ওহে গোপন ও অন্যান্য কবিতা
সাজেকভ্যালি
আজ রাতে মোনঘরে পূর্ণিমার ভোজন উৎসব
কমলা বাগান থেকে ঘুরে এসে সন্ধ্যায় এখানে মিলবে
অপরিচয়ের পাট সাঙ্গ করা হাতছোঁয়া দূরত্বের চাঁদ,
কুয়াশার নৃত্যগীত, তারাদের আদিম উল্লাস
মৌন সাজেক জুড়ে সন্ধ্যারাতে অকস্মাৎ ধাতব শব্দ,
পাহাড়ের গহীন খাদে উদ্ভ্রান্ত ক্রন্দনের রোল
রক্তের গন্ধ শুঁকে নেমে আসে বুনো শুয়রের পাল
বাতাসের ধাক্কা লেগে কেঁপে ওঠে, কেঁদে ওঠে স্ত্রৈণ সাহস
রাতের কুয়াশা গলে চাঁদ এসে বসে থাকে দূরের পাহাড়ে
ভোরের আলোয় স্থিরচিত্রের মতো চুপচাপ কংলাকপাড়া
তারও পরে ঘর ছেড়ে বের হয় কেউ কেউ
পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে বুনতে যায় শস্যদানা
সুন্দরের খোঁজে আসা লোকজন খিলখিলিয়ে হাসে
এ পাড়ার শিশুদের বুড়োদের মাস্টারনি রোজমেরি
টংঘরে মেঝেতে বসে আমাদের এগিয়ে দেয় গাছপাকা কলা
বাতলে দেয় অরণ্যের পথ আর অপথের দিশা
অচেনা পাখির শিষে বিভ্রান্ত না হওয়ার সমূহ উপায়
ওহে গোপন
ওহে গোপন, ভালো থাকো
যে চিঠি লেখার দিন পার হয়ে গেছে
অতীতের ঝাঁপি খুলে বসে
গোপন ইশারা মেখে সে চিঠি নতুন করে লেখো
এ চিঠি কাউকে তুমি পড়তে দিও না
এই নাও বেদনার খাম
খামের ওপরে লেখো সাংকেতিক নাম
ওহে গোপন, অপ্রকাশ্য থাকো
লুপ্ত গুহার ফাঁকে যে হরিণী পথ ভুলেছিল
তাকে বোলো, সে যেন নিশ্চল থাকে আর কিছুক্ষণ
আড়ালে লুকিয়ে থাকা শিকারির চোখে
সে যেন ধরা না পড়ে কখনো
এসেছি তোমার কাছে
চৌরাসিয়া ঘুমুতে দিচ্ছিল না রাতে
ঠান্ডায় কাবু হতে হতে ভাবছিলাম
বিগত কয়েকটা শীতে
আমাদের দেখা না হওয়ার কথা
ভোরে, পথের দুপাশ ঘিরে
ভাটফুলের আগমনী নৃত্যের মোহন মুদ্রা
স্মৃতিকে উসকে দিচ্ছে ক’দিন ধরে
ইদানিং বাঁশি খুব টানছে
বাজাতে পারি না বলে বাঁশরিয়া খুঁজি
আমাদের যোজনদূর নৈকট্যে
স্পর্শের আকুলতা যত বাড়ছে
নিজের অক্ষম ঠোঁট তত বেশি প্রয়াসী
আমি যদি চৌরাসিয়া হতাম
রাতের গোপনীয়তা মুছে দিয়ে
অসীম উষ্ণতা ছুড়ে দিতাম তোমার ঠোঁটে
দেখো, বাঁশির শরীরে আজও পোড়াগন্ধ, দাগ
পুরনো এ বাঁশি নিয়ে সকাল সকাল
এসে বসে আছি
বাজাও, কাল রাতে এক ফোঁটা ঘুমোতে পারিনি
দেবপাহাড়
দেবপাহাড়ের চুড়োয়
ডুমুরফলের গাছ
অনেক বছর আগে
এই পাহাড়ে তোমার সঙ্গে স্মৃতি
এই পাহাড়ে আকাশ অনেক বড়
এই পাহাড়ে দুপুর পোড়া গান
এই পাহাড়ে উড়িয়েছিলাম ঘুড়ি
হাতে নাটাই মাঞ্জাবিহীন সুতো
পা ফসকে গড়িয়ে পড়ি ধুলোয়
আমরা তখন একুশ থেকে বাইশ
মনখারাপের ডায়রি পড়ি পথে
গোপন চিঠি প্রকাশ্য হয় কম
আজকে আবার দেবপাহাড়ে দুপুর
আকাশ ছোঁয়া অজস্র কার্নিশ
পথের ধারে সোনালু গাছ হলুদ
মাথার ওপর ধুলোর ওড়াউড়ি
চোখ জ্বলছে, অসময়ের বাতাস
সরে যাচ্ছে মরে যাচ্ছে উঠোনছোঁয়া রোদ
চলে যাওয়া অথবা ফিরে আসার রহস্য
একটা কাহিনি
দুয়েকটা মানুষ, বিরতিতে কিছু টানাপড়েন
তার মধ্যে ওপরে উঠবার একটা সিঁড়ি
নির্জনতা ভাঙার পর পরিত্যক্ত ঘরে
দু একটা সংলাপ শূন্যতার সামনে এসে দাঁড়ায়
একটা দরজা
বাইরে থেকে হাওয়া এসে শুয়ে পড়ে টেবিলে
কয়েকটা বাদুড় ঝুলে আছে সিলিংয়ে
নিজেকে দেখার একটা চশমা তখন গুরুত্বপূর্ণ
কোথাও কোনো শব্দ হলে ইশারা মোটেই যথেষ্ট নয়
একটা চুম্বন
ভোরের ম্লান আলো অথবা গোধূলির গান
চলে যাওয়া অথবা ফিরে আসার রহস্য
কখনো কখনো আড়ালে থাকাও খুব দরকারি
পাণ্ডুলিপিতে এসব লেখা থাকে না অনেক সময়
পড়ে গভীর আনন্দ পেলাম
মোশতাক আহমদ
এপ্রিল ১৩, ২০২৩ ১৪:২০