লোকটাকে যেভাবে খুন করেছিলাম [তৃতীয় পর্ব]

অ+ অ-

 

পড়ুন লোকটাকে যেভাবে খুন করেছিলাম [দ্বিতীয় পর্ব]

লোকটাকে যেভাবে খুন করেছিলাম [তৃতীয় পর্ব]

 

শিউলি  ফোন করেছিল কাল রাতে। বলল, ওর হাজবেন্ডের অবস্থা সন্ধ্যা থেকে আবার খারাপ হয়েছে। হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে তাকে। আগেই দুটো কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে তার, লিভারের অবস্থাও ভালো না। শরীরের যে কন্ডিশন তাতে কোনোকিছুই রিপ্লেসমেন্টের কোনো সুযোগ নেই। আর অল্প কদিন মাত্র বাঁচবে। ডাক্তাররা জবাব দিয়ে দিয়েছে। সে স্থায়ীভাবে বিছানায় পড়ে গেছে বছরখানেকের বেশি। এটা শুনে আমি খুব ধাক্কা খেলাম। শিউলির স্থায়ী বিষণ্নতার একটা কারণ অন্তত অবিষ্কার করতে পারি অবশেষে। ভদ্রলোককে আমার দেখতে যাওয়া উচিত কিনা বুঝতে পারছি না। হাসপাতালে যেতে এমনিতে আমার ভালো লাগে না। তারপর রোগী দেখতে গেলে উল্টো তাকে বিরক্ত করা হয় কিনা সেটা নিয়েও দ্বিধায় থাকি সবসময়। হাসপাতালের ফিনাইলের গন্ধে আমার এক ধরনের অসহায় অনুভূতি হয়। মানুষের অক্ষমতার চূড়ান্ত চেহারা হলো হাসপাতাল। প্রবল ক্ষমতাশালী মানুষও যে শেষ বিচার কোনোকিছুই না, সেইসব দার্শনিক সত্য মনে আসে হাসপাতালে গেলে। তবু কিছু কিছু সময় যাওয়া লাগে। রোগীর বিছানায় নিজেকে শুইয়ে মাঝে মাঝে ভাবার চেষ্টা করি কাছের লোকজন দেখতে না এলে কেমন লাগত। অসুস্থ অবস্থায় মানুষের মন দুর্বল থাকে। তখন কাছের মানুষ তার কাছে থাকলে, তাকে ছুঁয়ে থাকলে খারাপ লাগার কথা না। আবার এর উল্টো ঘটনাও আছে। আমি অবশ্য কাছের মানুষ ধারণাটা নিয়েও দ্বিধায় থাকি। হয়তো কাউকে কাছের মানুষ ভাবছি, সে সেটা নাও ভাবতে পার। আবার অন্য কেউ হয়তো আমাকে কাছের মানুষ ভেবে বসে আছে আমি সেটা টেরই পাইনি! কত বিচিত্র ঘটনা যে ঘটে দুনিয়ায়!
যা হোক, হাসপাতালে গেলে শিউলির সঙ্গে দেখা হবে। আমি ওর সঙ্গ পেতে চাই। কিন্তু সেখানে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনও নিশ্চয়ই থাকবে। আমাকে তাদের সামনে কী বলে পরিচয় করিয়ে দেবে? বন্ধু? আমাদের বয়সের গ্যাপটা বেশ ভালোই চোখে পড়ে। আমাকে দেখা যায় আমার বয়সের চেয়ে কয়েক বছরের ছোট। আর ক্রমাগত শারীরিক-মানসিক চাপে থেকে থেকে ওকে ওর বয়সের চেয়ে বড় মনে হয়। শ্বশুরবাড়ির লোকেরা ‘জুনিয়র ফ্রেন্ড’ মেনে নেবে? নাকি ছোট ভাই বলে পরিচয় করিয়ে দেবে আমাকে? সেখানে যদি দুই বাড়ির, অর্থাৎ শিউলির বাবার বাড়ির লোকেরাও উপস্থিত থাকে? তাহলে? ছোট ভাই বললে ধরা পড়ে যাবে, আর বন্ধু বললে খুব ভালোভাবে নেবে না সবাই। ফোনে আমি ওকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম আমি দেখতে আসব কি না? সে বলল, ‘আসতে পারো’। এই কথার নানা মানে হয়। আসার দরকার নেই সেটা যেমন বোঝা যায়, তেমনি এটা সে রাগ করেও বলতে পারে। তাতে ‘এটা আবার জিজ্ঞেস করতে হয়!’—এমন ধরনের মানেও থাকতে পারে। 
অফিস শেষে লিনুর সঙ্গে দেখা করার কথা। আজ আমাদের শরত উদযাপন করতে যাওয়ার কথা। দ্বিধায় ভোগা প্রেমিকার অসুস্থ স্বামীকে দেখতে হাসপাতালে যাওয়ার চেয়ে বরং উচ্ছল লিনুর সাথে কাশবনে ঘোরাঘুরি করাই ভালো মনে হলো শেষ অব্দি। এসব ভাবতে ভাবতে অফিসে চলে এলাম।  শিউলি কে আর কিছু জানানো হলো না। পত্রিকা অফিসে সারাদিন মৃত্যু, ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতি ইত্যাদির খবর এডিট করতে করতে এসব ঘটনায় এখন আর তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া হয় না। যেন ডালভাত। একজন মরলে তেমন গুরুত্ব পায় না নিউজে, একাধিক মরলে হয়। আমাদের এক কলিগ প্রায়ই বলে মৃতের সংখ্যা ‘সন্তোষজনক’ নয়। আর আহত হলে তো সেটা কোনো খবরই না! তবে, কিছু কিছু খবর প্রফেশনাল নিউজম্যানদেরও নাড়া দেয়। আজকে আমার হাতে তেমন একটা খবর এলো। গাজীপুরের দিকে এক বাবা তার মেয়েকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাপিয়ে পড়েছে। লোকটা প্রথমে তার মেয়েকে চলন্ত ট্রেনের নিচে ছুঁড়ে ফেলেছে, তারপর নিজে লাফিয়ে পড়েছে। মনটা কেমন যেন হুহু করে উঠল। কিছুক্ষণের জন্য অনুভূতিহীন মনে হলো নিজেকে।  
এই পত্রিকায় আমি জয়েন করেছি প্রায় চার বছর আগে। এর আগে আরো দুটো পত্রিকায় বছর দুয়েক কাজ করেছি। এই ক’বছরে এই খবরটাই সবচেয়ে অমানবিক আর মর্মান্তিক মনে হলো। বিশেষ করে চলন্ত ট্রেনের সামনে মেয়েকে ছুড়ে ফেলার দৃশ্যটা যেন চোখের সামনে দেখতে পেলাম আমি। যে রেললাইনের নিচে এই মেয়েটা নিহত হলো, সেই লাইনের একটা অংশের পাশে আমার হাইস্কুল জীবনের প্রায় এক বছর কেটেছে। স্কুলটার পাশেই ছিল স্টেশন। স্টেশনে আত্মহত্যা করা কিংবা দুর্ঘটনায় নিহত মানুষের থেঁতলে যাওয়া মাংসপিণ্ড দেখেছি বহুবার। তখন সেগুলো দেখে ভয় ভয় আর বিবমিষা জাতীয় এক ধরনের অনুভূতি হতো। মেয়েটা আর তার বাবা কি ওরকম মাংসপিণ্ড হয়ে গেছে? তাল তাল লাল মাংসের দলা? ওদের দুজনার মাংসপিণ্ড কি এক হয়ে গেছে, আলাদা করে কি চেনা যাচ্ছে কিছু? স্থানীয় প্রতিনিধির পাঠানো অনেকগুলো ছবির মধ্যে একটাতে দেখা গেল মেয়েটার ডান পা লাইনের বাইরে পড়ে আছে। হাটুর ইঞ্চিখানেক ওপর থেকে নিখুঁতভাবে কাটা। বাকি শরীর মাংসের কিমা। এসব ছবি প্রতিনিধিরা পাঠালেও আমরা ছাপাই না। বিভৎস ছবি সভ্য ও সুশীল মানুষেরা সহ্য করতে পারে না। বয়স্করা সংবাদপত্র পড়ে, তাদের হৃদযন্ত্রের সমস্যা হয়। তাছাড়া বাচ্চারাও দেখতে পারে, তাদের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে। সেজন্য এগুলো বাদ দেওয়া হয়। সংবাদপত্রের কিছু এথিকস আছে, নিয়মনীতি আছে। যা খুশি তা লেখা বা ছাপানো যায় না। তবে এসব ছবি যতই বিভৎস হোক আমাদের দেখতেই হয়। এখান থেকে যে ছবিটা সবচেয়ে কম বিভৎস সেটা হয়তো আমরা ছাপতে পারব। সেরকম না পেলে হয়তো ছবি ছাড়াই নিউজটা যাবে। কিংবা একটা স্টেশনের ছবি। সেই স্টেশনের নাম লেখা সাইনবোর্ডের ওপরে হয়তো থোকা থোকা লাল কৃষ্ণচূড়া বাতাসে দুলছে।
এলাকার প্রভাবশালী এক লোকের বখাটে ছেলে দশ বছর বয়সী হতভাগ্য মেয়েটাকে ধর্ষণ করতে চেয়েছিল। লোকজন দেখে ফেলায় সেই চেষ্টা সফল হয়নি। মেয়ের বাবা দ্বারে দ্বারে ঘুরেও এই ঘটনার বিচার পায়নি। চেয়ারম্যান তাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে। থানায় বড় ও ছোট কর্তাগণ ভিআইপি ডিউটিতে ব্যস্ত ছিলেন। আদালত সে চেনে না। কেউ তার পাশে দাঁড়ায়নি কেননা, কোনো ঘটনা ঘটেনি। শুধু ঘটার একটা আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। গরিব মানুষ ঘটনা ঘটলেই যেখানে বিচার পায় না, সেখানে কিছু ঘটার আগে বিচার প্রত্যাশা তো দিবাস্বপ্ন! লোকটা অক্ষমতার অভিমান থেকে মেয়েকে নিয়ে আত্মহত্যা করে। গরীব মানুষটি হয়তো বুঝেছিল মেয়ে যত বড় হবে, সে নিজেকে তত অসহায় বোধ করবে। আইন বিচার যে গরিব লোকেদের জন্য না, এটা সে উপলব্ধি করেছিল এই প্রথম। এ ছাড়া আর কী-ই বা করতে পারত লোকটা? সবকিছুর সঙ্গে আপোষ করে চলা? অনেক কোট-টাই পরা লোকেরা মাথা নিচু করে অনায়াসে যে আপোষ করে নিয়মিত, লোকটির হয়তো তাতে পোষায়নি।
এসব খবর এলে নিজেদের অসহায়ত্ব খুব নগ্ন হয়ে চোখে পড়ে। কেননা, রাষ্ট্রব্যবস্থা ও বিচারব্যবস্থার ফাঁকগুলো দারুণভাবে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে তখন। দুপুরে ঠিকমতো খেতে পারলাম না, ভালো লাগল না। লিনু ফেসবুকে নক দিয়েছিল। ওকে বলেছিলাম ঠিক চারটার দিকে বসুন্ধরায় চলে আসতে। আমি জানি বাস্তবতা থেকে এ এক একঘেয়ে পলায়ন আমার। নারী অথবা পানশালায় গিয়ে বুঁদ হয়ে থাকা কিছুটা সময়। তাতে অবশ্য কোনোকিছুর সমাধান হয় না। প্রলয়ের সময়ে চোখ বন্ধ করে থাকার মতো এসব। 
লং কামিজ আর পায়ের সাথে সেঁটে থাকা টাইট পাজামা পরেছে লিনু। দারুণ সেক্সি লাগছে ওকে। টাইট পাজামায় নিতম্বের গড়ন দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। এবং বলতে দ্বিধা নেই, সুগঠিত নিতম্ব আমাকে আকৃষ্ট করছিল। আমাকে দেখে সে এক দৌড়ে চলে এল বসুন্ধরার সামনের লনটায়। ‘কী খবর আপনার?’ আমি বললাম। সে হাসল, ‘সময় আর কাটতে চায় না। কখন চারটা বাজবে।’
‘হা হা হা। কী বলেন! আপনার বয়ফ্রেন্ড শুনলে আমাকে মারবে।’
‘বয়ফ্রেন্ড! আমার! পাগল হলেন নাকি?
‘কেন? পাগল হওয়ার কী আছে! মারবে না?’
‘কী যে বলেন! থাকলে তো মারবে!’
‘নাই? সত্যিই নাই?’
‘সত্যিই নাই। আমার সাথে কে প্রেম করবে?’
‘মানে কী! এরকম আকর্ষণীয়ার সঙ্গে প্রেম করার লোকের অভাব?’
‘জানেন না, এলাকায় সবাই আমাকে ভয় পায়। কলেজে পলিটিক্স করতাম। তখন দুই একটা ইভটিজারকে পেটানোর রেকর্ড আছে।’
‘বলেন কী! আপনি রাজনীতি করতেন?’
‘হ্যাঁ, কলেজের জিএস ছিলাম।’
‘ওরে বাবা। আপনাকে যেমন মারদাঙ্গা ভেবেছিলাম আপনি তো তারও চেয়ে বেশি।’
‘না না, আপনার অত ভয় পাওয়ার কারণ নেই।’
‘ঠিক আছে। আপনি বললে অবশ্যই ভয় পাব না।’
‘তাহলে আজকে আমরা ওদিকে যাচ্ছি?’
‘আজ না গেলে হয় না?’
‘কেন? কাজ আছে বুঝি?’
‘কাজ নেই। কিন্তু আজ মনটা ভালো নেই।’
লিনুকে সব বললাম। গাজীপুরের বাবা-মেয়ের নিউজটার কথা ওকে বললাম। ও খুব আহত হল শুনে। ও বলল, ‘বদমায়েশগুলারে গুলি করে মারা উচিত।’
আমি বললাম, ‘বিচার না করেই মেরে ফেলতে চান?’
‘অবশ্যই। এদের আবার কীসের বিচার?’
মিনমিন করে বললাম, ‘দেখেন, বিচার পাওয়ার অধিকার সব মানুষেরই আছে।’
‘এইসব কাজ যারা করে তারা তো মানুষই না।’
লিনুকে আমি বোঝানোর চেষ্টা করলাম যারা এ ধরনের কাজ করে তারা অবশ্যই খুব খারাপ। কিন্তু বিচার না করে তাদের মারতে চাওয়াও প্রায় একই ধরনের খারাপ কাজ। তাহলে দেশের বিচার ব্যবস্থাকে অস্বীকার করা হয়, যেটা সভ্য মানুষের স্বভাবের মধ্যে পড়ে না। কিন্তু সে রণাঙ্গিনী মূর্তি ধারণ করে ফেলল। যে ঘটনা আমাকে বিমর্ষ করেছে ঠিক একই ঘটনায় সে ক্রোধে ফেটে পড়ছে। একেক জনের অনুভূতি প্রকাশের ধরণ আলাদা। বুঝলাম লিনুকে বোঝানোর ক্ষমতা আমার নেই। ক্ষান্ত দিলাম। তার চেয়ে বরং ওর সাথে হাসিখুশি থাকি। গতকাল প্রায় সারাদিন লিনুর সঙ্গে থেকে বুঝেছি খুব দ্রুত ওর মুড চেঞ্জ হয়। ওর কথা মেনে নিলেই ও খুশি। তখন সব শান্তি। এমনিতেও ওর বিশ্বাস, চেতনা, দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানোর কোনো অভিপ্রায়, দায় কিংবা সময় কোনোটাই আমার নেই। যেহেতু ওর সঙ্গে দীর্ঘকাল থাকার পরিকল্পনাও নেই। একা মানুষ, নারীসঙ্গ দরকার, স্রেফ অতটুকুই। বললাম, ‘কী খাবেন?’
‘ধুর, আপনি তো মেজাজটাই খারাপ করে দিছেন।’
‘আচ্ছা, ঠিক আছে। এই প্রসঙ্গ বাদ।’
‘আমরা কি এখানেই থাকব, নাকি কাশবনে যাব? আপনি আমাকে নিয়ে যাবেন না?’
‘আজ মনটা খারাপ লিনু। তার চেয়ে চলেন আজ এদিকেই থাকি।’
লিনু বোধহয় বুঝল সত্যিই আমার মন খারাপ। মন ভালো করার জন্য সে বলল, ‘চলেন, একটা মুভি দেখি আজকে।’
‘উত্তম প্রস্তাব। আমি কখনও এখানে মুভি দেখিনি।’
‘মানে কী! আপনার অফিসের এত কাছে আর আপনি এখানে সিনেমা দেখেননি?’
‘নাহ। সিনেমা হলে শেষ গিয়েছি প্রায় ১৩ বছর আগে।’
‘বলেন কী!’
‘হ্যাঁ, কম্পিউটারে বসে দেখতে ভালো লাগে। সিনেমা দেখার ফাঁকে নানা কাজ করা যায়। ইচ্ছে হলে কিছু একটা বানিয়ে খাওয়াও যায়।’
‘এটা ভালো বলেছেন। কিন্তু হলে গিয়ে সিনেমা দেখার মজাই আলাদা। আমি ঢাকায় এলে এখানে একটা সিনেমা না দেখে যাই না।’
‘তাহলে তো ভালোই হলো। আমার নতুন একটা অভিজ্ঞতা হবে আপনার সাথে। সিনেপ্লেক্সে মুভি তো কখনোই দেখিনি।’
‘ঠিক আছে।’
স্টার সিনেপ্লেক্সে নতুন একটা বাংলা সিনেমা দেখাচ্ছে। লিনু ওটা দেখতে চাইল। সে সব ধরনের সিনেমা দেখে। কিন্তু সিনেমাহলে বসে দেখলে শুধু বাংলা সিনেমা দেখবে। পয়সা দিয়ে সে বিদেশি সিনেমা দেখতে রাজি না। সে নিজেকে দেশপ্রেমিক বলে। কে যেন বলেছিল বদমাশের শেষ আশ্রয় হলো দেশপ্রেম। আমার হঠাৎ মনে হলো কথাটা। দেশপ্রেম শব্দটা আমি অবশ্য ঠিকঠাক বুঝে উঠতে পারি না। তেমনভাবে চেষ্টাও করিনি বোঝার। আসলে কোনোকিছুর অত গভীরে গিয়ে বিচার করার স্বভাব আমার নেই সম্ভবত। আমরা মাঝামঝি একটা রো’তে বসলাম। সিনেমাটা বেশ ভালো। তবু আমার মন বসছে না। আমার মন ভালো করার জন্য অনেক চেষ্টা করছে লিনু। একবার সে গিয়ে পপকর্নও কিনে আনল। কিন্তু মনটা বিষাদাচ্ছন্ন হয়েই আছে। মুভিতে মন বসানোর চেষ্টাও করছি, কিন্তু কাজ হচ্ছে না। সিনেমার একটা নৃশংস দৃশ্যে ভয় পেয়ে লিনু আমার হাত জড়িয়ে ধরল। তারপর ধরেই রইল। আমিও ছাড়িয়ে নিলাম না। শেষের দিকে একটা দৃশ্য বোধ হয় খুব দুঃখের ছিল। ওর কোলের ওপর রাখা আমার হাতে কয়েকফোটা পানি পড়ল। বুঝলাম সে কাঁদছে। কাঁদুক। আধো অন্ধকারে এমন অনেক কিছু করা যায় যেটা অন্য সময়ে করা যায় না।

► আসছে চতুর্থ পর্ব