যাত্রা ও অন্যান্য কবিতা

অ+ অ-

 

যাত্রা

কনের অস্বস্তি, সত্ত্বেও আকাশ রেখায়
আটকে গেলে চোখ স্বচ্ছ মেঘ আর
ফেলে আসা সমতল গড়তে থাকে শনশন,
ঝিঁঝিঁ, গুড়গুড়, কড়কড়—মিশ্র শব্দমালা
কল্পিত ব্যস্ততায় সময় গোনা
কখন থামবে আকাশে চলা!
নতুন পুরাতন—ভাবলেশ হীনতা—কানে
তালা লাগালেও শীতল হাত-পা
কানকে ভুলতেই চায় মুহুর্মুহ।
ফিরছি অথবা যাচ্ছি জন্মভূমি
অনিশ্চতায় ভরে থাকলেও নিশ্চয়ই
করে বলা হয় যাচ্ছি তো বাড়ি।
কত আর কত? কি জানি কতোটা
ভাবা যাবে আর এই সব।
নির্বিঘ্ন হলে পর যাত্রাপথ ক্লান্তি মেখে
সুখময় বার্তা বইতে দেয় মেঘশুদ্ধ আকাশে
শব্দেরা সহনীয় হয় অপেক্ষার
ক্ষণ মিলতে থাকে—অবিরাম আকাশে
খুব বেশি দূরে তো নয়—আবাস আর
পথগুলো সব—বাড়ি যাচ্ছি তবে!

 

ও-ই-ই

অভিমান আর অভিযুক্ত
কেমন শামুক-মুক্তার জড়াজড়ি
আগমনি শস্যের ঝড়ে
ঠোঁট-পেষণের যাত্রাপথে
ফিরে চলে নাগরিক কোলাহল
ওপাড়-পাড় সেতু দীর্ঘশ্বাস
আমায় ফিরিয়ে আনে
ঝুমপাহাড় বনপাখি
তোমার হরিৎ বর্ণ দেখো
স্নান মেখে নেয় কেবল আমারই।
ভেসে গেলে
ফেনা সব
ফিরে অটল চূড়া কুয়াশার
আমি
ঝরাপাতার বুকে
জানালা এঁকে তারাই
দাদারা, কাহারবা আর
ওজন যা বলে তাই
ও-ই-ই।

 

লাটাই

দুঃখ আর বেদনার ঐতিহ্য
নিয়ে বরাবর কুশলী সে!
কোথাও চাপা, কোথাও হরিদ্রা
মূল স্রোত একটাই।
কারুকার্যগুলো শ্রুতিগ্রাহ্য হলে
নন্দন-জোড়া নাকফুল হয়।
তবুও নন্দন খুঁজি অহরহ।
কার পালানোর আশা কার কাছে?
নীল-বেগুনি সুতো-ঘুড়ি
ফানুসের তালগোল বুঝে
উড়ে যায় গোধূলির আকাশে
স্বচ্ছ মেঘের কোলে নিভু
বলাকার সারিসারি মেঘ,
নাচন তোলে ভূমিময় অটল
ওপরে ফিরে যায় শিং সকল
বাঁশির শব্দের মতো কোনো গাঁয়
আমি তার কাছে যাই
বিমুখ হলেও ফেরা হলো বলে।

 

পরিণতি

সেখানেই বাঁশির কুলুকুলু ধ্বনি
মিশে ওঠে মধুমতি,
গোমতী
পদ্মা, খড়খড়ির জলে
আদিম পদধ্বনি শোনা যায় বলে?
কী কথা আর ব্যথার মায়াজালে
বেঁধে আছে সব?
ফুকার বাঁশির কান্না মিশে
ভরে থাকা রক্তের স্রোতে তবে
কি
নেমে যাবে সিঁড়ির ওপার থেকে
আপন বর্ষা জলে ভেজানো চোখে
মায়ার চিহ্ন দেখে
হাঁটছেন পদব্রজে বাঁশি সব
একদা মায়াকেই দূরে
ফেলে—বেড়াতে এসেছিলেন
মধুমতির ঘাটে—চিরচেনা
সেই মাজিন্দিয়ায়?
বাঁশি জানে আজ বাঁশির
বুকছেঁড়া

 

আকাশে ডানাহীনে ঝরে না

মহাশূন্য হারালে ফিরে যাই আকাশে
মেঘের কোল নরম রোদে ঝরে না বৃষ্টি
তবু সমতল বিন্দু হলে বড় একা লাগে আচানক
সময় তবে ওপার নিশ্বাসজুড়ে
মেঘের স্তর
ঘেঁষে আমার হাত
গায়ের ওধারে রৌদ্র রেখা তবে অল্প দূর?
শব্দেরা
বড়ো জুটি বেঁধে কর্ণকুহর প্লাবিত।
পরিজন সাথে থাকো কি?
বড়ো সাধ ছিল মেঘ
ছোঁবো—অনেকটা জন্ম
আর মৃত্যুর মতোই
হিম হাওয়ায় বিন্দু ঘামে
বিষণ্ন হাসি
গুলো পাখনা মেলে
চলেছি তো কোথাও!

 

যদিও সকাল

যদিও সকাল
আচরণ ভুলে থেকে
বিজলির আলো নিভে
কোটেছিল গতকাল রাত।

পরচোখে আলো দেখি
দূর থেকে কথা ঢাকি
এমনি দিঘল আলো চাঁদ।
পাপেট কর্ম খুঁজি
বীরের ধর্ম বুঝি
পিড়াপিড়ি মাখামাখি
তবুও খোলা
ছোটো বাঁধ।
যদিও সকাল থেকে
বসে আছে একজোড়া হাত।