সতিরিয়স পাস্তাকাসের ‘খাদ্য রেখা’

অ+ অ-

 

|| ভূমিকার বদলে ||

সতিরিয়স পাস্তাকাসের জন্ম গ্রিসের লরিসা শহরে, ১৯৫৪ সালে। তিনি পড়াশোনা শেষ করেছেন রোমের সেপিয়েনজা বিশ্ববিদ্যালয়ে, ওষুধশাস্ত্রে। উচ্চতর শিক্ষা নেন মনোবিজ্ঞানে। কবি, অনুবাদক, প্রাবন্ধিক ও মনোবিজ্ঞানী সতিরিয়স ২০০১ সালে ইতালির ভেরেনায় প্রতিষ্ঠিত বিশ্ব কাব্য একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য। তিনি ইতালির ধ্রুপদি কবি উমবার্তো সাবা, সান্দ্রো পেনা, পাওলো পাসিলিনি, আলফান্সো গাতো ও ভিত্তোরিও সেনেরির কবিতা অনুবাদ করেন গ্রিক ভাষায়। এবং ধ্রুপদি গ্রিক কবিদের কবিতাও অন্যভাষায় অনুবাদ করেছেন তিনি।

সতিরিয়সের বইয়ের সংখ্যা অসংখ্য। অসংখ্য ভাষায় অনূদিত হয়েছে তার কবিতা। কবির সঙ্গে আমার যোগাযোগ হয় বিশ্ব কবিতা দিবসের এক অনুষ্ঠানে। এক্সিটিরিয়ান ম্যাগাজিনের উদ্যোগে অনলাইন কবিতাপাঠের অনুষ্ঠানে আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। নানা দেশের কবিরা কবিতা পড়েছেন সেই অনুষ্ঠানে। তার কিছুদিন পর তিনি খুব সানন্দে আমাকে তার বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ সিসিতিয় পাঠান। ফুড লাইন নামে গ্রন্থটির ইংরেজি অনুবাদ করেছেন বিখ্যাত বিট কবি জ্যাক হার্শম্যান ও আগেলোস সাকিস। অনুবাদকৃত কবিতাগুলো তার বিখ্যাতগ্রন্থ সিসিতিয় [ফুড লাইন] থেকে নেওয়া হয়। ২০১২ সালে গ্রিক ভাষায় প্রকাশিত হয় এটি।

কী আছে সতিরিয়সের কবিতায়? মনে হতে পারে, তার কবিতা প্রাত্যহিকতার স্বভাব ভরা আর জীবনের সূক্ষ্ম অনুভূতিকে ধরার ভাষিক যোজনা। কিন্তু, শুধু তা নয়, তিনি ঐতিহাসিকতাকে বস্তুর ভেতর সহজে প্রবেশ করিয়ে দেন। সেটা নিছক প্রাত্যহিক বস্তুর ভাব নয়, মর্মবেদনার সূক্ষ্ম সংবেদনশীলতার এক অপূর্ব স্মৃতির সঞ্চারণ। তিনি এমন এক প্রতীকী ভাষার সন্ধান করেছেনইতিহাস, রাজনীতি ও সমকালীন ভাষ্যে অনন্য রূপ নিয়েছে সেটা। সতিরিয়সের ফুড লাইন পড়তে গিয়ে আমরা নতুন এক ব্যঞ্জনাময় কবিতার সন্ধান পেলাম। সানন্দে সহযোগিতার জন্য সতিরিয়স পাস্তাকাস, জ্যাক হার্শম্যান ও আগেলোস সাকিসের কাছে আমরা বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ। উল্লেখ্য যে, সম্প্রতি মার্কিন এই কিংবদন্তি বামপন্থি কবি জ্যাক হার্শম্যান পরলোক গমন করেন। আমরা তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।

সতিরিয়াস পাস্তাকাস || ছবি © Dino Ignani

 

 

খাদ্য রেখা || সতিরিয়স পাস্তাকাস

 

* * *

তোমার অর্ধনগ্ন পা চকচক করছে
কম্বলের বাইরের দিকে।
আমার স্কন্ধফলক বাতাসের ভেতর
হাঁপাতে হাঁপাতে ওঠে আর নামে। 
সশব্দ আর ঝিলমিল
ঝিলমিল আর সশব্দ
আমাদের যৌথতার দিকে যায়, 
প্রতিবার দুটি হারানো দেহ
একরাতের জন্য মিলিত হয়।    
  

* * *

দু তিন টুকরো উচ্ছৃঙ্খল ছোট মেঘ
যে অগণিত মেঘপুঞ্জের বাইরে
তাদের গোলাপি নিতম্ব দোলায় 
অস্তগামী সূর্যের দিকে।   
সূর্য অস্ত যায়। আমি তারাদের দিকে তাকাই
প্রতিবার 
আমি বিয়ারের একটি ক্যান খালি করি। 
  

* * *

পতঙ্গ, তুমি যে অন্তরূপে আছো
আমার আর
দানিয়ুবের মধ্যে।
আমাকে তুমি দেখতে দাও না
বদ্ধ জানালার বাইরে
পর্দার পেছনে
যেখানে তুমি দ্বীপ হয়ে যাও।
আমি বলি তাকে মার্গারিটা। 

 

* * *
সবকিছু যে আমি দেখি 
তোমার চোখের ভেতর
এখন তুমি আমার দিকে তাকাও 
মুখোমুখি
আমাকে এখনো জ্বালায় আরও:
যতক্ষণ আমার চোখ দুটো আছে
তোমার জন্য, হবো না আমি
এক অদরকারি দেহ
অথবা কাগজ পোড়া-ছাই।

 

* * *

আমি বসি আর প্রশংসা করি
নতুন বিপনি দোকানের জানালার 
সঙ্গে অন্য সব ভবঘুরের
আর অকর্মাদের, শরীরের,
অর্ধনগ্ন দেহের, ভাল অনাবৃত-ত্বকের,
ভিড়ের ভেতরেও যে অন্যরকম
আর যে বাহু ভার বহনে সক্ষম,
নিতম্ব প্রসারিত হয় 
সাইকেল চাপলে, আমি দ্বিধান্বিত
কোনটার ভেতরে নিয়ে যাবে আমাকে
আর অন্য অযাচিত খদ্দেরেরা
দোকানের জানালার পাশে, কোনটা আগে কিনব আমি,
অকেজো শরীর এক শিকার খোঁজে
আমার নতুন জৈবদেহের জন্য—
আমি ভাবি আমি দুলবো অন্য কোনো সময়ে।

 

ভূমিকা ও অনুবাদ || সাখাওয়াত টিপু