সেই তো হো চি মিন ও অন্যান্য কবিতা

অ+ অ-

 

কাব্য

তুমি সেই কৌস্তুভশোভিত দ্রুতগতি, লক্ষ্যভেদী শব্দ-মিসাইল
                                অপসারণের তুচ্ছতাকে 
পাউডার বানিয়ে সর্বৈব যাহার বিলুপ্তি পরম ভূমায়

তোমার জন্যেই গড়ে ওঠে অভ্রস্পর্শী
        ভালোবাসা আর ক্রোধের মিনার
            কখনওবা হতাশার মেঘের জমাট ঘনঘটা
তুমি তো ছড়িয়ে থাকো অংকুরে, মাটির প্রতিভায়
                      শেকড়ে-শেকড়ে নিবিড় জড়াজড়িতে

তুমি ভাষার সম্রাজ্ঞী, বশীকরণের লাস্য হাসি
সৌন্দর্যের মধুবনে সেরা দীপ্তিময়ী, গুপ্ত যন্ত্রণার ধিকিধিকি শিখা
     জাতি তোমাকে আগলে রাখে তবু
                         মাতৃস্তন্যে কেলিরত শিশুর সমান

তুমি প্রভূত সৃজনশীল, বিস্ময়ের পরাজাগতিক প্রমা

তোমার অমায়
লুটায় অঢেল চক্ষুষ্মান অন্ধের তিয়াস...

 

মূল্যস্ফীতি

রিকশার হুড তুলে কিছু মানুষ সদরঘাটে যায় রঙ্গালয়ে
      আর কিছু স্টেশন রোডের আঁধারের কোলে 
                    হাত-পা গুটিয়ে ধ্যানে নগরের সবকিছু 
নিজেদের মুঠে পুরে ধীরে ওঠে দাঁড়ায় নির্ভার
তারপর পা বাড়ায় গজেন্দ্র গন্তব্যে

কিছু মহিলা আলোর ঝরনাধারায়
       নিত্য আসে-যায় সুপার মার্কেটে
                আর কিছু শিশুখাদ্য কেনে
                     অলস মুদ্রায় পার্সের দুয়ার খুলে

এইসব মহিলা ও পুরুষেরা বাঁচে তবু 
                   মলিন বদনে 
                       অন্তরের বিস্তীর্ণ ক্রন্দনে

কমছে ক্রয়ক্ষমতা, ফর্দের ইশারা
সঙ্গে আনন্দ নামক অদেখা পারদ
নিচের দিকেই 
       নিচের দিকেই 
                 নিচের দিকেই দিন দিন...

 

তবু কিছু মানুষ

তবু কিছু মানুষ গভীর মানুষের মনোদেশে নিত্য মরে যায় 
                                          কালো খাসলতে
তারা ভবনের বারান্দায় শুধু কিম্ভূত ছায়ার নিচে 
                          বাসি ও পচনশীল পণ্য
তারা সন্ধ্যায় কুচক্রী, প্রদোষে কাঙাল
তারা গীবতে অঙ্গার নিজেদের তীক্ষ্ণ কালানলে

তারা উৎপাটিত ঘাসের রোদপোড়া শেকড়ের ধুলো 
                        কল্যাণীসত্তার রহমতবিনে
       তাদের সকলই খুদকুঁড়ো
হিজড়ে খালের গন্ধজল
জাকাতের, সদকার কাঁপা-কাঁপা হাত

স্তূপ হয়ে পড়ে থাকা নিষ্ফলা ভস্মের বাতাসি দূষণ...

 

সেই তো হো চি মিন 

বঞ্চনার পরচায় আর কোনো খালিস্থান নেই
ডাগর তৃষ্ণার্ত চোখ রক্তাভ গোলক হয়ে 
                             সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে

সেই তো এখন হো চি মিন  
              চারু নকশাল সান্দিনিস্তা
দারুণ শার্দূল মানচিত্রের প্রত্যেক পথে-পথে

এই ক্ষিপ্ততাকে কে মহান
স্হূল 
     পরম প্রবোধে
                      রাখিবে বক্ষের ‘পরে

তার কলজে সে যে ছেঁচে দিয়েছে
লুটেরার গথিক খিলানে
                রম্যপ্রাসাদের ভাঁজে-ভাঁজে...

 

এ যে পথ নয়

এ যে পথ নয় এ যে ধোঁয়ার কুণ্ডলী
                 আবেশের পৃথুল সুরভিময়
এই সমর্পণে তুমি কেন হে কবিতাব্রতী

তোমার নয়নে নিজেকে হারানো
                      যে-রক্তিম নিমজ্জন
            বাহু ও দেহভঙ্গিতে
 দূরের যে-নিবেদন 
সে তো এই রক্ত—ইতিহাসধৃত মৃত্তিকায় নাই

ওই কুণ্ডলী পেরিয়ে এসো যাই
                  শুদ্ধ কুয়াশায় 
হাত রেখে হাতে

যে-পর্ব ফুরোলে
আমাদের সূর্যটার দেখা মেলে...

 

এইসব গান

কোনো-কোনো গান ছলছল চোখে হেঁটে যায় নগ্ন পায়ে
                             ভেজা মাটির ওপর
কোনো-কোনো গান কতদূরের রূপসি ললনার হাসি আর
কাছে টানার ভালোবাসায় ভাসে এলোমেলো ভাবনায়

কিছু গান মন্দিরের পাশের ঝোপের ঘাসে হৃদয়টা
দুলিয়ে-দুলিয়ে দূরে চলে যাওয়া

আর কিছু প্রত্যাগত শরণার্থীর অঙ্গার বসতভূমির দিকে 
                            অনর্থক ফিরে-ফিরে চাওয়া
কিছু গান যেন লাফিয়ে আকাশ ছুঁতে চায় স্টেনগান হাতে 
বদরাগী যুবকের ধরনে উনিশ শত একাত্তর

কিছু গান শুধু পূর্বদিন শুধু পূর্বরাত্রি 
আসবে না এখানে কখনও ফিরে আর 
                             মধুকণ্ঠ মাহমুদুন্নবী
কিছু গান মসজিদের কিনারে গম্বুজের ওপর 
নীরব নীলাকাশ

কোনো-কোনো গান ইসালে সওয়াব—সুরা ইখলাস
               পরম নিকটজনের সান্নিধ্যে 
নিভৃতে গোঙানো গোরস্থান...