বোটে বয়স্ক-হিপি রেমন্ড ও চিত্রকর ভেরোনিকা

প্যারিস থেকে বেরিয়ে পড়েছি আজ। পুরানো একটি বার্জকে কনভার্ট করে বানানো হয়েছে নৌবিহারের শৌখিন বোট। প্রায় ঘন্টা খানেক হলো ভাসছি সেইন নদীর ভরা জলে। নদীটি প্রস্থে তেমন বড় কিছু না, তবে সুনাব্য, এবং জলের প্রবাহমানতায় গতি আছে প্রচুর।
বোটের ওপরতলার ডেকে রেলিংয়ের পাশে দাঁড়িয়ে তাকিয়েছিলাম, পাড়ে সমান্তরালভাবে চলে যাওয়া পিচঢালা সড়কের দিকে। এদিককার জীবনযাপনে প্যারিসের মেগা-মেট্রোপলিটান সুলভ বিপুল ব্যস্ততা নেই। মানুষ চলছে ঢিমেতালে। দেখি, সড়ক ধরে কথা বলতে বলতে ধীরেসুস্থে বাইসিকেল হাঁকাচ্ছে দুই তরুণ। তীরে বাঁধা অনেক দিনের ব্যবহারে মলিন দুটি বোটও।
আজকের নৌবিহারে আমি একা না। হোটেল-ডে-আর্টস নামে প্যারিসের যে সরাইখানায় হালফিল আমি দিনযাপন করছি, তাতে বসবাস করা বেশ কয়েকজন পর্যটকদের সাথে বোটে আমার চেনা মানুষ গারনেল সাহেবও আছেন। হোটেলের প্রোগ্রাম অরগেনাইজার ফরাসি তরুণী আডেলিনা আমাদের সঙ্গে চলছে। প্যারিস থেকে সামান্য দূরে, শ-দেড়েক বছর আগে বসবাস করতেন ইমপ্রেশনিস্ট ঘরানার জনা কয়েকজন নামজাদা চিত্রকর। তাঁরা এঁকে গেছেন বর্ণাঢ্য কিছু জলস্কেপ, নির্জন প্রান্তরের পাস্তর্যাল দৃশ্যপট, এবং বাগিচায় প্রস্ফুটিত কুসুমে আলোকিত রেখার বিন্যাস। আমরা ওদিকে নৌকা ভাসিয়ে যাচ্ছি, যে দৃশ্যপটের অভিজ্ঞতায় যাদুময় হয়ে উঠেছিলো তাঁদের ক্যানভাস, তা সরেজমিনে প্রত্যক্ষ করতে।
বার্জ নীরবে এসে ঢুকে অইসি নদীতে। একেবারে ছোট নয় শাখা নদীটি। তবে স্রোতে তেজ নেই তেমন। আমি চোখে আউল-সার্কোল শেইপের রোদ-চশমাটি লাগিয়ে বহমান জলধারার দিকে তাকাই। ধবধবে সাদা কয়েকটি বড়সড় ভাসমান হাঁসের শুভ্র পালক মুহূর্তে বিবর্তিত হয় বেগুনি জোৎস্নায়। আমি নদীটির শান্ত সমাহিত পাড়ের দিকে তাকাই। ছোট্ট এক ভাসমান জেটি, তাতে বাঁধা কেবল মাত্র একটি নৌকা। আমি হেঁটে বার্জের পিছন দিকে চলে আসি।
নদীর কিনারে ভাসছে ধবধবে সাদা হাঁস © ছবি: লেখক
আমাদের বিশাল বজরাকে সাবধানে পাশ কাটিয়ে সামনে বাড়ে ছোট্ট একটি পানতুন বোট। তার ছাদে বসে বিকিনি পরা দুটি মেয়ে কী কারণে জানি হেসে লুটোপুটি হচ্ছে। আমি চোখে বাইনোকুলার দিয়ে তাদের খুঁটিয়ে দেখতে গেলে, তারা বিষয়টি নজর করে। একটি মেয়ে খুব ফ্রেন্ডলিভাবে জোরে জোরে হাত নাড়ে, অন্য নারীটিও ছুড়ে দেয় উড়ন্ত চুমো। তাদের চেহারা-সুরত দেখে কেন জানি মনে হয় মেয়ে দুটি যমজ বোন। তাদের হাল্কা বোটটি দ্রুত চলে যায় বেশ দূরে।
আমি সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসি নিচের লেয়ারের কেবিনে। আডেলিনার বিশেষ বন্ধু বয়োবৃদ্ধ হিপি-পুরুষ রেমন্ড মিলার জানালার পাশে আরামদায়ক সিটে কুশন হেলান দিয়ে বসেছেন। তাঁর পনিটেইলের দুপাশে বটগাছের জুরি-নামা শিকড়ের মতো ব্রেইড করা দীর্ঘ চুলের একাধিক গুচ্ছ। চোখে হাইপাওয়ারের চশমাটি গড়িয়ে পড়তে পড়তে আটকে আছে নাকের ব্রিজে। রেমন্ড এর এক পাশে বসেছেন, হোটেল সূত্রে আমার মুখচেনা ক্রুকাট চুলের শক্তপোক্ত পুরুষটি। তার কপালে আটকে আছে লালচে শেডের সানগ্লাাস। অন্যপাশে বসেছেন, মোটর সাইকেল জ্যাকেট ও লেদারের স্কিন-টাইট প্যান্ট পরা তার আফ্রো-ফ্রেঞ্চ নারী-সঙ্গীটি। রেমন্ডের হাতে ধরা পুরানো ঝুরঝুরে একখানা ভারী পিকচার এ্যলবাম। তিনি তার দুপাশে বসা পুরুষ ও নারীকে ছবিগুলো কীসের তা বুঝিয়ে বলছেন।
রেমন্ডের পায়ের কাছে ফ্লোরে বসে একটি যুবতী মেয়ে মনযোগ দিয়ে আঁকছে তাঁর প্রতিকৃতি। আমার দিকে তাকিয়ে মেয়েটি মৃদু হাসে। স্পেন থেকে প্যারিসে আগত এ অভিবাসী চিত্রশিল্পীর নাম ভেরোনিকা। নৌভ্রমণের ঘোষণা দিয়ে কয়েকদিন আগে আডেলিনা সম্ভাব্য যাত্রীদের কাছে পাঠায় একটি তথ্যবহুল ইমেইল। তাতে ভেরোনিকার বিস্তারিত পরিচয় দেয়া আছে। ভেরোনিকা একশ ইউরোর বিনিময়ে নৌযাত্রীদের পোর্ট্রেট করে দেয়। তবে কী আডেলিনা তাকে রেমন্ডের পোর্ট্রেট আঁকার অনুরোধ করেছে?
রেমন্ডের চেহারা অবশ্য পোর্ট্রেটে দারুণ খুলবে। আবহাওয়া বিধৌত রেখাবহুল মুখ, কুঁচকানো কপাল ও রুদ্রাক্ষের মালায় তাঁকে দেখাচ্ছে বাউলের মতো বিদগ্ধ। ভেরোনিকা আঁকতে আঁকতে উসখুসিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আই কন্টাক্ট করে মৃদু স্বরে বলে, ‘তুমি চাইলে আমি একটু পরে তোমার পোর্টেট এঁকে দিতে পারি।’
আমি এ প্রস্তাবে তেমন একটা উৎসাহ দেখাই না, তবে ধন্যবাদ দিয়ে তাকে অবলোকন করি। হিস্পানিক এ নারী তার উর্ধাঙ্গে যা পরেছ, তা পোষাকের জগতে বাস্টিয়ার বলে পরিচিত। অত্যন্ত ক্লোজ ফিটিং স্ট্র্যাপলেস টপ পরার ফলে, তার ভরাট স্তন যুগল যেন শরীরী লাস্যে থেকে থেকে বিষ্ফোরিত হচ্ছে। আমার দৃষ্টিকে বোধ করি উৎসাহিত করার জন্য সে অত্যন্ত সিডাকটিভভাবে হেসে ফিরে যায় পোর্ট্রেটের স্কেচে।
আমাদের বিশাল বজরাকে সাবধানে পাশ কাটিয়ে সামনে বাড়ে ছোট্ট একটি পানতুন বোট। তার ছাদে বসে বিকিনি পরা দুটি মেয়ে কী কারণে জানি হেসে লুটোপুটি হচ্ছে। আমি চোখে বাইনোকুলার দিয়ে তাদের খুঁটিয়ে দেখতে গেলে, তারা বিষয়টি নজর করে। একটি মেয়ে খুব ফ্রেন্ডলিভাবে জোরে জোরে হাত নাড়ে, অন্য নারীটিও ছুড়ে দেয় উড়ন্ত চুমো।
আডেলিনার ইমেইলে এটাচড্ করে দেয়া ছিলো ভেরোনিকার ছোট্ট বায়ো। তা থেকে জেনেছি যে, মেয়েটির জন্ম হয় স্পেনের এক মফস্বল শহরের ব্রথেল সংলগ্ন নেইভারহুডে। তার বাবা কোন না কোন ক্রাইমে লিপ্ত হয়ে প্রায়শ বাস করতেন কারাগারে। ভেরোনিকার মায়ের মৃত্যু হয় ড্রাগসের অভারডোজে। গৃহহীন হয়ে বালিকা ভেরোনিকা রাত কাটাতো অর্ধেক তৈরি হওয়া একটি পড়ো দালানে। শহরের একটি ফোয়ারাতে সৌভাগ্যের প্রতীক হিসাবে পর্যটকদের ছুঁড়ে দেয়া ভাংতি পয়সা সে তুলে নিতো গার্ডদের অগোচরে। মাঝেমধ্যে সেক্সওয়ার্কাররা তাকে খুচরা টাকা দিয়ে পাঠাতো কনডম কিংবা ড্রাগস্ কিনতে, তাতেও ভেরোনিকার কিছু রোজগার হতো। তার বায়োতে মেয়েটি কীভাবে ছবি আঁকা শিখলো, বা কেন প্যারিসে আসলো, এ বাবদে কোন তথ্য নেই।
আমি ভেরোনিকাকে পাশ কাটিয়ে আরো দু-স্টেপ সামনে বাড়তেই, অ্যালবামের ছবি দেখানো বন্ধ করে রেমন্ড চোখ তুলে আমার দিকে তাকান। তখন খুব কাছ থেকে তাঁর মুখের রানডাউন হালত দেখে বুঝতে পারি, মানুষটি ভুগছেন ক্রনিক স্বাস্থ্যগত সমস্যায়। তবে তিনি খুব সুন্দরভাবে হেসে বলেন, ‘সুলতান, কাম এন্ড জয়েন আস।’
রেমন্ড উইন্ডোসিল কাউচের পাশে পড়ে থাকা মোড়ার মতো ফোমের গদি লাগানো স্টুলটি দেখিয়ে দেন। আমি তা টেনে বসে পড়লে তিনি এ্যলবামের দিকে ইশারা করে বলেন, ‘এরা আমাদের জীবনযাপন সম্পর্কে জানতে চাইছে। হিপি হিসাবে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের কোথায় কীভাবে খুব স্বল্প ব্যয়ে বসবাস করতাম, তার ছবিগুলো এদের দেখাচ্ছি। আই হোপ ইউ উইল ফাইন্ড দিজ পিকচারস্ ইন্টারেস্টিং এ্যজওয়েল।’
সেইন নদীর পাড়ে বাই সাইকেল চড়ে বেড়াচ্ছে দু’কিশোর © ছবি: লেখক
আমি ‘অবকোর্স’, বলে আগ্রহ দেখাই, আর খেয়াল করি দুটি বিষয়; কথা বলতে বলতে রেমন্ডের মুখের মাংশপেশী কাঁপছ অল্প অল্প। তবে কি তার শরীরে ফুটছে পার্কিনসন ডিজিজের আলামত? অন্য যে বিষয়টি নজরে পড়ে তা হচ্ছে, রেমন্ডের চোখে আসাধারণ দীপ্তি। ক্রমাগত মেডিটেশন করার ফলে মানুষের চোখে আসে শান্ত সামাহিত ভাব। কিন্তু রেমন্ডের চোখ দুটি যেন পলকে দেখে নেয় দ্রষ্টব্যের তাবৎ ডিটেল। রূপালি টোপাজ পাথরে ঠিকরানো আলোর মতো তার বিচ্ছুরিত দীপ্তির দিকে সরাসরি তাকালে আচ্ছন্ন লাগে? তবে কী রেমন্ড প্র্যাকটিস করেন সম্মোহনের?
তিনি সাদাকালো ছবিগুলো দেখাতে দেখাতে গল্প বলার ভঙ্গিতে ব্যাখ্যা করেন, তিনি ও তাঁর স্ত্রী জুডিথ মিলারের দিনযাপনের বৃত্তান্ত। আমরা দেখি, বনানীর প্রান্তিকে পড়ে থাকা ভাঙ্গারোঙ্গা স্কুলবাসের ভেতর পাতা তাঁদের সংসার। পরের ছবিতে তিনি দেখান, দীর্ঘ এক ম্যাপোল গাছের তিনটি ডালকে ভিত্তি করে তৈরি তাঁদের ট্রিহাউস। তখন গাছের খোড়লে বাস করা শাবকসহ এক জোড়া পাখির সাথে তাঁদের সখ্য ভাব হয়। আমরা ছবিতে পাখি-দম্পতিকে তাঁর কাঁধে বসে থাকতে দেখি। তাঁর স্ত্রী জুডিথ শাবক দুটিকে ড্রপার দিয়ে বোধ করি বেবি ফুড খাওয়াচ্ছেন। পরের ফটোগ্রাফসগুলো আরো ইন্টারেস্টিং। একটিতে তাঁদের জলপ্রপাতের নিচে নগ্ন স্নানের দৃশ্য। অন্যটিকে তাঁরা বাস করছেন, জলাভূমির কিনারে পড়ে থাকা জংধরা অকেজো একটি বোটে।
লালচে শেডের সানগ্লাস পরা পুরুষ ও লেদারের স্কিন-টাইট প্যান্ট পরা আফ্রো-ফ্রেঞ্চ নারী রেমন্ডকে বিদায় জানিয়ে উঠে পড়লে, রেমন্ড আমার দিকে মনযোগ দেন। হাত বাড়িয়ে আমার কব্জি চেপে ধরে বলেন, ‘মঁশিয়ো সুলতান, হাউ ওয়ান্ডারফুল দ্যাট ইউ কেইম ডাউন টু সে হ্যালো টু মি। আডেলিনা তোমার কথা আমাকে বলেছ, তুমি সিয়েরা লেওনে জানের রিস্ক নিয়ে ইবোলা রুগিদের মাঝে কাজ করছো। আই রিয়েলি অ্যাডমায়ার ইয়োর ওয়ার্ক।’
মানুষটির উষ্ণ আন্তরিকতায় আমি সাথে সাথে তাঁকে পছন্দ করি। একটু বিস্মিত হই, আডেলিনার সাথে তাঁর প্রগাঢ় বন্ধুত্বের কারণে আমার মাঝে কোন জেলাসি তৈরি হচ্ছে না দেখে। আমি অবগত যে, বয়োবৃদ্ধ হিপি রেমন্ডের স্ত্রী জুডিথ যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাপালেচিয়ান ট্রেইলে হাইক করতে গিয়ে পথ হারিয়ে, বাইরের পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে তেরো দিন পর মৃত্যুবরণ করেন। আমি এ প্রসঙ্গের উল্লেখ করে বলি, ‘মঁশিয়ো রেমন্ড, আই অ্যাম সো সরি, অনেস্টলি সরি দ্যাট... কী বলবো, এ ধরনের একটি দুঃখজনক ঘটনা আপনার জীবনে ঘটেছে।’
কথা বলতে বলতে আবেগে তাঁর গলার স্বর কাঁপে। আমি স্পষ্ট অনুভব করি, তাঁর বক্তব্যে কোন কপটতা নেই। তিনি আবার বলেন, ‘আমার বুকে কফ জমে আছে, ডেকের খোলা হাওয়ায় বসতে পারি না। তো, তুমি যখন নিচে নেমে এসেছো, প্লিজ স্টে ইউথ মি আ লিটল বিট।’
মানুষটির উষ্ণ আন্তরিকতায় আমি সাথে সাথে তাঁকে পছন্দ করি। একটু বিস্মিত হই, আডেলিনার সাথে তাঁর প্রগাঢ় বন্ধুত্বের কারণে আমার মাঝে কোন জেলাসি তৈরি হচ্ছে না দেখে। আমি অবগত যে, বয়োবৃদ্ধ হিপি রেমন্ডের স্ত্রী জুডিথ যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাপালেচিয়ান ট্রেইলে হাইক করতে গিয়ে পথ হারিয়ে, বাইরের পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে তেরো দিন পর মৃত্যুবরণ করেন। আমি এ প্রসঙ্গের উল্লেখ করে বলি, ‘মঁশিয়ো রেমন্ড, আই অ্যাম সো সরি, অনেস্টলি সরি দ্যাট... কী বলবো, এ ধরনের একটি দুঃখজনক ঘটনা আপনার জীবনে ঘটেছে।’
তিনি মনযোগ দিয়ে আমার সহানুভূতিসূচক মন্তব্য শোনেন। তারপর মৃদুস্বরে বলেন, ‘ভালোই হলো জুডিথের বিষয়টি তোলাতে। খুবই ভালো হাইকার ছিলো সে। কিন্তু তার সেন্স অব ডিরেকশন ছিলো মারাত্মকভাবে দূর্বল। শপিং-মলে একা বাজার করতে গেলে সে বেরিয়ে আসার গেট খুঁজে পেতো না। পার্কিংলটে নিজের গাড়ি খুঁজে পাওয়া তার জন্য চ্যালেঞ্জ ছিলো। তো অ্যাপালেচিয়ান ট্রেইলে সে পথ হারিয়ে চলে যায় বনানীর গভীরে, মোবাইল নেটওয়ার্কের একদম বাইরে। হার ডেথ ওয়াজ স্যাড এন্ড ট্র্যাজিক, কিন্তু কীভাবে বিষয়টি ঘটেছিলো যুক্তি দিয়ে তা ব্যাখ্যা করা যায়।’
শুনতে শুনতে আমি বলি, ‘জুডিথ কি মাঝে মাঝে এরকম একা হাইক করতে যেতেন?’ রেমন্ড জবাব দেন, ‘রেয়ারলি, তোমাকে আসল বিষয়টা খুলে বলা যায়। হাইকিং ট্রেইলে দেখা হওয়া সুদর্শন পুরুষের প্রেমে পড়ার স্বভাব ছিলো জুডিথের। তো কারো আকর্ষণে মজলে, সে আমার সাথে জোরালো ঝগড়া বাঁধিয়ে একা চলে যেতো বনানীতে; এবং কিছুদিন পর সাময়িক মায়াজাল কাটলে সে আবার ফিরে আসতো আমার কাছে। এভাবেই তো কেটেছে আমাদের একত্রিশ বছরের বোহেমিয়ান ধারার দাম্পত্য জীবন।’
আমি এবার সরাসরি জানতে চাই, ‘জুডিথের অ্যাপালেচিয়ান ট্রেইলে একা হাইক করতে যাওয়ার পেছনে অন্য কোন পুরুষ জড়িত ছিলো কি?’ তিনি মুখে উদ্বেগ ফুটিয়ে তুলে বলেন,‘ ইটস্ অ্যা ফ্যাক্ট দ্যাট... আমার সাথে ঝগড়া করে সে অ্যাপালেচিয়ান ট্রেইলে একা হাইক করতে যায়। সে ফিরে না আসাতে সপ্তাহখানেক আমি তার কোন খোঁজখবর করিনি। ভেবেছিলাম, সে হয়তো ভিন্ন কোন পুরুষের সন্ধান পেয়েছে... তারপর তো সে হারিয়ে গেলো চিরতরে। বছর দেড়েক পর ট্রেইলের রেঞ্জাররা তার কংকাল খুঁজে পায়। সাথে পাওয়া যায় তার সেলফোন ও হাইকিং লগ। সেলফোন থেকে হারিয়ে যাওয়ার সংবাদ জানিয়ে সে আমাকে, পুলিশ ও ফরেস্ট রেঞ্জারদের অনেকবার ফোন করে ও টেক্সট্ ম্যাসেজ পাঠায়। কিন্তু নেটওয়ার্ক এরিয়ার বাইরে চলে যাওয়ার কারণে সে কিছুতেই যোগাযোগ করতে পারছিলো না। হাইকিং লগে ক্রমাগত মৃত্যুর দিকে চলে যাওয়ার অভিজ্ঞতার কথা সে লিখে রেখে গেছে। আমার কাছেও লিখে গেছে দীর্ঘ তিনটি চিঠি। লগের উপরে আমার ঠিকানাসহ স্পষ্টভাবে লিখে গেছে যে, যদি কখনো তার দেহাবশেষ পাওয়া যায়, তাহলে তা যেন আমার কাছে পৌঁছে দেয়া হয়।’
পুরো কাহিনী শুনে আমি কি বলবো ঠিক বুঝতে পারি না। রেমন্ড ক্রিনান্স ট্যোবাকোর কৌটা খুলে আমার দিকে তাকান। তাঁর টোপাজ পাথরের মতো দ্যুতিময় চোখে চোখ রাখা কঠিন হয়। মনে হয়, তিনি শুধুমাত্র তাঁর অর্ন্তভেদী দৃষ্টি দিয়ে আমার অন্তঃস্থল থেকে গোয়েন্দার নিপুণ দক্ষতায় বের করে নিতে পারেন সিক্রেট তথ্যাদি। রেমন্ড রোলিং-পেপার বের করে মারিয়ুয়ানার সাথে ট্যোবাকো মিশিয়ে জয়েন্ট তৈরি করতে করতে বলেন, ‘জুডিথের দেহাবশেষ সৎকার করার পর কেবলই মনে হতো, আমার একত্রিশ বছরের হাইকিং সাথীর মৃত্যু হলো আমার সাথে ঝগড়ার উপলক্ষ্য করে। আমি তার সঙ্গে মনমালিন্য মেটানোর আর কোন সুযোগই পেলাম না। তুমি বোধ হয় শুনেছো, আমি শৌখিন অর্কিড কালেক্টারদের সোসাইটির সদস্য। ওখানেই আডেলিনার সঙ্গে আমার যোগাযোগ। আমি যখন জুডিথের কথা ভেবে খুব ডিপ্রেসড বোধ করছিলাম, তখন আডেলিনা আমাকে মানসিকভাবে হেল্প করে।’
অইসি নদীতে ছোট্ট ভাসমান জেটি © ছবি: লেখক
রেমন্ড রোলিং পেপারে জিব ছুঁয়ে জয়েন্টটি ক্লোজ করে বলেন, ‘দেন ওয়ান ফুল মুন নাইট, আমি আ্যপালেচিয়ান ট্রেইলে যে পথ ধরে জুডিথ হাইক করতে গিয়েছিলো ওখানে হাইক করতে যাই। হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে বসেছিলাম, একটি প্রকাণ্ড রকের উপর। চারদিকের পাইনবন ভেসে যাচ্ছে চাঁদের আলোয়। তখন আমি প্ল্যানচেটে নক করতেই তাকে পেয়ে যাই। এন্ড বিলিভ মি, উই টকড ব্যাক এন্ড ফোর্থ সিন্স দেন। আমাদের ঝগড়াঝাটি মিটে গেছে। নাউ উই আর ফ্রেন্ডস এগেইন। মাঝেমধ্যে জুডিথের সাথে আমার কথাবার্তা হয় প্ল্যানচেটে। আডেলিনা বয়সে অনেক ছোট হলেও সে জুডিথের পরিচিত মেয়ে। তার সাথে আমার বন্ধুত্বে জুডিথের কোন আপত্তি নেই।’
আডেলিনার সাথে তাঁর সম্পর্ক গড়ে ওঠাতে আমি রেমন্ডকে আন্তরিকভাবে কংগ্রাচুলেট করি। তখনই অনুভব করি, দূর থেকে তিনি যেন আমার ইচ্ছাশক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করছেন। ঠিক বুঝতে পারি না, কীভাবে তাঁর অদৃশ্য প্রভাববলয় থেকে বেরিয়ে আসবো? তখনই তিনি আমার দিকে জলন্ত জয়েন্টটি বাড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘আডেলিনা ইজ অ্যা ওয়ান্ডারফুল ওয়োম্যান, আই রিয়েলি এনজয় হার কম্পেনি।’
‘শি ইজ ইনডিড লাভলি,’ বলে আমি জয়েন্টে পাফ দেই। তিনি আমাকে পর্যবেক্ষণ করছেন, এটা বুঝতে পেরে আমি সতর্কভাবে চোখ সরিয়ে ফ্লোরে বসে আঁকতে থাকা হিস্পানিক পেইন্টার ভেরোনিকার দিকে তাকাই। সে আমার ওপর থেকে দ্রুত চোখ সরিয়ে নেয়, তবে তার ঠোঁটে ঝুলে থাকে ইনভাইটিং হাসি। ভেরোনিকা নীরবে রেমন্ডের পোর্ট্রেটের উপর তুলিতে বুলাচ্ছে রঙের পরত। আমার দৃষ্টি তার শরীর, আধেক উন্মোচিত বক্ষদেশ ও ব্রাশ ধরা হাত ছাড়িয়ে চলে যায় রঙের টেক্সচারের ওপর। তাতে রেমন্ডের চোখমুখে ক্রমশ ফুটছে সম্মোহনী ব্যক্তিত্ব।
জয়েন্টটি শেষ হতেই ‘আবোঁয়া’ বলে রেমন্ডের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমি চলে আসি, বার্জের নিচের তলার নিরিবিলি ডাইনিং হলে। তার কাউন্টারের উপর পা ঝুলিয়ে বসে লেদারের স্কিন-টাইট প্যান্ট পরা আফ্রো-ফ্রেঞ্চ নারীটি। পায়ের কাছে হাঁটু গেড়ে বসে ক্রুকাট চুলে লালচে শেডের সানগ্লাস গাঁথা তার পুরুষ-সঙ্গী। তিনি নারীটির পা থেকে ধীরে ধীরে টেনে খুলছেন মোজা। তাদের অতিক্রম করে আমি চলে আসি গ্লাস উইন্ডোর কাছে। তাকিয়ে দেখি, পাশ দিয়ে ভেসে যাচ্ছে পাল খাটানো একটি সেইল বোট। তার ছাদে ডেকচেয়ারে আধশোয়া হয়ে হোল্ডারে সিগ্রেট ফুঁকছেন এক শ্বেতাঙ্গিনী। স্ট্রাইপ সেইলার জার্সি পরা এ নারীর হাবভাব মনে করিয়ে দেয়, অনেক বছর আগে সিনে ম্যাগাজিনে দেখা ব্রিজিত বার্দোর বিখ্যাত ‘রিভ্যেরা মুড লুক’ এর কথা।
‘শি ইজ ইনডিড লাভলি,’ বলে আমি জয়েন্টে পাফ দেই। তিনি আমাকে পর্যবেক্ষণ করছেন, এটা বুঝতে পেরে আমি সতর্কভাবে চোখ সরিয়ে ফ্লোরে বসে আঁকতে থাকা হিস্পানিক পেইন্টার ভেরোনিকার দিকে তাকাই। সে আমার ওপর থেকে দ্রুত চোখ সরিয়ে নেয়, তবে তার ঠোঁটে ঝুলে থাকে ইনভাইটিং হাসি। ভেরোনিকা নীরবে রেমন্ডের পোর্ট্রেটের উপর তুলিতে বুলাচ্ছে রঙের পরত। আমার দৃষ্টি তার শরীর, আধেক উন্মোচিত বক্ষদেশ ও ব্রাশ ধরা হাত ছাড়িয়ে চলে যায় রঙের টেক্সচারের ওপর। তাতে রেমন্ডের চোখমুখে ক্রমশ ফুটছে সম্মোহনী ব্যক্তিত্ব।
অচেনা পারফিউমের সুরভী ছড়িয়ে কাছে এসে দাঁড়ায় ভেরোনিকা। উচ্চতায় খানিক খাটো সে। তাই ঝুঁকে তার দিকে তাকাতেই সে আরো কাছে ঘন হয় আসে। তার উষ্ণ নিঃশ্বাস আমার পাঁজর ছুঁয়ে গেলে আমি জানতে চাই, ‘হাই কিটেন, হোয়াটস আপ?’
সে ফিক করে হেসে আহ্লাদি ভঙ্গিতে বলে, ‘সুগার, আই নো ইউ ওয়ানা প্লে উইথ মাই বুবস্।’ সে চোখে চোখ রাখলে আমি আস্তে করে তার কোমরে হাত রাখি। এতে কোন আপত্তি না করে সে ফিসফিসিয়ে বলে, ‘হেই সুগার, আই মাস্ট টেল ইউ সামথিং স্ট্রেট্...।’
আমি,‘গো এহেড কিটেন,’ বললে সে জানায়,‘আই অ্যাম সো সারি, ইউ নো..আই অ্যাম নট রিয়েলি ইয়োর টাইপ।’
নখরামিতে একটু বিরক্ত লাগে, বলি,‘হোয়াটস্ রং উইথ ইউ?’
সিডাকটিভ হাসিটি ফিরে আসে ভেরোনিকার ঠোঁটে। সে তা বজায় রেখে বলে, ‘লিসেন, আই এনজয় প্লেয়িং উইথ গার্লস।’ খুব একটা অবাক হই না, তবে জানতে চাই, ‘সো, হোয়াই ইউ কেইম হিয়ার? আই অ্যাম সিম্পলি ইন্টারেস্টেড টু নো, হোয়াই ইউ কেইম টু মি ভেরোনিকা?’
কোনো সময় নষ্ট না করে সে জবাব দেয়, ‘জাস্ট টু টেল ইউ সুগার... ইউ হ্যাভ আ ভেরি এট্রাকটিভ ফেইস স্ট্রাকচার। পোর্ট্রেটে তোমার মুখে ফুটবে দারুণ এক্সপ্রেশন। আই হ্যাভ অ্যা ডিল ফর ইউ। হানড্রেড ইউরো তোমাকে দিতে হবে না। তুমি পোর্টেট আঁকাতে চাইলে আমি ফিফটি ইউরোতে তা এঁকে দেবো।’
আমি তেমন একটা আগ্রহ না দেখিয়ে বলি, ‘ও-কে কিটেন, আই উইল থিংক আবাউট দিস। আমি বিষয়টা ভেবে দেখছি।’
ডিসয়েপোয়েন্টেড হয়ে ফিরে যেতে যেতে ভেরোনিকা কোমরে ডিপ দোল তুলে গ্রীবা বাঁকিয়ে বলে, ‘কিপ স্ক্রুইং ইয়োর থিংকিং সুগার।’
উপরের খোলা ডেকে ফিরে আসতেই দেখা হয় গারনেল সাহেবের সাথে। মনে হয়, এ ট্রিপে তিনি খাবার-দাবার পরিবেশনের দ্বায়িত্ব নিয়েছেন। তার সামনে ট্রলিতে রাখা বার্বিকিউ করা চিকেন, চিঙড়ি, পোঁড়া পটেটো, হ্যামবার্গার ও স্যামোন মাছ। আমি কাগজের প্লেটে এক টুকরা স্যামোন মাছের ফ্যালের সাথে খানিকটা বাঁধা কপি ও গাঁজরের স্যালাদ নিতে গেলে, তিনি আগ্রহ নিয়ে জানতে চান, ‘শুনলাম তুমি নিচে রেমন্ড মিলারের সাথে কথা বলত গেছো। তো কেমন হলো তাঁর সাথে তোমার কনভারসেশন? আই অ্যাম শিওর ইউ নো হি ইজ আডেলিনাজ্ নিউয়েস্ট কনকোয়েস্ট।’
জবাবে আমি বলি, ‘ইয়েস, তাদের বন্ধুত্বের কথা আডেলিনা নিজেই বলেছে। শি ইজ ভেরি ফ্র্যাংক এন্ড ক্লিয়ার আবাউট দিস। একটা কথা গারনেল, রেমন্ড মিলারকে আমার খুব আন্তরিক মনে হয়েছে। আই থিংক দিস ইজ হোয়াট এট্রাকটেড্ আডেলিনা।’
‘ইউ আর ট্যোটালি রাইট সুলতান,’ বলে মৃদু হেসে তিনি বলেন, ‘আরেকটি বিষয়, রেমন্ড এক অর্থে আডেলিনাকে দান করেছেন নতুন জীবন।’
আমি এবার কৌতূহলী হয়ে জানতে চাই, ‘হোয়াট ডু ইউ মিন বাই দ্যাট, নতুন জীবনের বিষয়টা কি?’ তিনি জবাব দেন, ‘বছর দেড়েক আগে আমি যখন প্যারিসে ভেকেশন কাটাতে আসি, তখন হোটেল-ডে-আর্টসে কানাঘুঁষায় শুনি যে, আডেলিনার শরীরে সার্জারী হলে তার প্রয়োজন পড়ে একটি কিডনির। তো রেমন্ড তাঁর নিজের একটি কিডনি তাকে ডনেট করেছেন।’
বৈঠা ফেলছে ফরাসি মাঝি © ছবি: লেখক
আমি প্রশ্ন করি, ‘গারনেল, আর ইউ শিওর আবাউট ইট?’ তিনি জবাব দেন, ‘এ তথ্য আমি লোকমুখে শুনেছি। হয় রেমন্ড তাঁর নিজের একটি কিডনি ডোনেট করে তাকে বাঁচিয়ে তুলেছেন, অথবা তাঁর জানাশোনা অন্য কোন হিপিকে হিপনোটাইজড্ করে তাকে দিয়ে আডেলিনাকে কিডনি দান করিয়েছেন। নিশ্চিত হতে চাইলে তুমি আডেলিনাকে জিজ্ঞেস করে নিতে পারো। এন্ড ইউ নো, আই অ্যাম শিওর রেমন্ড অলসো হিপনোটাইজড্ হার!’
আমি স্যামোন মাছের ফ্যালে খেয়ে, প্লেটটি ট্র্যাস বিনে ফেলে নীরবে চলে আসি ডেকের পিছন দিকে। কী কারণে জানি বিভ্রান্ত লাগে, আর আমার ইমোশনও ভলেটাইল হয়ে ওঠে। আডেলিনার কাছাকাছি হওয়ার প্রবণতা তীব্র হয়ে উঠলে, এরোপ্লেনের বাতিল হওয়া ফ্লাইটের বোর্ডিং-কার্ড ছিড়ে ফেলার মতো আমি তাকে মন থেকে মুছে ফেলার প্রয়াশে বহতা নদীজলের দিকে তাকাই।
অইসি নামের শাখা নদীটি এখানে আরো ছোট্ট হয়েছে। এতে স্রোত থাকলেও তরঙ্গ নেই এক বিন্দু। এক ফরাসি-মাঝি অলস ভঙ্গিতে বৈঠা ফেলে ভাসছে মাঝ গাঙ্গে। নদীর পাশে সবুজ প্রান্তর, কিছু ঝোপঝাড়ে উড়ছে গঙ্গাফড়িং ও প্রজাপতি। একটি ধবধবে সাদা হাঁসকে আমি নদীর কিনারে তন্ময় হয়ে ভাসতে দেখি।
তখনই নজরে পড়ে, বার্জের দেয়ালে সেলোটেপ দিয়ে আটকানো ‘মোঁনে ইন হিজ স্টুডিও-বোট’ নামে অতিশয় তন্ময় একটি চিত্রের রিপ্রডাকশন। চিত্রকর ক্লদ মোঁনে অইসি নদীর এদিকে নৌকায় বসে আঁকতে ভালোবাসতেন। নৌকাকে তিনি বানিয়েছিলেন তাঁর ভাসমান স্টুডিও। তাঁর বন্ধু এডায়ার্ড মানে ১৮৭৪ সালের সামারে নৌকার স্টুডিওতে অঙ্কনরত ক্লদ মোঁনের প্রতিকৃতি আঁকেন।
বর্ণাঢ্য এ চিত্রটির দিকে আমি দিশা ধরে তাকাই। পাশেই আডেলিনা গঁদ দিয়ে দেয়ালে জুড়ে দিয়েছে, জ্যাঁ আর্তুর র্যাঁবোর [১৮৫৪-১৮৯১] ‘দ্যা ড্রাংকেন বোট’ শিরোনামের একটি কবিতা। ১৮৭১ সালে র্যাঁবো যখন এ কবিতাটি লিখেন,তখন তিনি বয়সের দিক থেকে ছিলেন রীতিমতো কিশোর। কাটায় কাটায় এক-শ ছত্রের দীর্ঘ কবিতাটি তিনি পাঠিয়েছিলেন, তাঁর ভবিষ্যৎ জীবনের প্রেমিক-পুরুষ প্রতীকবাদী কবি পল ভেরলেইনের কাছে। বার্জের দেয়ালে আটকানো এ কবিতার ভাষা ধ্রুপদী ফরাসি, তবে আমি ইংরেজি তর্জমায় তা একাধিকবার পাঠ করেছি বলে এর কিছু চরণ স্মৃতিতে গুঞ্জন করে ওঠে। আমি ডেকের রেলিংয়ে হেলান দিয়ে তন্ময় হয়ে জলে ভেসে থাকা শুভ্র হাঁসের দিকে তাকাই, আর বিড় বিড় করে উচ্চারণ করি র্যাঁবো রচিত অমোঘ পংক্তি, ‘এ্যাজ আই ওয়াজ ফ্লোটিং ডাউন অনকনসার্নড্ রিভারস্/ আই হ্যাভ ড্রিমড্ অব দি গ্রীন নাইটস্/ অব দি ডেজেলড্ স্নোজ্।’ বোটটি অলস গতিতে ভেসে ভাটির দিকে।
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন