পালকের নাম মাশরেফা
|| ১ ||
ধুলো, ধুলো ওড়ে, মাশরেফা, অস্তিত্বের ধুলো একা একা
উড়ে যায় ছাড়িয়ে, ছাপিয়ে; আমরাও কখনো কখনো উড়ি
পোকার মতন, হয়তো ঘুণের মতন; সেই ক্ষীণ ফুরসতে,
গা বাঁচিয়ে, উন্মাদনা থেকে ঝরে যাই, ভাবি, সকলই জীবিত-
চেয়ার, টেবিল, খাতা, উদ্ভিদ, এমনকি ধুলো, মাশরেফা,
ধীরে, ঘিরে, কায়ক্লেশে বেঁচে আছে ওরা সকলেই; ওরা তোমার মতন হাসে,
জ্ঞান করে, ভালোবাসে সংসার, সম্প্রীতি, আয়ু, ফুল, হাকালুকি;
ওরাও সুযোগ পেলে উড়ে যায়, হাওয়া খায়, ধুলো ঝেড়ে অকুস্থলে ফেরে;
একটা চেয়ার ঠিকই ফিরে আসে নববধূ টেবিলের পাশে,
একটা উদ্ভিদ ঠিকই হাস্যকরভাবে ফের স্থির হয়ে যায়;
আমি ওই বিকট উদ্ভিদ হবো, মাশরেফা, চাই শূন্য খাতা
হোক এই প্রাণ; এমন লাবণ্যময় কোনো কোনো দিন ইচ্ছে করে
যা যা কিছু মাতাল, উড়িয়ে দিই; একে, অন্যে, প্রকাশ্যে, গোপনে,
উড়ে যাই, ধুলো হয়ে, মাশরেফা, শূন্যে, নিঃশূন্যে, পথভ্রষ্ট চরাচরে!
|| ২ ||
তোমার ফুলের মতো অস্তিত্বের কাছে
আমি বড়ো শূন্য, আমি মোহমুগ্ধ; অদৃশ্য, নেশার মতো;
চোখ গলে গেছে উত্তাপে, আর সহ্য করতে পারছি না
ফুল, ফল, উদ্ভিদ, ভিন্নতা, যা যা কিছু সুন্দর;
আমার আত্মা চুরমার হয়ে গেছে।
আমি হতাশ হয়ে গেছি, কিচ্ছু হবে না আমাকে দিয়ে,
নিজেকে টানতে টানতে, ছিঁড়ে ফেলতে ফেলতে,
অজস্র পাখির মতো বিন্দু, বিন্দু, বিন্দু আমার অস্তিত্ব;
একটা পাথর আমি সৃষ্টি করেছি ভেতরে-বাইরে,
যে পাথর বইবার ক্ষমতা আমার নেই;
আমি কিচ্ছু পারবো না, আমি ঘুম থেকে জাগবো না!
বড়ো অসমান, এবড়োথেবড়ো, বৃষ্টির মতো ঝরোঝরো,
কেউ যেহেতু কাঁদছে না, তুমিও কেঁদো না;
এই কুষ্ঠরোগ, এই লজ্জাজনক ধবলতা থেকে আমি মুক্তি পেতে চাই;
এখন প্রায়শ্চিত্তের সময়, নেশার সময়,
ফুল আর কিচ্ছু-না-জানা আত্মাকে চুম্বন করার সময়,
সরে যাও, এই আগুন, এই শূন্যতা থেকে,
এই কাঠের ময়ূরকে তুমি ভালোবাসতে চেয়ো না!
|| ৩ ||
এই ভিড় যেনো তুমি; বড়ো ভালো লাগে হেঁটে যেতে;
পাগল হই না, যেমন সিলিং ফ্যানে অগোচরে ঝুল জমতে থাকে,
তেমনই কখনো সুপ্ত গেঁথে যাবো তোমার গভীরে, ঝরে যাবো,
সে-ও তোমারই গভীরে কোত্থাও; আমি আদ্যন্ত রাত না ঘুমিয়ে
কিছু একটা খুঁজছি, জানি না সে কী; হয়তো সে তুমি, হয়তো ছুটির দিন,
হয়তো কোনো পোষা কাকাতুয়া; জানি না, তবুও ভালো লাগে,
অস্থিরতা তবু কিছু দেয়, জানি, অধৈর্য্য ছাড়া সবকিছু শ্রেয়, উপকারী—
তুমি, কিংবা নিছক শূন্যতা, মাশরেফা, নদী কিংবা সূক্ষ্ম পলিমাটি;
পাগল হই না, কিছু বলি না শব্দ করে, যেমন সন্ধ্যায় অগণন পাখি
না ডেকেও কতো কিছু বলে; ভালো লাগে, চুপ করে থাকলে মনে হয়
আমি শুধু ভাষায় ভাষায় ভরে আছি, জেগে আছি, সকালে সকাল জেগে আছে,
মাশরেফা, আজ একটা দিন আসবে, বিপরীত দিন, এক হত্যাকারী দিন,
একা একা ভয় পাবো, মাকড়সার জালে বিদ্ধ মাছির চেয়েও তড়পাবো মুহুর্মুহু,
তারপর নিছক ভিড়ের লোভে, মানুষের লোভে, সন্ধ্যায়, এদিকে-ওদিকে না তাকিয়ে,
চলে যাবো কোথাও, যেখানে তুমি নেই, কিন্তু আছো; যেখানে মানুষ আছে,
তাই তুমি আছো, মাশরেফা; এই আলো কখনো কখনো সত্যি কারুকার্যময়;
এই ভিড় কখনো কখনো খুব ভালো লাগে, খুব ভালো লাগে, খুব, খুব ভালো লাগে!
|| ৪ ||
দু'দিকে মৃত্যু; নম্র, সুন্দর, বৃষ্টির মতো
গালে চুমো খেয়ে যাচ্ছে।
বৃষ্টি আছড়ে পড়ছে অনন্ত গহ্বরে—
বন্ধুরা ভিজছে,
বন্ধুরা স্বাদ পেয়েছে উগ্র, উদ্দাম জীবনের;
তারা জানে না যে, আমি নম্র, আমি সুন্দর,
মৃত্যুর গন্ধ শুঁকে শুঁকে এগিয়ে চলেছি এমন এক দিকে,
যেখানে বন্ধুর শেষ নেই, শত্রুর শেষ নেই,
যেখানে মানুষ তার অন্তর্লীন কুকুরের মতো গরীয়ান;
আমি যেনো কাজের কাজ করতে এসে পুরো ফেঁসে গেছি,
আর নোংরা জলে ভিজে সয়লাব হয়ে গেছে আমার ভবিষ্যৎ,
এমনিতেও আমি আমার অতীত আর অতীতহীনতা বইতে বইতে ক্লান্ত!
একটা মা-কুকুর কুইকুই করে ডাকছে অনেকক্ষণ থেকে,
ক্ষুধার্ত সে, খাবার চায়,
সচল সে, সন্তানবতী, কিন্তু অন্ধ;
তার নাকে বৃষ্টির জলের গন্ধ ছাড়া আর কোনো গন্ধ আসে না;
তার রাগ নেই, ধারালো দাঁত নেই, যেনো সে কুকুর না, যেনো সে অন্য কিছু,
যেনো সে আমি,
যে আমার বৃষ্টিতে ভেজা প্রচণ্ড দরকার;
যে আমাকে দখল করে নিয়েছে মরমিতা, যন্ত্রণা, আর বীভৎস সব নক্ষত্র,
যে আমার ভেতরে আছে অলৌকিক এক চেরাগ, যাকে আমি স্পর্শ করতে পারি না।
নম্র, বিষণ্ন বৃষ্টির মতো আমি আমার নিজের গভীরে ঝরে ঝরে পড়ছি,
আর বন্ধুরা খেলছে, ভিজছে সত্যিকারের বৃষ্টিতে,
উগ্র, উচ্ছল দানবের মতো তারা,
আর আমি মা-কুকুর, তুচ্ছ, অন্ধ, অপ্রাণ, সন্তান, স্তন, স্বাধীনতা পেয়ে ক্লান্ত।
|| ৫ ||
অনেক দূরের গোলাপ, তার চেয়েও গোলাপ, হিম-শীতল গোলাপ, হে রিরংসা,
জেগে আছো? হে স্বপ্ন, স্বপ্নে দেখছো নিজেকে? হে আয়নার পর আয়না,
বেশ লাগছে তো; দৃশ্য নেই, শব্দ নেই; কালো, নিঃঝুম, প্রতিচ্ছবিময় বেঁচে থাকা,
সব সহ্য করে নিয়েছি; পালাবো না, কোত্থাও পালাবো না, এইভাবে, মাশরেফা, এইভাবে
আঁতকে উঠতে উঠতে একদিন হেসে ফেলবো, হেসে ফেলবে তাবৎ অস্তিত্ব, আর
বত্রিশ লক্ষ পাটি দাঁত; তবু ভয় লাগে, কোনো কোনো দুশ্চরিত্র, হিম-শীতল দিনে
মনে হয়, এই তো, এইখানেই শেষ; এরপর কেবলই না-থাকা, নেতি; বীজ নেই, বীজতলা নেই;
এমনকি প্রতিচ্ছবিও নেই কোনোখানে; অথচ আমি সহ্য করে নিয়েছি ঢের আলো, ঢের বিকৃতি,
দ্বিগুণ হেঁয়ালি করে উড়িয়ে দিয়েছি অস্তিত্বের সমস্ত ওজন, না-করা পাপ, জটিলতা; মাশরেফা,
জেগে আছো? অনেক দূরের গোলাপ, তারও বেশি গোলাপ, হে হিম-শীতল রিরংসা,
স্বপ্ন দেখছো কি? পাথর, হলে জল? বিস্তর জল, নিঃঝুম? আর আয়না আর আয়না আর আয়না?
|| ৬ ||
আজ ঈশ্বরের ঘরে যাওয়া অনুচিত;
আজ সবাই যাচ্ছে, দলে দলে, সাফসুতরো হয়ে,
বীভৎস আতর মেখে—না জেনে, যে, ঈশ্বর নেহাত
পাগল না হলে সাড়া দেবে না এমন বোকামিতে;
বুদ্ধিমান-মাত্র জানে, আজ তার কাছে কিছু চাওয়া অনুচিত।
আজ আমি ঘরে থাকবো, কেননা শহরে, চরাচরে,
ঘরে ঘরে, হৈ চৈ, কলরব, ‘ঈশ্বর, ঈশ্বর, দাও, কিছু দাও,
এটা দাও, ওটা বন্ধ করো, করো, বিনিময় করো'—
শুনে শুনে ত্যক্ত, বিরক্ত, বিব্রত, মনঃক্ষুণ্ন, রুষ্ট হয়ে
পালাবার দরকার হবে ঈশ্বরের, তিনি খুঁজে বেড়াবেন
একটি নিঃসঙ্গ প্রাণ, সুপ্রচুর প্রাণ, একটি বিশুদ্ধ কুঁড়েঘর;
আজ আমার ঘর খোলা, আমি শুধু ঘরে আছি সারা চরাচরে—
এইখানে নেবেন আশ্রয় এসে তিনি, তার সমস্ত ক্ষমতা;
ক্লান্ত তিনি, ঘরে ঢুকে, পিছনে দরজা বন্ধ করে,
নামে মাত্র কিছু মুখে দিয়ে, প্রলাপ বকবেন, আর ঘুমাতে চাইবেন—
আমি চুপিচুপি তার বিছানা প্রস্তুত করে দেবো।
|| ৭ ||
দেখা পাওয়া যাবে; যাবে; রক্তে সে আছে, লুকিয়ে,
হয়ে নিষ্ঠুর, চিহ্নে, চিহ্নে, চিহ্নে; যদি না-ও ডাকি,
না-ও শোনে যদি, দেখা পাবো, শনিবারে, সন্ধ্যায়,
মাথার মধ্যে ধোঁয়া, বৃষ্টির ঢল, ঘুণধরা অবসাদ,
ফুল পলাতক; ভালোবাসি, ভালোবাসে, সে ও আমি, তারা,
লক্ষ বছর, অপলক মানুষের মতো ঘোরা পথে,
যেমন চলছে, চলবে; নিরর্থক; এক ফাঁকে আসবে সে
এক কোণে, অজুহাতে, ভালোবেসে, ভেবে, বেঁচে গিয়ে;
দেখা মিলে যাবে; যাবে; যদি কাঁদি, না-ও যদি কাঁদি,
যদি ভোলে, কিংবা না-ও ভোলে; রক্তে সে আছে, আমি আছি,
অকস্মাৎ এক চিহ্নে, চিন্তায়; শনিবারে, সন্ধ্যায়, স্বপ্নে,
ক্যাফেটেরিয়ায়, পাবো দেখা, শেষ দেখা, আসলে প্রথম, তার দেখা!
|| ৮ ||
এই বৃষ্টিকে তোমার আঙুলে আংটি করে
গেঁথে রাখো অস্তিত্বে, ফুলে ফুল করে, ঘ্রাণ করে, যেনো
জীবনের লোলুপ সাঁতারে অকালে ডোবার আগে
খুঁজে পাই, মাশরেফা, তোমার নিভৃত কল্লোলে বানভাসি সাইরেনের গান!
এই বৃষ্টিকে যাপন করো আধোয়া আদরে, আবডালে,
যেমন গায়ের বউ বাচ্চার মুখে
লাবণ্যের ধারা তুলে ধরে;
ভুলে যাও হীন বিষ, মৌল দোটানা;
এই বৃষ্টিকে দাও চোখ, চৈতন্য, যেনো,
মাশরেফা, মানুষ নয়, বৃষ্টি হয় আমাদের কোলের সন্ত্ততি।
এই বৃষ্টির বুকে চুমো দাও, মাশরেফা,
আর পরো কপালে টিপের মতো, তাকে
অরাজক, অফুরান করো, তিলে তিলে
লুকাও আড়ালে, ভালোবাসো, তোমারই হৃদয় সে-ও!
এই বৃষ্টিকে সাজাও বাসর করে ঝালরে, কুমকুমে, ফুলে ফুলে,
যেনো তার বুকে শুয়ে সন্ধ্যাতারার দিকে চেয়ে চেয়ে ঘুমিয়ে যেতে পারি!
|| ৯ ||
তুমি আসলেও পারো, পারো কিন্তু, আসার আগেই
চাইলে চলেও যেতে পারো, এই মগের মুলুকে
সে সুযোগও আছে; গোটা চরাচরই যেনো এক ধাঁধা,
মরা ধাঁধা, লাখ টাকা দাম; কেউ না জানুক,
আমি জানি, কখনো কখনো দিন নিমেষেই ভস্ম হয়ে মরে,
সন্ধ্যা হয়, টিএসসি’র দুখু মিয়া কুকুরের মতো;
আমরা অনেকে আসি, বাধ্য হয়ে, চর্বিত চর্বণ কিছু কথা
চিবিয়ে চিবিয়ে ক্লান্ত, শ্রান্ত হয়ে যেতে; মানুষ পারেও বটে,
যেনো তার ভ্রম নেই, অভ্যাস বলেও কিছু নেই;
যেনো সে কুকুর মাত্র, আত্মসেবা, পরসেবা করে
মৃত, মুক্ত, নির্লিপ্ত কাটায় আজীবন; তবে তা অবশ্য শ্রেয়
আধেক মানুষ আর আধেক বিভ্রম হয়ে টিএসসি’তে এসে
কারো দিকে না তাকিয়ে জীবনের নির্মম খপ্পরে
পড়া এক অনিচ্ছুক বস্তুর মতন ধু ধু হাই তুলে আর
সমূহ জাবর কেটে পালানোর চেয়ে ; দুখু মিয়া
তুলনায় ভালো ছিলো (সুখে থাক আজো সেই মৃত সারমেয়),
তুমি তার মুখ যদি দেখে থাকো, মাশরেফা, হয়তো জানবে
কুকুরের গ্লানি কাকে বলে, মানে, অকৃত্রিম গ্লানি, মানে, অকৃত্রিম সুখ;
হৃদয়ের ভারে ন্যুব্জ, প্রশান্ত, বিমুখ;
আমি সেই দুখি মিয়া হতে চাই, পরপারে যেতে চাই দ্রুত;
আমি যেনো ঈশ্বরের নিজস্ব কুকুর, মূক, বৃদ্ধ, ভয়ে ভীত,
গ্লানিহীন, পাতক, অমর; আমি এই চরাচরে
দু’টো দিন খালি পেটে ঘুরে ঘুরে হন্যে হয়ে গিয়ে
কামড় বসাতে চাই পৃথিবীর সর্বভুক পেটে;
আমি দু’টো দিন খালি পেতে চাই অপ্সরার নিঃশর্ত আদর,
আর দু’টো ড্রাই কেক, বিস্কুট; মাশরেফা, কিছুটা সৌন্দর্য,
আর কিছুটা সৌন্দর্য, আর কেবলই কিছুটা!
তুমি সেই অপ্সরা হতে পারো, পারো কিন্তু, না-ও যদি পারো,
না হয়েও পারো; এই হাস্যকর মগের মুলুকে
সে সুযোগও আছে; গোটা চরাচরই যেনো এক ধাঁধা,
কেউ না জানুক, আমি জানি, এর মূল্য লাখ টাকা;
আমি এক ধাঁধার ব্যাপারী, মাশরেফা, দীর্ঘ, দুরূহ, হীন ধাঁধা!
|| ১০ ||
ভিজে গেছি, ভেসে গেছি, ফাল্গুনের হিম বৃষ্টিজলে;
বেকায়দা, ঠাণ্ডা হাওয়া ক্ষিপ্র বেতঘুড়ির মতন
গায়ে এসে পড়ে, চোখে শীত করে, প্রাণে শীত করে;
আর কতো পা চালাবো? অগত্যা মিনার হয়ে মিনারের পাশে
জবুথবু দাঁড়িয়ে রয়েছি, মাশরেফা; বৃষ্টি ঝরে, বৃষ্টি ঝরে চলে,
একেকটা ফোঁটা যেনো একেকটা পাখি—
তোমার মুখের কথা মনে পড়ে এমন সময়;
এরকমই অফুরন্ত, হিংস্র হিমে গড়া, ভরা কিচিরে-মিচিরে,
নতুন, তবুও যেনো অতীতের অনিঃশেষ দীক্ষা লেগে আছে
মুখময়- এই বৃষ্টির মতো, এই নবজাতকের মতো
সেই মুখও ফিরে ফিরে কাঁদে, আর নেপথ্যে ঈশ্বর ক্রীড়ারত
মাশরেফা-নাম্নী এক সৌন্দর্যের বেশে, ভেবে ফের
তোমার মুখের কথা, মাশরেফা, মনে পড়ে যায়;
এদিকে বৃষ্টি বাড়ে, ঘন হতে ঘনতর হয়, সে আমাকে
চিনির মতন গুলে ফেলে দেয় পার্শ্ববর্তী, নোংরা নর্দমায়; আমি এক
বহতা মিনার হয়ে মলমূত্র, ময়লার সঙ্গে ভেসে যাই অকপট;
আজ আর ঘরে ফেরা হবে না জেনেও হল্লা করি
আত্মারাম, আমি; মৃত, অভিভূত এক খেচরের মতো সহজেই
বেশরম, ঠাণ্ডা হাওয়া, ফাল্গুনের রাত তুচ্ছ করে
ভেসে যাই; মনে পড়ে, কাদার পুতুল তুমি, ঈশ্বরের নিজ হাতে গড়া,
আমার সঙ্গে যদি ভাসো তো বিলীন হয়ে যাবে
আমারই অসুখে, মাশরেফা; বিগত শীতের মতো তুমি আজো শীত,
বিগত দিনের মতো তুমি আজো দিন;
আমি যা কিছুর লোভে বেঁচে আছি, সবই যেনো তুমি!
তবু এই বর্ষারাতে (অতীতের গলিত শিকারে
পরিণত, পরিপ্লুত) ঠিকানাবিহীন অকুস্থলে যেতে যেতে
ভিজে গেছি, মাশরেফা, ভেসে গেছি ফাল্গুনের হিম, হিংসাময়ী বৃষ্টিজলে।
অরিত্র আহমেদের কবিতা এই প্রথম পড়া। সে যে নিখাদ কবি সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। তার চিন্তার জগৎ কিছুটা অতীন্দ্রিয়। তার কবিতা যেন আধিভৌতিক গল্পের বয়ান। তার প্রকাশভঙ্গী সুঠাম। তার অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধিকে সে মিশিয়েছে অলৌকিক ভাবনার সঙ্গে। অন্য দিকে তার রচনা সুগঠিত। যদি উত্তরআধুনিক কবিতা বলে কিছু থাকে, অরিত্র সে ঘরানার কবি। সে তরুণ। বয়োবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তি আবেগ সে লুকিয়ে রাখতে সক্ষম হবে। তখন অতি-ব্যক্তিগত পংক্তির উৎপাতও আর থাকবে না। সে নতুন কবিতা নিয়ে এসেছে। তার জন্য আন্তরিক সম্বর্ধনা।
ফয়জুল লতিফ চৌধুরী
মে ০৬, ২০২৪ ১৯:২৩