মারওয়ান মাখুলের আলোচিত কবিতা
ভূমিকার বদলে
মারওয়ান মাখুল ফিলিস্তিনি কবি, নাট্যকার ও শিল্পী। জন্মগ্রহণ করেন ফিলিস্তিনের গ্যালিলি অঞ্চলের বোকাইয়া গ্রামে, ১৯৭৯ সালে। তার পিতা ফিলিস্তিনি আর মা লেবানিজ। পড়াশোনা মারওয়ান আল-মুস্তাকবাল কলেজ থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক। এখন তিনি সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কাজ করছেন এবং একটি নির্মাণ সংস্থার পরিচালক। মারওয়ানের প্রথম কবিতার বই ২০০৭ সালে এক সঙ্গে বৈরুত এবং বাগদাদ থেকে প্রকাশিত হয়। ‘ল্যান্ড অফ দ্য স্যাড প্যাসিফ্লোরা’ শিরোনামের বইটির প্রকাশক আল-জামাল পাবলিশার্স। বইটি প্রকাশের পর তাকে বিপুল খ্যাতি এনে দেয়। একই বছর বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশ করে মাকতাবাত কুল শাই পাবলিশার্স। একই বইয়ের তৃতীয় সংস্করণ ২০১২ সালে কায়রো থেকে প্রকাশিত হয়েছিল। ২০০৯ সালে তিনি তার প্রথম নাটকের জন্য ‘দ্য একর থিয়েটার ফেস্টিভাল’-এ সেরা নাট্যকারের পুরস্কার জিতেছিলেন। ফিলিস্তিনের মুক্তির সংগ্রাম আর নির্যাতিত মানুষের পক্ষে মারওয়ানের কবিতা এখন আরব জগতের মুক্ত কণ্ঠস্বর। তার কবিতা ইংরেজি, তুর্কি, ইতালীয়, জার্মান, ফরাসি, হিব্রু এবং সার্বিয়ান ভাষায় অনূদিত হয়েছে। বর্তমানে তিনি বসবাস করছেন মালোত তারশিহা নগরে।
সম্প্রতি ‘পোয়েটস্ অফ দ্য প্ল্যানেট’ কাব্য আন্দোলনের সূত্রে ফিলিন্তিনের এই জনপ্রিয় কবির সঙ্গে প্রতিধ্বনির সম্পাদকের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। সানন্দে তিনি প্রতিধ্বনির জন্য স্বকণ্ঠে কবিতার আবৃত্তির ভিডিও পাঠান। আমরা মারওয়ান মাখুলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। ইসরাইল-ফিলিস্তিনে আমরা মানবতার চরম বিপর্যয় চাই না। যুদ্ধ চাই না। ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী মানুষের প্রতি সংহতি জানাই। আমরা প্রতিধ্বনিতে তার দুটি আলোচিত কবিতার অনুবাদ উপস্থাপন করছি। কবিতাগুলো অনুবাদ করেছেন কবি ও প্রাবন্ধিক সাখাওয়াত টিপু। সঙ্গে পরিবেশন করছি তার পাঠানো স্বকণ্ঠে ‘নতুন গাজা’ শিরোনামের কবিতা আবৃত্তির ভিডিও।
রাজনীতি আর কবিতা
আদেশ এলো কবিতা লিখতে হবে অরাজনৈতিক
অবশ্যই আমাকে শুনতে হবে পাখিদের গান
আর যাতে পাখিদের গান শোনার জন্য
অবশ্য নীরব থাকবে যুদ্ধবিমান।
নতুন গাজা
সময় খুব অল্প
আর দেরি করো না মাতৃগর্ভে
তাড়াতাড়ি আসো না ছোট্টমনি
আমি তো তোমার জন্য অপেক্ষা করছি
তবে তো যুদ্ধের দামামায়
আমার ভয় তুমি যদি দেখতে না পাও
তোমার দেশটা যেমন তোমার জন্য চাই।
….
তোমার দেশ তো মাটি নয়
নয় তো সাগর যে আমাদের ভাগ্য আর মৃত্যুর বার্তা দিয়েছিল:
এরাই তোমার লোক।
আসো জেনে নাও
বোমা বিস্ফোরিত হওয়ার আগে
আর আমি বহু কষ্টে গুছিয়ে রেখেছি স্মৃতি
তোমার জানার জন্য, যারা চলে গেলেন তারা খুব সুন্দর
আর নিষ্পাপ।
তাদের সন্তানগুলো ঠিক তোমারই মতো
তারা পালিয়েছিল
মৃত্যুর হিমশীতল ভয় থেকে
প্রতিটি অভিযান থেকে যেন এতিমের
জীবন পাওয়ার মতো।
….
হয়তো তুমি আগে নয় তো পরে
বিশ্বাস করবে আমাকে আর বিশ্বাস করবে
এই সেই এক দেশ জনমানবহীন
আর আমরা যেন কখনো ছিলাম না এখানে।
দু’বার বিতাড়িত, তারপর আমরা লড়েছি
আমাদের ভাগ্যের বিরুদ্ধে
পঁচাত্তর বছর ধরে
একবার ভাগ্য বদলালো বদনসিবে
আর আশা হলো ধূসর।
….
বোঝা খুব ভারী
তোমার বয়ে নেওয়া কঠিন
আমি জানি, আমাকে ক্ষমা করবে জগলা-হরিণের মতো
জন্ম দেওয়ার জন্য, আমি ভীত
খাদের আড়ালে লুকিয়ে থাকা হিংস্র হায়েনাদের জন্য
আসো তাড়াতাড়ি তারপর দৌড়াও
যতদূর পারো তুমি
কারণ আমি বিধ্বস্ত নই অনুশোচনায়।
….
গেল রাত, হতাশায় ক্লান্ত আমি
বললাম আমি, শান্ত হও।
তার জন্য কি করার আছে?
আমার ছোট্ট শিশু, বাতাসের শিশু,
ঝড় তাকে কিভাবে রাখবে?
তবে আজ আমি ফিরতে বাধ্য হলাম
দুঃখের সংবাদ শুনে:
গাজার ব্যাপ্টিস্ট হাসপাতালে তাদের বোমা হামলায়
নিহত ৫০০ জনের মধ্যে ছিল এক আহত শিশু
যে তার ভাইকে ডাকছে, দেহ হতে বিচ্ছিন্ন মাথায়
চোখ খোলা, ‘ভাই আমার!
তুমি কি আমাকে দেখছো?’
সে তাকে দেখতে পায় না
ঠিক উন্মত্ত দুনিয়ার মতো
দু’ঘন্টা নিন্দা জানিয়ে তারপর চিরনিদ্রায় সে
নিজেকে ভুলে
তার ভাইকে ভুলে আর
নিজের দিকে না তাকিয়ে।
….
এখন তুমি কি বলবে?
ধ্বংস আর বিপর্যয় বোনেরা
উভয়ে বিভীষিকা আর ক্রোধ নিয়ে আমাকে আঘাত করে
যতক্ষণ না আমার ঠোঁট কাঁপছে আর তার থেকে বাদ দেওয়া
হচ্ছে মৃতদেহের সম্ভাব্য সব ধরনের
প্রতিশব্দ।
যুদ্ধের সময় কোনো কবির ওপর ভরসা রাখতে নেই
সে যদিও কচ্ছপের মতো ধীর
ব্যর্থ মনোরথে গণহত্যার ময়দানে
যে খরগোশের মতো লাফায়।
কচ্ছপ যেমন হামাগুড়ি দেয়
আর খরগোশ লাফায় অপরাধ থেকে অপরাধে
যতদূর আছে অর্থোডক্স চার্চ, এখন বোমা বিষ্ফারিত হলো
প্রভুর চাক্ষুষে যিনি এইমাত্র এলেন
একটি মসজিদ ধূলায় মিশিয়ে তারা লক্ষ্য করে
গেলেন ত্রাণকর্তা রূপে আশ্রয়কেন্দ্র। ত্রাণকর্তা কোথায়
যখন আমাদের পিতা স্বর্গে মোহিত থাকেন আসলে উড়োজাহাজে
একা একজন আর যার কোনো অংশীদার নেই
পার্শ্বদেশের একজনকে রক্ষা করেন যিনি আমাদের দিকে বোমা মারেন
কিন্তু আমাদের প্রার্থনার ঘরকে লক্ষ্য করে।
প্রিয় সন্তান, ক্রুশবিদ্ধ এখন
যেখানে সব নবীর জন্য অনেক প্রসাদ আছে।
প্রভু সবই জানেন
কিন্তু তুমি আর তোমার মতো নিষ্পাপ ভ্রূণ
এখনো জানে না।
► ফিলিস্তিনের কবি মারওয়ান মাখুলের আবৃত্তি শুনতে নিচের ইমেজে ক্লিক করুন।
► সাবস্ক্রাইব করুন প্রতিধ্বনির ইউটিউব চ্যানেল।
নতুন গাজা কবিতাটি অসাধারণ। জীবন ও যুদ্ধ ক্ষেত্রে মানুষের ভয়ের সীমা নেই। একজন গর্ভবতী নারী তার সন্তানের জন্য কেমন পৃথিবী রেখে যাচ্ছেন, তার দুর্দান্ত শ্লোকগাঁথা এক কবিতা!
হাবীব রহমান
নভেম্বর ২৩, ২০২৩ ১৯:৫৬
প্রথম কবিতাটি আমার অসাধারণ লেগেছে। পরেরটি কবিতাটি বুঝতে কয়েকবার পড়তে হয়েছে।
Anwar Hossain Biswas
নভেম্বর ২৩, ২০২৩ ১৫:২৯