভিন্ন হয়ে অন্যের কাছে
যেমন—ফিরে এসেছে জুলিয়েট, জুলেখা আর রাধাও
ফিরে তোমাকে আসতেই হবে
কেন না চলে যাওয়া বলে কিছু নাই।

যে সকল কথা চলে গেছে তোমার-আমার হতে বহুদূরে
যে সকল স্মৃতি ডুবেছে মদের গেলাসে
চারমিনারে পুড়েছে যতো দীর্ঘশ্বাস
ফিরেছে তারাও অন্যের মুখে, ভিন্ন মস্তিষ্কে হাওয়া বদল করে
যে সূর্য ডুবেছে কাল প্রিয়ার দুঃখ দ্যাখে দ্যাখে
দেখো চেয়ে আজ ফিরে এসেছে সেও
একই আলো, রৌদ্রময় দিন চলে যায়—ফিরে আসে ফের
কেন না, চলে যাওয়া বলে কিছু নাই।

চলে গেছে যারা বহুদিন আগে, এ গ্রহের হতে দূরে
ভিন্ন কোনও গ্রহে, ফিরে আসে তারাও অন্য কেউ হয়ে
অন্য নামে, অন্য গাঁয়ে, ঘর-সংসারে।
যে রাত চলে গেছে আমাদের দুখের স্মৃতি সয়ে
সে রাত দিয়ে গেছে অচেনা কাউকে সুখ, হাতের পরিশন
ফিরে আসবে সে রাতও
সাক্ষী হবে অন্য কোনো দুঃখ কিংবা সুখের, চলেও যাবে
কিন্তু, ফিরে আসবে!

তুমি যাচ্ছো যাও, কতোদূর যাবে আর বলো?
তোমাকেও ফিরতে হবে, হয়তো সোনালি চিল হয়ে।
শালিকের বেশে, রাজহংসের মতো
ধানের সবুজের সাথে মিশে যেতে
ফিরে আসতে হবে তোমাকেও
ফিরে এসে চলে যাবে ফের ক্ষাণিক সময়ের লাগি।
কেন না, চলে যাওয়া বলে কিছু নাই
নাই কিছু চিরতরে রাখার
আসা-যাওয়ার এ লীলায় তুমি আমিও অংশীদার।

ফিরে আসে সব মায়ায়, ভালোবাসায়, দুঃখে, হাসিতে
হাওয়ায় দোল খেতে খেতে ভেসে যায় অনেক দূর
ফিরে আসে আবার
তোমার পালাবার জায়গা নেই!

 


নদীর কাছে, পাখির কাছে

নদী, তুমি সাথে করে আমারেও নাও
তোমার অথৈ জলে আমারে ভাসাও।

পাখি, মোরে দিয়ে দাও ডানা দুটি তবো
আমারও যে সাধ জাগে ভোরে পাখি হবো।
আঙিনায় গেয়ে যাবো প্রভাতের গান
কিচিরমিচিরে মাত হবে আসমান।

নদী, তুমি তবো বুকে মোরে দাও ঠাঁই
পুড়ে যাওয়া বুক মোর একটু জুড়াই।