ঠোকর ও অন্যান্য কবিতা

অ+ অ-

 

বুনো আঠালির গান

বুকের ভিতর একটা ঝাউগাছ হাওয়ায় নড়ছে। কবেকার ধানগন্ধ মাঠে ফুরিয়ে গেল! অভুক্ত মরে গেছে মা। শুকায়নি অশ্রুর দাগ। ফিসফিসিয়ে মানুষ বলছে রাক্ষসের গল্প। এই তল্লাটে অস্ত্রের বিরুদ্ধে এমন সুন্দর কোনও ফুল নেই। জীবনের চেয়ে বড়ো কোনও পাতক নেই। 

সেদিন মেঘমালা ভেঙে ভাসিয়ে নেয়া বৃষ্টি যদি পণ্ড করে দিতো তোমার জানাজা, লোকারণ্য ছন্দ ছিড়ে যদি ছুটে পালাতো দিগ্বিদিক গদ্যভাষায়—যদি তুমি মৃত্যুকে ফাঁকি দিয়ে আমার পেছনে লুকাতে শিশুর মতো, আমি তার পিঙ্গল গহ্বর উপড়ে নিয়ে তোমাকে বাঁচিয়ে নিতাম মাতৃভূমিকায়। 

মায়া কি তবে এক বন্য ঐরাবত? নিজেকেই বীতস্পৃহ করে একদিন মরে যাওয়া ছাড়া যার আর কোনও সম্ভাব্যতা নেই! 


বিচ্ছেদবিহঙ্গ

নিজ খোলশের পাশে শুয়ে আছি
কত রহস্যলতা শিরায় শিরায় বয়ে যাচ্ছে!
আর সেইসব পাখি যারা নবান্ন শেষ হতেই উড়ে গেছে
শুনি তাদের কুহুরব 
না-হওয়া ঘুমের ঘোরে আড়মোড়া ভাঙছে বিচ্ছেদের গল্পগুলো।


আলোফুল

থামো! এখন সবিস্তারে নিজেকে খোলো
ভাঙো আড়, বায়ুবন্ধ খোপ 
অতটা সরল নয় এই পথ, ধুলার বিস্তার

হাসিমুখে ছেড়ে দেওয়া সন্তর্পণে আয়ত্ত করে নাও
কতদিন খোঁপার বয়স? 
কতখানি বয়ে গেছে স্নানের জল
সাবানের গলে যাওয়া থেকে শিখে নাও 
শরীর ক্ষয়িষ্ণু, শুধু গন্ধটুকুই সম্বল

নিজেকে ফোটাও, সবিনয়ে নিজেকে ফোটাও, আলোফুল! 


লড়াই

আমাদের দিন চলে গেল
মানুষের খোলশ গুনতে গুনতে 
পাতাঝরা দেখতে দেখতে 
আমাদের সেরে গেল বোধের অসুখ

এখন পরাজিত হওয়া স্বাভাবিক ঠেকে 
কফির মগের ধোঁয়া থামার আগেই
মানুষের ছেড়ে যাওয়া সহনীয় লাগে
আমাদের চুপ করে যেতে হবে, যখন
কথাবলা শিখে গেছে পাঁজরের ঘুণ

আমাদের দিন চলে গেল 
বয়ঃক্রম ভুলে কেবল হৃদয়ে চোখ রেখে বুঝি
অতটা সহজ নয় হাওয়ার সাথে লড়াই! 


ঠোকর

যখন জানালা গলে রোদ এসে পাটি পেতে বসে
তুমি ছবি আঁকো, 
ছবি থেকে উঠে আসে নারী, নাকছাবি খুলে দেয় তোমার উজ্জ্বল করতলে 

হেমন্তের হাওয়া একটু একটু করে শীত শিখে নিচ্ছে
যেমন লাজুক কিশোর শিখে নেয় সঙ্গমের কলাকৌশল 
তুমি বাজু থেকে খুলে দিচ্ছ তাবিজ, সহজ বানানের চিঠি
নক্ষত্রবাসনা ভেঙে আকাশ ছড়িয়ে দিচ্ছে চাঁদসম্ভাবনা 

চরাচর উজ্জ্বল হয়ে আসে
একা পাখি, কারো মাখা ভাতে ঠোকর দিতে দিতে— 
খেয়ে নিচ্ছে ক্ষয়ে যাওয়া মনও।