শীতল হৃদয় ও অন্যান্য কবিতা
শীতল হৃদয়
শীত লাগছে সঙ্গীকে বলি, হৃদয় শীতল তারও।
আজ এই মাঘের রাতে, ফেলে আসা বনে
ডাকছে কী বাঘ? যৌবন স্মৃতি।
কারা ফুল কুড়ায় বনে বনে বসন্ত দিনে আজও
উষ্ণ হৃদয় নিয়ে থাকে দূরে দূরে
শীত লাগছে সঙ্গীকে বলি, হৃদয় শীতল তারও।
পেঁচা
একটি পেঁচা প্রায় রাতে ডাকে তোমাদের বাড়ির জলাঙ্গলায়।
তুমি কেঁপে ওঠো অজানা অশংকায়
থু থু দাও বুকে
আর ভাবো
সংসারে কোনো অমঙ্গল এলো বুঝি নেমে!
তোমার সংসার অমনি ভরে উঠেছে আকাশের তারারাজির মত
কোথাও কোনো অসুখ অন্ধকার নেই।
তবু তুমি মাঝরাতে ঘুম ভেঙে ভাবো
কেন পেঁচা ডাকে তবে?
সেই ক্ষণে তুমি একটু একটু ব্যথা পাও
গভীরে কোথাও
চেনা চেনা মনে হয় পেঁচার কণ্ঠখানি
আর আমি এইখানে এই শব্দে
নিশিডাক লিখে চলি।
যাত্রা, মহিষ পিঠে
ওঁ শ্যামনৌকা নমো
মহিষ পিঠে চলেছি বহুকাল জল- জলাজঙ্গলা পেরিয়ে।
আমি কি রাখাল তবে ছিলাম বাথানের, নাকি দূর কোনো গাঁয়ে
বদ হাওয়া লেগে অসার দেহ। লোকে দিয়েছে তুলে
সাপে কাঁটা চাঁদ সওদাগর, মহিষডিঙায়।
মনে নেই কিছু। শুধু একটু একটু লোকালয় স্মৃতি, অস্পষ্ট মানুষের মুখ
হয়ত মায়ের, হয়ত প্রেমিকার।
চলেছি এই রাতে যেন জলাধারের ওপারে আছে স্বাস্থ্যসদন
আছে সবুজ গ্রাম, বৃক্ষশোভা, নগর কিনারে
কোনো ওঁ নিরাময়া।
কী অসুখ জানা নেই কারো-আমার কিংবা মহিষের
চলেছি বহুকাল যেন দূরত্বই আরোগ্য অথবা পথের ধারেই আছে
পথ্য সব বনৌষধি।
জলাজঙ্গলার পথে মহিষের খুরের জল আর কাদা ভাঙার শব্দ আর
আমার গোঙানি
অখনে এইখানে দূর হতে মৃদু মৃদু শোনা যায়।
ইচ্ছে, জন্মান্তরের
ক্ষুধার্ত মানুষ, ফের ফিরে আসব তোমার দরোজায়
দাঁড়িয়ে রবো ম্লানমুখে।
তুমি ছুঁড়ে দেবে এটোভাত, মাছের কাঁটা, শুকনো রুটি
খাবো না।
তাকিয়ে থাকবো তোমারই মুখের দিকে।
তুমি খুব বিরক্ত হবে। তোমার পড়ে আছে কত কাম
সংসারের। স্বামী তোমার জাগনা, ঐ ঘরে।
ঘরময় ঘুরে বেড়াচ্ছে তোমার বাচ্চারা
চাল ফেলছে, ডাল ফেলছে, বই ছিঁড়ছে
কত যে দিগদারি তোমার
আর আমিও দাঁড়িয়ে রয়েছি দরোজার সন্মুখে
ক্ষুধার্ত। আজিব, তবু কিচ্ছুটি খাচ্ছি না।
তুমি খুব বিরক্ত হবে
এ যে কী চায় আল্লাহ জানে-বলবে রেগে।
রাগবে তোমার স্বামীও
তাড়িয়ে দাও গদা মেরে—বলবে সে বিছানা থেকে।
তুমি তাড়াবে না। কত কাম তোমার সংসারে।
আর আমি দাঁড়িয়েই রবো দরোজায়
কেন যে আমি দাঁড়িয়ে আছি একবারও ভাববে না, চিনবে না সে বারও?
আমি যে গতজন্মেও এসেছিলাম
তোমাকে কিছু বলবো বলে।
ঠায় দাঁড়িয়েছি কতদিন তোমার পথে পথে।
তুমি বুঝোনি।
সে জন্মেও বুঝবে না? অমৃতা।
মনুষ্যসমাজ ছেড়ে
মনুষ্যসমাজ ভাল লাগছে না বলে পালিয়ে
মেঘের উপর শুয়ে আছি।
সাদা সাদা মেঘ উড়ছে চারপাশে। পাখিরা
গাইছে গান। কিচির মিচির।
বেশ শান্তি শান্তি লাগছে
উপরে নীল। মহাশূন্য।
মেঘে মেঘে কথা হচ্ছে
কথা হচ্ছে পাখিতে পাখিতে।
নীলে নীলেও কথা হচ্ছে হয়ত!
কিন্তু কেউই তাদের দলে
আমাকে নিচ্ছে না।
আমিও বেশ শুয়ে আছি একা একা
মেঘের বালিশে হেলান দিয়ে নির্বিকার
উতলা হয়েও কোনো লাভ নেই কোনো
পাখি
মেঘ
বা নীলের ভাষা বুঝতে পারছি না।
মনুষ্যসমাজ ছেড়ে একা একা লাগছে খুব
মেঘের উপরে।
ভালো লাগলো কবিতাগুলো।
কাজী মাজেদ নওয়াজ
জুলাই ০৫, ২০২৩ ২২:৩৩
ভালো লাগলো।
সানাউল্লাহ সাগর
মে ১৮, ২০২৩ ১২:৩৫