মিথ্যা হাসির আড়ালে সত্যের তলকুঠুরি
অনার্য প্রকাশ করেছে লেখক তাপস রায়ের রম্যগ্রন্থ বঙ্গ ভাণ্ডারে তব বিবিধ আষাঢ়। বইটিতে সংকলিত হয়েছে চোদ্দটি সরস রচনা। রম্য রচনা আদতে উপরিতল থেকে ঘটনাকে দেখা কিংবা অন্তর্তলের ঘটনাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার গল্প। এর পেছনে দাঁত মুখ খিচিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে নির্মম সত্য ও সমাজ বাস্তবতা। যা সহজ করে বললে হয়তো অনেকেরই হজম করতে বেগ পেতে হবে। তবে রম্য পড়তে সুখপাঠ্য হলেও লেখাটা অত সহজ নয়। সৈয়দ মুজতবা আলী বা শিবরাম চক্রবর্তীর রম্য বা দীনবন্ধু মিত্রের প্রহসনগুলো বাংলা সাহিত্যে অমর হয়ে আছে। ওই সময়কালটা বাদে বাংলা সাহিত্যে রম্য রচনা খুব একটা প্রসার পেতে দেখা যায়নি। যার কারণ হয়ত লেখকের রসবোধের অভাব বা সমাজ বাস্তবতাকে নগ্নভাবে দেখার প্রবণতা কমে আসা। তাপস সেই দেখার প্রবণতাকে জাগিয়ে তুলেছেন।
রম্য লেখককে যেমন সমাজের আর পাঁচটা মানুষের চেয়ে একটু বেশিই সমাজ ও রাজনীতি সচেতন হতে হয়। তেমনি খেয়াল রাখতে হয় কাউকে যেন সরাসরি আঘাত হানা না হয়। অর্থাৎ সাপ মরবে ঠিকই, কিন্তু লাঠি ভাঙা চলবে না। তাপস তার লেখায় দুটোই সুন্দরভাবে করেছেন। বর্তমান সময়ে বাংলা সাহিত্যের সমস্যা হলো রম্যের পাঠক যত বেশি, লেখক ততই কম, আর বই ততোধিক কম। এরকম একটা সময়ে তাপস রায় লিখেছেন রম্য গ্রন্থ বঙ্গ ভাণ্ডারে তব বিবিধ আষাঢ়। এই বইয়ে মানুষের দৈনন্দিন জীবনে আষাঢ়ে গল্প বলার প্রবণতার মধ্যে কত যে সত্য লুকোনোর চেষ্টা থাকে তা বলার সাথে সাথে বাংলাদেশের শিক্ষার মান যে গত কয়েকবছরে কতটা নিম্নগামী এটা লেখক চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন।
বইয়ে ‘তাড়া খাওয়া ভুতের জীবন’ দেখাতে গিয়ে লেখক বলছেন, সমাজতন্ত্রী সমাজে যেমন ভুত আছে, তেমনি গণতান্ত্রিক সমাজেও আছে, তবে ভুতকে তারা স্বীকার করে না। বলে, ভবিষ্যৎই সব। আর ভবিষ্যতের আখের গোছাতে বর্তমানকে তারা লুটেপুটে খাচ্ছে। ‘তেল বের করে নেয়া খৈলজীবন’ পড়তে গিয়ে হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর ‘তৈল’ প্রবন্ধের নবতর সংস্করণ চোখে পড়বে। তাপস রায়ের রসবোধ সরস। বইয়ের ভাষা সহজ, কিন্তু বচন বিদ্রুপাত্মক। রচনায় হালকা চালে ভারী বিষয় নাড়াচাড়া করেছেন তিনি। ফলে পাঠক অমোঘ বাস্তবতার রসাত্মক গল্পের পাশাপাশি মিথ্যা হাসির আড়ালে পাবেন সত্যের তলকুঠুরি। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন আজহার ফরহাদ। মূল্য রাখা হয়েছে ২৪০ টাকা।
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন