কমিউনিস্ট পার্টির গোড়ার কথা

অ+ অ-

 

প্রথমা প্রকাশ করেছে পশ্চিমবঙ্গের লেখক ও সাংবাদিক গৌতম রায়ের গবেষণাপ্রন্থ পূর্ববঙ্গের কমিউনিস্ট পার্টি: গোড়ার কথা (১৯৪৭-১৯৬৭)। বাজারে নানা স্মৃতিমূলক প্রবন্ধগ্রন্থ থাকলেও কমিউনিস্ট পার্টির ইতিহাস নিয়ে তেমন বই নেই বললে চলে। সেই ক্ষেত্রে গৌতম রায় প্রণীত বইটি রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। লেখক নিজেও এই রাজনৈতিক আদর্শে সক্রিয় ছিলেন। ফলে লেখক বইটিতে কমিউনিস্ট পার্টির সদর-অন্দরের নানা ঘটনা, পার্টির জন্মকথা, মতাদর্শিক লড়াইয়ের সফলতা-ব্যর্থতা, উত্থান-পতন, চ্যুতি-বিচ্যুতি, সময়ের বাঁকে বাঁকে কমিউনিস্টদের ঐতিহাসিক ভূমিকা, বিপুল আত্মত্যাগের অনুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করেছেন নৈর্ব্যক্তিক ভঙ্গিতে। ইতিহাসের নানা প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে লেখক নির্মোহ থাকার চেষ্টা করেছেন।

বইটির শুরু ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির জন্মকথা দিয়েই। ১৯২০ সালের ঘটনাসোভিয়েত ইউনিয়নের তাসখন্দে গঠিত হয়েছিল অবিভক্ত ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি। সে সময় ভারতীয় সংবাদপত্রে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলার প্রতিবেদন প্রকাশের মাধমেই পার্টির অস্তিত্ব লোকগোচর হয়। মূলত বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রামের ভেতর থেকেই এই বিপ্লবী পার্টির জন্ম। দ্বিতীয়ত, এই বিপ্লবী রাজনীতিকে প্রভাবিত করেছিল ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লব। বাংলার অনেক তরুণ সে সময় উজ্জীবিত হয়ে দলে দলে কমিউনিস্ট পার্টিকে যোগ দেন। তারপর নানা ঘাত-প্রতিঘাত, চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে এই দলটি অগ্রসর হয় কখনো প্রকাশ্যে, আবার কখনো গোপনে। লেখক গৌতম রায় ইতিহাসের সেসব ঘটনাবলি লিপিবদ্ধ করেছেন। 

বইতে সন্নিবেশিত হয়েছে কমিউনিস্ট পার্টির জন্ম ও বিস্তার, বাংলা ভাগ ও কমিউনিস্ট পার্টির ভূমিকা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় কমিউনিস্টদের প্রগতিশীল ভূমিকা, ১৯৫২ সালে বাংলা ভাষা আন্দোলন ও ছাত্র ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠা, পাকিস্তান আমলে কমিউনিস্ট পার্টির লড়াই-সংগ্রাম, রুশ-চীন বিভাজনের ভেতর কথাসহ নানা তথ্য, উপাত্ত ও নানা ঘটনা প্রবাহ। লেখক প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরের ঘটনাবলি দিয়ে শুরু করেছেন, শেষ করেছেন ষাটের দশকের সামরিক শাসনবিরোধী রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের বিশ্লেষণ দিয়েই। মোটাদাগে বইটিতে আছে কমিউনিস্ট পার্টির পাঁচ দশকের লড়াই-সংগ্রাম, মতার্শিক অর্জন, উত্থান-পতনের প্রধান প্রধান ঘটনার ইতিহাস। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী মাসুক হেলাল। মূল্য রাখা হয়েছে ৬২০ টাকা।