মার্কিন কবি সান্দ্রা লিমের কবিতা
সান্দ্রা লিম
সান্দ্রা লিম কোরিয়ান-আমেরিকান কবি, প্রাবন্ধিক ও অধ্যাপক। জন্ম কোরিয়ার সিউলে। বেড়ে উঠেছেন আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায়। তাঁর তিনটি কবিতা সংকলন প্রকাশিত হয়েছে—লাভলিয়েস্ট গ্রোটেস্ক [২০০৬], দ্য কিউরিয়াস থিং [২০২১] এবং দ্য ওয়াইল্ডারনেস [২০১৪]। সান্দ্রা লিম ২০২৩ সালের জ্যাকসন কবিতা পুরস্কার এবং ২০১৩ সালের বার্নার্ড মহিলা কবি পুরস্কার বিজয়ী। তিনি একজন গুগেনহেইম ফেলো, আমেরিকান একাডেমি অফ আর্টস অ্যান্ড লেটারস পুরস্কার, লেভিস রিডিং পুরস্কার এবং দুবার পুশকার্ট পুরস্কার অর্জন করেছেন। বর্তমানে তিনি ম্যাসাচুসেটস লোয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির অধ্যাপক। থাকেন ম্যাসাচুসেটসের কেমব্রিজে। প্রতিধ্বনির জন্য কবিতাগুলো বাংলায় অনুবাদ করেছেন লায়লা ফারজানা।
সান্দ্রা লিম: ছবি © ইয়াং সুহ
বসন্ত প্রথা
আবছায়া গ্রীষ্ম।
স্যাঁতস্যাঁতে আঁধারে আমার হাত দেখে গণক।
সেই বসন্ত আমাকে পরিপূর্ণতা দেয়নি।
উদ্দেশ্যহীন এবং অসংলগ্ন বোধ নিয়ে
আমি দেখতে গিয়েছিলাম বসন্ত প্রথা।
মূলত আমি দেখতে গিয়েছিলাম শিল্প প্রকৃতপক্ষে কী?
মানুষ আসলে কেমন?
আমি দেখতে চেয়েছিলাম গতির আকৃতি,
শরীরের গতিপথ যাকে নির্মাণ করে সীমিত পরিধিতে,
অন্তর্নিহিত কেন্দ্রকে ঘিরে।
বসন্তের ফুল ফোটাতে আমৃত্যু নেচে চলে কুমারী বালিকা।
মুক্ত-শ্লোকের ছন্দ, আচার-অনুষ্ঠান, কর্মের স্পষ্ট সিদ্ধান্ত।
আমি মূলত দেখতে গিয়েছিলাম
অগণিত মনুষ্য-রীতিতে মানুষ আসলে কেমন?
জীবন থেকে এই সমস্ত অঙ্গভঙ্গি, বিকৃতি,
অবারিত কল্পিত সঙ্গীতের অনুসরণ।
সে আমার ভাগ্য সম্পর্কে নির্দিষ্ট করে কিছু বলে না,
আবার অস্বীকারও করে না,
কিন্তু সেটা তার ব্যবসার জন্য ভালো, যেভাবে
জীবনের সাফল্যাঙ্কে এবং ভবিষ্যত গন্তব্যের মোহে
সে আমাকে সম্মোহিত করে রাখে।
তার হাত গোনা যেন টান-টান উত্তেজনাকর কোনো চলচ্চিত্র:
আমি শুধু যার শেষ জানতে চাই।
তারের ওপাশে
যখন তার ডাক এলো, খেলায় আবেগের সংখ্যা ছিল ২৬১।
আমি ভেবেছিলাম শুধু ধীশক্তি, অপমান আর তিক্ততা বাকি আছে
কিন্তু, আমি এখন সংখ্যার উজ্জ্বলতা দেখতে পাই।
আবেগ ৭৫ এবং ৭৮,
আমি আনন্দিত শুধু এটুকু জেনে যে তারা ছিল।
ক্রমশ ম্রিয়মান নিঃসঙ্গতায়
আরো দুর্ভেদ্য হয়েছিলাম আমি।
আমাকে উদ্দীপ্ত করেছিল ১৫২-এর অস্তিত্ব।
কিন্তু, ৯, ১৪ এবং ১৭৯-কে কি মেনে নেওয়া যায়?
কষ্ট, অসহায়ত্ব ছাড়াও ভাল কিছু আমাদের প্রাপ্য।
‘ছিম ছিম’-এর মতো আমার ভিতরটাকে উন্মুক্ত করে,
একটি ছোট পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছিল ২৬০:
কুয়াশায় চোখ মেলে, আর্তচিৎকারে আমি ছিঁড়ে ফেলেছিলাম
২৬১ আর ৪-এর খোলস।
নিশ্চয়তা
হয়তো তুমি শিশুদের বলে দিতে পারো,
পৃথিবীটা তারচেয়েও বেশি সুন্দর,
যতটা ধারণা করা যায়।
তারপর তাদের উন্মুক্ত করে দিতে পারো,
তাদের ভবিষ্যতের কাছে,
যেখানে দূরত্বে গাছের কালো সারি।
হঠাৎ করেই শীতের মাঝামাঝি সে মারা যায়,
ঠিক সেই বিছানায় যে বিছানায় তার স্বামী কয়েক বছর আগে মারা গিয়েছিল;
দেহের ভারে দেবে যাওয়া বিছানার সে পাশটা এখনও ঝুলে আছে।
দ্বিতীয় স্বামী প্রথম পরিবারের সঙ্গে জাপানেই থেকে গেছে।
সে বলত, আমার তিন মেয়ে একা নিজেদের কিভাবে সামলাবে?
আমি ভাবতে পারি না!
আমার মা তার অশ্রাব্য সুরের বাগানের মেঝ মেয়ে।
তারা চারজন সিউলের একটি গড়পরতা বাড়িতে থাকত।
আমার নানীর একটা হলদেটে ছবি এখনও আছে;
মুখ ক্যামেরা থেকে সরে গেছে,
যেন খরগোশ শিকারিকে টের পেয়েছে;
তাকে বলা হতো ‘একাকী-আহারী’, ব্যক্তিগত, অভ্যন্তরীণ।
জানি না সে এই বিশ্বকে কী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যা পূরণ করতে পারেনি?
একটি শিশু হঠাৎ অনুভব করে অভিজ্ঞতার সীমানাগুলো তার মধ্যে জাগ্রত:
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় আমার মা এতো কেঁদেছিল যে টানা কয়েকদিন
সে তার হাত অনুভব করতে পারেনি,
স্বাভাবিকভাবেই ব্যাখ্যা করা যায়,
কিভাবে সে নিজেকে নগ্ন, অর্থহীন আঁচড়ে ক্ষতবিক্ষত করেছিল।
তুমি সবসময় ভেবেছ এগুলো তোমার বিষয়বস্তু: ভাগ্য,
নিজেকে অ্যাসিডে ডুবিয়ে নেতিবাচক আনন্দ।
তুমি ভেবেছ এগুলো তোমাকে সরলতা থেকে উদ্ধার করবে,
দরজায় দাঁড়িয়ে আমার মা মন্তব্য করেছিল,
কিন্তু শিল্পের টেক্কা কূপমণ্ডুকতা নয়।
আমি অবুঝ শিশু নই। এমনকি আমি এখন আর শিশুও নই,
প্রথমে তার দ্বিধা, তারপর তার দৃঢ়তা, প্রবল নিশ্চয়তা,
সেই ক্ষতি অর্থহীনই শুধু নয়, দুঃখজনকও।
আমার মা যখন নিঃসঙ্গ বোধ করে, সে রাঁধে;
আর যখন খুশি হয়, সে জানে কিভাবে তা লুকাতে হয়।
বস্টন
চাকরি নিয়ে চলে আসার পরে
তুষারপাত শুরু হল, ধীর এক বিষণ্নতা গ্রাস করতে থাকল আমাকে।
কেউ একজন আমার সিলিংয়ে পেন্সিলে আঁকা একটি নৌকো ফেলে গিয়েছিল,
আমি প্রতিরাতে তার দিকে তাকিয়ে থাকতাম,
ভাবতাম একদিন তাকে ভাসিয়ে দিতে পারব।
সেই বসন্তের প্রারম্ভে পরিচয় হয়েছিল একজনের সাথে।
তাকে ভালবাসতে পারিনি।
কিন্তু নারীত্বের পুরো যৌবন জুড়ে চেয়েছি কেউ একজন
সারাক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থাকুক।
পার্ককে ঘিরে
আমরা একে অপরকে বেশি কিছু বলিনি,
শুধু হেসেছিলাম,
কারণ আমাদের ভালবাসা ছিল অসাধারণ।
তুমি আমার পাঁজরের হাড় চুষে নিয়েছিলে
আর আমি বিড়ালের মতো চেটেপুটে খেয়েছিলাম আমার আঙুল।
এখন আমি সব জানি।
অতীতকে এড়িয়ে যাই,
কষ্টকর যে অধ্যায়, বয়ে চলে দীর্ঘ সময়।
এখন ভবিষ্যৎ: আমি হাসি,
কারণ আনন্দ অর্জিত হয়েছে সানুগ্রহে,
আর আমি জায়গা করে দিয়েছি ঘটে যাওয়া মৃত অতীতের জন্য
এবং যা এখনও ঘটেনি তার জন্য।
আমি উদার না হলেও স্বচ্ছ ছিলাম।
মুখ্য চরিত্র
একটা সময় আমি সব চাইতাম—
যখন দেখতাম আমার ভালবাসা ছিন্নভিন্ন হয়ে যাচ্ছে,
আমি বিষ নিঃসরণ করতাম।
কিন্তু এখন আমি সেই স্থূল, নিদ্রাকাতর ছোট্ট সেন্সরের গান গাই,
যে আমাকে প্রতিস্থাপন করেছে,
যার হতাশাই এখন এই ঘরের জীবন।
মানুষের হৃদয় কী ভালোবাসে? কী চায়?
পাড়ি দিতে হবে বহুদূর, বহুদূর,
এ গভীর তমসার রাতে!
চরম উল্লাস দুঃসাধ্য যখন হৃদয়:
আগ্নেয়গিরির নিক্ষিপ্ত পাথর।
কবিতা গুলো খুব মান সম্মত।
এস.কে খগেশপ্রতি চন্দ্র খোকন
জুন ২১, ২০২৩ ১৫:৩৯
Thank you
Laila Farzana
অক্টোবর ১৯, ২০২৩ ০০:৪৫