কুসুমবালার মুড়ি ও অন্যান্য কবিতা

অ+ অ-

 

প্রাতঃভ্রমণের ঘোর

যেদিকে দুচোখ যায় ছুটে যাই ভোরের ব্যাকুলে
ঠিকানা জানি না বলে গতি বাড়ে মাঘের সুদূরে 
কোথাও কুয়াশা গাঢ় জমে থাকে দেওয়ালের প্রায়
সবুজ গাছের গায়ে লেপ্টে থাকে শীতের আস্তিন 

গ্রামের নরম পথ চওড়া হয় যত যাই সবুজের ভীড়ে
সুয়াবিল পাইন্দং ভুজপুর রূপকথা-রাজ্য জেগে ওঠে 
হালদার জলের ‘পরে পশমি চাদর যথা কুয়াশা কুণ্ডলি 
শুয়ে থাকে, ব্রিজের তলায় যেন মেঘেদের যত ঘরবাড়ি

গাড়ির কাঁচের গায়ে শিশির বিন্দুর মতো এসে জমে
জনহীন প্রান্তরের হু হু বওয়া বাতাসের তীব্র আর্তনাদ 
তারপর অশ্রুর আদলে সব দুঃখ গড়িয়ে পড়ে নীচে
নিজেকে বিলীন করে পথে পথে অর্থহীন ধুলির আঁচলে

ছুটে চলি শিমুল সুপারি তাল গাছেদের মৃদু ইশারায় 
কাঁঠাল পাতার ফাঁকে জমে ওঠা দুখী শিশিরের খুব কাছে
খেজুর গাছের গায়ে ঝুলে থাকা রসের হাঁড়ির স্বেদে, কতো
মামদো ভুতের খোঁজে ছুটেছি বটের যতো ঝুরির আড়ালে 

যখন কৃষক ঠেঁসে ধরে লাঙলের ফলা মাটির গভীরে
পূর্বাকাশ লাল করে লাফ দিয়ে সূর্য উঠে ছড়িয়েছে মায়া 
অকস্মাৎ চারপাশে শিহরিত আনন্দের দারুণ উৎসব 
আমিও চলেছি ছুটে যেদিকে দুচোখ যায় ভোরের বিলাসে 

 

এসো

এসো
শিশুদের ঘুমটা পাড়িয়ে এসো একা
চলে যাবো দূর কচুবনে 

পাশে 
শ্যাওলা ভরা পুকুরে সাঁতরে বেড়ায় বুনোহাঁস

চলে যাবো হালদা নদীর পাড় 
যেখানে বাতাস বহে কথা কয় কানে কানে কিন্নরী যেমন

একান্তে অনেক কথা বলার আকুতি 
রাবার বাগানে 
পাতার মর্মর ধ্বনি তোমার কন্ঠের জাদু

চলো যাই 
ছুটে যাই যেমন মার্বেল কিংবা
সুতোকাটা ঘুড়ির ভঙ্গিতে

আজ
চলো উড়ি 

 

কুসুমবালার মুড়ি

গরম চায়ের মধ্যে
মুঠোভর্তি কুসুমবালার মুড়ি 
কিছুটা ক্রিসপি কিছু নরম কোমল

চামচ কেটে চা খেতে খেতে 
অবশিষ্ট কিছুই থাকতো না
ফুরুৎ টানবো বলে

সেই বালুপোড়া ঘ্রাণ আহা !

এখন মেশিনে তৈরি মুড়ি 
প্যাকেট প্যাকেট মেলে 
মেলে না কুসুমবালা 
মেলে না সে বালুর সুঘ্রাণ!

 

বৃষ্টি

রিকশাটা অনেকক্ষণ অপেক্ষায় 
তোমার ও মুষল বৃষ্টির জন্য

আমি তো ভিজেই যবযব 
ঘামে দরদর 
দৃষ্টি দূরে দুজনের প্রতীক্ষায় উৎসুক

চলে এসো লাল লিপস্টিক ঠোঁটে
সোনালু ফুলের রঙে জামা গায়ে 

এসো ঝুম বৃষ্টি 
কুকুর-বেড়াল বৃষ্টি
আকাশ আঁধার করে

হুড খোলা রিকশায় 
না পর্দা না ছাতা 
ভিজতে বেরুবো আজ
ইলেকট্রিকের তারে বসা কাকের দুজন